১. আয়াতুল কুরসী পাঠ করা – ১ বার।
ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করার ফযীলতঃ
ক. সকাল পর্যন্ত তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হেফাজতকারী (ফেরেশতা)
তাকে নিরাপত্তা দেবে।
খ. শয়তান তার কাছে আসতে পারবেনা।
“যখন বিছানায় ঘুমুতে যাবে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তাহলে আল্লাহর
পক্ষ থেকে তোমার উপর সব সময় একজন হেফাযতকারী নিযুক্ত থাকবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান
তোমার ধারে কাছেও আসতে পারবে না।”
সহীহ বুখারী, খন্ড ৬, অধ্যায় ৬১, হাদিস নং- ৫৩০।
*এখানে হাদীসটা আসলে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা আসলে এক জিনের
সাথে এক সাহাবীর আশ্চর্যজনক বড় একটা ঘটনা। সম্পূর্ণ কাহিনীটা জানার জন্য আপনারা রিয়াদুস
সালেহীন এর বই ৯, হাদিস নং- ১০২২ থেকে দেখে নিতে পারেন।
_____________________________
২. সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পড়া – ১ বার।
ঘুমানোর আগে সুরা বাক্বারার শেষ ২ আয়াত (২৮৫+২৮৬) পড়ার ফযীলতঃ
ক. রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামায পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে
খ. বালা-মুসিবত ও যেকোনো ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ঠ হবে।
গ. জিন ও শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ঠ হবে।
ঘ. আয়াতগুলো পড়ে শেষ “আমিন” বললে আয়াতগুলোতে যেই দুয়া আছে সেইগুলো
আল্লাহ তাআ’লা কবুল করে নেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বে সেটা তার
জন্য যথেষ্ঠ হবে”।
সহীহ বুখারিঃ ৫০১০, সহীহ মুসলিমঃ ৮০৭।
বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ “রিয়াদুস সালেহীন” এর লেখক ও সহীহ মুসলিমের
ভাষ্যকার, ইমাম আন-নববী (রহঃ) বলেন, “এর অর্থ কেউ বলেছেনঃ কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ
নামাযের জন্য যথেষ্ঠ হবে। কেউ বলেছেনঃ শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ঠ হবে।
কেউ বলেছেনঃ বালা-মুসিবত থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। তবে সবগুলো অর্থ সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে।
শারহুন নববী আ’লা সহিহ মুসলিমঃ ৬/৩৪০, হাদীস ৮০৭।
সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার, আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদীস, ইমাম ইবনে হাজার
আসকালানী (রহঃ) এই অভিমত সমর্থন করে বলেন, উপরের সবগুলো অর্থ নেওয়া সঠিক। আল্লাহ ভালো
জানেন। প্রথম অর্থটি (তাহাজ্জুদের সমান সওয়াব পাওয়া) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউ’দ (রাঃ)
থেকে একটি মারফু হাদীসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।
ফাতহুল বারী ৮/৬৭৩, হাদীস ৫০১০।
এ কারণেই আলী (রাঃ) বলেনঃ
“আমার মতে যার সামান্যও বুদ্ধিজ্ঞান আছে, সে এ দুটি আয়াত পাঠ করা
ছাড়া নিদ্রা যাবে না”।
মানাকিবুস সাহাবা। ইমাম নববী এটাকে সহীহ বলেছেন, আল-আযকার।
_____________________________
৩. ঘুমানোর আগে সুরা কাফিরুন পড়া – ১ বার
উপকারীতাঃ শিরক থেকে বাচতে সাহায্য করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“(ক্বুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন বা সুরা কাফিরুন), এই সুরাটিতে শিরক
থেকে বাঁচার শিক্ষা রয়েছে।”
আবু দাউদঃ ৫০৫৫, তিরমিযী, আহমাদ, ইমাম ইবেন হাজার আসকালানী ও শায়খ
আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
১০০০ সুন্নত, পৃষ্ঠা – ১৬০।
ফরওয়া ইবন নাওফাল (র) থেকে বর্ণিত তিনি নবী (স) এর কাছে এসে বললেনঃ
ইয়া রাসুলুল্লাহ (সঃ)! আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমি আমার শয্যাগ্রহণের সময় বলতে
পারি। তিনি বললেনঃ ক্কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন সূরাটি পাঠ করবে। কেননা এটি হল শিরকের
সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষনা।
সুনানে আত-তিরমিজি, দু’আ অধ্যায়, অধ্যায় ৪৮, হাদীস নং- ৩৪০৩। হাদীসটি
হাসান সহীহ, দারুস সালাম।
______________________________
৪. সুরা ইখলাস পাঠ করা – ১ বার, ৩ বার অথবা ১০ বার অথবা, যার যতবার
পড়তে ভালো লাগে। তবে ৩ বার পড়লে যেহেতু এক কুরান খতম করার সমান, সুতরাং ৩ করা যেতে
পারে। কারো ইচ্ছা হলে আরো বেশি ১০ বারও করতে পারেন – ১০ বার সুরা ইখলাস পড়লে তার জন্য
জান্নাতে একটা বাড়ি বানানো হয়।
ক. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন,
“তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে পারনা”? প্রস্তাবটি সাহাবাদের জন্য কঠিন
মনে হল। তাই তাঁরা বলে উঠলেন, “হে আল্লাহর রসুল! এই কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে”?
(অর্থাৎ কেউ পারবে না।). তিনি বললেন, “ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস স্বামাদ”
(সুরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান”।. (অর্থাৎ এই সুরা পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন
পড়ার সমান নেকী পাওয়া যাবে)।
সহীহুল বুখারী ৫০১৫, নাসায়ী ৯৯৫, আবু দাউদ ১৪৬১, আহমাদ ১০৬৬৯।
খ. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি
ঘর বানানো হবে”।
সহীহ আল-জামি আস-সগীর ৬৪৭২।
_______________________________
৫. তাসবীহ’, তাহ’মীদ ও তাকবীর পাঠ করাঃ
৩৩ বার তাসবীহ’ (সুবহা’নাল্লাহ), ৩৩ বার তাহ’মীদ (আলহা’মদুলিল্লাহ),
ও ৩৪ বার তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করার ফযীলতঃ
ক. কারো একজন দাস থাকলে দিনে-রাতে যে সেবা-যত্ন ও সাহায্য করতো তার
থেকেও বেশি উপকার পাওয়া যাবে এই আমল করলে।
খ. মোট ১০০ বার পড়লে, মীযানে ১০০০ নেকীর সমান হবে।
ক. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু
আনহু আমার কাছে আটা পেষার দরুন তার হাতে ফোসকা পড়ে যাওয়ার অভিযোগ করলেন। আমি বললাম
তোমার পিতা (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে গিয়ে যদি একটা খাদেমের
আবদার জানাতে।
(ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে খাদেম দেওয়ার কথা বললেন তখন) তিনি (রাসুল) বললেনঃ তোমার জন্য কি খাদেমের
চাইতে উত্তম কোন কিছু বলব না? (তা হল) তোমরা যখন তোমাদের শয্যাগ্রহণ করবে তখন আলহা’মদু
লিল্লাহ ৩৩ বার, সুবহা’নাল্লাহ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পড়বে।
সুনানে আত-তিরমিজি, দু’আ অধ্যায়, অধ্যায় ৪৮, হাদীস নং- ৩৪০৮। হাদীসটি
সহীহ, দারুস সালাম।
খ. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যখন শয্যাগ্রহণ করবে তখন সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার এবং আলহামদু
লিল্লাহ পাঠ করবে একশত বার। এটা তোমাদের যবানে তো হল একশ, কিন্তু মীযানের পাল্লায় হবে
এক হাজার (নেকী)।
সুনানে আত-তিরমিজি, দু’আ অধ্যায়, অধ্যায় ৪৮, হাদীস নং- ৩৪১০। হাদীসটি
হাসান সহীহ, দারুস সালাম।
____________________________
৬. ঘুমানোর দুয়া পড়াঃ
ডান কাতে শুয়ে ঘুমানো সুন্নত। ডান কাতে শুয়ে ঘুমানোর আগে এই দুয়া
পড়তে হবেঃ
بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ أَمُوتُ وَأَحْيَا
উচ্চারণঃ বিস্মিকাল্লা-হুম্মা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার নাম নিয়েই আমি মৃত্যুবরণ করছি (ঘুমাচ্ছি)
এবং আপনার নাম নিয়েই জীবিত (জাগ্রত) হবো।
সহীহ বুখারীঃ ৬৩২৪, সহীহ মুসলিমঃ ২৭১১।
ঘুম থেকে উঠে যেই দুয়া পড়তে হয়ঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ
উচ্চারণঃ আলহা’মদু লিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না- বাঅ’দা মা- আমা-তানা-
ওয়া ইলাইহিন্-নুশুর।
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য, যিনি (নিদ্রারূপ) মৃত্যুর পর
আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করেছেন, আর আমরা সবাই তাঁরই কাছে ফিরে যাবো।
সহীহ বুখারীঃ ৬৩১৪, সহীহ মুসলিমঃ ২৭১১।
______________________________
৭. সুরা মুলক পড়া
প্রতিদিন (দিনে বা রাতে যেকোনো এক সময়) সুরা মুলক মুলক তেলাওয়াত
করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নতঃ
***অনেকে মনে করে, এটা রাতেই পড়তে হবে, এটা ঠিক না। কেউ রাতে পড়লে
ভালো। তবে সুবিধামতো সময়ে দিনে রাতে, যেকোনো সময়েই পড়া যাবে।
“রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আলিফ লাম মীম তানজিলুল কিতাব (সুরা আস-সাজদা)
ও তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক) তেলাওয়াত না করে কোনদিন ঘুমাতেন না”।
সুনানে আত-তিরমিযী ২৮৯২, মুসনাদে আহমাদ ১৪২৯। শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি
সহীহ, সহীহ তিরমিযী ৩/৬।
***এই সুরাটি নিয়মিত প্রতিদিন তেলাওয়াত করলে কবরের আজাব থেকে সুরক্ষা
করবেঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতের
বেলা তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক) তেলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে কবরের আজাব
থেকে রক্ষা করবেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যামানায় এই সুরাটিকে আমরা “আল-মা’আনিয়াহ” বা
সুরক্ষাকারী বলতাম। যে রাতের বেলা এই সুরাটি পড়বে সে খুব ভালো একটা কাজ করলো”।
সুনানে আন-নাসায়ী ৬/১৭৯। শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ, সহীহ
আত-তারগীব ওয়াল তারহীব ১৪৭৫।
***এই সুরা প্রত্যেকদিন রাতের বেলা তেলাওয়াত করলে কিয়ামতের দিন শাফায়াত
করে জান্নাতে নিয়ে যাবে ইন শা’ আল্লাহঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “কুরআনে এমন একটা সুরা আছে যার মধ্যে
৩০টা আয়াত রয়েছে যেটা একজন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
আর সেটা হলো তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক)”।
সুনানে আত-তিরমিযী ২৮৯১, সুনানে আবু দাউদ ১৪০০, মুসনাদের আহমাদ,
ইবনে মাজাহ ৩৭৮৬।
ইমাম তিরমিযী বলেছেন হাদীসটি হাসান, ইবনে তাইমিয়্যা বলেছেন সহীহ
মাজমু ২২/২২৭, শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহ, সহীহ তিরমিযী ৩/৬, সহীহ ইবনে মাজাহ ৩০৫৩।
বিঃদ্রঃ এইখানে তেলাওয়াত মানে শুধু তোতা পাখির মতো রিডিং পড়ে যাওয়া
না।
এই প্রসংগে সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডের আলেমদের ফতোয়া হচ্ছে,
“এই হাদীসগুলোর আলোকে বলা যায়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
সুরা মুলক বিশ্বাস করবে ও তেলাওয়াত করবে, এই সুরাতে যে শিক্ষা দেওয়া আছে তা গ্রহণ করবে
এবং যে হুকুম আহকাম দেওয়া আছে সেইগুলো মেনে চলবে কেয়ামতের দিন তার জন্য এই সুরাটি শাফায়াত
করবে”।
ফতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ ৪/৩৩৩, ৩৩৫।
http://islamqa.info/en/191947