প্রশ্নোত্তরে
ইসলাম - পর্ব ৩
প্রশ্নঃ পিডিএফ
অথবা তাফসিরুল কুরানের বই কি অযু ছাড়া পড়া যাবে? দয়া করে জানাবেন।
উত্তরঃ হ্যা
পড়াও যাবে, স্পর্শ করাও যাবে। ওযু ছাড়া সব কিছু পড়া
যায় এবং ধরাও যায়। শুধু আরবী কুরান স্পর্ষ করা যায়না। কিন্তু কুরানের আরবীসহ
অনুবাদ,
তাফসীর, হাদিসের যেকোন বই ওযু
ছাড়া পড়া ও ধরা যায়।
প্রশ্নঃ
প্রিয়নবী মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাঃ উছিলায় আপনার এই চেষ্টা কে আল্লাহ্ কওবুল করে নিক
বলে দুয়া করা যাবে?
উত্তরঃ না, মৃত ব্যক্তিদের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা বৈধ নয়। জীবিত নেককার লোক বা বয়ষ্ক, দুর্বল ও শিশুদের উসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুয়া করা যায়। এনিয়ে বুখারীতে হাদীস
আছে উমার রাঃ এর কাছ থেকে।
প্রশ্নঃ একজন
অত্যাচারী বা স্ত্রী হক্কের ব্যপারে উদাসীন স্বামীর ব্যপারে প্রশ্ন করেছেন।
উত্তরঃ এই
পোস্ট দেখুন –
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/07/blog-post_9.html
প্রশ্নঃ সর্ব
প্রথম আল্লাহর নূরকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছিলো? সেইখান থেকে কি সৃষ্টি করা হয়েছিলো?
উত্তরঃ
নাউযুবিল্লাহ আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, আল্লাহর নূরে
কোন ভাগাভাগি নেই। কবর পূজারী সূফীরা বলে রাসুল সাঃ কে আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্টি
করা হয়েছিলো - এটা জাল হাদীস, মিথ্যা রটনা ও একটা
শিরকী আকীদা। খ্রীস্টানরা তাদের নবী ঈসা আঃ কে ইবনুল্লাহ (আল্লাহর পুত্র) বলে
আর কবর মাযার ওয়ালা, পীরপন্থী সূফীরা রাসুল সাঃ কে নুরুল্লাহ (আল্লাহর নূর) বলে। দুইটাই শিরকি কথা, নাউযুবিল্লাহ।
প্রশ্নঃ নামাযে
তাশাহুদের সময় আংগুলে ইশারা করার নিয়ম?
উত্তরঃ এই
পোস্টে দেখুন –
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/04/blog-post_4651.html
প্রশ্নঃ শায়খ
মতিউর রহমান মাদানী সম্পর্কে লেখার জন্য অনুরোধ রইলো।
উত্তরঃ শায়খ
মতিউর রহমান মাদানী হাফিজাহুল্লাহ বাংলা ভাষায় উল্লেখযোগ্য দ্বাইয়ীদের মধ্যে একজন।
ধর্মের আড়ালে বেদাতীদের মুখোশ খুলে দেওয়ায় বেদাতী/জাহেল লোকেরা তার নামে অনেক
আজে-বাজে কথা বলে বেড়ায়, ধোকায় পড়বেন না। ক্বুরান, সুন্নাহ ও সাহবাদের আদর্শের অনুসারী
বাংলা ভাষায় বয়ান শোনার জন্য তিনি আমার পছন্দের ব্যক্তিত্বদের একজন।
প্রশ্নঃ যোহর,
আসর ও মাগরিবের ফরয নামাযের পরে ২ রাকাত নামায কি সুন্নত নাকি নফল?
উত্তরঃ সুন্নতে
মুয়াক্কাদা। এইরকম সুন্নতে মুয়াক্কাদা মোট ১২ রাকাত। ফযরের ফরয নামাযের পূর্বে ২
রাকাত, যোহরের পূর্বে ৪ রাকাত (২+২ অথবা এক সালামে ৪ রাকাত, ২টিই জায়েজ), যোহরের
ফরযের পরে ২ রাকাত, মাগরিবের পরে ২ রাকাত, এশার পরে ২ রাকাত।
উল্লেখ্য, কিছু
হাদীসে সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামায ১০ রাকাত হিসেবেও এসেছে, সেক্ষেত্রে যোহরের
পূর্বে ৪ রাকাতের স্থলে ২ রাকাত। ১০ অথবা ১২ - দুই প্রকারের হাদীসই সহীহ, কিন্তু
১০ পড়া থেকে ১২ পড়ার সওয়াব বেশি। দিনে রাতে ১২ রাকাত পড়লে তার জন্য জান্নাতে একটা
প্রাসাদ বানানো হয়। হাদীসিগুলো দেখুন রিয়াদুস সালেহীন ও বুলুগুল মারামের সুন্নত
সালাত অধ্যায়ে।
নামাযের
মাঝখানে সুরা-কেরাতে বা কত রাকাত, রুকু সেজদা নিয়ে শয়তান
খুব বেশি ওয়াসওয়াসা দেয়/সন্দেহে ফেলে দেয় তাহলে কি করতে হবে?
নামাযে কিরাত
পড়া শুরু করার আগে “আ'উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম” পড়বেন। আ’উযুবিল্ললাহ শুধু
প্রথম রাকাতেই পড়তে হয়, এর পরের রাকাতগুলোর শুরুতে পড়তে
হয়না। এই দুয়া পড়ে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়, কারণ নামাযে
দাড়ালে খানজাব নামের শয়তান কুমন্ত্রনা দিয়ে নামাযকে নষ্ট বা ক্ষতি করতে চায়।
সালাতের
মাঝখানে,
সুরা কেরাতের মাঝে শয়তানের কুমন্ত্রণায় পতিত ব্যক্তি যেই দো‘আ করবেঃ
“আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম”
এই দুয়া বলে
তারপর বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলবে (থুতু ফেলার মতো করে নিঃশব্দে ফু দিবে, কিন্তু থুতু ফেলবেনা)।
উসমান ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার
নামাযের মাঝে অনুপ্রবেশ করে এবং কিরাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা (উপরে যা বলা হয়েছে) বলার নির্দেশ দেন, তিনি সেটা করার পর আল্লাহ তাঁকে সেটা থেকে মুক্ত করেন।
মুসলিম ৪/১৭২৯, ২২০৩।
প্রশ্নঃ ইউসুফ
কারযাভীর লেখা ‘ইসলামে হালাল হারামের বিধান” বইটা পড়া যাবে?
উত্তরঃ না, পড়া যাবেনা। ইউসুফ কারযাভী এজকজন ইখওয়ানি ধর্মগুরু, যে শিরকি কুফুরী কথাবার্তা বলা ও চরমমাত্রার ভ্রান্ত ফতোয়া দেওয়ার জন্য
কুখ্যাত। ইউসুফ কারযাবি একটা বই লিখেছেন – হালাল ও হারাম – এ বইয়ে বিভিন্ন
মাসলা-মাসায়েলে অনেক বড় বড় ভুল থাকায় আল্লামাহ শায়খ সালিহ আল-ফাওজান এই বইয়ের
প্রত্যাখ্যান করে এর বিভ্রান্তিগুলোর জবাব দিয়ে বই লিখেছেন। আপনারা ফতোয়া জানার
জন্য শায়খ ইবনে উসাইমিনের ফতোয়া আরকানুল ইসলাম বইটা কিনবেন। এছাড়া শায়খ আব্দুল
হামীদ মাদানী ফাইযীর বেশ কিছু বই আছে, যেখানে কুরান, সুন্নাহ ও বড় ওলামাদের ফতোয়ার উপরে ভিত্তি করে লেখা। সেইগুলো কিনবেন, এইগুলো অনলাইনে ফ্রী পাওয়া যায় -
http://www.abdulhamid-alfaidi-almadani.com/books.htm
প্রশ্নঃ
কাফেরদের কি যাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে?? রেফারেন্স সহ উত্তর
দিন।
উত্তরঃ এমন
কাফের, যে ইসলাম কবুল করতে আগ্রহী বা কোন কাফেরের অন্তরকে ইসলামের জন্য নরম করার
জন্য কোন যাকাত দেওয়া জায়েজ। মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “নিশ্চয় সদাকা (যেই সাদাকা ফরয, অর্থাৎ যাকাত) হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং
এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট
করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার
ক্ষেত্রে,
ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর
রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা তওবাঃ ৬০]
যাকাতের ৮
প্রকার হক্কদারের একজন হচ্ছে - মুআল্লাফাতে কুলুবঃ অমুসলিম বা কাফের সম্প্রদায়ের
জন্য জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। যাতে তারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাদের
অন্তরে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। একমাত্র এ ধরনের কোন উদ্দেশ্য
ছাড়া অমুসলিমদের মধ্যে জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
প্রশ্নঃ
কোরবানি এবং আকিকা একসাথে করার বিধান কি?
উত্তরঃ জায়েজ
নয়, এইগুলো মানুষের কিয়াস - হাদীস দিয়ে প্রমানিত নয়।
এছাড়া আকীকা
করতে হয়,
জন্মের সপ্তম দিনে, ঈদ পর্যন্ত
অপেক্ষা করার নিয়ম কে বানিয়েছে আল্লাহ ভালো জানেন।
নিয়ম হচ্ছে
সামর্থ্যবানের জন্য পুত্র সন্তান হলে ২টা ছাগল আর কন্যা সন্তানের জন্য ১টা ছাগল
দিয়ে আকিকা করা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দু‘টি সমবয়সের ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দিয়ে আকীকা দিতে
হবে।
আহমাদ ও
তিরমিজী।
২টা না হলে
একটা দিয়েও পুত্র সন্তানের আকীকা জায়েজ আছে, তবে উত্তম
হচ্ছে ২টা ছাগল। তবে রাসূল (সাঃ) হতে ছেলে
সন্তানের পক্ষ থেকে একটি করে দুম্বা দিয়ে আকীকা করার কথাও প্রমাণিত আছে। ইবনে
আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হাসান এবং
হুসাইসের পক্ষ হতে একটি করে দুম্বা আকীকা করেছেন।
আবু দাউদ।
তবে সামর্থবান
ব্যক্তির পক্ষে একটি ছাগল দিয়ে ছেলে সন্তানের আকীকা করা উচিৎ নয়। মোট কথা, ছেলে সন্তানের আকীকার জন্য দু‘টি ছাগল বা দুম্বা হওয়া জরুরী নয়; বরং মুস্তাহাব।
মনে রাখা উচিত, আকিকা করতে হয় ছাগল দিয়ে, গরু দিয়ে আকিকা করার
নিয়ম হাদীসে নেই। বেশি গোশত খাওওয়া বা বেশি টাকা দিয়ে গরু কিনে নামডাক করার জন্য
গরু দিয়ে আকিকা করা সুন্নত বিরোধী আমল, যা অবশ্যই পরিত্যজ্য। হাদীসে ছাগল বা
দুম্বা দিয়ে আকিকা করার কথা এসেছে সেই পশু দিয়েই করতে হবে, নিজের ইচ্ছামতো যুক্তি দিয়ে গরু বা উট দিয়ে নয়।
বিস্তারিত
দেখুন -
http://salafibd.wordpress.com/2011/09/09/aqiqah1/
প্রশ্নঃ নামাযে
রাউফুল ইয়াদাইন নিয়ে জানতে চাই।
উত্তরঃ রাউফুল
ইয়াদাইন বা ২ হাত কাঁধ বা কান পর্যন্ত (২টাই জায়েজ) ইশারা করা হচ্ছে সুন্নত। এটা ৪
জায়গায় করতে হয়,
১. নামাযের
প্রারম্ভে তাকবীর তাহরিমা বলার সময়
২. রুকূতে
যাওয়ার সময়
৩. রুকূ থেকে
উঠার সময়
৪. প্রথম
তাশাহুদ শেষ করে তৃতীয় রাকাআতে উঠার সময়।
দলীল - ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)
সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন কাঁধ পর্য্ত দুইহাত উঠাতেন, এবং তিনি যখন রুকু’র জন্য তাকবীর
বলতেন তখনও এরূপ করতেন, আবার যখন রুকু’ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এ রকম করতেন এবং সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ বলতেন। তবে
তিনি সাজদাহর সময় এমন করতেন না।
সহীহুল বুখারী, ৭৩৪,
৭৩৫, মুসলিম, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, আহমাদ, মুয়াত্তা মালিক, মায়াত্তা মুহাম্মাদ, ত্বাহাভী, বায়হাক্বী, তিরিমিযী।
রাউফুল ইয়াদাইন
করা মানসুখ বা রহিত হয়ে যায়নি, সাহাবীরা মূর্তি নিয়ে
নামায পড়তেন এই কারণ রাসুল সাঃ এটা করতেন – এটা একেবারেই বানোয়াট ও জঘন্য অপবাদ। যারা একরম বলে তারা জেনেই হোক বা না জেনেই হোক, তারা ভুল বা মিথ্যা কথা বলে।
বিস্তারিত দেখুন -
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/08/blog-post_18.html
প্রশ্নঃ এডমিন
সাহেব,
আমার প্রশ্ন হলো....দাড়ি না রাখলে গুনা হবে ঠিক আছে, এবং শাস্তিও পেতে হবে। কিন্তু যারা এই পেশায় জড়িত তাদের কি কোনো শাস্তি হবে?? আমরা দেখি আমাদের আসে পাসে অসংখ্য মুসলমান এই পেশায় জড়িত এবং তারাও মানুষ কে
দাড়ি ছেঁটে দিচ্ছে, চুলে নন-মুসলিমদের মতো অনেক স্টাইল
ও রং করে দিচ্ছে, তাহলে এই কাজের জন্য কি তাদের কোনো
শাস্তি হবেনা? আর তাদের এই পেশাটা কি হালাল?? নাকি হারাম??? হাদিস এবং কোরআন দারা বিস্তারিত জানালে
উপকৃত হবো
উত্তরঃ দাড়ি কাঁটা হারাম, অন্যেরটা কেটে দেওয়াও হারাম।