প্রশ্নত্তোরে ইসলামঃ
যিনা-ব্যভিচার ও গর্ভপাত নিয়ে প্রশ্নঃ
প্রশ্নঃ আজকাল সমাজে যিনা-ব্যভিচার ও
পরকীয়া অনেক বেড়ে গেছে, সাথে সাথে বেড়ে গেছে অবৈধ সন্তান জন্ম দেওয়া। অনেক মেয়ে
যিনা করে গর্ভবতী হয়, তারা চায়না তাদের পরিবার সমাজে কলংকিত হোক বা তার অপকর্মের
কথা অন্য কেউ জানুক। সে কি গর্ভপাত করে সন্তান নষ্ট করতে পারবে? যিনা-ব্যভিচার বা
অবৈধ সন্তানের কলংক ঢাকার জন্য কি তারা বিয়ে করতে পারবে?
উত্তরঃ কেয়ামতের একটা লক্ষণ হচ্ছে, যিনা-ব্যভিচার
অনেক ব্যপকতা লাভ করবে, মানুষ প্রকাশ্যেই যিনা করবে যার ফলে মুসলিম সমাজে অবৈধ
সন্তান বেড়ে যাবে। যাইহোক, সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটির ফতোয়া অনুযায়ীঃ যিনা
করার কারণে কোন নারী গর্ভবতী হলে সে সন্তানকে হত্যা করতে পারবেনা। সে নির্দিষ্ট
সময়ে বাচ্চা জন্ম দেবে, বাচ্চাটা মায়ের সাথে সম্পৃক্ত হবে, বাবার নামে পরিচিত
হবেনা। যদি সন্তান হত্যা করে তাকে কাল কেয়ামতের দিনে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে
হবে।
আর যিনা করার কারণ গর্ভবতী হয়েছে এটা
ঢাকার জন্য সে যিনাকারী বা অন্য কাউকেই বিয়ে করতে পারবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে
জিনা থেকে তোওবা করবে, বাচ্চা জন্ম দেবে, এর পরে সে ঐ যিনাকারী বা অন্য কাউকে বিয়ে
করতে পারবে, তার পূর্বে নয়।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারে, এটা কি নারীদের
প্রতি কঠোরতা নয়।
উত্তর হচ্ছেঃ হ্যা, নিশ্চয়ই – এই রকম অবস্থাতে নারীরাই বেশি
ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যিনাকারী ও যিনাকারী দুইজনে সমান অপকর্ম করলো, কিন্তু নারী সাফার
করবে বেশি। নারী গর্ভবতী হবে, পুরুষ হবেনা, নারী ও তার পরিবার দুনিয়াবাসীর সামনে
বেইজ্জতি হবে, অথচ যিনাকারী কে মানুষ তা জানবেই না। অনেক যিনাকারী যিনা করে সরে
পড়ে, হতে পারে সে অন্য কাউকে বিয়ে করে সংসার করা শুরু করলো। আর এইদিকে নারীটা হয় গর্ভপাত
করে নিজের ও সন্তানের জীবন ও স্বাস্থের ক্ষতি করবে - যা শরীয়ত হারাম করেছে। আর যদি
সে আল্লাহকে ভয় করে ও পরকালের কথা চিন্তা করে, তাহলে বাচ্চা জন্ম দেবে, এর কষ্ট
ভোগ করবে, তার উপর তার বিয়ে করাও কঠিন হয়ে যাবে।
নারীদের ক্ষতি বেশি হয় পাপে জড়িয়ে পড়লে – তার পূর্ব সতর্কতাবশত – তাদের হুকুম আহকামগুলোও বেশি।
=> নারীরা ইচ্ছা করলেই বাইরে যেতে
পারেনা, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া।
=> জরুরী প্রয়োজনে বাইরে বের হলেও
পুরুষ মাহরাম নিয়ে, পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হতে হবে, সুগন্ধি ব্যবহার না করে, যাতে
করে লম্পট পুরুষেরা তার দিকে আকৃষ্ট না হয়।
=> একা একা সফর করতে পারবেনা।
=> কোন গায়ের মাহরাম পুরুষের সাথে
নম্র বা মিষ্টি স্বরে কথা বলতে পারবেনা। তাদের সাথে একাকী বা নির্জনে অবস্থান করতে
পারবেনা।
=> তার ঘরে গায়ের মাহরাম কোন পুরুষকে
প্রবেশ করতে দিবেনা, দেবর হোক আর যাই হোক।
=> মোবাইলে, ফেইসবুকে, চ্যাট
ইত্যাদিতে পুরুষদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারবেনা।
আশা করি, যারা অভিযোগ করেন – কেন ইসলাম নারীদের জন্য এতো কঠিন
তারা সামান্য ধারণা পাবেন, ইসলাম নিয়ে বিস্তারিত স্টাডি করলে হয়তো বিষয়টা আরো
পরিষ্কার হবে।
যাকাত নিয়ে প্রশ্নঃ
আমরা যারা চাকুরী করি তাদের বেতন থেকে
প্রভিডেন্ট ফান্ড কাটা হয়, যেটা আমরা চাকুরী শেষ হলে পাই।
এইক্ষেত্রে যাকাতের বিধান কি?
উত্তরঃ টাকা যদি এমন হয় যখন ইচ্ছা তোলা
যাবে, তাহলে ঐ টাকার উপরে প্রতি বছর শেষে যাকাত দিতে হবে। আর যদি এমন হয় টাকা তোলা
যাবেনা, নির্দিষ্ট সময়ের আগে তাহলে ঐ টাকার উপরে যাকাত দিতে হবেনা। যেইদিন টাকা
হাতে পাবে এর পর থেকে যাকাত দিতে হবে।
সাওম নিয়ে প্রশ্নঃ
প্রশ্নঃ আমি ডায়েবেটিসের রোগী। ওষুধ
খেতে মনে ছিলোনা, আযানের পরে মনে হয় আর ঔষধ খেয়ে নিয়েছিলাম। আমার রোযা কি হবে?
উত্তরঃ সাহরী (ভাত/পানি যেকোন কিছু)
খাওয়া অবস্থায় আযান দিলে হাতের কাছে বা প্লেইটে যা থাকে সেটা খেয়ে শেষ করা যাবে।
কিন্তু নতুন করে কোন কিছু নেওয়া যাবেনা। কিন্তু খাওয়া হচ্ছেনা এমন অবস্থান আযান
দিলে এর পরে নতুন করে কোন কিছু খাওয়া যাবেনা, খেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। ইচ্ছাকৃতভাবে
কেউ এমন করলে তাকে পরবর্তীতে আরেকটা কাজায রোযা রেখে নিতে হবে।
দাম্পত্য নিয়ে প্রশ্নঃ
প্রশ্নঃ অনেক বোনের স্বামী বেনামাযী।
তারা কি তাদের স্বামী থেকে পৃথক হয়ে যাবেন?
উত্তরঃ বিষয়টির উপরে শায়খ উসাইমিন (রহঃ)
বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, বেনামাযি কাফের – তার সাথে বসবাস করা বৈধ নয়। আপনারা ফতোয়া আরকানুল
ইসলাম এর সালাত অধ্যায় দেখতে পারেন। তবে, কেউ প্রথমেই পৃথক না হয়ে, যদি কিছুদিন
ধৈর্য ধরে স্বামীকে সংশোধনের চেষ্টা করতে পারে। হয়তো স্বামী, জাহেল, শরীয়ত কি
জানেনা, তাই আগে তাকে সতর্ক করে, সংশোধনের চেষ্টা করে এর পরে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া
যেতে পারে। (এই মতামতটা দিয়েছেন শায়খ মুসলেহ উদ্দিন, যা বাস্তবতার সাথে
সামজস্যশীল, আর এর স্বপক্ষে তিনি রাসুল সাঃ এর এক কন্যার একটা ঘটনা দলীল হিসেবে
পেশ করেছেন – এ ব্যপারে আল্লাহই সবচাইতে ভালো জানেন)।