জিহাদ,
কিতাল ও খিলাফাহ ( পর্ব – ৬ ) - শেষ পর্ব!
প্রথম
পর্বের লিংক –
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1409140925./888197884546293/?type=1
দ্বিতীয়
পর্বের লিংক –
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/889014301131318/?type=1
তৃতীয়
পর্বের লিংক –
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1409575631./889078881124860/?type=3&src=https%3A%2F%2Ffbcdn-sphotos-d-a.akamaihd.net%2Fhphotos-ak-xap1%2Ft31.0-8%2F10548242_889078881124860_8237928261446029498_o.jpg&smallsrc=https%3A%2F%2Ffbcdn-sphotos-d-a.akamaihd.net%2Fhphotos-ak-xap1%2Fv%2Ft1.0-9%2F10649941_889078881124860_8237928261446029498_n.jpg%3Foh%3D549eaf0992d612730d322f011625f95f%26oe%3D547F3185%26__gda__%3D1416759897_e261f985ea6aff4f20460b9b7ec87f05&size=1000%2C800&fbid=889078881124860
চতুর্থ
পর্বের লিংক -
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1409819769./892278970804851/?type=1&source=42
পঞ্চম
পর্বের লিংক -
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/906765352689546/?type=1&relevant_count=1
______________________________
১১.
খেলাফাত ও দ্বীনের স্থায়িত্ব আল্লাহ দান করে দিয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেনঃ
وَلَقَدْ مَكَّنَّاكُمْ فِي الْأَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ ۗ قَلِيلًا مَا تَشْكُرُونَ- الأعراف/10
“তোমাদেরকে জমিনের বুকে স্থায়িত্ব দান করেছি, তোমাদের জন্যে জীবন ধারণের সকল উপকরণ
সৃষ্টি করে দিয়েছি অথচ তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো।”
সুরা
আ’রাফঃ ১০।
ثُمَّ جَعَلْنَاكُمْ خَلَائِفَ فِي الْأَرْضِ مِنْ بَعْدِهِمْ لِنَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ – يونس/14
“তাদের স্থলে তোমাদেরকে জমিনে খলীফা বানিয়েছি; উদ্দেশ্য এই যে, আমি দেখতে চাই তোমরা
কি করো ও কিভাবে করো।”
সুরা
ইউনুসঃ ১৪।
তাইত
আমরা দেখছি আজ ইসলাম ও মুসলমানদেরকে জমিনের কোন স্থান থেকে কেউ উঠিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা
রাখেনা, যেমনটি রাখতো অতীতে। তবে আমরা যা করি তা ঠিক কিনা, তাতে আল্লাহ খুশী কিনা এ
পরীক্ষাতে নিমজ্জিত রয়েছি। এতে পাশের হার বৃদ্ধির চেষ্টা করাই আমাদের একমাত্র কাজ।
১২.
তবে খেফাত ও স্থায়িত্ব দান করলেও শান্তি ও নিরাপত্তার বেলায় কিছুটা শর্ত আরোপ করে রেখেছন।
সেই শর্ত মুসলমান যতদিন যেখানে পূর্ণ করবে তত দিন সেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা ভোগ করবে।
অন্যথা হলে সেখানে আল্লাহর অনুমতিতে অশাস্তির দাবানল জ্বলে উঠতে পারে। এমন দাবানল থেকে
বাঁচতে হলে শর্ত হলঃ
(ক)
الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُوْلَئِكَ لَهُمُ الأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ- الأنعام/82
“যারা ইমান আনবে, ইমানের সাথে কোন রূপ যুলম করবেনা, শুধু তাদের জন্যেই থাকবে নিরাপত্তা,
তারা হবে সত্য পথের পথিক।”
সুরা
আন’আমঃ ৮২।
আব্দুল্লাহ
ইবনু মাস’উদ রাঃ বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল সঃ
কে জিজ্ঞাসা করে বললাম, এমন কে আছে যে কিছুনা কিছু জুলুম বা অন্যায় করেনা? আর তাহলে
আমাদের কি হবে? রাসুল সঃ বললেন, এই ظُلْمٍ এর অর্থ সেই জুলুম নয় যা তোমরা মনে
করো। বরং এটা সেই জুলুম সে সম্পর্কে লোকমান তাঁর ছেলেকে সাবধান করে বলেছিল্লেঃ
يَا بُنَيَّ لا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ- لقمان/13
“হে বৎস, তুমি শিরক করোনা, নিশ্চয়ই শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম বা অন্যায়।”
সুরা
লোকমানঃ ১৩।
(খ)
يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا ۚ- النور/55
“(নিরাপত্তাপ্রাপ্ত এই ইমানদারগণের প্রধান গুণাবলি হতে হবে এই যে,) তারা শিরক থেকে
দূরে থেকে এবং একমাত্র আমার এবাদাত করবে।”
সুরা
নুরঃ ৫৫।
এই
শর্তগুলো পূরণ না করলে মুসলমানেরা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পাবে বলে আশা করা বাহুল্য।
আমরা জানি, মুসলমান হয়ে অনেকেই শিরক বেদাতে ডুবে আছে। যেমন সেই সময়ের মুনাফেকরা ইমানদার
হয়েও শিরকে ডুবে ছিলঃ
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلا وَهُمْ مُشْرِكُونَ- يؤسف/106
“তাদের অধিকাংশ লোক ইমান থাকতেও শিরক কারী” ( ছিল)।
সুরা
ইউসুফঃ ১০৬।
১৩.
যারা আল্লাহর কেতাবের আংশিক বুঝেছে, বাকিটা উপেক্ষা করেছে, আল্লাহ পাক তাদেরকে উদ্দেশ্য
করে বলেছেনঃ
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ- البقرة/85
“তোমরা কি কিতাবের আংশিক বিশ্বাস করো আর অন্য অংশকে অস্বীকার করো? যারা এমন করে
তাদের পরিণাম হল, দুনিয়াতে অপমানকর অবস্থান আর আখেরাতে মিলবে ভয়ানক আজাব।”
সুরা
আল-বাক্কারাহঃ ৮৫।
১৪.
শুধু জিহাদের কয়েকটি আয়াত ও হাদিস নিজেদের মত করে বুঝে নিয়ে বাকী আয়াত ও হাদিস থেকে
মুখ ফিরিয়ে রাখলে ঠিক হবেনা যেমন ঐ সব লোকেরা করেছে।
১৫.
আল্লাহ জিহাদ করতে বলেছেন, কেতাল ফরজ করেছেন। কিন্তু কোন কাজ ফরজ হলেই তা আদায় করা
ফরজ হয়ে যায়না। কিন্তু তিনিই কাফেরদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনিই তাদের উপকার সাধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনিই জোর করে,
শক্তি প্রয়োগ করে, ভয় ভীতি দেখিয়ে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর রাসুল
সঃ শান্তিকে ইসলামের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। এ জাতীয় অর্থ যেসব আয়াত ও হাদিস বহন করে
সেসব আয়াত ও হাদিস কি তাহলে বাদ দিতে হবে? কখনই নয়, বরং সব গুলকে নখদর্পণে রাখতে হবে।
এর সাথে আরও বিবেচনায় রাখতে হবেঃ
১)
অন্যান্য আলেমগন কি বলেন?
২)
বুঝতে হবে আল্লাহর কেতাবের বাক্যাংশ حق تقاته، حق تلاوته এর অর্থ এবং সে অনুসারে حق جهاده এর অর্থ কি হয়?
৩)
বুঝতে হবে حتى لا تكون فتنة،/ ولئن صبرتم،/ أن تولوهم এসব বাক্য দিয়ে কি বুঝায়?
৪)
জানতে হবে الولاية /المعايشة/ القتال/ الجهاد এসবের মধ্যে পার্থক্য কি?
৫)
বুঝতে হবে নিম্নের আয়াত গুলো কি বলেঃ
وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ- النساء/58
“যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে (করার ক্ষমতা পাবে) তখন ন্যায়ের ভিত্তিতে করবে।”
সুরা
আন-নিসাঃ ৫৮।
আর
ন্যায়ের ভিত্তিতে ফয়সালা কখনই হবেনা যদি তা আল্লাহর নাজিলকৃত ওয়াহীর আলোকে না হয়। সে
কথাই এভাবে বলেছেনঃ
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ- المائدة/44
“যে আল্লাহর নাযিল কৃত ওয়াহীর ভিত্তিতে ফয়সালা করেনা সে কাফের।”
সুরা
আল-মায়েদাঃ ৪৪।
যারা
নিজের জীবনে সকল বিষয়ে আল্লাহর ওয়াহীর ফয়সালা মেনে চলেনা, ক্ষমতা পাওয়ার পর ওয়াহীর
দ্বারা সাধ্যানুসারে যারা ফয়সালা করেনা তারা মুসলমান হতে পারেনা এটা খুবই সহজ কথা।
অন্যান্য আয়াতে তাদেরকে জালেম এবং ফাসেক ও বলা হয়েছে। যিনি ক্ষমতা পান নাই, অথচ শুধু
নিজেকে ওয়াহীর পথে চালিয়েছেন তিনি কাফের ফাসেক জালেম নন একথাও সহজে অনুমেয়।
৬)
মনে রাখতে হবে যিনি যুদ্ধের কথা বলেছেন তিনিই সবর ও দয়া প্রদর্শনের শিক্ষা দান করেছেনঃ
وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ- البقرة/120
“যদি সবর করো, আল্লাহকে ভয় করো তাহলে তাদের (শত্রুর) দুরভিসন্ধি কোন ক্ষতি করতে
পারবে না। কেননা তারা যা করে তা আল্লাহ অবশ্যই নিজের করতলগত করে রাখেনা।”
সুরা
আল-বাকারাহঃ ১২০।
وَأَنَّ اللَّهَ مُوهِنُ كَيْدِ الْكَافِرِينَ- الأنفال/18
“আল্লাহ কাফেরদের সকল প্রকার দুরভিসন্ধি নস্যাৎ করতে সক্ষম।”
সুরা
আনফালঃ ১৮।
وَلَن يَجْعَلَاللَّهُ لِلْكَافِرِينَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ سَبِيلًا- النساء/141
“আল্লাহ মুমিনদের উপর কর্তৃত্ব করার কোন উপায় কাফেরদের জন্যে কখনই রাখবেন না।”
সুরা
আন-নিসাঃ ১৪১।
إِنَّ اللَّهَ يُدَافِعُ عَنِ الَّذِينَ آمَنُوا ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ خَوَّانٍ كَفُورٍ- الحج/38
“আল্লাহ নিজে মু’মিনদের পক্ষাবলম্বন করে প্রতিরক্ষা করেন; কেননা তিনি অনাস্থা
ভাজন কাফেরদেরকে ভাল বাসেন না।”
সুরা
আল-হাজ্জঃ ৩৮।
إِنَّ الْقُلُوبَ بَيْنَ أُصْبُعَيْنِ مِنْأَصَابِعِ اللَّهِ يُقَلِّبُهَا كَيْفَ يَشَاءُ- ( صحيح الألباني).
“বান্দার অন্তর আল্লাহর দুই আঙুলের মাঝখানে অবস্থিত; যখন যেভাবে চান সে ভাবেই পাল্টে
দেন।”
সহিহ/
শায়খ আলবানী।
এমন
ক্ষমতা যিনি রাখেন, এভাবে প্রতিশ্রুতি যিনি দেন এমন সত্ত্বার উপর কি জিহাদিদেরকে বিশ্বাস
রাখা উচিৎ নয়? জিহাদ নিয়ে হটকারি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কি তা বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ নয়?
৭)
আল্লাহ বলেন, কিছু বুঝতে হলে ই’লেম বা জ্ঞান লাগে। জ্ঞান বিহনে প্রকৃত সত্য বুঝা যায়না।
এজন্যেই অনেক প্রকার উপমা দিয়ে আল্লাহ কথা বলেন যাতে মানুষ বুঝতে পারে।
وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ ۖ وَمَا يَعْقِلُهَا إِلَّا الْعَالِمُونَ- العنكبوت/43
“ওসব উপমা আমি ব্যবহার করি যাতে মানুষ বুঝতে পারে, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানী ছাড়া উপমা
বুঝতে পারেনা।”
আল
আনকাবুতঃ ৪৩।
৮)
যারা কোরআন- সুন্নাহ ব্যতীত ‘আকল’ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যেমন শিয়া ও সূফীরা করেন তারা
বিপথগামী। জেনে রাখা ভাল যে জমহুর উলামা (সম্মিলিত ভাবে) কোরআন, হাদিস ও ইজমাকে শরিয়তের
উৎস মেনেছেন। শিয়ারা ‘আকলকে’ এর সাথে যোগ করেছেন। এ ছাড়া অন্য সবগুলকে
উলামাগন সকলে শরীয়তের উৎস মনে করেন নি।
এ
প্রসঙ্গে একথা বলার উদ্দেশ্য হল এই যে, কারো আকল নির্ভর কথা, মনগড়া ব্যখা দিয়ে শরিয়তের
কোন বিষয়ে দলীল পেশ করা ঠিক কাজ হতে পারেনা। জেহাদের মত স্পর্শ কাতর বিষয় হলে ত মোটেও
নয়।
৯)
জেনে রাখা ভাল যে, মনের খুশীমত ইসলামের ব্যাখ্যা করাকে ‘হাওয়া’ বা মন ও প্রবৃত্তির অনুসরণ বলা হয়।
আর ঐ হাওয়া কে নিয়ন্ত্রণ করতেই আল্লাহ আল কোরআন পাঠিয়েছেনঃ
وَلَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ أَهْوَاءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ ۚ بَلْ أَتَيْنَاهُمْ بِذِكْرِهِمْ فَهُمْ عَنْ ذِكْرِهِمْ مُعْرِضُونَ- المؤمنون/71
যদি
‘হক’ মানুষের মন ও প্রবৃত্তির অনুসারী হত (যেমনটি
কোন কোন চিন্তাবিদ মনে করেন!) তাহলে আসমান, জমিন ও এ দুইয়ের মধ্যে যা আছে সব ধ্বংস
হয়ে যেত। আর এই ধ্বংস থেকে দুনিয়াকে বাঁচাতেই আমি কোরআন দিয়েছি, অথচ তারা এই মহা গ্রন্থ
থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখল।”
সুরা
আল মুমিনুনঃ ৭১।
উপসংহারে
আল্লাহ তা’লার ঐ কথাটি স্মরণ করিয়ে শেষ করতে চাই যেখানে তিনি বলেছেনঃ
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لا يَعْلَمُونَ -[الزمر/9.
“যারা জানে আর যারা জানেনা, তারা কি সকলেই সমান?”
সুরা
যুমারঃ ৯।