বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আনসারুস সুন্নাহ কথাটির অর্থ কি? এর দ্বারা কি কোন দলকে বোঝায়?

প্রশ্নঃ আনসারুস সুন্নাহ কথাটির অর্থ কি? এর দ্বারা কি কোন দলকে বোঝায়?

উত্তরঃ আনসারুস সুন্নাহ কথাটির অর্থ হচ্ছে সুন্নাহর সাহায্যকারী। এটা কোন দলের নাম নয়, এই নামে আমি অনলাইনে লিখালিখি করা। যাই হোক, মুসলিম মানেই একটা দল। এই দলের বাইরে নতুন করে আলাদা কোন দল তৈরী করা হয়, সেটা একপ্রকার পথভ্রষ্টতা ও বেদাত। তবে আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, রাসুল (সাঃ) ওয়াহীর মাধ্যমে আমাদেরকে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন, মুসলমানেরা ৭৩টা দলে বিভক্ত হবে। তার মাঝে একটি মাত্র সঠিক দল ছাড়া বাকি ৭২টা দলই জাহান্নামে যাবে। সবার প্রথম যেই পথভ্রষ্ট দলগুলো সৃষ্টি হয়েছিলো তারা হচ্ছে - শিয়া, খারেজী, মুহতাজিলা, কাদরিয়্যা ইত্যাদি। তারাও নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে দাবী করতো, কিন্তু তারা ক্বুরান ও হাদীস ব্যখ্যা করতো নিজের মনমতো।

কুরানুল কারীমে আল্লাহ আমাদেরকে সাহাবাদের মতো ঈমান আনতে আদেশ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, অতএব তারা যদি ঈমান আনে, তোমাদের (অর্থাৎ সাহাবাদের মতো) ঈমান আনার মত, তাহলে তারা হেদায়েত পাবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সুতরাং এখন তাদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
সুরা বাক্বারাহঃ ১৩৭।

এছাড়া রাসুল সাঃ স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন যে, শুধুমাত্র তাঁর এবং তাঁর সাহাবাদের আদর্শের অনুসারী লোকেরাই নাজাত পাবে।
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আমার উম্মত তাই করবে যা করেছে বনী ইসরাঈলের লোকেরা। এক জুতা অপর জুতার সমান হওয়ার মত। এমনকি যদি তাদের মাঝে কেউ মায়ের সাথে প্রকাশ্যে জিনা করে থাকে, তাহলে এই উম্মতের মাঝেও এরকম ব্যক্তি হবে যে এই কাজটি করবে। আর নিশ্চয় বনী ইসরাঈল ছিল ৭২ দলে বিভক্ত। আর আমার উম্মত হবে ৭৩টি দলে বিভক্ত। এই সব দলই হবে জাহান্নামী একটি দল ছাড়া। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, সেই দলটি কারা? নবীজী সাঃ বললেন, যারা আমার ও আমার সাহাবাদের মত ও পথ অনুসরণ করবে। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৬৪১।

তাবেয়ীদের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত যুগে যুগে সমস্ত আলেম-ওলামা ফিরকায়ে নাজিয়াহ বা নাজাতপ্রাপ্ত দলটিকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত হিসেবে চিনে থাকেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বা সংক্ষেপে, সুন্নীরাই হচ্ছে শিরক-বেদাতের ভেজালমুক্ত সত্যিকারের মুসলমান। প্রখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ইবনু সীরীন রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ মানুষেরা আগে হাদীসের সনদের ব্যাপারে জিগ্যেস করতোনা। কিন্তু যখন ফিতনাহ এসে পড়ল, তখন তারা বলা শুরু করলেন, তোমাদের হাদীসের রাবী বা বর্ণনাকারীর নাম বল। এরপর কেবল আহলুস সুন্নাহ ব্যক্তিদের হাদীস গ্রহণ করা হত আর আহলুল বিদআহ হলে তার কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করা হতোনা।
সহীহ মুসলিম, মুক্বাদ্দিমাহ অধ্যায়।

আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বাইরে (যদিও তারা নিজেদেরকে আহলে সুন্নতই মনে করে, কিন্তু আকীদা ও আমলে ভ্রষ্টতার কারণে তারা আহলে সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত নয়) অন্য বেদাতী দলগুলোর মাঝেও মুসলিম থাকতে পারে, কিন্তু তাদের ঈমান ও আমল শিরক অথবা বেদাত বিদ্যমান।   

আজকাল কিছু টিভি বক্তা আমি শিয়াও না, আমি সুন্নীও না বলে দাবী করছে এ ধরণের স্বশিক্ষিত আলেম না বুঝেছে শিয়া কি, না বুঝেছে সুন্নি কি! এদের ইসলাম শেখার অনেক বাকি আছে একথা তার ও তাদের অন্ধ ভক্তদের বোঝা উচিত।

উল্লেখ্য, জসীম উদ্দিন রাহমানী নামক একজন চরমপন্থী তাকফিরী বক্তার ভক্তদের দ্বারা চালিত আনসারুল্লাহ দল বা তাদের ওয়েব সাইটের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। জিহাদ, তাকফীর নিয়ে এই দলের অনুসারীরা বিভ্রান্ত, এদের অনেক কথা ও কাজ ইসলাম সমর্থন করেন। এদের মতো আধা বক্তা লোকদের চরমপন্থা অবলম্বনের কারণে দেশে ও বিদেশে মুসলিমরা নানারকম ফেতনা ও নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। এই সমস্ত ফতোয়াবাজদের ব্যপারে সাবধান থাকবেন।

আরেকটা কথা বলার প্রয়োজন মনে করছি, কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল লোকেরা শিরক বেদাতের বিরুদ্ধে বলার কারণে আমাদের নামে সন্ত্রাস ও জংগীবাদের অপপ্রচার চালাছে।

আইন বহির্ভূত যেকোন ধরণের সন্ত্রাস ও মানুষ হত্যাকে ইসলাম কোনদিন সমর্থন করেনা। শিরক ও বেদাতের বিরুদ্ধে আমাদের লেখাগুলোকে কাট-ছাট করে এই হলুদ সাংবাদিকরা চরমপন্থী বলে অভিহিত করে হক্কের দাওয়াতকে বন্ধ করতে চাচ্ছে। অথচ আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, আইন বহিঃর্ভূতভাবে নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যাকে ইসলাম সমর্থন করেনা, এই খুনের জন্য দোষী ব্যক্তিদেরকে আইনের আওতায় এনে ক্বুরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী বিচার করা হোক। এই খুন যে আসলে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটা ষড়যন্ত্র আমাদের এই কথাগুলো উল্লেখ না করে শুধুমাত্র আমাদেরকে ফাঁসানোর জন্য চরমপন্থী দল আনসারুল্লাহর সাথে আমাদের নাম জুড়ে দিয়েছে।  

যাই হোক, এদের মতো হক্কের বিরোধীতাকারী প্রতারক লোকদের ব্যপারে রাসুল সাঃ এর মতোই আমরাও বলবো, হে আল্লাহ, সাত আসমানের রব্ব! মহান আরশের রব্ব! আপনার সৃষ্টিকুলের মধ্য থেকে অমুকের পুত্র অমুকের বিপক্ষে এবং তার বাহিনীর বিরুদ্ধে আপনি আমার আশ্রয়দানকারী হোন; যাতে তাদের কেউ আমার উপর দ্রুত আক্রমণ বা সীমালঙ্ঘন করতে না পারে। আপনার আশ্রিত তো শক্তিশালী, আপনার প্রশংসা তো অতি মহান। আর আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই।
বুখারী, আল-আদাব আল-মুফরাদ, নং ৭১২। আর শাইখ আলবানী সহীহ

এইরকম মিথ্যা নিউজ প্রচারকারী বিদাতী/মুনাফিক লোকদেরকে আমরা বলবো যদি ঈমানদার হয়ে জান্নাতে যেতে চান তাহলে কুরান বুঝে পড়ুন, ইসলাম ও জংগীবাদ কি জানুন। আর যদি কাফের হয়ে থাকেন, তাহলে জেনে রাখুন

তারা যেমন পরিকল্পনা করে, আল্লাহও পরিকল্পনা করেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই হচ্ছেন সবচেয়ে উত্তম পরিকল্পনাকারী।
সুরা আনফালঃ ৩০।

যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার পরেও আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে; তার চাইতে অধিক যালেম আর কে? আল্লাহ যালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর নূরকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। তিনিই (সে মহান সত্ত্বা) তাঁর রসূলকে হেদায়েত ও সত্যধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সকল ধর্মের উপর বিজয়ী করে দেন, যদিও মুশরিকরা তা ঘৃণ করে।
সুরা সফঃ ৭-৯।

শেষ কল্যাণ মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।
সুরা আরাফঃ ১২৮।


আল্লাহ আমাদেরকে মুত্তাকী হিসেবে বেঁচে থাকার তোওফিক দান করুন এবং মুত্তাকী হিসেবেই মৃত্যু দান করুন আমিন।