যাকাত ও ফেতরা দেওয়ার ভুল সিস্টেমঃ টাকার বদলে যাকাতের
কাপড়, শস্যের পরিবর্তে টাকা
فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ
উচ্চারণঃ “ফাসতাক্বিম কামা উমিরতু”।
অর্থঃ তুমি সরল সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো, যেইভাবে
তোমাকে আদেশ করা হয়েছে। [সুরা হুদঃ ১১২]
দ্বীনের ব্যপারে বা যেকোন ইবাদত ঠিক সেইভাবে করতে হবে
যেইভাবে করতে আদেশ করা হয়েছে ক্বুরান ও সহিহ হাদীসে। এই হুকুমের বাইরে কেউ যদি অন্য
কারো তরীকায়, নিজের মনমতো কিছু করে যার হুকুম আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আমাদেরকে দেন নাই – তাহলে সেটা বাতিল, এইগুলোকেই ‘বেদাত’ বা ধর্মে নামে
নতুন আবিষ্কার বলা হয়। এই ব্যপারে স্পষ্ট হাদীস আছে শ্রেষ্ঠ হাদীসের কিতাব সহীহ বুখারী
ও সহীহ মুসলিমে।
মা আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেনঃ “কেউ যদি এমন কোন
কাজ করে, যার অনুমোদন আমাদের কাজের মধ্যে নেই - তাহলে সেটা মারদুদ বা প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারী ও মুসলিম]
এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“আমাদের কাজে” - এর দ্বারা তিনি দ্বীনকে বুঝিয়েছেন অর্থাৎ,
এমন কোনো কাজ করা যাবেনা যার দলীল কুরান বা সহীহ হাদীসে নাই কিন্তু সওয়াবের কাজ মনে
করে করা হবে।
যাকাত ও ফেতরা দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই যাকাত ও
ফেতরা কিভাবে দিতে হবে তা সহীহ হাদীসে স্পষ্ট করে বলা আছে। যেমনঃ-
=> ধান, গম ইত্যাদি ফসলের যাকাত দিতে হবে মোট ফসলের
১০ ভাগের ১ ভাগ (যদি আকাশের বৃষ্টি দিয়ে ফসল হয়) অথবা ২০ ভাগের ১ ভাগ (যদি সেচের মাধ্যমে
ফসল ফলানো হয়) – কিন্তু এই কথা
বলা হয় নাই যে, ফসলের যাকাত ফসলের টাকা দিয়ে দিলে দিতে হবে। বরং কুরান ও হাদীসে বলা
হয়েছে ফসলের যাকাত দিতে হবে ফসল দিয়েই।
=> স্বর্ণ, রূপা বা নগদ টাকার যাকাত দিতে হবে তাঁর
২.৫, এই কথা কোথাও বলা নাই – এইগুলোর যাকাত দিতে হবে ‘যাকাতের কাপড়’ কিনে গরীবদের মাঝে বিতরণ করে। বরং, এর মূল্য যাকাতের খাতে ব্যয় করতে হবে।
আর ফেতরার ব্যপারে বলা হয়েছে
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
“প্রত্যেক গোলাম,
আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ (প্রায় ৩ কেজি) পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন
এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।”
এইবার, এর বিপরীতে দেখুন – শয়তান সবসময় চায় বান্দাকে ইবাদত থেকে দূরে
রাখতে। আর যদি দূরে রাখতে নাও পারে তাহলে অন্তত এর মাঝে ভুল বা শিরক-বেদাত ঢুকিয়ে ইবাদতকে
নষ্ট করে দিতে।
এইরকম একটা শয়তানী ষড়যন্ত্র হচ্ছে – টাকার পরিবর্তে শাড়ি-লুংগি দিয়ে যাকাত দেওয়া
ও শস্যের পরিবর্তে টাকা দিয়ে ফেতরা দেওয়া।
ইসলামী ফাউন্ডেশানের মতো বোকা হুজুর যারা শরীয়াত কি জিনিস
জানেনা, তারা যুক্তি দেয়ঃ ফেতরা ধান বা গম দিয়ে দিলে মানুষের কোন উপকারে আসবেনা তাই
টাকা দিতে হবে। কিন্তু এই লোকগুলো, যাকাত দেওয়ার সময় এই কথা চিন্তা করেনা, চাল দিলে
যদি কারো উপকার না হয় (ভ্রান্ত ধারণা), তাহলে যাকাতের সময় কেনো আমার তাকে কাপড় কিনে
দিতে হবে? বরং, যাকাতের টাকা দিয়ে দেই – সে তার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করুক।
এইটা এক প্রকার শয়তানী ধোঁকা। কোনটা দিলে কার উপকার কার
ক্ষতি সে চিন্তা তোমাকে কে করতে বলেছে? তোমাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) যেই নির্দেশ
দিয়েছেন – সেটা করো, তাহলে তুমি নাজাত পাবে। ভ্রান্ত
হুজুরের কথা শুনে, মনগড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে শরীয়তকে চেঞ্জ করে টাকার পরিবর্তে শাড়ি-লুংগি
দিয়ে যাকাত দিলে অথবা, শস্যের পরিবর্তে টাকা দিয়ে ফেতরা দিলে – সেইটা গ্রহণযোগ্য নয়। বরং, শরিয়ত চেঞ্জ
করার স্পর্ধা দেখানোর জন্য হাউজে কাউসার থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। হাদীস
দেখুন, যারা শরিয়ত চেঞ্জ করে, নিজের মনমতো ইবাদত করে কেয়ামতের দিন তাদের কি পরিণতি
হবেঃ
সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, কেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে
কিছু মুসলমান যখন হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করতে যাবে, তখন ফেরেশতারা তাদেরকে তাড়িয়ে
দেবে। রাসুল (সা.) যখন তাদেরকে আসতে দেয়ার কথা বলবেন, তখন ফেরেশতারা তাদের অপরাধের
কথা বলবে যে, রাসুল (সা.) এর পরে তারা দীনকে পরিবর্তন করেছিলো। অর্থাত তারা ইবাদাত
করেছে ঠিকই, ইসলাম পালন করেছে ঠিকই, কিন্তু বেদাতী ভুল পদ্ধতিতে। এ কথা শোনার পর রাসুল
(সা.) বলবেন, যারা আমার পরে আমার পরে দীনকে পরিবর্তন করে ফেলেছে তাদেরকে দূরে তাড়য়ে
দাও, তাদেরকে দূরে তাড়িয়ে দাও।
পছন্দ আপনার, হুজুরের শিখানো বাপ দাদার বেদাতী ভুল আমল
করে হাউজে কাউসার থেকে বঞ্চিত হবেন নাকি সুন্নাতের পাবন্দী হবেন।