=> হানাফী #মাযহাবের অনুসারীগণ নামাজে রুকুতে যাওয়ার
সময় এবং রুকু থেকে ওঠার সময় #রফউল_ইয়াদাইন
করেনা।
হানাফী আলিম সমাজ আমাদের মত অধম বান্দাদের বলে থাকেন, এটি নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রথম দিকে
করেছেন এবং শেষের দিকে বাদ দিয়েছেন অর্থাৎ মানসুখ হয়ে গেছে। আমরা সেই বিশ্বাসেই আজ
রফ’উল ইয়াদাইন করি না। যাহা অন্যান্য মাযহাব এবং আমাদের দেশে
আহলে হাদীস বা সালাফীগণ করে থাকেন। মসজিদের হুজুরকে জিজ্ঞেসা করলে বলে, দু’ইটাই সুন্নাত। আসুন একটু বিস্তারিত আলোচনা করিঃ
=> প্রথমেই আমাদের #হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ #আলিমগণের মতামত দিয়ে শুরু করা যাকঃ
১. মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী
(রহঃ) বলেনঃ সালাতে রুকু’তে যাওয়ার সময় ও রুকু’ থেকে উঠার সময় দু’ হাত না তোলা সম্পর্কে যেসব হাদীস
বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই বাতিল হাদীস। তন্মধ্যে একটিও সহীহ নয়। (মাওযু’আতে কাবীর, পৃ-১১০)
২. হানাফী মুহাদ্দিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রহঃ) রুকু’তে যাওয়ার পূর্বে রফ’উল
ইয়াদাইন করার ব্যাপারে ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) সম্পর্কে লিখেছেনঃ ইমাম আবূ হানিফা
সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তা ত্যাগ করলে গুনাহ হবে। (’উমদাতুল ক্বারী, ৫/২৭২)
৩. শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যে মুসল্লী রফ’উল ইয়াদাইন করে ঐ মুসল্লী আমার কাছে অধিক
প্রিয় সেই মুসল্লীর চাইতে যে রফ’উল ইয়াদাইন করে না। কারন রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীসগুলো সংখ্যায় বেশি এবং অধিকতর মজবুত।
(হুজ্জাতুল্লাহহিল বালিগাহ ২/১০)
তিনি আরো বলেন, রফ’উল ইয়াদাইন হচ্ছে সম্মান সূচক কর্ম। যা মুসল্লীকে আল্লাহর দিকে রুজু হওয়ার
ব্যাপারে এবং সালাতে তন্ময় হওয়ার ব্যাপারে হুশিঁয়ার করে দেয়। (হুজ্জাতু্ল্লাহিল
বালিগাহ ২/১০)
৪. আল্লামা আবুল হাসান সিন্ধী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যারা এ কথা বলে যে, তাকবীরে তাহরীমাহ ছাড়া রুকু’তে যাওয়ার সময় এবং রুকু’ থেকে উঠার সময় দু’ হাত তোলার হাদীস মানসূখ ও রহিত, তাদের ঐ দাবী
দলীলবিহীন এবং ভিত্তিহীন। (শারহু সুনানে ইবনে মাজাহ, মিসরের
ছাপা ১ম খন্ড ১৪৬ পৃষ্ঠার টিকা)
৫. আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমিরী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ এ কথা জানা উচিত যে, সালাতে রফ’উল ইয়াদাইন
করার হাদীস সূত্র ও ‘আমালের দিক দিয়ে ****মুতাওয়াতির,এতে কোনই সন্দেহ নেই। আর এটা মানসূখও নয় এবং এর একটি হরফও নাকচ নয়।
(নাইলুল ফারকাদাইন, পৃ- ২২, রসূলে
আকরাম কী নামায, পৃ-৬৯)
****মুতাওয়াতিরঃমুতাওয়াতির বলা হয় সেই হাদীসকে যেটিকে এতো অধিক সংখ্যক
বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন যে, তাদের পক্ষে সাধারণত মিথ্যার
উপর একত্রিত হওয়া সম্ভব নয়।
৬. আল্লামা ‘আবদুল
হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ নাবী (সাঃ)-এর সূত্রে রফ’উল
ইয়াদাইন করার প্রমাণ বেশী এবং প্রাধান্যযোগ্য।আর এটা মানসূখ বা নাকচ হবার দাবী যা
ত্বাহাভী, ইবনুল হুমাম ও আইনী প্রমূখ আমাদের দলের মনীষীদের
পক্ষ থেকে প্রচারিত হয়েছে, তা এমনই প্রমাণহীন যে তদদ্বারা
রোগী নিরোগ হয় না এবং পিপাসার্তও তৃপ্ত হয় না। (আত-তা’লীকুল
মুমাজ্জাদ, পৃ-৯১)
৭. ইমাম মুহাম্মাদের সাথী ও ইমাম আবূ ইউসূফের শিষ্য ইসাম ইবনু ইউসূফ আল বালাখী
(রহঃ)-এর রফ’উল ইয়াদাইন করা
সম্পর্কে আল্লামা ‘আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ
ইসাম ইবনু ইউসূফ ছিলেন ইমাম আবূ ইউসূফের শাগরিদ এবং হানাফী। তিনি রুকু’তে যাওয়ার সময় এবং রুকু’ থেকে উঠার সময় রাফ’উল ইয়াদাইন করতেন- (আল-ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ ফী তারাজিমিল হানাফিয়্যাহ,
পৃ-১১৬)। আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক, সুফিয়ান
সাওরী এবং শু’বাহ (রহঃ) বলেন, ইসাম
ইবনু ইউসূফ মুহাদ্দিস ছিলেন। সেজন্য তিনি রফ’উল ইয়াদাইন
করতেন। (আল-ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ, পৃ-১১৬)
৮. শায়খ আবূত ত্বালিব মাক্কী হানাফী (রহঃ) তার ‘কুতুল কুলূব’ গ্রন্থে সালাতের সুন্নাত
সমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রুকু’তে
যাওয়ার সময় রফ’উল ইয়াদাইন করা ও তাকবীর বলা সুন্নাত। তারপর ‘সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ’ বলে রফ’উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। (কুতুল কুলূব ৩/১৩৯)
৯. কাজী সানাউল্লাহ পানিপত্তি হানাফী (রহঃ) বলেনঃ বর্তমান সময়ের অধিকাংশ ‘আলিমের দৃষ্টিতে রফ’উল
ইয়াদাইন করা সুন্নাত। অধিকাংশ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিসীনে কিরাম একে প্রমাণ করেছেন।
(মালাবুদ্দাহ মিনহু, পৃ-৪২, ৪৪)
১০. শায়খ ‘আবদুল ক্বাদির জিলানী
(রহঃ) সালাতের সুন্নাত সমূহের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ সালাত শুরু করার সময়,
রুকু’তে যাওয়ার সময় এবং রুকু’ হতে উঠার সময় রফ’উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। (গুনিয়াতুত
ত্বালিবীন, পৃ-১০)
১১. দ্বিতীয় আবূ হানিফা নামে খ্যাত আল্লামা ইবন নুজাইম (রহঃ) বলেনঃ রুকু’তে যাওয়ার সময় ও রুকু’ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ’উল ইয়াদাইন করলে সালাত
বরবাদ হবার কথা যা মাকহুল নাসাফী ইমাম আবূ হানিফা থেকে বর্ণনা করেছেন তা বিরল
বর্ণনা, যা রিওয়ায়াত ও দিরায়াত উভয়েরই পরিপন্থী অর্থাৎ
সূত্রতঃ ও জ্ঞানত” ঠিক নয়। (রাহরু রায়িক ১/৩১৫, যাহরাতু রিয়অযুল আবরার, পৃ-৮৯)
১২. দেওবন্দের শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমূদুল হাসান বলেনঃ রফ’উল ইয়াদাইন মানসূখ নয়। আর এর স্থায়িত্ব
প্রমাণিত নয়- (ইযাহুল আদিল্লাহ)। ইতিপূর্বে ইমাম যায়লায়ী হানাফীর বরাত দিয়ে প্রমাণ
করা হয়েছে যে, এর স্থায়িত্ব প্রমাণিত। কেননা রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত আজীবন রাফ’উল ইয়াদাইন করেছিলেন।
(নাসবুর রায়াহ তাখরীজ আহাদীসিল হিদায়া ১/৪১০)
১৩. মুফতী আমিমুল ইহসান লিখেছেনঃ যারা রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস মানসূখ-আমি বলি, তাদের একটি
মাত্র দলীল (অর্থাঃ ইবনু মাস’উদের হাদীস), দ্বিতীয় কোন দলীল নাই। (ফিকহুস সুনার ওয়াল আসার, পৃ-৫৫)
১৪. হানাফী মাযহাবের ফিক্বাহ গ্রন্থাবলীতেও রাফ’উল ইয়াদাইনের পক্ষে বক্তব্য রয়েছে। তন্মধ্যকার কয়েকটি উল্লেখ
করা হলঃ
(ক) রুকু’র পূর্বে ও পরে রফ’উল
ইয়াদাইন করার হাদীস প্রমাণিত আছে। (আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৪, নুরুল
হিদায়া)
(খ) রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস, রফ’উল ইয়াদাইন না করার হাদীসের চাইতে শক্তিশালী ও মজবুত। (আয়নুল হিদায়া
১/৩৮৯)
(গ) বায়হাক্বীর হাদীসে আছে, ইবনু উমার বর্ণনা করেছেন,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত সালাতের মধ্যে রফ’উল ইয়াদাইন করেছেন। (ইয়নুল হিদায়া ১/১৮৬)
(ঘ) রফ’উল ইয়াদাইন না করার হাদীস দুর্বল। (নুরুল
হিদায়া, ১০২)
(ঙ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে রফ’উল ইয়াদাইন প্রমাণিত
আছে এবং এটাই হাক্ব। (আয়নুল হিদায়অ ১/৩৮৬)
=> এবার সহীহ হাদীসের আলোকে রফ’উল ইয়াদাইনের কয়েকটি
প্রসিদ্ধ হাদীস বর্ণনা করা হলোঃ
(১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার
(রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে
দেখেছি, তিনি যখন সালাতেস জন্য দাঁড়াতেন তখন কাঁধ পর্য্ত দু’
হাত উঠাতেন, এবং তিনি যখন রুকু’র জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন, আবার যখন রুকু’
থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এ রকম করতেন এবং সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ
বলতেন। তবে তিনি সাজদাহর সময় এমন করতেন না। (সহীহুল বুখারী, ৭৩৪,
৭৩৫, মুসলিম, নাসায়ী,
ইবনু মাজাহ, আহমাদ, মুয়াত্তা
মালিক, মায়াত্তা মুহাম্মাদ, ত্বাহাভী,
বায়হাক্বী, তিরিমিযী)
(২) মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) যখন সালাতের জন্য তাকবীর দিতেন তখন কান পর্যন্ত দু’ হাত
উঠাতেন। একইভাবে তিনি রুকু’তে যাওয়ার সময় কান পর্যন্ত দু’
হাত উঠাতেন এবং রুকু’ থেকে উঠার সময়ও কান
পর্যন্ত হাত উঠাতেন ও সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ বলতেন। (সহীহ মুসলিম হা/৩৯১,
সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ, সহীহ আবূ দাউদ,
ইরওয়অ ২/৬৭, হাদীসটি সহীহ)
(৩) আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে তাকবীরে তাহরীমাহর
সময়, রুকু’র সময়, রুকু’ হতে মাথা উঠানোর সময় এবং দু’ রাক’আত শেষে তৃতীয় রাক’আতে
দাঁড়ানোর সময়ে রফ’উল ইয়াদাইন করতে দেখেছেন। (বায়হাক্বী ২/৮০,
বুখারীর জুযউল ক্বিরআত, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ)
(৪) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে সালাত আদায় করেছি। তিনি তাকবীর দিয়ে সালাত
আরম্ভ করে দু’হাত উঁচু করলেন। অতঃপর রুকু’ করার সময় এবং রুকু’র পরেও দু’হাত
উঁচু করলেন। (আহমাদ, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, ইবনে মাজাহ, আবূ দাউদ)
(৫) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর বলেন, আমি
নাবী (সাঃ) এর দশজন সাহাবীর মধ্যে আবূ হুমাইদের নিকট উপস্থিত ছিলাম, তাঁদের (আবূ হুমাইদ, আবূ উসাইদ, সাহল ইবনু সা’দ, মুহাম্মাদ
ইবনু মাসলামাহ- (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণের) মধ্যে একজন আবূ ক্বাতাদাহ ইবনু রবয়ী
(রাঃ) ও ছিলেন। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সালাত
সম্পর্কে আপনাদের চাইতে বেশি অবগত। তাঁরা বললেন, তা কিভাবে?
আল্লাহর শপথ! আপনি তো আমাদের চেয়ে তাঁর অধিক নিকটবর্তী ও অধিক
অনুসরণকারী ছিণেন না। তিনি বললেন, বরং আমি তো তাঁকে
পর্যবেক্ষন করেছিলাম। তাঁরা বললেন, এবার তাহলে উল্লেখ করুন।
তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন দু’হাত উঁচু করতেন এবং যখন রুকু’ করতেন, রুকু’ থেকে মাথা উঠাতেন, এবং
দু’ রাক’আত শেষে তৃতীয় রাক’আতে দাঁড়াতেন তখনও দু’ হাত উঁচু করতেন। এ বর্ণনা
শুনে তাঁরা সবাই বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন। (বুখারীর জুযউল
ক্বিরাআত, সহীহ ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ
দাউদ)
=> রফ’উল ইয়াদাইন সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস ও আসারের
সংখ্যা এবং সেসবের মান-
(ক) রফ’উল ইয়াদাইন সম্পর্কে বর্ণিত সর্বমোট সহীহ
হাদীস ও আসারের সংখ্যা অনূ্যন ৪০০ শত। (সিফরুস সাআদাত, পৃ-১৫)
(খ) ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীস সমূহের সানাদের চেয়ে বিশুদ্ধতম সানাদ আর নেই। (ফাতহুল
বারী ২/২৫৭)
(গ) হাদীসের অন্যতম ইমাম হাফিয তাকীউদ্দিন সুবকী (রহঃ) বলেন, সালাতের মধ্যে রফ’উল ইয়অদাইন করার হাদীস এতো বেশী যে,
রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীসকে মুতাওয়াতির বলা ছাড়া
উপায় নেই। (সুবকীর জুযউ রফ’উল ইয়াদাইন)
রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণের
সংখ্যা-
*** রুকু’তে যাওয়া ও রুকু’ হতে
উঠার সময় রফ’উল ইয়অদাইন করা সম্পর্কে চার খলীফাসহ প্রায় ২৫
জন সাহাবী থেকে বর্ণিত হাদীস সমূহ রয়েছে। (সালাতুর রসূল (সাঃ), পৃষ্ঠা ৬৫, হাদীস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
***মুহাদ্দিস ইরাক্বী (রহঃ) তাঁর ফাতহুল মুগীস গ্রন্থে বলেন, আমি সালাতে রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীস প্রায় ৫০ জন
সাহাবা হতে একত্রিত করেছি। তিনি তাকরীবুল আসানীদ ও তাকরীবুল মাসানীদ গ্রন্থে বলেন,
জেনে রাখ! সালাতে রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীস ৫০ জন
সাহাবায়ি কিরাম হতে বর্ণিত হয়েছে। (ফাতহুল মুগীস ৪/৮, কিতাবু
তাকরীবুল আসানীদ ও তাকরীবুল মাসানীদ প্র-১৮)
=> রাফ’উল ইয়াদাইনের গুরুত্ব ও ফাযীলাত-
(১) মালিক বলেন, ইবনু ‘উমার
(রাঃ) কোন ব্যক্তিকে সালাতে রুকু’র সময় ও রুকু’ থেকে উঠার সময় রফ’উল ইয়াদাইন না করতে দেখলে তাকে ছোট
পাথর ছুঁড়ে মারতেন, যতক্ষন না সে রফ’উল
ইয়াদাইন করে। (বুখারীর জুযউ রফ’উল ইয়াদইন, আহমাদ, দারকুতনী-নাফি, হতে
সহীহ সানাদে)
(২) ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ)
বলেন, যে ব্যক্তি রুকু’র সময় এবং রুকু’
থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ’উল ইয়াদাইন করে তার
জন্য রয়েছে প্রত্যেক ইশারার বিনিময়ে দশটি নেকী। (বায়হাক্বীর মা’রিফাত ১/২২৫, মাসায়িলে আহমাদ, কানযুল
‘উম্মাল)
(৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, রফ’উল ইয়াদাইন হচ্ছে সালাতের সৌন্দর্য্যের একটি শোভা। প্রত্যেক রফ’উল ইয়াদাইনের বদলে দশটি করে নেকী রয়েছে, অর্থাৎ
প্রত্যেক আঙ্গুলের বিনিময়ে রয়েছে একটি করে নেকী। (আল্লামা আইনী হানাফীর ‘উমদাতুল ক্বারী ৫/২৭২)
এতে প্রমাণিত হয়, রফ’উল ইয়াদাইন করার কারণে দু’ রাক’আত সালাতে ৫০ আর চার রাক’আত সালাতে ১০০টি নেকী বেশি
পাওয়া যায়। এ হিসেবে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্তের ১৭ রাক’আত ফরয
সালাতে ৪৩০ নেকী, একমাসে ১২,৯০০ নেকী
আর এক বছরে ১,৫৪,৮০০ নেকী শুধু রফ’উল ইয়াদাইন করার জন্য বাড়তি যোগ হচ্ছে। সুতরাং কোন ব্যক্তি সালাতে রফ’উল ইয়াদাইন করার কারণে ৩০ বছরে ৪৬,৪৪,০০০ নেকী আর ৬৫ বছরে ১,০০,৬২,০০০ নেকী বেশি পাচ্ছেন। এটা শুধু পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের হিসাব এছাড়া
সুন্নাত, নাফল, বিতর, তাহাজ্জুত, তারাবীহ প্রভৃতি সালাতে রফ’উল ইয়াদাইন করার নেকী তো রয়েছেই। যা এ হিসাব অনুপাতেই পাওয়া যাবে। সুতরাং
যারা ফারয, সুন্নাত, নাফল প্রভৃতি
সালাতে রফ’উল ইয়াদাইন করেন না তারা কতগুলো নেকী থেকে বঞ্চিত
হচ্ছেন তা কি ভেবে দেখেছেন? অথচ ক্বিয়ামাতের দিন হাশরের
ময়দানে মানুষ একটি নেকী কম হওয়ার কারনে জান্নাতে যেতে পারবে না!
=> আমাদের মাযহাবের রফ’ইয়াদাইন না করার পক্ষে সবথেকে
শক্তিশালী হাদীস এবং তার তাত্বিক পর্যালোচনাঃ
****”আলক্বামাহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ
ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
এর সালাত কিরূপ ছিল তা শিক্ষা দেব না? বর্ণনাকারী বলেন,
অতঃপর তিনি সালাত আদায় করলেন এবং তাতে কেবল একবার হাত উত্তোলন
করলেন। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসয়ী)
হাদীসটি ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন এবং ইবনু হাযাম বলেছেন সহীহ। পক্ষান্তরে
অন্যান্য ইমামগণ এটিকে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী, ইমাম আহমাদ উবনু হাম্বাল, ইমাম নাববী, ইমাম শাওকানী (রহঃ) প্রমূখ ইমামগণ
হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। (আল-মাজমু’আহ ফী আহাদীসিল মাওযু’আহ, ২০ পৃঃ)
ইমাম ইবনু হিব্বান বলেন, রফ’উল ইয়াদাইন না করার পক্ষে কূফাবাসীদের এটিই সবচেয়ে বড় দলীল হলেও এটিই
সবচেয়ে দুর্বলতম দলীল। কেননা এর মধ্যে এমন সব বিষয় রয়েছে যা একে বাতিল বলে গণ্য
করে। (নায়লুল আওত্বার ৩/১৪, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৪, আওনুল মা’বুদ)
হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) ‘আত-তালখীস’
গ্রন্থে বলেন, ইবনুল মুবারক বলেছেন, হাদীসটি আমার নিকট প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত নয়। ইবনু আবূ হাতিম বলেন,
এ হাদীসটি ভুল ও ত্রুটিযুক্ত। ইমাম আহমাদ ও তাঁর শায়খ ইয়াহইয়া ইবনু
আদাম বলেন, হাদীসটি দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ বলেন, হাদীসটি সহীহ নয়। ইমাম দারকুতনী বলেন, হাদীসটি
প্রমাণিত নয়। ইমাম বায়হাক্বী এবং ইমাম দারিমী (রহঃ) ও হাদীসটিকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত
করেছেন। অন্যদিকে ইমাম তিরমিযী হাসান বললেও তিনি নিজেই আবার ‘আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) -এর সূত্রে উল্লেখ করেছেন যে, হাদীসটি প্রমাণিত নয় এবং প্রতিষ্ঠিতও নয়। (আওনুল মা’বুদ,
নায়লুল আওত্বার, জামি আত-তিরমিযী ও অন্যান্য)
আল্লামা শামসুল হাক্ব ‘আযীমাবদী
(রহঃ) বলেন, তাকবীরে তাহরীমাহ ব্যতীত অন্যত্র রফ’উল ইয়াদাইন না করার পক্ষে এ হাদীসটি দলীল হিসাবে পেশ করা হয়। কিন্তু
হাদীসটি দলীলযোগ্য নয়। কেননা হাদীসটি দুর্বল ও অপ্রমাণিত।
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, নাবী (সাঃ) হতে ইবনু মাসউদের সূত্র ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে রফ’উল ইয়অদাইন ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে সহীহ সুন্নাহ সাব্যস্ত হয়নি। আর ইবনু
মাসউদের এ হাদীসটিকে সহীহ মেনে নিলেও তা রফ’উল ইয়াদাইন এর
পক্ষে বর্ণিত সহীহ হাদীসসমূহের বিপরীতে পেশ করা যাবে না এবং ইবনু মাসউদের এ
হাদীসের উপর আমল করা উচিত হবে না। কেননা এটি না-বোধক আর ঐগুলি হাঁ-বোধক। ‘ইলমে হাদীসের মূলনীতি অনুযায়ী হাঁ-বোধক হাদীস না-বোধক হাদীসের উপর
অগ্রাধিকার যোগ্য।
মাযহাবী থিওরীতে বলা হয়েছে, হানাফী
ও অন্যদের নিকট যখন হাঁ-সূচক ও না-সূচকের সাথে দ্বন্দ্ব দেখা দিবে তখন না-সূচকের
উপর হাঁ-সূচক অগ্রাধিকার পাবে। এরূপ নীতি বলবৎ হয় যদি হা-সূচকের পক্ষে একজনও হয়
তবুও। সুতরাং সেখানে বিরাট এক জামা’আত হাঁ-সূচকের পক্ষে
সেখানে অন্য কোন প্রশ্নই আসতে পারে না। যেমনটি এ মাসআলার ক্ষেত্রে। সুতরাং দলীল
সাব্যস্ত হওয়ার পর গোড়ামী না করাটাই উচিত…………।(হাশিয়া মিশকাত;
আলবানী ১/১৫৪, ও যঈফাহ ৫৬৮)
ইমাম বায়হাক্বী, শায়খ
আবূল হাসান সিন্দী হানাফী ও ফাক্বীহ আবূ বাকর ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) প্রমূখগণ বলেনঃ
বরং ইবনু মাসউদ এমন কিছু বিষয় ভুলে গেছেন যে ব্যাপারে মুসলিমগণ মতভেদ করেনি। যেমনঃ
(১) তিনি সমস্ত সাতাবায়ি কিরাম ও মুসলিম উম্মাহর বিপরীতে সূরাহ নাস ও সূরাহ ফালাক্বকে
কুরআনের অংশ মনে করতেন না। (২) তিনি তাতবীক অর্থাৎ রুকু’র
সময় দু’ হাঁটুর মাঝখানে দু’ হাত জড়ো
করে হাঁটু দ্বারা চেপে রাখতে বলতেন। অথচ এরূপ আমাল রহিত হয়ে যাওয়অ এবং তা বর্জন
করার উপর সকল আলিমগণ যে একমত হয়েছেন তাও তিনি ভুলে গেছেন। (৩) ইমামের সাথে দু’
জন মুক্তাদী হলে মুক্তাদীদ্বয় কোথায় কিভাবে দাঁড়াবেন তাও তিনি ভুলে
গেছেন। তিনি বলতেন, ইমামের বরাবর দাঁড়াতে হবে। অথচ এটা
হাদীসের সম্পূর্ণ খেলাফ। (৪) তিনি ভুলে গিয়েছিলেন বিধায় এরূপ বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঈদুল আযহার দিন ফাজরের সালাত সঠিক সময়ে পড়তেন না বরং
ঈদের সালাতের পূর্বে পড়তেন। অথচ এটা সমস্ত মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধ মত। এ ব্যাপারে
সমস্ত আলিমগণের ঐক্যমতের কথাও তিনি ভুলে গেছেন। (৫) তিনি ভুলে গেছেন নাবী (সাঃ) ‘আরাফার ময়দানে কী নিয়মে দু’ ওয়াক্ত সালাত একত্রে
আদায় করেছেন। ((৬) তিনি সাজদাহর সময় মাটিতে হাত বিছিয়ে রাখতে বলতেন। অথচ এটি
হাদীসের পরিপন্থি হওয়ার ব্যাপারে আলিমগণ মতভেদ করেননি বরং একমত পোষন করেছেন,
তাও ইবনু মাসউদ ভুলে গেচেন।
অতএব এ সমস্ত ভুল যাঁর হয়েছে, তাঁর
সালাতে রফ’উল ইয়াদাইন না করা এবং সে বিষয়ে হাদীস না জানা বা
না বলাও ভুলের অন্তর্ভূক্ত। এতে কোন সন্দেহ নেই। তাছাড়া মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট
এ কথা প্রসিদ্ধ যে, ইবনু মাসউদের শেষ বয়সে বার্ধক্যজনিত
কারনে স্মৃতি ভ্রম ঘটে। সুতরাং রফ’উল ইয়াদাইন না করার
হাদীসটিও সে সবের অর্ন্তভূক্ত হওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়। (মাওয়াহিবু লাতীফা ১/২৬০,
ইমাম বুখারীর জুযউ রাফ’উল ইয়াদাইন, ইমাম যায়লায়ী, হানাফীর নাসবুর রায়হ ৩৯৭-৪০১, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৩৪, শারহু মুসনাদে ইমাম আবূ
হানিফা ১৪১ পৃঃ, বালাগুল মুবীন ১/২২৯)
রফ’উল ইয়াদাইন না করার এই হাদীস সম্পর্কে ইমাম
আহমাদ ইবনুল হাম্বাল (রহঃ), আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ), ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) ও ইমাম শাওকানী (রহঃ) বানোয়াট (মাওযূ) বলেছেন।
(তাসহীলূল ক্বারী, আল-ফাওয়ায়িদুল মাওযু’আহ, আল-লাআ-লিল মাসনু’আহ ফিল
আহাদীসিল মাওযু’আহ ২/১৯)
আলোচনা আর দীর্ঘ করতে চাচ্ছি না। এমনিতেই পাঠকগণ এতটুকু পড়বেন কি-না সন্দেহ
আছে। তার পরেও আপনাদের অনুরোধ করব, পুরাটুকু পড়তে।
=> রফ’উল ইয়াদাইনের পক্ষে জমহুর মুহাদ্দিস, জমহুর ফাক্বীহ ও মুজতাহিদ ইমামগণের অভিমত-
(০১) ইমাম বুখারী ও ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) বলেনঃ মাক্কাহ, মাদীনাহ, হিজাজ, ইয়ামান,
সিরিয়া, ইরাক, বাসরাহ,
খুরাসান প্রভৃতি দেশের লোকেরা সকলেই রুকু’তে
যাওয়ার সময় এবং রুকু’ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ’উল ইয়াদাইন করতেন। (বুখারীর জুযউল ক্বিরআত)
অসংখ্য সহীহ হাদীস ও আসার বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যারা রফ’উল ইয়াদাইন করেন না তাদের বিরুদ্ধে ইমাম
বুখারী (রহঃ) ‘জুযউ রফউল ইয়াদাইন’ নামে
একটি স্বতন্ত্র কিতাবই রচনা করেছেন এবং সেখানে এর পক্ষে ১৯৮টি দলীল বর্ণনা করেছেন।
অনুরূপভাবে হাদীসের অন্যতম হাফিয তাকীউদ্দিন সুবকী (রহঃ) ও রফ’উল ইয়াদাইনের পক্ষে জুযউ রফউল ইয়াদাইন’ নামে একখানা
স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন। সুতরাং মুহাদ্দিসগণের নিকট রফ’উল
ইয়াদাইন যে কত বড় গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত তা সহজেই অনুমেয়।
(০২) ইমাম তিরমিযী (রহঃ), ইমাম ইবনু হিব্বান (রহঃ),
ইমাম মুহাম্মাদ নাসর (রহঃ), ইমাম বুখারীর
উস্তাদ ইমাম ইবনুল মাদীনী (রহঃ), ইবনু আবদুল বার (রহঃ),
শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহঃ), হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম
আল জাওযী (রহঃ), আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ), শায়খ সালিহ আল-উসাইমিন (রহঃ), স’উদী আরবের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতী শায়খ ‘আবদুল ‘আযীয বিন বায (রহঃ) প্রমূখ মুহাদ্দিসগণ সকলেই রফ’উল
ইয়াদাইনের পক্ষে তাদের দলীল সহ মতবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আমরা বাংলাদেশের গুটিকতক গরুখাওয়া মুসলমান সোয়াবের আশায় মিলাদ, শবেবরাত, পীর পুজা,
উরুস, মাজারের উপর গম্বুজ নির্মাণ, আজানের সময় আঙ্গুলে চুম্বন, প্রত্যেক ফরয নামাজের পর
সম্মিলিত মোনাজাত, খতমে খাজেগাঁ, খতমে
শবিনা, খতমে ইউনুস, নামাযের পূর্বে
মুখে নিয়্যাত উচ্চারণ এসকল বিষয়গুলো নিয়ে এতই মেতে আছি অথচ নামাযের মধ্যে এত বড়
একটা আমল ‘রফে’উল ইয়াদাইন’ কে কর্তন করে একেবারে বিতাড়িত করেছি। আর সকলকে বুঝাচ্ছি এটাও ঠিক ওটাও
ঠিক!!
আসুন আমরা হিংসা-বিদ্বেষ ছেড়ে সঠিক আকিদার মানদন্ডে নিজেদের আমলকে পরিশুদ্ধ
করার চেষ্টা করি। আমীন……………
এ ব্যাপারে ইমাম বোখারী ১টি কিতাব লিখেছেন, যার নাম- জুযু রাফুল ইয়াদিন। এ কিতাবে তিনি তাদের বিরোধিতা করেছেন যারা
রুকু তে যাওয়ার আগে ও রুকু থেকে উঠার পর রাফুল ইয়াদিন(দু হাত উঠান) করে না।
এই কিতাব তি এখান থেকে ডাউনলোড করতে পারেনঃ http://peace-for-life.com/2012/07/juz-ul-raful-yadin-bangali-translated/
এবং ইমাম বোখারী আর একটি কিতাব লিখেছেন তাদের বিরদ্ধে যারা ইমামের পিছনে সুরা
ফাতিহা পাঠ করে না।
এই কিতাব তি এখান থেকে ডাউনলোড করতে পারেনঃ http://peace-for-life.com/2012/07/juz-ul-qirat-bangali-translated/