সিগারেট, শিশা, জর্দা, তামাক খাওয়া হারাম,
হারাম এবং হারামঃ
“কঠিন
শাস্তির পূর্বে আমি তাদেরকে হালকা শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে করে তারা
প্রত্যাবর্তন করে।” [সুরা সাজদাহঃ ২১]
সিগারেট, শীশা, তামাক, জর্দা খাওয়া হারাম না নিষিদ্ধ কারণ,
এর দ্বারা স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়, এটা একটা খবিস (নাপাক) স্বভাব, এবং
মুসলমানদের মূল্যবান সম্পদের অপচয় ও নষ্ট হয়। আরব বিশ্বের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং সম্মানিত যেই
সমস্ত ‘রব্বানী’
আলেমগণ ধূমপান করা ‘হারাম’ বলে ফতোয়া দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন,
(১) শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম (রহঃ),
(২) শায়খ আব্দুল আজিজ ইবনে ইবনে বাজ (রহঃ),
(৩) শায়খ মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন আলবানী (রহঃ),
(৪) শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন (রহঃ),
(৫) শায়খ আব্দুল আজিজ আলে-শায়খ (হাফিঃ),
(৬) শায়খ সালিহ আল-ফওজান (হাফিঃ)
(৭) শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে গুদায়্যান (রহঃ),
(৮) শায়খ বাকর আবু জায়েদ (রহঃ)
আরো অসংখ্য আরব ও অনারব আলেমে-দ্বীন গন।
অপচয় করা কবীরাহ গুনাহ, আল্লাহ তাআ’লা সুরা বনী ইসরাঈলে অপচয়কারীকে ‘শয়তানের ভাই’ বলেছেন। অথচ মুসলমান দেশগুলোতে প্রতিদিন হাজার-হাজার, কোটি-কোটি টাকার সিগারেট ও তামাক কেনা-বেচা হচ্ছে। অনেক নামাযি ভাইয়েরাও এই খবিস জিনিসটা
খেয়ে জীবন, যৌবন ও টাকা নষ্ট করছে। একেকটা সিগারেটের
দাম ৮ টাকা, ১০টাকা করে। অথচ এই টাকা দিয়ে একটা পাউরুটি কেনা যায় যা একজন বড়
মানুষের একবেলার জন্যে যথেষ্ঠ। সিরিয়া, ফিলিস্থিন, আফগানিস্থানসহ বিশ্বের বিভিন্ন
দেশে আমাদের মুসলমানদের ছোট ছোট বাচ্চারা দিনের পর দিন খাবার না পেয়ে শুকিয়ে কংকাল
হয়ে যাচ্ছে. . .অন্যদিকে কিছু ভাইয়েরা প্যাকেটের পর প্যাকেট খেয়ে নিজেকে এবং সম্পদ
বিনষ্ট করছে। অনেক কাপুরুষ যুবক ভাইয়েরা ‘গার্লফ্রেন্ড’ নামক ‘নব্য রক্ষিতাদের’ সাথে সারারাত ধরে প্রেম-পিরিতীর গল্প করছে, মোবাইলে,
ইন্টারনেটে যৌনতাপূর্ণ অশ্লীল কথা বলছে, ঝগড়া করে নিজের আত্মাকে নষ্ট করছে আর সাথে
সাথে প্যাকেটের পর প্যাকেট সিগারেট পুড়িয়ে তার মাঝে সান্ত্বনা খুঁজছে। কেউবা আবার
পরীক্ষার টেনশানে আল্লাহর কাছে দুয়া না করে সিগারট খেয়ে, গাজা খেয়ে শয়তানের কাছে
আত্মসমর্পণ করছে। কেউবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ইয়াবার কেনার টাকার জন্যে চুরি ও ছিনতাই
করছে। ধূমপানের অভ্যাসটা কত খবিস ও
নিকৃষ্ট হতে পারে চিন্তা করে
দেখুন, কত যে মানুষ বাথরুমের মতো নাপাক জায়গায় গিয়ে সিগারেট খেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করছে, সিগারেটের ধোঁয়া, বাথরুমের দুর্গন্ধ খেয়ে পেট ভর্তি
করছে। যাই হোক, এমনই এক যুবক সাব্বির (ছদ্ম নাম) আর দশটা ছেলের মতোই বাথরুমে গিয়ে
সিগারেট খেতে অভ্যস্থ। অনেক সময় বাথরুমের সুয়ারেজের ময়লা পচে প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরী হয়ে থাকে। একদিন সাব্বির বাথরুমে গিয়ে
সিগারেট খাওয়ার জন্যে লাইটার জ্বালানো মাত্রই বাথরুমে জমে থাকা সেই গ্যাসে আগুন
ধরে গেলো। নিমিষের মধ্যেই বাথরুমের ভেতর বিশাল বড় আগুন জ্বলে প্রচন্ড শব্দে
বিস্ফোরণ হয়ে সাব্বির বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে ছিটকে এসে বাইরে পড়লো। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ
হয়ে সাব্বির শরীরে প্রায় ৩৫% পোড়া নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের
বার্ণ ইউনিটে ভর্তি হয়েছে। সাব্বিরের ভাগ্য
কিছুটা ভালো যে, বিস্ফোরণের ফলে সে বাথরুমের দরজা ভেংগে বাইরে এসে পড়ে, যার কারণে
পুরো অগ্নিকান্ডে দগ্ধ হয়ে কয়লা হয়ে যায়নি। সে তুলনায় জনাব রিজভী হোসাইনের
(ছদ্মনাম) ভাগ্য এতোটা ভালো ছিলোনা। সাব্বিরের মতো তিনি বাথরুমে সিগারেট খেতে গিয়ে
আগুন জ্বলে পুরো অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, এবং দুইদিন চিকিৎসার পরে
মৃত্যুবরণ করেন।
এই
হচ্ছে হারাম কাজের, আল্লাহর আদেশ নিষেধকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বা সেই ব্যপারে
ভ্রুক্ষেপ না করে দিনের পর দিন সীমা লঙ্ঘন করার সামান্য দুনিয়াবী শাস্তি। এইরম
হাতে নাতে নগদ শাস্তি আল্লাহ সবাইকে দেন না, কারণ চূড়ান্ত বিচার ফয়সালার দিনতো
বাকী। তবে পাপীর সংখ্যা যখন অনেক বেশি হয়ে যায় তখন তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে,
তাদেরকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সামান্য কয়জনকে দুনিয়াবী শাস্তি দিয়ে বাকিদেরকে সতর্ক
করে দেন।
অনেকে
মনে করতে পারেন, বাথরুমে গিয়ে না খেলেই বুঝি নিরাপদ। তাদের জন্যে বলছি আল্লাহ
চাইলে বান্দাকে হাজারটা উপায়ে শাস্তি দিতে পারেন। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে প্রধান
যেই রোগগুলো হার্ট এটাক, হার্ট ব্লক, ব্রেইন স্ট্রোক, এজমা, ফুসফুসের ক্যান্সার,
ডায়াবেটিস এমন অনেক রোগের প্রধান রিস্ক ফ্যাক্টর হচ্ছে স্মোকিং এবং মদ পান, সেটা
আপনি যেকোন ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেই সত্যতা জানতে পারবেন। তাহলে প্রশ্ন করতে
পারেন, তাহলে অনেকও ডাক্তারও কেনো খায়? জ্বি, এটা সত্য। এমনও ডাক্তারের উদাহরণ আমি
জানি, যে নিজে ধূমপান করে, ধূমপান করে ধূমপান বিরোধী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে যায়। ক্বুরানের
আল্লাহ তাআ’লা
ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের উপমা দিয়েছেন পুস্তক বহনকারী গাধার মতো, যারা জ্ঞান অর্জন
করেছে কিন্তু সেই জ্ঞান তাদের কোন উপকারে আসেনা। যেই সমস্ত ডাক্তার মেডিক্যাল
সাইয়েন্স পড়েও ধূমপান করে বা মদ খায় তাদের উপমা এই পুস্তক বহনকারী গাধাদের মতোই!
কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়া বর্তমানে বহু ছেলে
সিগারেট বা মদের নেশায় আসক্ত। সুতরাং, দ্বীনি বোনেরা বিয়ে করার পূর্বে ভালো করে
জেনে নেবেন। কারণ, কে চাইবে শুধুমাত্র দুনিয়াবি বিষয় দেখে দেখে এমন লোকদেরকে বিয়ে
করতে আর দুইদিন পরে হার্ট এটাক করে মরে অল্প বয়সে বিধবা হতে?
আমার কথায় কেউ কষ্ট পেলে মাফ করবেন,
আপনাদেরকে কষ্ট দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্বীনি ভাই হিসেবে
আপনাদেরকে সতর্ক করা, যেই জ্ঞান আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন সেটা আপনাদের সাথে শেয়ার
করা। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং আমাদের প্রতি রহম করুন, আমিন।