মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০১৪

আবু বকর আল-বাগদাদী ও চরপন্থী দল ISIS


মিথ্যা খিলাফতের দাবীদার আবু বকর আল-বাগদাদী ও চরপন্থী দল ISIS

মুসলিম উম্মাহর আলেম ও বিজ্ঞ ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে আইএসআইএস বা আইএসএর আসল চেহারাঃ পর্ব-১

বর্তমান সময়ে ইরাক ও সিরিয়ায় যে নতুন একটি মুজাহিদ দল আত্মপ্রকাশ করেছে, তার কার্যকলাপ নিয়ে মুসলিম বিশ্বে এক ধ্রুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। অল্প বয়সী মুসলিম যুবকেরা ও দ্বীনদার কিন্তু আবেগী লোকেরা এনিয়ে চরম বিভ্রান্তিতে ভুগছে। অনেকে এই গ্রুপকে কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে একমাত্র জিহাদী দল হিসাবে আখ্যা দিচ্ছে। আবার অন্যরা ভিন্ন মন্তব্য করছে। বিশেষ করে যখন তারা সিরিয়ার বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছে এবং ইরাকে তারা বেশ কিছু অঞ্চল নিজেদের করতলগত করে নিয়েছে। মুসলিম উম্মাহর এই জটিল পরিস্থিতে তাদেরকে সমথর্ন কিংবা বর্জন করার আগে তাদের আসল পরিচয় ও আদর্শ সম্পর্কে জানা এখন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। খেলাফত কায়েমের মূল ভিত্তি ও উপকরণ তৈরী হওয়ার আগেই তারা যেই খেলাফতের ঘোষণা দিয়েছে, তার আরবী নাম আরব মিডিয়ায় الدولة الإسلامية في العراق والشام বা الخلافة الإسلايمة বলে ব্যাপক প্রচার হচ্ছে। সংক্ষেপে একে বলা হয়, داعش দায়েশ।. ইংরেজী বার্তা সংস্থাগুলোতে একে Islamic State of Iraq and syria ev ISIS, ISIL, IS হিসাবে দেখানো হচ্ছে। বাংলা মিডিয়াতে এটিকে আইএসআইএল, আইএসআইএস, আইএস বলে প্রচার করা হয়।

ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব মৌলিক ভিত্তি ও উপকরণের প্রয়োজন তার ১% বাস্তবায়ন না করেই এই সংগঠনটি ইসলামী খেলাফতের ঘোষণা দিয়েছে এবং কল্পিত আবু বকর আল-বাগদাদী নামের একজনকে তাদের খলীফা হিসেবে নির্বাচন করে তার কাছে সমস্ত মুসলমানদের বাইয়াত করা ফরয বলে দাবী করেছে।

মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞ আলেম ও চিন্তাবিদগণ তাদের এই কার্যকলাপকে গ্রহণ করতে সম্পূর্ণ নারাজ। শুধু তাই নয়, ISIS এর ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য আলেমরা এদের সাথে যোগদান না করতে এবং তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা না করার আহবান জানিয়েছেন। কারণ, তারা শিয়াদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার দাবী করলেও, তাদের অবিবেচনাপূর্ণ কার্যকলাপ আসলে সুন্নী মুসলমানদের জন্য আরো বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যে সমস্ত কারণে মুসলিম আলেম ও দ্বাইয়ীরা এই সংগঠনের কার্যকলাপের কড়া প্রতিবাদ করেছেন, তা থেকে কয়েকটি কারণ নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলোঃ

১. তাকফীর তথা মুসলিমদেরকে কাফের-মুরতাদ ফতোয়া দেওয়া। এই সংগঠনের লোকেরা তাদের আদর্শের বিরোধীতাকারী যে কোন মুসলিমকে কাফের মনে করে। জন মাকীনের সাথে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের মুজাহিদ গ্রুপ আসেফাতুস শিমাল এর কমান্ডারের একটি ছবি প্রকাশ হওয়ার কারণেই তারা এই গ্রুপকে কাফের ফতোয়া দিয়েছে। অথচ, কাফের হওয়ার ব্যাপারে এই সাক্ষাৎকার ব্যতীত তারা অন্য কোন দলীল পেশ করতে পারেনি। এ কথা সুস্পষ্ট যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম অনেক কাফেরের সাথে মিলিত হয়েছেন এবং তাদের সাথে সাক্ষৎ করেছেন। কাফেরদের সাথে সাক্ষাৎ বা লেনদেন করলেই কোন মুসলিমকে কাফের বলা চরম মূর্খতা ছাড়া অন্য কিছু নয়। সুতরাং কোন মুসিলম কোন কাফেরের সাথে মিলিত হলেই তাকে কাফের ফতোয়া দেয়া মারাত্মক অপরাধ।

২. এই সংগঠনের লোকেরা সিরিয়ার الجيش الحر ফ্রিডম ফাইটার এর সকল যোদ্ধাকে একবাক্যে কাফের মনে করে। শুধু তাই নয়; তারা সিরিয়ার সকল অধিবাসীকেই কবর পূজারী আখ্যা দিয়ে তাদের উপর কুফুরীর ফতোয়া জারী করেছে।

৩. সিরিয়ায় যুদ্ধরত যেসব গ্রুপ তাদের আদর্শের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে, তারা তাদের রক্তকে হালাল মনে করে। তাদের এই আকীদাহএর ভিত্তিতে তারা সিরিয়ায় যুদ্ধরত একাধিক মুজাহিদকে হত্যা করেছে।

৪. তারা নিজেদের দলকে الدولة الإسلامية في العراق والشام অর্থাৎ ইরাক ও সিরয়ায় ইসলামী খেলাফত বা الخلافة الإسلامية ইসলামী খেলাফত নাম দিলেও তাদের অধিকৃত কোন অঞ্চলে তারা স্বাধীন ইসলামী আদালত প্রতিষ্ঠার ঘোর বিরোধী।
(ইন শা আল্লাহ চলবে)


Collected from Shaykh Abdullah Shahed Al-madani