‘আল-সুনান আল-রাওয়াতিব’
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের
পূর্বে ও পরে মোট ১২ রাকাত সুন্নত সালাত নিয়মিত আদায় করতেন, বিশেষ কোন কারণ ছাড়া তা
ত্যাগ করতেন না। এমনকি কখনো অনিচ্ছাকৃতভাবে এই সুন্নত সালাতের কোন একটা ছুটে গেলে
পরে তিনি তার কাযা আদায় করে নিতেন। এই ১২ রাকাত সুন্নত সালাতকে ‘আল-সুনান আল-রাওয়াতিব’ বলা হয়। এই ১২ রাকাত সুন্নত সালাতের অনেক
বড় ফযীলত রয়েছে। আল-সুনান আল-রাওয়াতিব এর রাকাত সংখ্যা হছে নিন্মরূপঃ
(১) ফযরের ফরয সালাতের পূর্বে ২ রাকাত।
(২) যোহরের ফরয সালাতের পূর্বে ৪ রাকাত, ফরয
সালাতের পরে ২ রাকাত।
(৩) মাগরিবের ফরয সালাতের পরে ২ রাকাত।
(৪) এশার ফরয সালাতের পরে ২ রাকাত।
এই মোট ১২ রাকাত সালাত সুন্নত সালাত পড়ার
ফযীলতঃ
মুমিনদের জননী, উম্মে হাবীবাহ রামলা বিনতে আবু
সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা
হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টি
অর্জনের) জন্য প্রতিদিন ফরয সালাত ছাড়া (অতিরিক্ত) বারো রাকআ’ত সুন্নত সালাত পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের
মধ্যে একটি গৃহ নির্মাণ করেন অথবা তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করা হয়।”
সহীহ মুসলিমঃ ৭২৮, জামি তিরমিযীঃ ৪১৫, সুনানে নাসায়ীঃ ১৭৯৬, আবু দাউদঃ ১২৫০, ইবনু মাজাহঃ ১১৪১, আহমাদঃ ২৬২৩৫, দারেমীঃ ১২৫০।
কয়েকটি মাসয়ালাঃ
(১) এই ১২ রাকাত সালাত পড়া ‘সুন্নতে মুয়াক্ক্বাদা’, ফরয বা ওয়াজিব নয়। তবে এই সালাত পড়ার
জন্যে আমাদের যত্নশীল হওয়া উচিৎ, বিনা কারণে অলসতা করা উচিৎ নয়। কারণ, আমাদের
অনেকের হয়তো পূর্বে ফরয সালাত ছুটে গেছে, বা বর্তমানে যেই সালাত পড়ছি সেখানে
দোষ-ত্রুটি রয়েছে। কিয়ামতের দিন এই ১২ রাকাত সুন্নত সালাত দ্বারা ফরয সালাতের
ঘাটতি পূরণ হবে ইন শা আল্লাহ।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন মানুষের আমলসমূহের মধ্যে
সর্বপ্রথম তাদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের মহান রব্ব ফেরেশতাদেরকে
তাঁর বান্দার সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন, যদিও তিনি নিজেই সে সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত
আছেন। আল্লাহ বলবেন, তোমরা দেখতো সে ফরয সালাতগুলো পূর্ণরূপে আদায় করেছে, নাকি সেখানে
কোন ক্রটি আছে? অতঃপর বান্দার সালাত পরিপূর্ণ হলে তা তদ্রুপই
লেখা হবে। আর যদি তাতে কোন ক্রটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়, তবে
তিনি (রব্ব) ফেরেশতাদের বলবেন, দেখতো আমার বান্দার কোন সালাত আছে কি? যদি থাকে তবে তিনি বলবেন, তোমরা তার নফল সালাত দ্বারা তার ফরয সালাতের ঘাটতি
পূরণ কর। অতঃপর, এইরূপে সমস্ত ফরয আমলের ক্রটি নফল আমল দ্বারা দূরীভূত করা হবে।”
সুনানে আবু দাউদঃ ৮৬৪, তিরমিযীঃ ৪১৩, ইবনে মাজাহঃ ১৪২৫।
হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন ইমাম তিরমিযী, ইমাম হাকেম ও শায়খ আলবানী।
(২) পুরুষদের উচিৎ নফল ও সুন্নাত সালাতগুলো
ঘরে পড়ার চেষ্টা করা। নফল সুন্নত সালাত ঘরে পড়লে বেশি সওয়াব, আর এতে করে ঘরে আল্লাহর
বরকত নাযিল হয় এবং ঘরের নারী ও সন্তানেরা নামাযের প্রতি, ইসলামের
প্রতি আগ্রহী হবে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের কেউ সলাত পড়লে তার কিছু অংশ সে যেন
তার ঘরে পড়ে। কারণ তার সলাতের উসীলায় আল্লাহ তার ঘরে প্রাচুর্য দান করেন।”
ইবনে মাজাহ, আহমাদঃ ১০৭২৮, ১১১৭৩। তাহক্বীক্বঃ সহীহ, শায়খ আলবানী, সিলসিলাহ আস-সহীহাহঃ ১৩৯২।
আমরা কি জানি প্রতিদিন সুন্নাত সালাতগুলো মসজিদে পড়ে কত বড় সওয়াব
থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি?
দেখুন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেছেন,
“কোন ব্যক্তির ফরয সালাত ব্যতীত
যাবতীয় সালাত আমার মসজিদে আদায় করার চাইতে তা নিজের ঘরে আদায় করা অধিক উত্তম।”
সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে তিরমিযী,
হাদীসটি সহীহ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন,
“সুন্নাত-নফল সালাত নিজ ঘরে আদায়
করার মর্যাদা মানুষের সামনে আদায় করার চেয়ে তেমন বেশি, যেমন ফরয
সালাত ঘরে একাকী আদায় করার চাইতে মসজিদে
আদায় করার মর্যাদা বেশি।”
মুসান্নাফ ইবনে আবদুর রাজ্জাক,
সিলসিলা সহীহঃ ৩১৪৯।
(৩) মসজিদে ফযর সালাতের জামাতের পূর্বে
সুন্নত সালাত পড়তে না পারলে, ফরযের পরে ওয়াক্ত থাকলে সুন্নত সালাত পড়ে নেওয়া যাবে।
আর ওয়াক্ত শেষ হয়ে সূর্য উদয় হওয়া শুরু হলে বেলা উঠার পরে সুন্নত সালাত কাজা পড়ে
নেওয়া যাবে।
(৪) যোহরের ফরয সালাতের পূর্বে ৪ রাকাত
সুন্নত সালাত এক সালামে একসাথে ৪ রাকাত অথবা, দুই সালামে ২+২=৪, এই দুইভাবেই পড়া জায়েজ
আহে। তবে দুই সালামে ২+২=৪, এইভাবে পড়া উত্তম। মসজিদে যোহর সালাতের জামাতের পূর্বের
সুন্নত সালাত পড়তে না পারলে, জামাতের পরে ফরযের পূর্বের ৪ সুন্নত সালাত পড়ে নেওয়া যাবে।