শাসক ভালো এবং
খারাপ দুটোই হবে। নিকৃষ্ট মুসলিম শাসক হিসেবে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বালের
সময় খলিফা মামুনের ছেলে, মুহতাজিলা রাজারা ইতিহাসে কুখ্যাত। কারণ, এরা আহলে সুন্নাহর
শ্রেষ্ঠ আলেমদের প্রতি অনেক বড় জুলুম অত্যাচার করতো। কিন্তু খারেজীদের বিপরীতে আহলে
সুন্নতের বড় একটা নীতি হলো – মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা, খারাপ শাসকদের
ব্যপারে ধৈর্য ধারণ করা। কারণ, শরীয়াহ বহির্ভূত সশস্ত্র/নিরস্ত্র যেকোন ধরণের বিদ্রোহ
আরো বড় বিপদ ডেকে নিয়ে আসে, যা যুগযুগ ধরে প্রমানিত সত্য।
এমনকি বর্তমানে
অনেক দেশে মুসলিমদের উপর অত্যাচারী শাসক ও আল্লাহর দুশমন তাগুতদের নির্যাতনের বড় একটা
কারণ হচ্ছে অপরিপক্ক কিছু লোকের শরীয়াহ বিরোধী বিদ্রোহ করে বসা।
ইমাম আবু জা’ফর
আহমাদ আত-ত্বাহাওয়ী (রহঃ), তার বিখ্যাত আহলে “সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদার” কিতাবে
উল্লেখ করেছেনঃ
“আমীর ও শাসকদের
বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা অত্যাচার করে। আমরা তাদের
অভিশাপ দিব না এবং আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের
সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যচরণের আদেশ দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের
জন্য দো‘আ করব।”
আকীদাহ আত-ত্বাহাবীয়া।
যেই হাদীস থেকে
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এই আকীদাহ প্রতিষ্ঠিত হয়ঃ
“হুযায়ফা ইবনে
ইয়ামান (রাঃ) বলেছেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এক সময় আমরা অকল্যাণ ও মন্দের মধ্যে
(কুফরীর মধ্যে) ডুবে ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে কল্যাণের (ঈমানের) মধ্যে নিয়ে এসেছেন।
এখন আমরা সেই কল্যাণের মধ্যে বহাল আছি। তবে এই কল্যাণের পরে কি আবার অকল্যাণের যুগ
আসবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি আবার বললাম, সেই অকল্যানের যুগের পর কি পুনরায় কল্যানের
যুগ আসবে? তিনি বললেনঃ হাঁ, আসবে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, সেই কল্যানের পর কি আবার
অকল্যানের যুগ আসবে? তিনি বললেনঃ আসবে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ তা কিভাবে? তিনি বললেনঃ
“আমার পরে এমন কিছু ইমামের (শাসক) আগমন ঘটবে, তারা আমার প্রদর্শিত পথে চলবে না এবং
আমার সুন্নাত (জীবন বিধান) গ্রহন করবে না। (অর্থাৎ তারা নিজেদের খোয়াল-খুশী মত চলার
পথ আবিষ্কার করে নেবে)। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক সমাজের নেতৃত্ব নিয়ে দাঁড়াবে
যাদের মানব দেহে থাকবে শয়তানের অন্তর”।
আমি (হুজাইফা
রাঃ) জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি সেই যুগে উপনীত হই তাহলে আমি কি করব?
তিনি (সাঃ)
বললেনঃ “তুমি আমীরের নির্দেশ শোন এবং তার আনুগত্য কর। যদিও সে তোমার পিঠে আঘাত (নির্যাতন)
করে এবং তোমার ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নেয় তবুও তার কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর”।
কিতাবুল ইমারাহ
(প্রশাসন ও নেতৃত্ব) অধ্যায়,
সহীহ মুসলিমঃ
৪৫৫৪।
বিদ্রোহ করা
কখন জায়েজ হবে?
যখন শাসক নিজেরা
নামায পড়া ত্যাগ করবে অথবা মুসলিমদের নামায পড়তে বাধা দেবে, অথবা স্পষ্ট শিরকে লিপ্ত
হয়ে মুর্তাদ হয়ে যাবে। তখন যদি মুসলিমদের ক্ষমতা থাকে তাহলে তারা তাকে ক্ষমতা দিয়ে
সরিয়ে দেবে। কিন্তু যদি ক্ষমতা না থাকে, তাহলে বিদ্রোহ করা জায়েজ হবেনা। কারণ বিদ্রোহ
করলে উলটা মুসলিমদের হত্যা নির্যাতন করবে।
এইভাবে বিদ্রোহ করে মুসলিমদের নির্যাতনের কারণ হলে সেই অত্যাচারী শাসকের সাথে সাথে
বিদ্রোহী মুসলিমিরাও দায়ী হবে।
রাসূলুল্লাহ্
(সাঃ) বলেছেনঃ
"তোমাদের
উত্তম শাসক হচ্ছে যাদের তোমরা ভালোবাসো এবং তারাও তোমাদের ভালোবাসে। তোমরা তাদের জন্য
দোয়া কর এবং তারাও তোমাদের জন্য দোয়া করে। তোমাদের দুষ্ট শাসক হচ্ছে, যাদের তোমরা ঘৃণা
কর এবং তারাও তোমাদের ঘৃণা করে। তোমরা তাদের অভিশাপ দাও, আর তারাও তোমাদের অভিশাপ দেয়।
লোকেরা বলল,
হে আল্লাহর রাসূল! এমন অবস্থার উদ্ভব হলে আমরা কি তাদের ক্ষমতাচ্যুত করব না?
তিনি বললেনঃ
না, যতদিন তারা (সরকারী উদ্যোগে) তোমাদের মাঝে নামায কায়েম করে। জেনে রাখ, যদি কেউ
তোমাদের কারো ওপর শাসক নিযুক্ত হয়, এবং সে তাকে আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত দেখে তাহলে
সে যেন তাদের এই আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজের নিন্দা করে। কিন্তু সে যেন আনুগত্য তুলে
না নেয়।"
সহীহ মুসলিমঃ
৪৫৭৪।