প্রসংগঃ আব্দুল মালেক আল-কাউসারী...
ভারত বাংলাদেশে হানাফী হওয়ার
দাবীদার দেওবন্দী বেরেলবী সূফীরা হানাফী মাযহাব নাম দিয়ে খামখেয়ালি বশত “ভারতীয় ইসলামকেই”
সঠিক মনে করে এবং সত্যিকারের ইসলাম যা সালফে সালেহীনসহ মুহাদ্দিসিনদের মাধ্যেম আমাদের
কাছে এসে পৌছেছে সেটাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। আর এই ভারতীয় ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য
তারা মিথ্যাচার, হাদীস নিয়ে প্রতারণা, ওলামাদের কথাকে কাট-পেস্ট করে লাগানো…এমন কোনো
ঘৃণ্য কাজ নেই যে তারা করেনা।
উম্মতের ঐক্যের দাবীদার কিছু
তরুণদের কাছ থেকে আমি প্রথম আব্দুল মালেক নামক জনৈক “হানাফী” (আসলে আশয়া’রি মাতুরিদি)
আলেম আব্দুল মালেকের নাম শুনি। মূলত সে আল-কাউসার নামক একটা কট্টর মাযহাবী পত্রিকার
লেখক। সে তার ম্যাগাজিনের একটা লেখায় লিখেছেঃ (লিংক কমেন্টে)
“বিভ্রান্তিবশত তারা নিজেদেরকে
চার মাযহাবের কোনো একটির সাথে সম্বন্ধ করা থেকে বিরত থাকেন এবং নিজেদেরকে ‘আহলে হাদীস’
বলে পরিচয় দেন।”
তার মতে নিজেকে হানাফী/শাফেয়ী/মালেকী/হাম্বালি
পরিচয় না দিয়ে আহলে হাদীস পরিচয় দেওয়া একটা বিভ্রান্তি!
এইসমস্ত আধা-মুফতিদের বাদ দিয়ে
চলুন আমাদের অতীত যুগের শ্রেষ্ঠ ইমাম ও আলেমরা আহলে হাদীসদের সম্পর্কে কি বলছেন সেটা
দেখি।
১. “ইমাম আহলে সুন্নাহ” নামে
পরিচিত, ১০ লক্ষের অধিক হাদীসের হাফেজ, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহ কাদেরকে
বেশি মূল্যায়ন করেছেন, যারা নিজদেরকে “মাযহাবি” নামে পরিচয় তাদেরকে, না যারা নিজেদেরকে
“আহলে হাদীস” নামে পরিচয় দেয় তাদেরকে?
ক. ইমাম আহমাদ ইবেন হাম্বল
(রহঃ) যখন ৭৩ ফির্ক্বাহর মধ্যে নাজিয়াহ ফির্ক্বাহ (নাজাতপ্রাপ্ত দল) সম্পর্কে বলেছিলেনঃ
“যদি তারা “আহলে হাদীস” না
হয় তবে আমি জানিনা তারা অন্য কারা।”
দেখুন সহীহ বুখারীর ৭৩১১ নং
হাদীসের ব্যখ্যা, বুখারীর জগদ্বিখ্যাত বাখ্যাগ্রন্থ ইবনু হাজার আল-আসকালানী (রহঃ) এর
ফাতহুল বারী, ১৩দশ খন্ড, ২৯৩ পৃষ্ঠা।
আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) পর্যন্ত
একথার সনদের ব্যাপারে ফাতহুল বারীতে বলা হয়েছেঃ
“ইমাম হাকিম (রহঃ) তার মারিফাতু
উলূমিল হাদীস গ্রন্থে আহমাদ বিন হাম্বল থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেন যে এঁরা (নাজাতপ্রাপ্ত
দল, আল-ফিরকাহ আন-নাজিয়াহ) যদি আহলে হাদীস না হয় তাহলে আমি জানিনা তারা কারা।”
খ. “আমি আমার পিতা আহমাদ বিন
হাম্বালকে এক ব্যক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম, যে তার দ্বীন সংক্রান্ত বিষয়- 'তালাক্ব
ও অন্যান্য বিষয়ের ক্বসম' এর ব্যাপারে সওয়াল করতে চায় যে ব্যাপারে সে কিনা পরীক্ষায়
নিপতিত হয়েছে। সেখানে "আসহাবে রায়" এর একটি দল এবং"আসহাবে হাদীস"
এর এমন একটি দল রয়েছে যারা হাদীস মুখস্ত করেনা এবং হাদীসের সনদ কোনটা দুর্বল আর কোনটা
শক্তিশালী তা চেনেনা। এই দুই গ্রুপের উপস্থিতিতে সে কাকে ফতওয়া জিজ্ঞেস করবে? আহলে
রায়কে নাকি আহলে হাদীসের ওই গ্রুপটাকে যদিও তাদের হাদীসের ব্যাপারে জ্ঞান কম? তিনি
(আহমাদ বিন হাম্বল) বললেনঃ আসহাবে হাদীস বা আহলে হাদীসকে (যদিও ওই আহলে হাদীস হাদীস
কম জানে) জিজ্ঞেস করবে, কেননা য'ঈফ হাদীস ও আবু 'হানীফাহর রায় অপেক্ষা শ্রেয়।”
কিতাবুস সুন্নাহ, আব্দুল্লাহ
বিন আহমাদ বিন হাম্বল, ১ম খন্ড ১৮০ পৃষ্ঠা, আমার পিতা ও অন্য মাশায়েখদের কাছ থেকে আবূ
হানীফাহর ব্যাপারে কী স্মরণ রেখেছি অধ্যায়।
২. মুহাদ্দিসিনদের ইমাম, আমিরুল
মুমিনুন ফিল হা’দীস – অর্থাত হাদীসের ব্যপারে ঈমানদারদের নেতা, মুহা’ম্মাদ ইবনে ইসমাঈল
রাহিমাহুল্লাহ যিনি – "ইমাম বুখারী" নামে বেশি পরিচিত তার বক্তব্যঃ
ফাতহুল বারীতে অনুরূপ আছে,
ইমাম আত-তিরমিযী (রহঃ) উপরোক্ত
অধ্যায়ের হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন, আমি মুহাম্মাদ বিনইসমাঈল (ইমাম বুখারীর আসল নাম)
কে বলতে শুনেছি যে তিনি তাঁর উস্তাদ আলী ইবনুল মাদীনীকে বলতে শুনেছেন যে,
“তারা (মুক্তিপ্রাপ্ত দল) হলো
আসহাবুল হাদীস।”
৭৩ ফির্ক্বাহর আলোচনায় ইমাম
আততিরমিযী এ কথা এনেছেন।
৩. তাফসীরের ইমাম, ইবনে কাসীর
রাহিমাহুল্লাহ আহলে হাদীসদের ব্যপারে উল্লেখ করেছেনঃ
তাফসীর ইবনে কাসীরে সুরাহ বানী
ইসরাঈলের ৭১ নং আয়াত [ يوم ندعو كل أناس بإمامهم ]
"যেদিন আমি প্রত্যেক মানুষকে তার “ইমা” ধরে ডাকব” এর তাফসীরে ইবনু কাসীর (রহঃ)
বলেন,
هذا أكبر شرف لاصحاب الحديث لأن إمامهمالنبي صلى الله عليه و سلم
অর্থাৎ, এটি আসহাবুল হাদীস তথা আহলে হাদীসের সর্বোচ্চ
সম্মান কারণ তাদের ইমাম স্বয়ং নবী (সঃ)।
একই পোস্টে কথিত এই হানাফী
মুহাদ্দিসের অন্য একটা বিভ্রান্তির মাঝে রয়েছেঃ
“তাবলীগী জামাত, আকাবিরে দেওবন্দকে
গোমরাহ বলার আর মাযহাব ও তাকলীদকে গোমরাহী আখ্যা দেওয়ার যে প্রবণতা, তা সেখানের (সৌদি
আরবে) কোনো দায়িত্বশীল আলিম বা অনুসরণীয় মাশাইখের নয়।”
তিনি দাবী করেছেন, সৌদি আরবের
শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীনগণ শীর্ষস্থানীয় দেওবন্দী সূফীদেরকে ও তাবলিগ জামাতকে ভ্রান্ত
বলে মনে করেন না।
যে এই দাবী করে সে আসলে অজ্ঞ,
আরব দেশের বর্তমান আলেমে দ্বীনদের ব্যপারে তার কোনো জ্ঞান নেই। অথবা সে একজন প্রবৃত্তির
অনুসারী, নিজের মনমতো কথা বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে।
তাবলিগ জামাতকে “গোমরাহ” বা
পথভ্রষ্ট ও “শিরক ও বেদাতের দিকে আহবানকারী জামাত” হিসেবে আখ্যায়িত করে আরব বিশ্বের
যেই সমস্ত শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীনগণ ফাতওয়া দিয়েছেন তাদের সংক্ষিপ্ত লিস্ট দেওয়া
হলো। আসলে এই লিস্ট অনেক বড়, শীর্ষস্থানীয় ৫ জনের নাম দেওয়াই যথেষ্ঠ মনে করছি।
১. শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম
আলে-শায়েখ রাহিমাহুল্লাহ - সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, সৌদি আরাবিয়া।
২. শায়খ আবদুল আযীয বিন আবদুল্লাহ
বিন বায রাহিমাহুল্লাহ - সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, সৌদি আরাবিয়া।
৩. আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী
রাহিমাহুল্লাহ - বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, শায়খ বিন বাজ যাকে বিগত শতাব্দীর
“মুজাদ্দিদ” বলে মনে করতেন।
৪. শায়খ হামুদ আত-তুয়াইজিরি,
সুন্নাহর অক্লান্ত সৈনিক। তাবলীগ জামাতের গোমরাহী জানার জন্য ও তাদের থেকে সতর্ক থাকার
জন্য যার লেখা বই পড়ার জন্য শায়খ বিন বাজ রেকমেন্ড করেছেন।
৫. শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আফিফী,
প্রখ্যাত সৌদী আলেমে দ্বীন।
আর বর্তমান জীবিত শ্রেষ্ঠ আরব
দেশের আলেম যারা তাবলীগ জামাতকে পথভ্রষ্ঠ ও এই উম্মতের জন্য ফেতনা বলে আখ্যায়িত করেছেন
তাদের সংক্ষিপ্ত লিস্টঃ
১. আল্লামাহ শাইখ সালিহ বিন
আবদুল্লাহ আল-ফাউজান। আরব, আজম নির্বিশেষে যেই আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানিত, শায়খ বিন
বাজ, শায়খ উসাইমিন তাদের পরে যার ব্যপারে নির্ভর করার জন্য উম্মতেক উপদেশ দিয়ে গেছেন।
২. শায়খ সালিহ আশ-শুহাইমি
৩. শায়খ রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী
৪. শায়খ মুহাম্মাদ বিন হাদী
আল-মাদখালী
৫. শায়খ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাস
সর্বশেষঃ অতি সম্প্রতি ধোঁকাবাজ
কিছু লোক প্রচার করছে – আরব দেশের আলেমরা নাকি তাবলীগের অনেক প্রশংসা করে। তারা নাকি
ভারতে তাদের সাথে এসে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এইরকম একজন আলেম (আসলে ভ্রান্ত মানহাজের লোক)
এর নাম তারা বলে – আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ!
কানাকে কুড়েঘর দেখিয়ে যদি কেউ
বলে এটা হাইকোর্ট সে যেমন কিছুই ধরতে পারবেনা, ঠিক তেমনি আমাদের দেশের কাউকে যদি আরব
দেশের একটা খাম্বাকে কেউ দেখিয়ে বলে এটা “শায়খ আলীবাবা”, শতকরা ৯৮% মানুষ বুঝতে পারবেনা
এটা আসলে একটা খাম্বা নাকি সে একজন আলেম। কারণ, অধিকাংশ মানুষ দ্বীনের একেবারেই সাধারণ
জ্ঞান রাখেনা, কে আলেম কে জাহেল এই জ্ঞান রাখাতো দূরের কথা।
যাইহোক, অত্যন্ত দুঃখের সাথে
জানাতে বাধ্য হচ্ছিযে, কথিত এই আরব দেশের বড় আলেম (!) আসলে একজন ইখওয়ানি (মুসলিম ব্রাদারহুড
এর নেতা)।
http://en.wikipedia.org/wiki/Abd_al-Fattah_Abu_Ghudda
আর ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা মুসলিম
ব্রাদারহুডের ব্যপারে আপনার যদি সামান্য হলেই ধারণা থাকে, তাহলে আপনি অবশ্যই জানেন
– রাজনৈতিকভাবে সমর্থন পাওয়ার জন্য, সহজ বাংলায় বলতে গেলে ভোট পাওয়ার জন্য ইখওয়ানিরা
রাফেজী শিয়াদেরকেও প্রশংসা করে, কবর মাযারপূজারীদের সাথে বন্ধুত্ব করে, সেকুলার মুনাফেকদেরকে
খুশি করার জন্য দ্বীনকে কাটা-ছাট করে ইসলামের ভুল ব্যখ্যা দেয়।
একজন সত্যিকারের আলেম, শায়খ
বিন বাজের একটা ফাতওয়া এরা খুব প্রচার করে। এরা যে কি পরিমান দ্বিমুখী নীতির উপরে চলে,
এটা আরেকটা প্রমান। প্রথমে কিছু তাবলিগী তাদের ব্যপারে ভুল তথ্য দিয়ে শায়খ বিন বাজকে
প্রতারণা করে যার উপর ভিত্তি করে তিনি তাদের কিছু প্রশংসা করেন। কিন্তু আস্তে আস্তে
আরব দেশের ওলামাদের কাছে যখন স্পষ্ট হয়ে যায়, এই জামাতের মাঝে শিরক বেদাত আছে, তখন
শায়খ বিন বাজ যাচাই বাছাই করে তাবলীগ জামাতকে পথভ্রষ্ট ও ৭২টা বেদাতী দলের মধ্যে বলে
ফাতওয়া দেন। কিন্তু দ্বিমুখী নীতির তাবলিগীরা বিন বাজের প্রথম ফাতওয়াটার কথাই শুধু
বলে, আর অজ্ঞ লোকদের কাছে দ্বিতীয় ফাতওয়াটা না বলে তাদের সাথে আজ পর্যন্ত প্রতারণা
করে যাচ্ছে।