সন্তান পাওয়ার
জন্য কি আমল করতে হবেঃ
সন্তান থাকা না
থাকা দুইটাই #ফেতনা, আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা।
ঈমানের ৬ নাম্বার পিলার
হলো “ওয়াল ক্বাদরী খায়রিহি ও শাররিহি” - তাকদীরের ভালো বা মন্দের নিয়ন্ত্রনকর্তা
মহান আল্লাহ। যে ব্যক্তি ঈমান আনে অর্থাৎ একজন ‘মুমিন’ বিশ্বাস করে, আমার উপর যা কিছু ভালো বা মন্দ সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত।
আর যাই আসুক না কেনো, আমাদের ভালো লাগুক বা খারাপ লাগুক, পরিণামে (হয় দুনিয়াতেই অথবা
আখেরাতে) তা আমাদের জন্য উপকার নিয়ে আসবে, আর সেজন্য আপাতত সেটা তার ভালো না লাগলেও
সে আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকে - এটাই হলো তাকদীরের প্রতি বিশ্বাসের বাস্তবতা। আল্লাহ
আমাদেরকে যথাযথভাবে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনার তোওফিক দান করুন (আমিন)।
ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি
নিয়ে পবিত্র কোরানে মহান আল্লাহর তা’আলার বাণীঃ
১. ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি
আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা।
“তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো শুধুমাত্র পরীক্ষাস্বরূপ। আর আল্লাহর কাছে
রয়েছে মহাপুরস্কার।”
সুরা আত-তাবাগুনঃ আয়াত
১৫।
২. আল্লাহ একেকজনকে একেকভাবে
পরীক্ষা করেন, কাউকে ধন-সম্পদ বা সন্তান-সন্ততি দিয়ে পরীক্ষা করেন আবার কাউকে এগুলো
না দিয়ে পরীক্ষা করেন।
“নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তা’আলারই। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা
পুত্র সন্তান দান করেন।
অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা
সন্তান উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।”
সুরা আশ-শূরাঃ ৪৯-৫০।
“তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন এবং একে অন্যের
উপর মর্যাদা সমুন্নত করেছেন, যাতে তোমাদেরকে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন, যা তোমাদেরকে
দিয়েছেন।”
সুরা আন’আমঃ আয়াত ১৬৫।
সন্তান পাওয়ার
জন্য আমলঃ
১. তোওবা করা
কোন ব্যক্তি
পাপ কাজ ছেড়ে দিয়ে সংশোধন করে নিলে, ক্বুরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা
করলে, আন্তরিকভাবে বারবার তোওবা করলে আল্লাহ তাআ’লা তার সম্পদ ও সন্তান বৃদ্ধি করে
দেবেন বলেছেন।
মহান আল্লাহ
তাআ’লা ইরশাদ করেনঃ
“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে তোওবা করো (ক্ষমা প্রার্থনা কর), তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। (যদি তোমরা তোওবা করো তাহলে) তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা দেবেন এবং তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।”
সুরা আন-নূহঃ ১০-১২।
তোওবা করার
কিছু দুয়াঃ
ক. যেই
দোয়া পড়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ তোওবা করতেন ও আমাদেরকে পড়তে বলছেনঃ
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ القَيّوُمُ وَأَتُوبُ إِلَيهِ
উচ্চারণঃ
আসতাগফিরুল্লা-হাল আ’যীমাল্লাযী
লা-ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থঃ আমি
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া ইবাদতের আর কোন যোগ্য উপাস্য নেই।
যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তাঁর কাছে তোওবা করছি।
রাসুলুল্লাহ
সাঃ
বলেছেনঃ “যেই ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়”।
(অর্থাত,
সে যদি বড় রকমের গুনাহগার হয়, তবুও
আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন।)
হিসনুল
মুসলিম পৃষ্ঠা ২৮৬, তিরমিযী ৪/৬৯, আবুদাঊদ ২/৮৫, মিশকাত হা/২৩৫৩, হাদীসটি সহীহঃ সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭২৭।
উল্লেখ্যঃ এই দুয়াটা আসতাগফিরুল্লা-হাল আ’যীমাল্লাযী...ও আসতাগফিরুল্লা-হালাল্লাযী...এই দুইভাবেই হাদীসে আছে – দুইটাই সহীহ – যার যেটা ভালো লাগে পড়বেন)
খ. আমাদের
আদিপিতা আদম (আঃ) ও মা হা’ওয়্যা (আঃ) আল্লাহর নিষেধ অমান্য করলে ক্ষমা প্রার্থনা ও তোওবা করার জন্য
স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লা তাদের দুইজনকে এই দুয়াটি শিখিয়ে দেন। এই দুয়ার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা
করলে আল্লাহ তাআ’লা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। আমাদের উচিত তাদের মতো আমাদের পাপ থেকে ক্ষমা
প্রার্থনার জন্য নিয়মিত এই দুয়া করা।
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
উচ্চারণঃ রাব্বানা যোয়ালামনা আন-ফুসানা ওয়া-ইল্লাম
তাগ-ফিরলানা ওয়াতার্ হা’মনা লানা কুনান্না মিনাল খাসিরিন।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি, অতএব আপনি যদি আমদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন তাহলে নিশ্চয়ই আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হব। আল-আ’রাফঃ ২৩।
গ. এছাড়া ছোট্ট এই দুয়া পড়েও তোওবা করা যায়ঃ
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লাহ
ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অর্থঃ আমি আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকটই তাওবা (প্রত্যাবর্তন) করছি। (প্রতি দিন ১০০ বার)।
সহীহ আল-বুখারী (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১০১, নং- ৬৩০৭; মুসলিম ৪/২০৭৫, নং- ২৭০২।
২. দুয়া করা
আল্লাহর কাছে
বিশ্বাস ও আশা রেখে বেশি বেশি করে দুয়া করে যেতে হবে। হতাশ হওয়া যাবেনা, বা দুয়া
কবুল হতে দেরী হচ্ছে কেন, আল্লাহ আমার দুয়া কবুল করেন না, আমি কি দোষ করেছি, দুয়া
করেছি কিন্তু আল্লাহ শুনেন না (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক), এই ধরণের নাফরমানীমূলক,
কুফুরী কথাবার্তা বলা যাবেনা। বিপদে ধৈর্য ধরতে হবে, আল্লাহর কাছে দুয়া করতে হবে
এবং তাক্বদীরের ভাল ও মন্দকে নিয়ে আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
দুয়া কবুলের
সময়গুলোতে যেমন - ফরয নামাযে তাশাহুদের পরে সালাম ফেরানোর আগে, রাতের শেষ
তৃতীয়াংশে, যেকোন নামাযের সিজদাতে, নফল-সুন্নত রোযা রেখে, আযান-ইকামতের মাঝখানের
দুয়া আল্লাহ বেশি কবুল করেন। এই সময়গুলোতে বেশি বেশি দুয়া করতে হবে। ক্বুরান ও
সহিহ হাদীস থেকে সুন্দর কিছু দুয়াঃ
ক. নেককার স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান পাওয়ার জন্য দুয়াঃ
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণঃ রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা
ওয়া যুররিয়্যাতিনা ক্বুররাতা আ’ইয়ুন,
ওয়াজআ’লনা মুত্তাক্বীনা ইমামা।
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং
আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে
মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।
সুরা
আল-ফুরক্বানঃ ৭৪।
খ. উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আকসির মালি ওয়া ওয়ালাদি, ওয়া বারিকলানা
ফিমা আ’তাইতানি।
অর্থঃ হে
আল্লাহ তুমি আমাকে অধিক সম্পদ ও সন্তান দান করুন এবং আমাকে যা দান করেছেন তার মাঝে
বরকত দান করুন।
এছাড়া কেউ
মুনাজাতে নিজের ভাষাতে বিনীতভাবে আল্লাহর কাছে যে কোন দুয়া করতে পারেন। নামাযের
মাঝে সিজদাতে ও সালাম ফিরানোর আগে দুয়া করলে আরবীতে মুখস্থ করে পড়বেন, এটাই উত্তম।