মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৬

ইমামের ইক্তিদা প্রসংগে জরুরী কিছু কথা


আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি (ক) আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, (খ) আমাদের ক্বিবলাহমুখী হয় আর (গ) আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সে ব্যক্তি একজন মুসলিম, যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীতে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।
সহীহুল বুখারী। তাওহীদঃ ৩৯১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৮৪।
হাদীসে বর্ণিত এই তিনটি শর্ত পূরণ করে, এমন যেকোন মুসলিম ব্যক্তির ইমামতিতে সালাত আদায় করা জায়েজ। সুতরাং হানাফীদের ইমামতিতে কোন আহলে হাদীসের এবং, আহলে হাদিসের ইমামতিতে কোন হানাফী সালাত আদায় করতে পারবে, এ ব্যপারে কোন ইখতিলাফ নেই। তবে মুসলিম দাবীদার কোন ব্যক্তি যদি স্পষ্ট কোন শিরকি বা কুফুরী আকীদাহ রাখে বা এমন কোন কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে তার পেছনে সালাত আদায় করা শুদ্ধ নয়। কিছু স্পষ্ট শিরকি কুফুরী আকিদাহর নমুনা নিচে দেওয়া হলো।  
(১) যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা আরশের উর্ধে, এই কথাকে অস্বীকার করে এবং আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বাস করে যে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। অর্থাৎ, মহাবিশ্বের সর্বত্র এবং সবকিছুর মাঝেই আল্লাহ আছেন। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক, শিরকি আকিদাহ।
শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান অথবা, যে আল্লাহ সবকিছুর উর্ধে এ কথাকে অস্বীকার করে, সে ব্যক্তি কাফির। কারণ, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কথাকে মিথ্যা বলেছে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের ইজমাকে অস্বীকার করেছে।
(২) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক, কুফুরি আকিদাহ।
(৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়েব জানেন। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক, শিরকি আকিদাহ।
শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস করবে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নূর (বা আল্লাহর যাতী নূর) মানুষ নন, তিনি গায়েবের খবর জানেন, সে আল্লাহ এবং রাসূলের সাথে কুফরী করল। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দুশমন, বন্ধু নয়। কেননা তার কথা আল্লাহ ও রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, সে কাফের।
শায়খ আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নূরের তৈরী বলে বিশ্বাস করে, তাকে ইমাম নিয়োগ করা এবং তার পিছনে সালাত আদায় করা জায়েজ নয়।
ফতোয়া আরকানুল ইসলাম, ঈমান অধ্যায়, প্রশ্ন নং-৪৭।
(৪) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিফায়ী নামক একজন বিদআতী সূফীর জন্যে কবর থেকে হাত বের করে দিয়েছিলেন। এটা তাবলিগ জামাতের কিতাব ফাজায়েলে হজ্জে লিখা আছে।
এ ব্যপারে সম্মানিত মুফতিরা উল্লেখ করেছেন, যে ইমাম এই কাহিনী বিশ্বাস করে তার পেছনে সলাত আদায় করা জায়েজ হবে না, কারণ তিনি তাঁর আক্কিদাগত দিক দিয়ে খাঁটি মুসলিম নন এবং তিনি কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন।
ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, ফতোয়া নং- ২১৪১২, খণ্ড- ২, পৃষ্ঠা- ২৮২-২৮৪।
(৫) হুসাইন আহমাদ মাদানির ডাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর থেকে উঠে এসেছিলেন। এটা হাটহাজারি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং হেফাজতে ইসলামের প্রধান, আহমাদ শফী তার কিতাব ইরশাদাতে মুরশিদীতে লিখেছেন।
(৬) মানসুর হাল্লাজ, বায়েজীদ বুস্তামীদের হুলুল, আনাল হক্ক্, ওহদাতুল ওজুদের মতো শিরকি আকিদায় যারা বিশ্বাসী এবং তাদেরকে আল্লাহর ওয়ালী মনে করে।

(৭) যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মানিত সাহাবিদেরকে বা কোন একজন সাহাবীকে গালি-গালাজ করে, তাঁদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে, এটা একটা কবীরাহ গুনাহ। যদিও এটা শিরক বা কুফুরী নয়, তবে শায়খ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাস হাফিজাহুল্লাহ এমন ফাসেক ইমামদেরকে বর্জন করতে উপদেশ দিয়েছেন। বিশেষ কিছু রাজনৈতিক দলের মুকাল্লিদরা আমীরে মুয়াবিয়া, আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কে গালি দেয়, এমনকি শায়খ নিজে মসজিদুল হারামে এই জঘন্য কাজে লিপ্ত হতে দেখেছেন কিছু জাহিলকে, তাদের ব্যপারে আলোচনা প্রসংগে শায়খ এই কথা বলেছিলেন।