প্রশ্নঃ মাজার, পীর, অলি
আওলিয়াদের সিজদা করলে শিরক হবে কেন ?
উত্তরঃ পুরো লেখাটি না
পড়ে কেউ কোন কমেন্ট করবেন না।
পীর পূজারী মুশরিকদের যুক্তি
খন্ডনঃ
পীর পূজারীদের জবাব দেওয়ার
আগে একটা বিষয় পরিষ্কার করে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি। আর সেটা হলো “পীর পূজা” শব্দটি দিয়ে আমরা কি বোঝাতে চাচ্ছি সেটা।
কেউ যদি কোনো ইবাদত যা
শুধুমাত্র আল্লাহর হক্ক, তা পীরকে দেয় অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতে পীরকে শরীক করে তাহলে
তাকে বলা হয় পীর পূজা। যেমন, দুয়া করা, সিজদা করা, কোরবানি করা ইত্যাদি।
অনেক পীর পূজারীদের দেখা
যায় তারা তাদের পীরদেরকে সিজদা করে, এবং তাদের এই জঘন্য অপকর্মকে জাস্টিফাই করার জন্য
বিভিন্ন যুক্তি প্রদর্শন করে। যেমন তারা বলে, “সিজদা হলো দুই প্রকার, এক প্রকার ইবাদতের সিজদা যা আল্লাহর জন্য, আরেক প্রকার হলো
তাজীম বা সম্মানের সিজদা যা তারা তাদের মাজার আর পীরদেরকে করে থাকে। এর স্বপক্ষে তারা
ইউসুফ (আঃ) এর পিতা-মাতা ও এগারো ভাই কর্তৃক ইউসুফ (আঃ) এর সিজদা করার ঘটনাকে দলীল
হিসেবে পেশ করে।
সুরা ইউসুফে সিজদা করার
ঘটনাঃ
“আর ইউসুফ (আঃ) তাঁর পিতা-মাতাকে সিংহাসনে বসালো এবং তারা সবাই তাঁর সামনে সিজদায়
লুটিয়ে পড়লো।”
সুরা ইউসুফ, আয়াত ১০০।
এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে
সত্যিই ইউসুফ (আঃ) এর পিতা-মাতা ও তাঁর এগারো ভাই ইউসুফ (আঃ) কে সিজদা করেছিলেন।
কিন্তু, পীর পূজারীদের
কাছে আমাদের প্রথম প্রশ্ন, তারা কোন নবী ও কোন শরীয়তের উম্মত ছিলেন?
হযরত ইউসুফ (আঃ) এর পিতা
হযরত ইয়াকুব (আঃ) নিজেই নবী ছিলেন আর তাঁর ভাইয়েরা হয় তাঁর পিতার নয়তো হযরত ইউসুফ
(আঃ) এর উম্মত হিসেবে গণ্য হবেন। অর্থাৎ তাদের সবাই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পূর্বের শরীয়তের
অনুসারী ছিলেন।
এখন দ্বিতীয় প্রশ্ন, সব
শরীয়তের হুকুম কি এক?
উত্তর হচ্ছেঃ না একনা,
যেমন আদম (আঃ) এর শরীয়তে ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে জায়েজ ছিলো, আর মুহাম্মাদ (সাঃ) এর
শরীয়তে এটা চরম গরহিত অপরাধ, যার শাস্তি হলো তলোয়ার দিয়ে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন
করে দেওয়া।
এই উদাহরণ থেকে একটা ব্যপার
পরিষ্কার, পূর্বের শরীয়তে আমাদের জন্য কোনো দলীল নয়, আমাদেরকে রাসুল (সাঃ) যেইভাবে
আদেশ করেছেন, ঠিক সেইভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে এবং বুঝতে হবে।
সহীহ বুঝারীতে বর্ণিত একটি
হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উমার (রাঃ) কে বলেন, আজকে যদি মুসা (আঃ) বেঁচে থাকতেন তাহলে
তাঁর আমার শরীয়ত মেনে নেয়া ছাড়া উপায় থাকতোনা। সুতরাং পূর্বের শরীয়তে যাই থাকুক,
আমাদের জন্য রাসুল (সাঃ) শরীয়ত ছাড়া অন্য কোনো শরীয়ত অনুসরণ করার অনুমতি নেই।
এবার চলুন দেখি, রাসুল
(সাঃ) এর আনীত দ্বীনে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো কাউকে সিজদা করার অনুমতি আছে কিনা?
সুরা ইউসুফের ১০০ নাম্বার
আয়াতের তাফসীরঃ
হযরত ইউসুফ (আঃ) স্বীয়
পিতা-মাতাকে রাজ-সিংহাসনে বসিয়ে দেন। সেই সময় তাঁর পিতা-মাতা ও এগারোটি ভাই তাঁর
সামনে সিজদায় পড়ে যান। তখন ইউসুফ (আঃ) তাঁর পিতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আব্বাজান! দেখুন এতোদিনে আমার পূর্বের সেই
স্বপ্নের ব্যখ্যা প্রকাশিত হলো। এই হচ্ছে সেই এগারোটি তারকা (তাঁর এগার ভাই) এবং এই
হচ্ছে সেই সূর্য ও চন্দ্র (তাঁর পিতা-মাতা), যা আমার সামনে সিজদায় পতিত রয়েছে।”
তাদের শরীয়তে এটা জায়েজ
ছিল যে, বড়দেরকে তারা সালামের সাথে সিজদা করতেন। এমনকি হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে
হযরত ঈসা (আঃ) পর্যন্ত সমস্ত নবীর উম্মতদের জন্যেটা জায়েজ ছিল। কিন্তু উম্মাতে মুহাম্মাদী
(সাঃ) এর জন্য আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা নিজের পবিত্র সত্ত্বা ছাড়া অন্য কারো জন্য সিজদা করা বৈ্ধ করেন নাই। বরং,
তিনি সেটা একমাত্র নিজের জন্যই নির্দিষ্ট করেছেন। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত কাতাদা (রহঃ)
সহ অন্যান্যদের উক্তির সারমর্ম এটাই।
- তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে
সংগৃহীত।
এই তাফসীরের দলীলঃ
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) গিয়েছিলেন সিরিয়ায়। সেখানে তিনি দেখতে পান যে, সিরিয়াবাসীরা
তাদের বড়দের সিজদা করে থাকে। তিনি ফিরে এসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে সিজদা করলেন। তখন
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ “হে মুয়াজ! এটা কি?” তিনি উত্তরে বললেন, “আমি সিরিয়াবাসীদেরকে দেখেছি যে, তারা তাদের বড় ও সম্মানিত লোকদেরকে সিজদা করে
থাকে। সেজন্য, আপনিতো সিজদা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় হক্কদার। একথার উত্তরে রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বললেন, “আমি যদি কাউকে কারো
জন্য সিজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীলোকদেরকে হুকুম করতাম, তারা যেন তাদের স্বামীদেরকে
সিজদা করে। কারণ এইযে, তার বড় হক্ক রয়েছে।”
হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণিত
হয়েছে মুসনাদে আহমাদ ও অন্যান্য গ্রন্থে।
তিরমিযীতে অন্য হাদীসে
এসেছেঃ
সাহাবীরা রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) কে সিজদা করার ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলো, “যদি কেউ তার ভাইয়ের সাথে দেখা করে তাহলে সে কি তাকে সিজদা করতে পারবে?” রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উত্তর দিলেন “না পারবেনা।”
অন্য এক হাদীসে রয়েছে
যে, সালামান ফারসী (রাঃ) তার ইসলাম গ্রহণের শুরুতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পথে দেখে সিজদা
করেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বলেন, “হে সালমান! আমাকে সিজদা করোনা। সিজদা ঐ আল্লাহকে কর যিনি চিরঞ্জীব, যিনি কখনো মৃত্যুবরণ
করবেন না।”
এখন পীর পূজারীদের কাছে
বিনীতভাবে জানতে চাইবো, যদি রাসুলুল্লাস (সাঃ) কে সিজদা করার অনুমতি না থাকে তাহলে
তোমার ফাসিক ও অন্যায়ভাবে মুরীদের সম্পদ ভক্ষণকারী পীরকে ও মাযারের মরা মানুষকে সিজদা
করা জায়েজ হয় কি করে?
আমাদের পেজের সম্মানিত
ইউজারদের অনুরোধ করবো আপনারা শিরক ও বিদাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন, নিজেরা ইমান, আকীদা,
শিরক বিদাত সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করুন, নিজেরা এসব পথভ্রষ্টতা
থেকে দূরে থাকুন এবং অন্যদেরকেও শিরকের বিরুদ্ধে সতর্ক করুন। আজকে সারা বিশ্বে মুসলমানদের
সংখ্যা ১৫০ কোটিরও উপরে তারপরেও তারা সামান্য কিছু ইয়াহুদীদের দ্বারা যুগের পরে যুগ
ধরে নির্যাতিত। আজ আল্লাহর সাহায্য মুসলমানদের সাথে নেই, আর এই জন্যই তাদের এমন অপমানকর
অবস্থার শিকার হতে হচ্ছে।
কিভাবে আল্লাহর সাহায্য
আসবে? যেখানে “সো কল্ড” মুসলিম দেশগুলোতেই শিরকের বন্যা, যেখানে
রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের অধিকাংশ মানুষ মাযার আর পীর পূজায় লিপ্ত, যেখানে
দাঁড়ি টুপি পড়া কিছু “আলেম” নামের শয়তান মাযার নামক “মরা মানুষের ব্যবসা” দিয়ে অসংখ্য অগণিতে মানুষকে মুশরিকে পরিণত
করছে, যেখানে মানুষ আল্লাহর হুকুমকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে মানব রচিত বিধান দিয়ে দেশ পরিচালনা
করে দেশের জনগণকে রাজনীতিবিদদের গোলামে পরিণত করা হচ্ছে, সেইখানে এই নামধারী মুসলমানেরা
কি করে আল্লাহর সাহায্য আশা করতে পারে?
মুসলমানদের আল্লাহর সাহায্য
পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো আল্লাহর প্রতি ইমান আনতে হবে এবং আল্লাহ ছাড়া সমস্ত মাবুদের
পূজা থেকে দূরে থাকতে হবে। তাহলে আল্লাহ যেমন সাহাবীদেরকে সমস্ত পৃথিবীর শাসন কর্তৃত্ব
দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি আমাদেরকেও এই অপমানকর অবস্থা থেকে পরিত্রান দিয়ে মুসলমানদের
অতীত সম্মান ও গৌরব ফিরিয়ে দেবেন, যেমনটা আল্লাহ তাঁর কিতাবে ওয়াদা করেছেন।
“তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদের কাছে ওয়াদা
করেছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন, যেমনিভাবে তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান
করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে। এবং তিনি অবশ্যই তাদের দ্বীনকে সুদৃঢ় করবেন যা তিনি
তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদেরকে ভয়-ভীতির পরিবর্তে শান্তি দান করবেন। তারা আমার
ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবেনা।”
সুরা আন-নূর, আয়াত ৫৫।
#আনসারুস_সুন্নাহ।