মানসুর হাল্লাজ প্রসংগে.....
বাংলাদেশে দেওবন্দী সিলসিলার বড় আলেম, সিলেটি পীর নুরূল ইসলাম ওলীপুরী সাহেব তার এক ওয়াজে মনসুর হাল্লাজকে আল্লাহর বড় ওলী বলেছিলেন। তিনি ঐ ওয়াজে বলেছিলেন 'আনাল হক্ব' বলে মনসুর হাল্লাজ কোন ভুল করেন নি। ‘আনাল হক্ব’ (আমিই আল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ) আকিদার কারনে যেই ব্যাক্তির মুত্যুদন্ড হয় ‘মুরতাদ’ হিসাবে, সেই ব্যক্তিরে ওলীপুরী বানালেন আল্লাহর বড় ওলী, কি আশ্চার্য্য! দেশে বিদেশে যিনি ওয়াজ করে বেড়ান, তার আকিদায় যদি এরুপ গলদ থাকে তাহলে তিনি কিসের দ্বীন প্রচার করছেন? শিরক আর বিদাত নয়তো?
পীরপন্থীদের মাথার মুকুট, সূফীকুল শিরোমণি মানসুর হাল্লাজ সম্পর্কে সমাজে অসংখ কল্পকাহিনী প্রচলিত। যেগুলো সর্বসাধারণের ঈমান-আকীদায় শিরকি কুফুরী প্রভাব ফেলছে। ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ, ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) প্রণীত “আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”, খতীব আল-বাগদাদী (রঃ) এর “তারিখে বাগদাদ”, ইবনুল জাওজী (রঃ) এর “আল মুন্তাজেম” ও ইমাম আয যাহাবী (রঃ) এর “সিয়ারু আ’লামিন নুবালা” ইত্যাদি নির্ভর যোগ্য গ্রন্থে মানসুর হাল্লাজের আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মজীবনের উপর আলোচনা এসেছে। সেখান থেকে সামান্য কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্।
মানসুর হাল্লাজ ২৪৪ হিঃ বা ৮৫৮ খ্রিঃ জন্ম গ্রহণ করে। তার দাদা পারস্যের অধিবাসী ও একজন মাজুসী (অগ্নি উপাসক) ছিল। সে ইরাকের ওয়াসেত শহরে জীবনের একটি অংশ অতিবাহিত করার পর বাগদাদে গমন করে। হজ্জ পালনের জন্য কয়েকবার মক্কায়ও গমন করে। বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত, সে যাদু শিখার জন্য ভারতে আসে। সে বলতঃ أدعو به الى الله – আমি যাদুর মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহ্র দিকে দাওয়াত দেই। (যাদু – কুফুরী ও কবীরাহ গুনাহ!)
“আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”
ইমাম ইবনুল জাওযী বলেন,
- মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার নানা কৌশল তার আয়ত্তে ছিল। সে তার বেশভূষা পরিবর্তন করে এক শহর থেকে অন্য শহরে যেত। মানুষ তার ব্যপারে দ্বিধা বিভক্ত ছিল। সে Pantheism (সর্বেশ্বরবাদ) ও Zoroastrianism (জরাথ্রুস্ট প্রবর্তিত ও জেনদ্-আবেস্তায় বর্ণিত প্রাচীন পারস্যবাসীর অগ্নি উপাসনার ধর্ম) ইত্যাদি দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। সে সূফীবাদী দর্শন #হুলুল (আল্লাহ্ তায়ালা কোন ব্যক্তি বিশেষের মাঝে প্রবিষ্ট হওয়া বা অবতরণ করা) ও #ওয়াহদাতুল_ওজুদ (স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে কোন পার্থক্য নেই, স্রষ্টার আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই, সকল সৃষ্টির মাঝে তাঁর অস্তিত্ব বিরাজমান) এই মতবাদের অন্যতম প্রবক্তা।
ওয়াহদাতুল ওজুদ তথা একক অস্তিত্ব এই দর্শনে প্রভাবিত হয়ে সে বলতঃ ما في جبتيي الا الله.- আমার জুব্বার মাঝে যে স্বত্বা রয়েছে তা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কেউ না।
أنا الحق - আমি আল্লাহ্ ইত্যাদি। (নাউযুবিল্লাহ!)
হাল্লাজের কবিতা সংকলন ديوان الحلاج- থেকে কয়েক লাইন তুলে ধরলামঃ
فإذا أبصرتني أبصرته/وإذا أبصرته أبصرتنا
أنا أنت بلا شـــــــــك فسبحانك سبحاني
وتوحيدك توحـــــيدي وعصيانك عصيانـــي
كفرت بدين الله والكفر واجب
لديَّ وعـنـد المسلمين قبيـح
مُزِجت روحك في روحي كما
تمزج الخمرة بالماء الزلال
فـإذا مسَّـك شيء مسّنــي
فإذاً أنت أنا في كلّ حـال
মানুষকে সম্বোধন করে হাল্লাজ বলছেঃ
— তুমি আমাকে দেখার অর্থ তাঁকে (আল্লাহ্) দেখা
আর তাঁকে (আল্লাহ্) দেখার অর্থ আমাকে দেখা।
আল্লাহকে সম্বোধন করে বলছে
— নিঃসন্দেহে আমি হচ্ছি তুমি (আল্লাহ্)
তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করা আমারই পবিত্রতা ঘোষণা করা।
তোমার তাওহীদ ঘোষণা করা আমারই তাওহীদ ঘোষণা করা ।
তোমার নাফরমানী করা আমারই নাফরমানী করা।
আমি তোমার দ্বীনের সাথে কুফরী করেছি, কারণ কুফরী আমার জন্য ওয়াজিব হয়েছে। যদিও মুসলিমদের নিকটে তা নিন্দনীয়।
তোমার আত্মা আমার আত্মার সাথে মিশে গেছে
যেরূপে মদ সুপেয় পানির সাথে মিশে যায়।
তোমাকে কিছু স্পর্শ করলে তা আমাকে স্পর্শ করে,
কারণ সর্বাবস্থায় আমিই তো তুমি।
আব্দুর রহমান সুলামী আমর বিন উসমানের সূত্রে বর্ণনা করেনঃ আমর বলেন,
- হজ্জের মৌসুমে আমি হাল্লাজের সাথে মক্কার এক গলিতে হাঁটছিলাম আর কোরআন তেলাওয়াত করছিলাম। হাল্লাজ আমার তেলাওয়াত শুনে বললঃ আমার পক্ষেও এই ধরণের কথা বলা সম্ভব। একথা শুনে আমি তার সঙ্গ ত্যাগ করলাম। (প্রাগুক্ত)
আমর বিন উসমান হাল্লাজকে লানত করত আর বলত, আমার ক্ষমতা থাকলে তাকে নিজ হাতে কতল করতাম । (প্রাগুক্ত)
আবু জুর’য়া আত তাবারী বলেনঃ আমি আবু ইয়াকুব আল আকতা’য় কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ
- হাল্লাজের প্রতি মুগ্ধ হয়ে আমি আমার বোনকে তার সাথে বিবাহ দেই। কিছু দিন পর আমার নিকট পরিষ্কার হয়ে যায়, সে একজন যাদুকর, প্রতারক, খবীস ও কাফের। (প্রাগুক্ত)
আব্দুর রহমান সুলামী আমর বিন উসমানের সূত্রে বর্ণনা করেনঃ আবু বকর বিন মিনশাদের নিকট এক ব্যক্তি আসল। যার সাথে একটি থলে ছিল । রাতে-দিনে কক্ষনো সে থলেটি নিজের কাছ থেকে দূরে রাখত না। লোকেরা কারণ অনুসন্ধানের জন্য থলেটি খুললে মানসুর হাল্লাজ প্রেরিত একটি চিঠি পেল। যার শিরোনাম ছিল- من الرحمن الرحيم الى فلان ابن فلان- রাহমান রাহীমের পক্ষ হতে.........।
হাল্লাজ চিঠিটির সত্যতা স্বীকার করল। লোকেরা তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কি নিজেকে আল্লাহ্ দাবী কর? জবাবে সে বললঃ না, তবে আল্লাহ্ ও আমি তো একই সত্ত্বা। (প্রাগুক্ত)
হাল্লাজ তার খাস মুরিদদের মাধ্যমে পাহাড়ী এলাকার সহজ-সরল মূর্খ মানুষদের প্রতারিত করে হাজার হাজার স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা উপার্জন করেছে। তার মিথ্যা কারামতির কৌশল জেনে ফেলায় একজনকে গুপ্ত ঘাতক পাঠিয়ে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। এসব প্রতারণার কাহিনী ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে উল্লেখ করেছেন।
বাগদাদের আলেমরা হাল্লাজ কাফের ও মুরতাদ হওয়া ও তাকে হত্যার ব্যপারে একমত পোষণ করেন । তখন বাগদাদ ছিল পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় আলেমদের আবাস। (প্রাগুক্ত)
৩০৯ হিঃ বা ৯২২ খ্রিস্টাব্দে হাল্লাজকে মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হয়।
ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ যে আকীদা পোষণ করার কারণে হাল্লাজকে হত্যা করা হয়েছে, সেই আকীদা যদি কেউ পোষণ করে সে মুসলিমদের ঐক্যমত অনুযায়ী কাফের ও মুরতাদ। মুসলিমরা #হুলুল, #ওয়াহদাতুল_ওজুদ ইত্যাদি আকীদা পোষণ করার কারণে তাকে হত্যা করেছে। যেমন সে বলতঃ আমি আল্লাহ্, আসমানে এক প্রভু রয়েছে ও জমিনে আরেক প্রভু রয়েছে। তার কিছু যাদুকরী ক্ষমতা ছিল। যাদুর উপর কয়েকটি বইও লিখেছিল । মাজমুয়ুল ফাতওয়া।
তিনি আরও বলেনঃ
- আমি মুসলিমদের কোন আলেম ও মাশায়েখ সম্পর্কে জানিনা, যারা হাল্লাজ সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখে। তবে কিছু লোক হাল্লাজের আকীদা সম্পর্কে না জানার কারণে তার প্রশংসা করেছে। (প্রাগুক্ত)
বর্তমানেও অনেক পীর-মাশায়েখ ও বক্তাকে দেখা যায়, যারা হাল্লাজের মর্যাদা বর্ণনায় অনেক গাজাখোরি কাহিনী বর্ণনা করে থাকে। তারা হয় হাল্লাজের আকীদা সম্পর্কে জানে না অথবা একই আকীদা পোষণ করে গোমরাহিতে লিপ্ত রয়েছে।
আল্লাহ্ আমাদেরকে সবাইকে সঠিক দ্বীন বোঝার তাউফীক দিন, আমীন।
বাংলাদেশে দেওবন্দী সিলসিলার বড় আলেম, সিলেটি পীর নুরূল ইসলাম ওলীপুরী সাহেব তার এক ওয়াজে মনসুর হাল্লাজকে আল্লাহর বড় ওলী বলেছিলেন। তিনি ঐ ওয়াজে বলেছিলেন 'আনাল হক্ব' বলে মনসুর হাল্লাজ কোন ভুল করেন নি। ‘আনাল হক্ব’ (আমিই আল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ) আকিদার কারনে যেই ব্যাক্তির মুত্যুদন্ড হয় ‘মুরতাদ’ হিসাবে, সেই ব্যক্তিরে ওলীপুরী বানালেন আল্লাহর বড় ওলী, কি আশ্চার্য্য! দেশে বিদেশে যিনি ওয়াজ করে বেড়ান, তার আকিদায় যদি এরুপ গলদ থাকে তাহলে তিনি কিসের দ্বীন প্রচার করছেন? শিরক আর বিদাত নয়তো?
পীরপন্থীদের মাথার মুকুট, সূফীকুল শিরোমণি মানসুর হাল্লাজ সম্পর্কে সমাজে অসংখ কল্পকাহিনী প্রচলিত। যেগুলো সর্বসাধারণের ঈমান-আকীদায় শিরকি কুফুরী প্রভাব ফেলছে। ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ, ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) প্রণীত “আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”, খতীব আল-বাগদাদী (রঃ) এর “তারিখে বাগদাদ”, ইবনুল জাওজী (রঃ) এর “আল মুন্তাজেম” ও ইমাম আয যাহাবী (রঃ) এর “সিয়ারু আ’লামিন নুবালা” ইত্যাদি নির্ভর যোগ্য গ্রন্থে মানসুর হাল্লাজের আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মজীবনের উপর আলোচনা এসেছে। সেখান থেকে সামান্য কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্।
মানসুর হাল্লাজ ২৪৪ হিঃ বা ৮৫৮ খ্রিঃ জন্ম গ্রহণ করে। তার দাদা পারস্যের অধিবাসী ও একজন মাজুসী (অগ্নি উপাসক) ছিল। সে ইরাকের ওয়াসেত শহরে জীবনের একটি অংশ অতিবাহিত করার পর বাগদাদে গমন করে। হজ্জ পালনের জন্য কয়েকবার মক্কায়ও গমন করে। বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত, সে যাদু শিখার জন্য ভারতে আসে। সে বলতঃ أدعو به الى الله – আমি যাদুর মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহ্র দিকে দাওয়াত দেই। (যাদু – কুফুরী ও কবীরাহ গুনাহ!)
“আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”
ইমাম ইবনুল জাওযী বলেন,
- মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার নানা কৌশল তার আয়ত্তে ছিল। সে তার বেশভূষা পরিবর্তন করে এক শহর থেকে অন্য শহরে যেত। মানুষ তার ব্যপারে দ্বিধা বিভক্ত ছিল। সে Pantheism (সর্বেশ্বরবাদ) ও Zoroastrianism (জরাথ্রুস্ট প্রবর্তিত ও জেনদ্-আবেস্তায় বর্ণিত প্রাচীন পারস্যবাসীর অগ্নি উপাসনার ধর্ম) ইত্যাদি দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। সে সূফীবাদী দর্শন #হুলুল (আল্লাহ্ তায়ালা কোন ব্যক্তি বিশেষের মাঝে প্রবিষ্ট হওয়া বা অবতরণ করা) ও #ওয়াহদাতুল_ওজুদ (স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে কোন পার্থক্য নেই, স্রষ্টার আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই, সকল সৃষ্টির মাঝে তাঁর অস্তিত্ব বিরাজমান) এই মতবাদের অন্যতম প্রবক্তা।
ওয়াহদাতুল ওজুদ তথা একক অস্তিত্ব এই দর্শনে প্রভাবিত হয়ে সে বলতঃ ما في جبتيي الا الله.- আমার জুব্বার মাঝে যে স্বত্বা রয়েছে তা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কেউ না।
أنا الحق - আমি আল্লাহ্ ইত্যাদি। (নাউযুবিল্লাহ!)
হাল্লাজের কবিতা সংকলন ديوان الحلاج- থেকে কয়েক লাইন তুলে ধরলামঃ
فإذا أبصرتني أبصرته/وإذا أبصرته أبصرتنا
أنا أنت بلا شـــــــــك فسبحانك سبحاني
وتوحيدك توحـــــيدي وعصيانك عصيانـــي
كفرت بدين الله والكفر واجب
لديَّ وعـنـد المسلمين قبيـح
مُزِجت روحك في روحي كما
تمزج الخمرة بالماء الزلال
فـإذا مسَّـك شيء مسّنــي
فإذاً أنت أنا في كلّ حـال
মানুষকে সম্বোধন করে হাল্লাজ বলছেঃ
— তুমি আমাকে দেখার অর্থ তাঁকে (আল্লাহ্) দেখা
আর তাঁকে (আল্লাহ্) দেখার অর্থ আমাকে দেখা।
আল্লাহকে সম্বোধন করে বলছে
— নিঃসন্দেহে আমি হচ্ছি তুমি (আল্লাহ্)
তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করা আমারই পবিত্রতা ঘোষণা করা।
তোমার তাওহীদ ঘোষণা করা আমারই তাওহীদ ঘোষণা করা ।
তোমার নাফরমানী করা আমারই নাফরমানী করা।
আমি তোমার দ্বীনের সাথে কুফরী করেছি, কারণ কুফরী আমার জন্য ওয়াজিব হয়েছে। যদিও মুসলিমদের নিকটে তা নিন্দনীয়।
তোমার আত্মা আমার আত্মার সাথে মিশে গেছে
যেরূপে মদ সুপেয় পানির সাথে মিশে যায়।
তোমাকে কিছু স্পর্শ করলে তা আমাকে স্পর্শ করে,
কারণ সর্বাবস্থায় আমিই তো তুমি।
আব্দুর রহমান সুলামী আমর বিন উসমানের সূত্রে বর্ণনা করেনঃ আমর বলেন,
- হজ্জের মৌসুমে আমি হাল্লাজের সাথে মক্কার এক গলিতে হাঁটছিলাম আর কোরআন তেলাওয়াত করছিলাম। হাল্লাজ আমার তেলাওয়াত শুনে বললঃ আমার পক্ষেও এই ধরণের কথা বলা সম্ভব। একথা শুনে আমি তার সঙ্গ ত্যাগ করলাম। (প্রাগুক্ত)
আমর বিন উসমান হাল্লাজকে লানত করত আর বলত, আমার ক্ষমতা থাকলে তাকে নিজ হাতে কতল করতাম । (প্রাগুক্ত)
আবু জুর’য়া আত তাবারী বলেনঃ আমি আবু ইয়াকুব আল আকতা’য় কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ
- হাল্লাজের প্রতি মুগ্ধ হয়ে আমি আমার বোনকে তার সাথে বিবাহ দেই। কিছু দিন পর আমার নিকট পরিষ্কার হয়ে যায়, সে একজন যাদুকর, প্রতারক, খবীস ও কাফের। (প্রাগুক্ত)
আব্দুর রহমান সুলামী আমর বিন উসমানের সূত্রে বর্ণনা করেনঃ আবু বকর বিন মিনশাদের নিকট এক ব্যক্তি আসল। যার সাথে একটি থলে ছিল । রাতে-দিনে কক্ষনো সে থলেটি নিজের কাছ থেকে দূরে রাখত না। লোকেরা কারণ অনুসন্ধানের জন্য থলেটি খুললে মানসুর হাল্লাজ প্রেরিত একটি চিঠি পেল। যার শিরোনাম ছিল- من الرحمن الرحيم الى فلان ابن فلان- রাহমান রাহীমের পক্ষ হতে.........।
হাল্লাজ চিঠিটির সত্যতা স্বীকার করল। লোকেরা তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কি নিজেকে আল্লাহ্ দাবী কর? জবাবে সে বললঃ না, তবে আল্লাহ্ ও আমি তো একই সত্ত্বা। (প্রাগুক্ত)
হাল্লাজ তার খাস মুরিদদের মাধ্যমে পাহাড়ী এলাকার সহজ-সরল মূর্খ মানুষদের প্রতারিত করে হাজার হাজার স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা উপার্জন করেছে। তার মিথ্যা কারামতির কৌশল জেনে ফেলায় একজনকে গুপ্ত ঘাতক পাঠিয়ে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। এসব প্রতারণার কাহিনী ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে উল্লেখ করেছেন।
বাগদাদের আলেমরা হাল্লাজ কাফের ও মুরতাদ হওয়া ও তাকে হত্যার ব্যপারে একমত পোষণ করেন । তখন বাগদাদ ছিল পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় আলেমদের আবাস। (প্রাগুক্ত)
৩০৯ হিঃ বা ৯২২ খ্রিস্টাব্দে হাল্লাজকে মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হয়।
ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ যে আকীদা পোষণ করার কারণে হাল্লাজকে হত্যা করা হয়েছে, সেই আকীদা যদি কেউ পোষণ করে সে মুসলিমদের ঐক্যমত অনুযায়ী কাফের ও মুরতাদ। মুসলিমরা #হুলুল, #ওয়াহদাতুল_ওজুদ ইত্যাদি আকীদা পোষণ করার কারণে তাকে হত্যা করেছে। যেমন সে বলতঃ আমি আল্লাহ্, আসমানে এক প্রভু রয়েছে ও জমিনে আরেক প্রভু রয়েছে। তার কিছু যাদুকরী ক্ষমতা ছিল। যাদুর উপর কয়েকটি বইও লিখেছিল । মাজমুয়ুল ফাতওয়া।
তিনি আরও বলেনঃ
- আমি মুসলিমদের কোন আলেম ও মাশায়েখ সম্পর্কে জানিনা, যারা হাল্লাজ সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখে। তবে কিছু লোক হাল্লাজের আকীদা সম্পর্কে না জানার কারণে তার প্রশংসা করেছে। (প্রাগুক্ত)
বর্তমানেও অনেক পীর-মাশায়েখ ও বক্তাকে দেখা যায়, যারা হাল্লাজের মর্যাদা বর্ণনায় অনেক গাজাখোরি কাহিনী বর্ণনা করে থাকে। তারা হয় হাল্লাজের আকীদা সম্পর্কে জানে না অথবা একই আকীদা পোষণ করে গোমরাহিতে লিপ্ত রয়েছে।
আল্লাহ্ আমাদেরকে সবাইকে সঠিক দ্বীন বোঝার তাউফীক দিন, আমীন।