বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

প্রসংগঃ “Shake” ইয়াসীর ক্বাদী (The Unqualified Qadhi)

প্রসংগঃ “Shake” ইয়াসীর ক্বাদী (The Unqualified Qadhi)

(((#প্লিজ লেখাটা অনেক বড় হলেও, আপনারা কেউই পুরো লেখাটা না পড়ে এড়িয়ে যাবেন না। এই পোস্টে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বারাকাল্লাহ ফীকুম।)))

একবার আমার পরিচিত এক ছোটভাই বললোঃ আচ্ছা ভাইয়া টাখনুর নিচে কাপড় পড়া যদি হারাম হয়, তাহলে ওয়েস্টের (লন্ডন/আমেরিকার) অনেক স্কলার (আলেম) টাখনুর নিচে প্যান্ট পড়ে কেনো?

আমি বললামঃ ওয়েস্টের কোন “স্কলার” টাখনুর নিচে কাপড় পড়ে?

সে বললোঃ ইয়াসির ক্বাদী…(সাথে আরো ২-১ জন পরিচিত টিভি বক্তার নাম বললো)।

আমি বললামঃ প্রথম কথা, ইয়াসীর ক্বাদী কোনো স্কলার না। সে একজন দ্বাইয়ী (যে মানুষকে দাওয়াত দেয়)।. আর যে টাখনুর নিচে কাপড় পড়ে – সে যে কোনো আলেম না, প্রমান হিসেবে এতটুকুই যথেষ্ঠ। দলীল -

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআ’লা ৩ শ্রেণীর মানুষের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পাপ থেকে মুক্ত করবেন না, এমনকি তাদের প্রতি তাকাবেন না।
১. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী
২. উপকার করে খোটাদানকারী
৩. মিথ্যা কসম করে দ্রব্য বিক্রয়কারী।”
সহীহ মুসলিম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহীহ হাদীসগুলোতে টাখনুর নিচে কাপড় পড়ার যে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে, এটা জানার পরে কোনো আলেমতো দূরের কথা, একজন সাধারণ মানুষও টাখনুর নিচে কাপড় পড়ার আগে ১০ বার চিন্তা করবে।

আজকাল মানুষ যাদেরকে “আলেম” মনে করেঃ
১. টিভিতে কাউকে কথা বলতে দেখলে
২. কুরান হাদীসের অপব্যখ্যা করে কিছু লেখালিখি করতে পারলে
৩. ইউটিউব বা ইন্টারনেটে কিছু লেকচার ছেড়ে জনপ্রিয়তা পেলে
৪. ফেইসবুক, টুইটারে কয়েক লক্ষ লাইক/ফলোয়ার/মুরীদ জোটাতে পারলে
৫. বড় কোন মাদ্রাসাতে বা সংগঠনে পজিশান বা ক্ষমতা দখল করে বসে থাকলে
৬. মুফতি, মাওলানা ইত্যাদি সার্টিফিকেট নিলে বা নামের আগে মুফাসসির, মুহাদ্দিস, শায়খ ইত্যাদি টাইটেলে যোগ করলে
৭. হৃদয় গলানো বা গরম গরম আবেগী বক্তৃতা দিয়ে বা মনভুলানো কিছু লেখালিখি করে মানুষের ব্রেইন ওয়াশ করতে পারলে

কিন্তু এইগুলো কি আসলেই কারো “আলেম” হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ? ইসলাম কি আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, এই গুণগুলো কারো মাঝে থাকলেই সে আলেম হয়ে যাবে?

আমাদের আগের যুগের মুসলমানেরা কিন্তু এইভাবে মানুষকে “আলেম” হিসেবে নিতোনা। কারণ, আমরা যারা সাধারণ মানুষ, দ্বীন সম্পর্কে অভিজ্ঞ না, তাদের সামনে যদি একজন মূর্খ লোকও সামান্য কিছু পড়াশোনা করে আলেমের লেবাস ধরে, আমরা কিন্তু ধরতে পারবোনা – এই লোকটা আসলেই আলেম কিনা? নাকি আলেম না হয়েও সে আলেমদের অভিনয় করে মানুষকে ধোকা দিচ্ছে? যেমন একজনু জহুরীই কেবলমাত্র চিনতে পারবে কোনটা রত্ন কোনটা সস্তা পাথর, একজন স্বর্ণকারই চিনতে পারবে কোনটা স্বর্ণ আর কোনটা সিটি গোল্ড (ইমিটেশান), ঠিক তেমনই একজন প্রকৃত আলেমই আসলে চিনতে পারবেন কে আলেম আর কে জাহেল।

এইজন্য তাবেয়ীদের যুগ থেকেই, যখন থেকে মুসলমানদের মাঝে “উলামায়ে সু” (মন্দ আলেম) ও আয়াম্মায়ে দ্বোয়াল্লিন (পথভ্রষ্ট ইমাম) ঢুকে গেছে, আমাদের আলেমরা উম্মতকে বার বার সতর্ক করে গেছেনঃ ইসলাম শেখার জন্য যাকে তাকে “উস্তাদ” বা শিক্ষক হিসেবে না নেওয়ার জন্য, যার তার কথা বা ওয়াজ শোনা বা বই না পড়ার। দ্বীনের ব্যপারে “প্রকৃত আলেম” ছাড়া অপরিচিত, অজ্ঞ লোকদেরকে আলেম মনে করে তাদের কথা বিশ্বাস করবেনা। যদি করো তাহলে যেন তুমি তোমার দ্বীনকেই ধ্বংস করলে!

অপরিচিত (অজ্ঞ/বেদাতী) লোকদের কথা শোনা খুবই মারাত্মক একটা বিষয়। কারণ অতীত থেকে আজ পর্যন্ত এমন অনেক ঘটনাই হয়েছে যে, অপরিচিত লোক সে কি প্রকৃত আহলে সুন্নাহ নাকি আহলে বেদাত ভালোভাবে খোজ না নিয়েই তার কথা শুনেছে। আর ধোকাবাজ, চতুর লোকেরা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে কৌশলে শিরক বেদাতকে সুন্দরভাবে সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থানপন করেছে। প্রথম প্রথম অনেকেই, “উনার কথা শুনতে ভালো লাগে”, “সেতো কুরান হাদীসের কথাই বলছে” – এই যুক্তিতে তার কথা শুনেছে, কিন্তু জ্ঞানের অভাবে তার ভুল অথবা শিরক-বেদাত ধরতে না পেরে অনেক নিষ্ঠাবান ধার্মিক মুসলমানও শেষ পর্যন্ত সেই সমস্ত শিরক-বেদাতগুলোর মাঝে নিজেও পতিত হয়ে দ্বীনকে ধ্বংস করেছে (নাউযুবিল্লাহ)!

এইজন্য আলেমরা অপরিচিত কেউ এবং কেউ প্রকৃত আহলে সুন্নত নাকি ভেজাল আহলে সুন্নত, আহলে বেদাতের লোক কিনা, আলেম নাকি জাহেল – এই বিষয়গুলো ভালোভাবে যাচাই না করে তার কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান নিতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। 

এই ব্যপারে প্রখ্যাত তাবেয়ী, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
“এই যে জ্ঞান (দ্বীনের ব্যপারে), এটাই হচ্ছে তোমার দ্বীন। সুতরাং, কার কাছে থেকে তুমি দ্বীনের জ্ঞান নিচ্ছ সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকো।”

এইজন্য আমার যাকে ভালো লাগে, যার বই পড়ে বা ওয়াজ শুনে আমার কাছে বড় আলেম, জ্ঞানী ব্যক্তি মনে হয়, তাকেই আলেম হিসেবে মনে করা মারত্মক ভুল। বরং দেখতে হবে, যার ব্যপারে কথা হচ্ছে, তার ব্যপারে তার আগে যারা “আলেম” ছিলেন তারা তাকে কি তাকে আলেম মনে করতেন নাকি জাহেল (অজ্ঞ) মনে করতেন?

“ইলম” বা দ্বীনের জ্ঞান আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়ায় না, যার ইচ্ছা নিয়ে সে আলেম হয়ে যাবে অথবা এমনটা ঠিকনা যে, বই পড়েই কেউ আলেম হয়ে যাবে। এটা ঠিক ভালো কিছু বই পড়ে, বা কিছু উপকারী কথা শুনে আমার ইলম বাড়বে, কিন্তু তার মানে এইনা যে এর দ্বারা আমি বড় কোন “মুফতি”, “আলেম”, “আল্লামাহ” হয়ে যাবো। যেমন কেউ নিজে নিজে ডাক্তারীর উপরে কিছু বই পড়েই ডাক্তার হয়ে যায়না, তার জন্য তাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হবে, প্রফেসর ডাক্তারদের কাছ থেকে হাতে কলমে ডাক্তারী শিখতে হবে। ঠিক তেমনি কেউ নিজে নিজে শুধু কুরান হাদীস পড়েই আলেম হয়ে যেতে পারেনা। তাকে অবশ্যই আলেমদের কাছে যেতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে থেকে, তাদের সাথে সময় কাটিয়ে কুরান ও হাদীসের প্রকৃত জ্ঞান শিখতে হবে। এইভাবে আলেমদের সাথে ছাত্র-শিক্ষকের যে সম্পর্ক তৈরী হবে – এর মাধ্যমেই আসলে পরবর্তী প্রজন্মের আলেম তৈরী হয়। অর্থাৎ, আগের যুগের আলেম যারা থাকেন, তারা তাদের ছাত্রদের মাঝে যারা জ্ঞানী, বিচক্ষণ, আল্লাহওয়ালা তাদেরকে “আলেম” বলে ঘোষণা করে যান। উম্মতকে তাদের কাছ থেকেই উপকৃত হতে নসীহত করে যান।

এর উদাহরণ হিসেবে ইমাম মালেক এর বিখ্যাত ঘটনা বলা যেতে পারে।
ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেনঃ
“আমি ততদিন পর্যন্ত কোন ফাতওয়া দেইনি, যতদিন পর্যন্ত না ৭০ জন আলেম আমাকে ফাতওয়া দিতে বলেছেন।”

অর্থাৎ ইমাম মালেক নিজে থেকে কোন ফাতওয়া দেন নি (অর্থাৎ আলেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নি), যতদিন পর্যন্ত না ৭০ জন আলেম তাকে “আলেম” বলে ঘোষণা করেছেন। এইভাবে পূর্ববর্তী আলেমরা যখন কাউকে “আলেম” হিসেবে ঘোষণা করেন, আমরা সাধারণ মানুষেরা ঐ আলেমদেরকে অনুসরণ করবো, তাদের কাছ থেকে ইলম নেবো – তবে অন্ধভাবে নয়, কুরান ও সুন্নাহর ভিত্তিতে।

মুসলিমদের চিরাচরিত নীতি অনুযায়ী, বর্তমান যুগের আলেম কে এটা জানার জন্য আমরা দেখবো এর আগের যুগে যারা “আলেম” ছিলেন তারা কাকে আলেম বলে ঘোষণা করেছেন। বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আলেমদের মাঝে সাবেক সৌদি প্রধান মুফতি আল্লামাহ, শায়খ আব্দুল আ’জীজ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বাজ রাহিমাহুল্লাহ, শীর্ষস্থানীয় অন্য আরেকজন আলেম আল-ফকীহ, শায়খ মুহা’ম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন – এই দুইজনকেই যখন প্রশ্ন করা হয়েছিলো – আপনাদের পরে আমরা কার কাছে যাবো – ফতোয়া নেওয়ার জন্য? তারা সবার আগে যার কথা বলেছিলেন তিনি হচ্ছেন – আল্লামাহ, শায়খ সালেহ আল-ফাওজান হা’ফিজাহুল্লাহ এর নাম। উল্লেখ্য শায়খ বিন বাজ, শায়খ উসাইমিনসহ আরো অন্যান্য বড় বড় আলেমরা আমদেরকে শায়খ ফাওজানের কাছ থেকে ইলম নিতে বলেছেন।
__________________________________

এবার আসি আলোচনার মূল প্রসংগে…

ইয়াসির ক্বাদী পীস টিভিতে বেশ কিছু লেকচার দিয়ে ভারত বাংলাদেশে কিছুটা জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু পীস টিভিতে যারা বক্তব্য দেয় তাদের সবাই কি আলেম? তাদের মাঝে কি অজ্ঞ বা পথভ্রষ্ট কোন বক্তা নেই?

আমার জানা মতে পীস টিভি উর্দুতে শায়খ উয়াসী উল্লাহ আব্বাস হা’ফিজাহুল্লাহকে একবার আমন্ত্রন জানানো হয়েছিলো এবং তিনি বক্তব্য দেন। শায়খ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাস হচ্ছে বর্তমান মক্কাতে উলামায়ে কিবারদের (সবচাইতে বড় আলেমদের) মধ্যে একজন, যিনি কা’বার ডেপুটি মুফতি হিসেবে মসজিদুল হা’রামে নিয়মিত দারস দিয়ে থাকেন। অপরদিকে, ডা. জাকির নায়েকের ৮-১০ বছরের ছেলে মেয়েকগুলোও নাকি লেকচার দেয়! অথচ বলতে গেলে, এরা আকীদা ও মানহাজ (চলার নীতি), কিতাব ও সুন্নাহ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেনা! এটা যদি হয় তাদের স্কুলের বার্ষিক একটা প্রোগ্রাম, যেখানে বাচ্চাদেরকে শুধুমাত্র শিক্ষা দেওয়াই হচ্ছে উদ্দেশ্য তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু এটা যদি হয়, কোন বিশাল সমাবেশে দর্শকদেরকে উদ্দেশ্য করে লেকচার দেওয়ানো, তাহলে এইভাবে সাধারণ মানুষকে আলেমদের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া - এটা মারাত্মক ভুল।

তাই, প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা! আপনারা কাউকে বক্তব্য দিতে দেখলেই তাকে বড় আলেম বলে মনে করবেন না। আগে দেখে নেবেন, সে আসলেই কতটকুক জ্ঞানী, সে কোথায় কার কাছে পড়াশোনা করেছে, পড়াশোনা করে সে কি মানুষকে সুন্নতের দিকে দাওয়াত দেয় নাকি বেদাতের দিকে দাওয়াত দেয়?

ইয়াসীর ক্বাদী বর্তমান যুগে ইসলামের উপর পড়াশোনা করার জন্য শ্রেষ্ঠ একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মদীনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে যান। কিন্তু, কুরান ও সুন্নাহর যেই নীতি, যার উপরে আমাদের অতীত যুগের নেককার লোকেরা ছিলেন, সে মদীনাতে থাকা অবস্থাতেই তার বিরোধীতা করা শুরু করে। আর যেই আলেমরা এই নীতির উপরে দাওয়াত দেন, তাদেরকে সে প্রকাশ্য আক্রমন করতো। তার ব্যপারে অভিযোগ আসলে যেই উস্তাদেরা (যারা তখনকার ও বর্তমান সময়ে মদীনার আলেম হিসেবে পরিচিত) তাকে শিক্ষা দিতেন তারা তাকে বেশ কয়েকবার উপদেশ দেন। কিন্তু, সে শুধু ডিগ্রীটাই নেয় মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, কিন্তু মদীনার শিক্ষাকে সে প্রত্যাখ্যান করে আমেরিকাতে ফিরে যায়। সেখানে গিয়ে সে কুরান ও সুন্নাহর যেই নীতি যুগযুগ ধরে মুসলিম আলেমরা অনুসরণ করে আসছেন, সেটার সমালোচনা করে ইসলামকে আমেরিকার উপযোগী করার জন্য মডারেট (পরিবর্তন) করার দাওয়াত শুরু করে। এর উপর ভিত্তি করে কয়েক বছর আগে কবর পূজারী, সূফী, শিয়া, মডারেটসহ (দ্বীনের পরিবর্তনকারী) এইসমস্ত ভ্রান্ত তরীকার লোকদের সাথে বন্ধুত্বের ও আনুগত্যের চুক্তি করে।

আহলে সুন্নতের উপর যুলুমকারী এই চুক্তি ও ইয়াসির ক্বাদীর মারাত্মক এই গোমরাহীর বিপক্ষে আজ থেকে বছর আগেই মদীনার একজন সিনিয়র আলেম, শায়খ মুহা’ম্মাদ বিন হাদী আল-মাদখালী হা’ফিজাহুল্লাহ ইয়াসির ক্বাদী সম্পর্কে বলেনঃ
“সে যেই নীতির উপরে আছে (হক্কের সাথে বাতিলকে মিশিয়ে দেওয়া), এই নীতির উপরে থেকে কেউ যদি মদীনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি না, খোদ কা’বা থেকে ডিগ্রী নিলে তার কোন উপকারে আসবেনা।”

এছাড়াও ইসলাম সম্পর্কে ভুল ও মিথ্যা বলে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কারণে শায়খ মুহাম্মাদ বিন হাদী, শায়খ ইব্রাহীম আর-রুহাইলিসহ যেই সমস্ত আলেম যারা ইয়াসির ক্বাদীকে চিনতেন ও শিক্ষা দিতেন তারাই তাকে তাকে হিজবী (হক্কের বিরোধীতা করে ভ্রান্ত ফেরকার অনুসারী), কাজ্জাব (বড় মিথ্যাবাদী) সহ কঠোর সমালোচনা করেন।

আমেরিকা, কানাডাতে বেশ কিছুদিন ধরে ইয়াসির ক্বাদী খুব বেশি প্রচার করে বেড়ায়, সব ব্যপারে নাকি আলেমদের কাছ থেকে ফাতওয়া নেওয়া যাবেনা! কারণ আলেমরা এইসব ব্যপারে জানেনা (তার মতো প্রবৃত্তির অনুসারীরা আলেমদের থেকেও বেশি বুঝে!) আমেরিকাতে যারা থাকে সেই সমস্ত মানুষদের নাকি তার মতো “স্বঘোষিত মডারেট মুফতিদের” (!) কাছ থেকে ফাতওয়া নিতে হবে?

সাধারণ মানুষদেরকে আলেমদের কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন করে অজ্ঞ লোকদের সাথে জুড়ে দেওয়ার জঘন্য এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শায়খ সালেহ আল-ফাওজানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ
“সে তোমাদেরকে আলেমদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছে।”

এক নজরে ইয়াসির ক্বাদীর গোমরাহীর কিছু বর্ণনাঃ
এইগুলো সে তার লেকচারে প্রচার করে বেড়ায় -
১. শিয়াদের ব্যপারে আহলে সুন্নতের কঠোর অবস্থান আসলে চরমপন্থা, এর কোন দলীল নেই। এইগুলো হচ্ছে অজ্ঞ লোকদের ছেলেমানুষি। তাদের সাথে মিলে-মিশে থাকতে হবে, তাদের মতবাদকে মুসলিমদের দল বলে মেনে নিতে হবে।
২. আলেমদের কাছ থেকে ফাতওয়া নেওয়া যাবেনা। আমেরিকাতে যেই সমস্ত (নামধারী হুজুর, দাড়ি চাছা মডারেট মুসলিম, শিরকি বেদাতী মারাত্মক সূফী) আছে তাদের কাছ থেকেই ফাতওয়া নিতে হবে।
৩. আলেমরা হচ্ছে জোকার এর মতো, এরা কি বলে কি করে কোন কিছুর ঠিক নাই। এরা আসলে মধ্যযুগে বাস করছে, এরা বর্তমান দুনিয়া সম্পর্কে জানেনা, না জেনে ভুল ফাতওয়া দেয়।
৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর “সীরাত” বা জীবনী মানা যাবেনা – এইগুলো হচ্ছে গালগল্প (নাউযুবিল্লাহ)।
৫. কবর পূজারী, সূফী, আশারি মাতুরিদী, শিয়া সবার সাথে মিলে-মিশে থাকতে হবে, তাদেরকে সম্মান করতে হবে। তাদের শিরক-বেদাতের বিপক্ষে বলা যাবেনা।
৬. ইউসুফ কারযাভী হচ্ছে একজন আদর্শ আলেম। (ইউসুফ কারযাভী এজকজন ইখওয়ানি ধর্মগুরু, যে শিরকি কুফুরী ও চরমমাত্রার ভ্রান্ত ফতোয়া দেওয়ার জন্য কুখ্যাত)।
৭. ইসলাম একেক দেশে একেক রকম হওয়া উচিত। 
৮. আলেমদের ফাতওয়ার কারণে মুসলিমরা অনেক সময় পিছিয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটা গুরুত্বপূর্ণ হাদীসঃ
“আমার উম্মতের জন্য আমি ৩টা জিনিসের ব্যপারে বেশি ভয় করি। তার মাঝে প্রথম হচ্ছেঃ আয়াম্মায়ে দ্বোয়াল্লিন বা পথভ্রষ্ট ইমাম।
মুসনাদে আহমাদ, হাদীসের সনদ সহীহ।

পথভ্রষ্ট বক্তা, আলেমদের ফেতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে শায়খ সালেহ আল-ফাওজান বলেনঃ
“বর্তমান যুগে অন্য অনেক ফেতনার সাথে এই উম্মত সবচাইতে বড় যে ফেতনার সম্মুখীন সেটা হচ্ছে - অনেক দ্বায়ী আছে যারা ইলম ছাড়া অজ্ঞতাবশত মানুষকে গোমরাহী ও বাতিলের দিকে দিকে দাওয়াত দিচ্ছে।”

নিঃসন্দেহে ইয়াসির ক্বাদী ও তারমতো বক্তা যারা অজ্ঞতা ও বাতিল প্রচার করে সস্তা জনপ্রিয়তা পায়, এরাই হচ্ছে সেই আয়াম্মায়ে দ্বোয়াল্লিন এর ফেতনা – যার ব্যপারে আমাদের সকলের সজাগ থাকা উচিত।
ওয়া সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামা আলান-নাবী।