একটি দুয়া ও একটি সুন্নাহ...
আমরা সবাই দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত। আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন আমাদের
বেশিরভাগ দুয়াই ঘুরেফিরে দুনিয়া কেন্দ্রিক। দুনিয়াবি কোনকিছু চাওয়া নিষেধ বা অপছন্দের
কিছু না, বরং দুনিয়া আখেরাতের ছোট-বড় প্রতিটা বিষয়ের জন্যই আল্লাহর কাছে দুয়া করলে
আল্লাহ খুশি হন। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, আল্লাহ যেই ঈমানদারদের প্রশংসা করেছেন, তারা
শুধু দুনিয়ার জন্যই দুয়া করতোনা – তাদের দুয়া হচ্ছে – “রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া
হাসানাতাও-ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাও ওয়া-ক্বিনা আযাবান্নার” অর্থাৎ, হে আমাদের পালনকর্তা!
আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ দাও এবং পরকালে জীবনেও কল্যাণ দান করো। আর আমাদেরকে
জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও। (সুরা বাক্বারাহ)।
অর্থাৎ, তারা দুনিয়ার জন্য দুয়া করতো কিন্তু সাথে সাথে পরকালের
কল্যানের জন্যও দুয়া করতো। তবে পরকালের জন্য
দুনিয়াবী কল্যানের চাইতে দুই গুণ বেশি দুয়া করে, কারণ দুনিয়ার জীবন পরকালের তুলনায়
অতি নগণ্য।
যাই হোক, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্দর
এই দুয়াটা মুখস্থ করে আপনারা সহজেই নামাযে বা নামাযের বাইরে দুনিয়া ও আখেরাতের উভয়
জাহানের কল্যানের জন্য দুয়া করতে পারবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এই দুয়া করতেন,
اللهم أصلح لي ديني الذي هو عصمة أمري، وأصلح لي دنياي التي فيها معاشي، وأصلح لي آخرتي التي فيها معادي، واجعل الحياة زيادة لي في كل خير، واجعل الموت راحة لي من كل شر
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আসলিহ-লি দ্বিনিয়াল্লাযি হুয়া ই’সমাতু আমরি, ওয়া আসলিহ-লি
দুনিয়া-য়্যাল্লাতি ফীহা মাআ’-শী, ওয়া আসলিহ-লি আ-খিরাতায়াল্লাতী
ফীহা মাআ’-দী। ওয়াজ আ’লিল হায়া-তা যিয়া-দাতাল
লী ফি কুল্লি খাইরি ওয়াজ আ’লিল মাউতা রা-হা’তাল লী মিন কুল্লি শাররি।
অর্থঃ হে আল্লাহ্! তুমি আমার দ্বীনকে আমার জন্য সঠিক করে দাও,
যা আমার সকল বিষয়ের প্রতিরক্ষা। তুমি আমার দুনিয়াকে আমার জন্য সংশোধন করে দাও, যার
মধ্যে রয়েছে আমার জীবন-জীবিকা। তুমি আমার আখেরাতকে আমার জন্য সুন্দর করে দাও, যেখানে
আমাকে ফিরে যেতে হবে। তুমি আমার প্রত্যেক পুণ্য কাজে আমার জীবনকে বৃদ্ধি করে দাও এবং
প্রত্যেক মন্দ কাজ হতে মৃত্যুকে আমার জন্য শান্তির কারণে পরিণত কর।"
রিয়াদুস সালেহীনঃ ১৪৭২, সহীহ মুসলিমঃ ২৭২০।
বাজারে প্রবেশের সুন্নাহঃ
বাজারে প্রবেশের সময় এই দুয়া পড়বেন,
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ، وَهُوَ حَيٌّ لاِ يَمُوتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণঃ লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, লাহুল-মুলকু
ওয়ালাহুল হা’মদু ইয়ুহঈ’ ওয়াইয়ুমীতু, ওয়াহুয়া হায়্যুন
লা ইয়ামূতু, বিয়াদিহিল খাইরু ওয়া হুওয়া আ’লা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর।
অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই, তাঁর কোনো
শরিক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু
দান করেন। আর তিনি চিরঞ্জীব, কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। সকল প্রকার কল্যাণ তাঁর হাতে
নিহিত। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
এর ফযীলত হচ্ছে,
“যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশের
সময় এই দুয়া পড়বে তার আমলনামায়
- ১০০০ নেকী
লিখে দেওয়া হবে
- ১০০০ গুনাহ
মাফ করে দেওয়া হবে
- ১০০০ মর্যাদা
বৃদ্ধি করে দেয়া হবে
তিরমিযীঃ ৩৪২৮, ইবন মাজাহঃ ৩৮৬০; হাকেম ১/৫৩৮।
শাইখ আলবানী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।
বাজার সম্পর্কে সতর্কতাঃ
আল্লাহর কাছে সবচাইতে পছন্দের জায়গা হচ্ছে মসজিদ, আর সবচাইতে
নিকৃষ্ট জায়গা হচ্ছে বাজার। কারণ মসজিদে সবচাইতে বেশি আল্লাহকে স্বরণ করা হয় আর বাজার
হচ্ছে পাপের সেন্টার, যেখানে শয়তান মানুষকে সবচাইতে বেশি পথভ্রষ্ট করে। কত মানুষ ফালতু
আড্ডা, মদ, জুয়ার আসর বসায়, দোকানদার ও ক্রেতারা জেতার জন্য মিথ্যা বলার প্রতিযোগিতা
শুরু করেন। চরিত্রহীন বখাটে ছেলেরা বড় বড় মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, অর্ধনগ্ন মেয়েদেরকে
লাইভ দেখার জন্য, নারীদেরকে উত্যক্ত করার জন্য। বেদ্বীন, বেপর্দা মেয়েরা মার্কেটে ঘুরে
বেড়ায় তাবাররুজ করে পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য, যিনাকারী নারী-পুরুষ,
প্রেমিক-প্রেমিকাদের দেখা করার পছন্দের জায়গা এই বাজার। তাই দ্বীনদার ভাই ও বোনদের
উচিত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এই সমস্ত জায়গায় না যাওয়া। যদি যেতেই হয় পুরুষেরা দৃষ্টি ও
কানের হেফাজত করবেন, নারীরা পূর্ণাংগ হিজাব-পর্দা করে যাবেন। আর যত দ্রুত সম্ভব এই
সমস্ত পাপের জায়গা ত্যাগ করার চেষ্টা করবেন।