আপনি কি জানেন,
আল্লাহর আইন দিয়ে যে দেশ পরিচালনা করেনা বা বিচার করেনা
সে কি?
১. বেদাতী
২. মুনাফেক
৩. কাফের
৪. ফাসেক
৫. মুসলমান
৬. জালেম
উত্তরঃ আল্লাহর আইন দিয়ে যারা বিচার করেনা, আল্লাহ তাআ’লা তাদেরকে কাফের বলেছেন, আবার তাকে
ফাসেক (পাপাচারী) ও জালেম (অন্যায়কারী/অত্যাচারী) বলেছেন। সুতরাং, অবস্থার উপর নির্ভর
করে আল্লাহর আইন দিয়ে যে বিচার করেনা সে বড় কাফের হতে পারে আবার, কখনো সে বড় গুনাহগার
ফাসেক জালেম বা পাপী মুসলমানও হতে পারে।
ব্যখ্যাঃ কেউ যদি #শরীয়াহ বা আল্লাহর আইনকে অস্বীকার করে,
অথবা কেউ যদি মনে করে, আল্লাহর আইন অচল, আল্লাহর আইন থেকে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র বা
তার বা অন্য কারো মত, মোট কথা মানুষের বানানো আইন-কানুন বেশি উত্তম, বর্তমান যুগের
জন্য বেশি উপযোগী, অথবা আল্লাহর আইন আর মানুষের আইনকে যদি সমানও মনে করে, তাহলে সে
কাফের, মুর্তাদ হয়ে চিরজাহান্নামী হয়ে যাবে।
কিন্তু কেউ যদি আল্লাহর আইনকে স্বীকার করে ও মনেপ্রাণে
বিশ্বাস করে, কিন্তু ঘুষ খেয়ে, স্বজনপ্রীতির কারণে, দুনিয়াবী কোন স্বার্থে - আল্লাহর
আইন অনুযায়ী বিচার করে না, কিন্তু মানুষের বানানো আইনকে ভুল মনে করে এবং আল্লাহর আইনই
শ্রেষ্ঠ ও মানা সবার জন্য মানা ফরয বলে বিশ্বাস রাখে, তাহলে সে ছোট কুফুরী ও বড় অন্যায়
করলো, এই কারণে সে #ফাসেক ও #জালেম হবে, কিন্তু সে মুসলমান থাকবে। তোওবা না করে মারা
গেলে জাহান্নামে শাস্তি হওয়ার পরে সে জান্নাতে যেতে পারবে।
এই কথার দলীল হচ্ছে ক্বুরানুল কারীমের সুরা আল-মায়িদাহঃ
৪২-৪৭।
আপনারা ইমাম ইবনে কাসীরের তাফসীর গ্রন্থের পাবেন, এনিয়ে
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ এর বক্তব্য, এই আয়াতের তাফসীরে।
এই কারণে সালফে সালেহীন (আগের যুগের নেককার লোকেরা, অর্থাৎ
সাহাবারা) ও পরবর্তী যুগের অন্যান্য ওলামারা আল্লাহর আইন অনুযায়ী কেউ বিচার না করলে,
প্রথমেই তাকে কাফের বলে ফতোয়া দেন না। আগে নিশ্চিত হতে হবে তার পাপ কি ছোট কুফুরী,
নাকি বড় কুফুরী?
ছোট কুফুরী হলে সে ব্যক্তি জালেম কিন্তু মুসলমান। আর বড়
কুফুরী হলে সে কাফের।
উল্লেখ্য, খারেজীরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের এই নীতি
মানেনা, শাসকের কবীরা গুনাহর কারণে সে যদি মুসলিমও হয়, তবুও খারেজীরা তাকে কাফের ফতোয়া
দিয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। খারেজীদের ধর্মই হচ্ছে এটা। বর্তমান যুগেও দেশ-বিদেশে
এমন কিছু লোক আছে যারা খারেজীদের এই বাতিলের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয়। হিজবুত তাওহীদ
এমনই একটা খারেজী দল, যাদের ইমাম হচ্ছে বায়েজীদ খান পন্নী এবং তাদের দাওয়াতী পত্রিকার
নাম হচ্ছে দেশেরপত্র।
আধুনিক যুগের ২জন বড় কুফুরী করেছিলো এমন শাসক হচ্ছে, ইরাকের
প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন এবং লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফি। সাদ্দাম হোসেন ছিলো বাথিস্ট,
যে ক্ষমতায় আসার পরে তার দলের লোকেরা আল্লাহর কুশপুত্তলিকা বানিয়ে পুড়িয়ে ফেলে এবং
আল্লাহ আজ থেকে মৃত বলে ঘোষণা করে নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। এছাড়া আরো অনেক শিরকি কাজের
জন্য শায়খ বিন বাজসহ অন্য আলেমরা সাদ্দামকে #মুর্তাদ ফতোয়া দিয়েছিলেন। অবশ্য তার ফাসির
আগে সে তোওবা করেছে বলে দাবী করে, দাড়ি রাখে, কোর্টে কুরান নিয়ে আসে এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে বলতেই সে ফাঁসিতে ঝুলে। তাই
হতে পারে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তাই আমরা এখন আর তাকে কাফের বলবোনা – তার ব্যপারে চুপ থাকবো।
আর গাদ্দাফি পুরো #সুন্নতকেই সে অস্বীকার করেছিলো এবং
সুন্নতকে শয়তানী বেদাত বলেছিলো, নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। এছাড়া সে ক্বুল দিয়ে শুরু
সুরার (ফালাক, নাস...) পূর্বে ‘ক্বুল’ শব্দটিকে ক্বুরানের অংশ মেনে নিতে অস্বীকার
করে। ক্বুরানের একটা আয়াতও দূরের কথা, কেউ যদি শুধু সন্দেহ করে, আলিফ লাম মীমের ‘আলিফ’ অক্ষরটা কুরানে আছে কিনা – তবুও সে কাফের হয়ে যাবে। গাদ্দাফির
সাথে কথা বলে, তার কুফুরী বিস্তারিত জেনে-শুনে আরব দেশের অনেক ওলামা বহু আগে তাকে কাফের
ফতোয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু লিবিয়ার আহলে সুন্নত দুর্বল ছিলো বলে, ওলামারা গাদ্দাফির বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করতে বলেন নি। যদিও বছর দুয়েক আগে তার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ বিদ্রোহ করে এবং
এর ফলে বিদ্রোহীরা মুসলমানদের অনেক বড় ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীরা
মুসলমানদের সবচাইতে বড় শত্রু #আমেরিকার সাহায্য নেয় গাদ্দাফিকে সরানোর জন্য। আর যুদ্ধের
পরে বর্তমান লিবিয়ার অবস্থা খুব খারাপ ও বিপদজনক। এইজন্য ওলামারা হচ্ছেন ক্বুরান ও
হাদীস সম্পর্কে সবচাইতে জ্ঞানী, নবী রাসূলদের ওয়ারিশ। তাদের কথা না শুনে আবেগে গা ভাসালে
সেটা মুসলমানদের বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসে, যা ইতিহাসে অসংখ্যবার প্রমানিত হয়েছে, বারবার
একই ঘটনা রিপিট হওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে কিছু মূর্খ বক্তা ও পথভ্রষ্ট
আলেম থাকে, যারা ক্বুরান ও হাদীসের ভুল ব্যখ্যা করে ইমশনাল তরুণদের ব্রেইন ওয়াশ করে
ধ্বংস ও ফাসাদের দিকে নিয়ে যায়।
বর্তমানে জীবিতদের মাঝে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান
– ইচ্ছায়/অনিচ্ছায় ক্বুরান ও সুন্নাহ
অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করেন না, কিন্তু নিজেকে মুসলিম দাবী করেন এবং মুসলিম দেশগুলোর
প্রতি ভালোবাসা দেখান। সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজাতে তিনি সাহায্যও পাঠিয়েছেন এবং আরব
বিশ্বকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে আহবান জানিয়েছেন – আল্লাহ তাকে এর জন্য উত্তম প্রতিদান
দিন। আমরা তার ভুলের কারণে তাকে গালি দেওয়া জায়েজ মনে করিনা বা তাকে কাফের ফতোয়া দেইনা,
বরং তাকে মুসলিম শাসক বলেই মনে করি এবং আল্লাহ যেন তাকে হেদায়েত করেন সঠিক দ্বীনের
উপরে, সেই দুয়া করি।
এনিয়ে কারো কোন প্রশ্ন...?
আ’উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।
৪২. অতএব, তারা যদি আপনার কাছে আসে, তবে হয় তাদের মধ্যে
ফয়সালা করে দিন, না হয় তাদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকুন। যদি তাদের থেকে নির্লিপ্ত থাকেন,
তবে তাদের সাধ্য নেই যে, আপনার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারে। যদি ফয়সালা করেন, তবেন্যায়
ভাবে ফয়সালা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন।
৪৩. তারা আপনাকে কেমন করে বিচারক নিয়োগ করবে অথচ তাদের
কাছে তওরাত রয়েছে। তাতে আল্লাহর নির্দেশ আছে। অতঃপর এরা পেছন দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
তারা কখনও বিশ্বাসী নয়।
৪৪. আমি তওরাত অবর্তীর্ন করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে।
আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন। কেননা,
তাদেরকে এ খোদায়ী গ্রন্থের দেখাশোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণে
নিযুক্ত ছিলেন। অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের
বিনিময়ে স্বল্পমূল্যে গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী
ফায়সালা করে না, তারাই কাফের।
৪৫. আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের
বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের
বিনিময়ে দাঁত এবং যখম সমূহের বিনিময়ে সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গোনাহ থেকে
পাক হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।
৪৬. আমি তাদের পেছনে মরিয়ম তনয় ঈসাকে প্রেরণ করেছি। তিনি
পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। আমি তাঁকে ইঞ্জিল প্রদান করেছি। এতে
হেদায়াত ও আলো রয়েছে। এটি পূর্ববতী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়ন করে পথ প্রদর্শন করে এবং
এটি খোদাভীরুদের জন্যে হেদায়েত উপদেশ বানী।
৪৭. ইঞ্জিলের
অধিকারীদের উচিত, আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন। তদানুযায়ী ফয়সালা করা। যারা আল্লাহ
যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী।
সুরা আল-মায়িদাহঃ ৪২-৪৭।