জান্নাত ও জান্নাতীদের
বর্ণনা.....
আল্লাহর প্রিয়
মুমিন বান্দাগণ জান্নাতের বিভিন্ন প্রকার চিরস্থায়ী নেয়া’মতের মাঝে অবস্থান করবেন।
হে মুসলিম ভাই! মুসলিম বোন! জান্নাতের নেয়া’মত এবং তার মধ্যে আল্লাহ মুমিনদের জন্যে
যা কিছু তৈরী করে রেখেছেন তার পরিপূর্ণ বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। যতই দীর্ঘ বর্ণনা দেয়া
হোক না কেন অসম্পূর্ণ থেকেই যাবে। তাই এখানে সকল বর্ণনাকে একত্রিতকারী হাদীছটি উল্লেখ
করা হলো। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা হাদীছে কুদছীতে
বলেনঃ
"আমি আমার
প্রিয় বান্দাদের জন্যে এমন নেয়া’মত তৈরী করে রেখেছি যা কোন চোখ দেখেনি, যার বর্ণনা
কোন কান শ্রবণ করেনি এবং যা কোন মানুষের হৃদয় কল্পনাও করতে পারেনা। অতঃপর আবু হুরায়রা
(রাঃ) বললেনঃ তোমরা চাইলে এই আয়াতটি পাঠ কর,
কোন ব্যক্তিই
জানেনা যে মুমিন বান্দাদের জন্য কি ধরণের চক্ষু শীতলকারী বিষয় গোপন রাখা হয়েছে। (সূরা
সিজদাহঃ ১৭)
ইমাম ইবনুল
কাইয়্যিম (রঃ) বলেনঃ
"কিভাবে
সেই জান্নাতের বর্ণনা দেয়া সম্ভব হবে যার বৃক্ষসমূহ আল্লাহ নিজ হাতে রোপন করেছেন, তাঁর
প্রিয় বান্দাদের জন্যে উহাকে বাসস্থান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, তাঁর রহমত ও সন্তুষ্টি
দিয়ে উহাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, যার নেয়া’মত অর্জন করাকে মহান সাফল্য বলে আখ্যায়িত
করেছেন, যার রাজত্বকে বিশাল রাজ্য বলে উল্লেখ করেছেন, যাতে সকল প্রকার নেয়া’মত গচ্ছিত
রেখেছেন এবং যাকে সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে সমপূর্ণ মুক্ত রেখেছেন!!!
যদি তুমি জান্নাতের
মাটি সম্পর্কে প্রশ্ন কর তবে জেনে নাও যে উহার মাটি তৈরী করা হয়েছে মিস্ক এবং জাফরান
দিয়ে।
তুমি জান্নাতের
ছাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেনে রাখো যে উহার ছাদ হল আল্লাহর আরশ।
আর যদি তুমি জান্নাতের নির্মাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস
কর তবে জেনে নাও যে উহার একটি ইট রূপার তৈরী এবং অপরটি তৈরী।
জান্নাতের বৃক্ষরাজিঃ
জান্নাতের বৃক্ষসমূহ
ও তার পাতাগুলো সোনালী ও রূপালী বর্ণের হবে। ফলগুলো হবে কলসীর ন্যায় বৃহদাকার ও মাখনের
ন্যায় নরম এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। বেহেশতের একটি বৃক্ষের ছায়া এত দীর্ঘ হবে যে একজন
দ্রুতগামী অশ্বারোহী একশত বছরেও তার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছতে পারবেনা। জান্নাতের
বৃক্ষসমূহে বাতাস প্রবাহের ফলে পাতাগুলো থেকে এমন বাজনার শব্দ শোনা যাবে যার তালে তালে
জান্নাতবাসীগণ আনন্দে মেতে উঠবেন।
জান্নাতের নদীসমূহঃ
জান্নাতে বিভিন্ন
প্রকার নদী থাকবে।
১) দুধের নদী
থাকবে যার রঙ কখনও পরিবর্তন হওয়ার নয়।
২) মদের নদী
প্রবাহিত হবে। তবে তা দুনিয়ার মদের মত নয়। তা হবে অত্যন্ত জান্নাতের শরাব পান করার
পর মাথা ব্যথা, নেশা বা বমি হবেনা যা দুনিয়ার মদ পান করার পর হয়ে থাকে; বরং তা পান
করার পর শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
৩) জান্নাতে
আরও থাকবে পরিচ্ছন্ন খাঁটি মধুর নহর যা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জন্যে তৈরী করে রাখা
হয়েছে।
৪) পরিস্কার
পানির নদীও থাকবে সেখানে।
হাউজে কাউছারের
বর্ণনাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাউজে কাউছার যার পানি হবে দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি
এবং তার সুঘ্রাণ হবে কস্তুরীর চেয়েও অধিক পবিত্র। আকাশের তারকার সমপরিমাণ তার পেয়ালার
সংখ্যা হবে। যে ব্যক্তি একবার তা থেকে পান করবে চিরদিনের জন্যে তার পিপাসা মিটে যাবে।
জান্নাতে পানাহারের
বর্ণনাঃ
আপনি যদি জান্নাতীদের
খাদ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তবে জেনে নিন তাদের খাদ্য হবে তাদের পছন্দ মত ফলমূল এবং
রুচী সম্মত পাখীর গোশত। তাদের পানীয় হবে তাসনিমের পানি এবং কর্পুর ও আদার রস মিশ্রিত
শরবত। তাদের পানাহারের পাত্রগুলো হবে সোনা ও রূপার তৈরী। তবে তার রং হবে পানপাত্রের
রঙ্গের মত। তারা পানাহার করবে; কিন্তু প্রস্রাব-পায়খানার প্রয়োজন হবেনা। শরীর থেকে
এমন ঘাম বের হবে যার সুগন্ধ হবে কস্তূরীর সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম।
জান্নাতীদের
পোষাকের বর্ণনাঃ
তাদেরকে রেশমের
পোষাক ও স্বর্ণের অলংকার পরিধান করানো হবে। তাদের বিছানাও হবে মোটা রেশমের তৈরী।
জান্নাতের প্রশস্ততা
আপনি যদি জান্নাতের
প্রশস্ততা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে জেনে নিন যে, বেহেশতের দরজার দুই দরজার মধ্যখানের
প্রশস্ততা হবে চল্লিশ বছরের রাস্তা। জান্নাতের ছাদের উচ্চতা হবে আকাশে উদীয়মান নক্ষত্রের
দূরত্বের সমান।
জান্নাতীদের
বয়সঃ
জান্নাতবাসীদের
বয়স হবে ৩৩বছর। তাদের মুখে কোন দাড়ি- মোচ থাকবেনা। তাদের যৌবন শেষ হবে না এবং পোষাকও
পুরাতন হবেনা। তাদের প্রথম দলটির চেহারা হবে পূর্ণিমার রাত্রির চাঁদের মত উজ্জ্বল।
দৈর্ঘ্য ও শরীরের গঠন হবে মানব জাতির পিতা আদম (আঃ)এর সমান।
জান্নাতবাদসীদের
গান শ্রবণঃ
জান্নাতীদের
মনের তৃপ্তির জন্য হুরদের মধ্য থেকে তাদের স্ত্রীগণ সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। তারা সেখানে
ফেরেশতা ও নবী-রাসূলগণের কথাও শুনতে পাবেন। তাছাড়া সেখানে বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর
কথা শ্রবণ করবেন।
জান্নাতের যানবাহনের
পরিচয়ঃ
জান্নাতীগণ
যে ধরণের যানবাহনের উপর আরোহন করে পরস্পরে সাক্ষাৎ করবেন। আপনি যদি তার পরিচয় জানতে
চান তবে জেনে নিন যে উহা এমন এক প্রকার দ্রুতগামী বাহন, যা আল্লাহ তাআলা নিজ পছন্দমত
জিনিষ হতে তৈরী করেছেন। এ সমস্ত বাহনে আরোহন করে জান্নাতীরা নিজেদের খুশীমত যেখানে
ইচ্ছা ঘুরে বেড়াবেন।
জান্নাতের সেবকদের
পরিচয়ঃ
জান্নাতবাসীদের
সেবায় নিয়োজিত থাকবে মণি-মুক্তার মত উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট বালকেরা। তারা সদাসর্বদা
একই বয়স ও অবস্থায় থাকবে।