রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

জিহাদ, কিতাল ও খিলাফাহ ( পর্ব – ৫ )

জিহাদ, কিতাল ও খিলাফাহ ( পর্ব ৫ )

প্রথম পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1409140925./888197884546293/?type=1

দ্বিতীয় পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/889014301131318/?type=1

তৃতীয় পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1409575631./889078881124860/?type=3&src=https%3A%2F%2Ffbcdn-sphotos-d-a.akamaihd.net%2Fhphotos-ak-xap1%2Ft31.0-8%2F10548242_889078881124860_8237928261446029498_o.jpg&smallsrc=https%3A%2F%2Ffbcdn-sphotos-d-a.akamaihd.net%2Fhphotos-ak-xap1%2Fv%2Ft1.0-9%2F10649941_889078881124860_8237928261446029498_n.jpg%3Foh%3D549eaf0992d612730d322f011625f95f%26oe%3D547F3185%26__gda__%3D1416759897_e261f985ea6aff4f20460b9b7ec87f05&size=1000%2C800&fbid=889078881124860

চতুর্থ পর্বের লিংক -
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1409819769./892278970804851/?type=1&source=42
______________________________

গ) খিলাফত বা ইসলামি হুকুমাত (রাষ্ট্রব্যবস্থা)

الخلافة لغة النيابة أو ما يجيئ من بعد (يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ- ص/26)، وفي الأصطلاح رئاسة عامة في أمور الدين والدنيا ( اخلفني في قومي- الأعراف/142)

আরবি অভিধানে খেলাফার অর্থ পরে আসা বা কারো স্থলাভিষিক্ত হওয়া। যেমন আল্লাহ বলেন, হে দাউদ তোমাকে জমিনে খলিফা বানিয়েছি, সুতরাং মানুষের মধ্যে ন্যায়ভাবে সুরাহা করবে।
সুরা সাদঃ ২৬।

ইসলামের পরিভাষায় খলিফার অর্থ এমন জন প্রতিনিধিত্ত যা জনগণের দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণে কাজ করে

যেমন মুসা আঃ হারুন আঃ কে বলেছিলেনঃ জনগণের কাছে তুমি আমার প্রতিনিধি হিসাবে থাকবে।
সুরা আরাফঃ ১৪২।

وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا ۚ يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا ۚ- النور/55

আল্লাহ ওয়াদা করেছেন ইমানদার ও সৎ আমল কারীগনের প্রতি, তিনি অবশ্যই তাদেরকে খলিফা করবেন যেমন পুর্ববর্তীগনকে করেছিলেন। এবং অবশ্যই তাদেরকে দ্বীনের প্রতিষ্ঠা দান করবেন যে দ্বীন তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন। আর ভীতি দূর করে নিরাপত্তা দান করবেন; তবে তাদের প্রধান গুণাবলি হবে এই যে তারা শিরক থেকে দূরে থেকে আমার এবাদাত করবে।
সুরা নুরঃ ৫৫।

হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাঃ বলেন, রাসূল সঃ বলেছেন,
তোমাদের মধ্যে নবুয়ত থাকবে ততদিন যতদিন আল্লাহ চাইবেন। অতঃপর উঠিয়ে নেবেন যখন চাইবেন। অতঃপর নবুয়তের আদলে খেলাফা প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহ যত দিন চাইবেন ততদিন তা প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তারপর উঠিয়ে নেবেন। অতঃপর সমঝোতার মধ্যে দিয়ে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহ যত দিন ইচ্ছা করবেন তা থাকবে, তার পর উঠিয়ে নেবেন। অতঃপর জোর-জবরদস্তিমূলক ভাবে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করবে, আল্লাহ যতদিন চাইবেন তা চলবে। অতঃপর নবুয়তের আদলে খেলাফা প্রতিষ্ঠিত হবে। এ পর্যন্ত বলেই তিনি চুপ হয়ে যান।
মুসনাদে আহমাদ ও বাজ্জার।

উল্লেখ্য যে, হাদিসটিতে পাঁচটি পট পরিবর্তনের কথা বলে আল্লাহর নবী চুপ হয়ে গেছেন। আর কিছুই বলেননি।

যারা খেলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলেন তাদের মুখে মুখে উক্ত আয়াত ও হাদিস গুলকে দলীল হিসাবে ব্যবহার করতে দেখা যায়। প্রকৃত অর্থে তাদের যুক্তির স্বপক্ষে এসব আয়াত ও হাদিস দলীল হতে পারেনা। কারণঃ

১. অনেকে মনে করেন রাসূল সঃ খেলাফতের বিষয়ে যে ভবিষ্যৎবাণী করে পাঁচটি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেণ তা সবই বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে ও অতিবাহিত হয়ে গেছে। এর প্রমাণঃ
সাফিনাহ রাঃ বলেন, রাসূল সঃ বলেছেন,
খেলাফা আমার উম্মতের মধ্যে ৩০ বছর থাকবে, অতপর হবে রাজ তন্ত্র।
মুসনাদে আহমাদ, শায়খ আরনাউত হাদিসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।

قال معاوية رضي الله عنه بعد انقضاء الخلافة ثلاثين سنة: أنا أول الملوك ( رسالة أبي زيد القيرواني ج1/ص 96).

খেলাফতের ৩০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর মূয়াবিয়া রাঃ বলেছেন, আমিই প্রথম রাজা
রেসালা যায়েদ আল-কায়রাওয়ানী।

২. কোরান ও হাদিসে আল্লাহ ও তার রাসূল কোথায়ও খেলাফা প্রতিষ্ঠা করার কোন আদেশ করেন নাই। তাই কোন রাষ্ট্রের নাম খলিফা বা ইসলামী হুকুমাহ রাখার কোনই প্রয়োজন করেনা। বরং মানুষকে আল্লাহর আইন মেনে চলার উপর অভ্যস্ত করাই মুসলিম রাষ্ট্রের কাজ, অন্য কিছু নয়।

৩. কোথায়ও বলা হয়নাই যে, শাসককে খলীফাহ এবং তার শাসনকে খিলাফৎ বলতে হবে।

৪. রাসূল সঃ এর পর যারা খলীফা হয়েছেন তারা একে অপরের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। তাদের এই ক্ষমতা স্থান্তরের প্রকৃয়াকেই খিলাফত বলা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিকে বলা হয়েছে খলীফা। এটা তৎকালীন আরব সমাজের একটি পরিভাষা মাত্র। এমন পরিভাষাকে সর্বকালে সর্বস্থানে ব্যবহার করতে হবে, এমন কোন কথা কোরআন হাদিসে নেই। এমনটি জরুরী মনে করারও যুক্তি সংগত নয়।

৫. আল্লাহর রাসূল সঃ এই খেলাফতের সময় ৩০ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ছিলেন। এবং সে ৩০ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে।
قال حبيب فلما قام عمر بن عبد العزيز وكان يزيد بن النعمان بن بشير في صحابته فكتبت إليه بهذا الحديث أذكره إياه فقلت له إني أرجو أن يكون أمير المؤمنين يعني عمر بعد الملك العاض والجبرية فأدخل كتابي على عمر بن عبد العزيز فسر به وأعجبه ( أحمد والبزار).

৬. হাবীব বলেন, যখন আমর ইবনে আবদুল আজিজ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন, যখন তার সঙ্গীগণের মধ্যে ইয়াজিদ ইবনু নুমান ইবনু বশীর বর্তমান ছিলেন তখন আমি তাকে ঐ হাদিসটি (হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাঃ এর হাদিস) লিখে জানাই এবং আশা প্রকাশ করে বলি, হয়ত আপনি (আমর ইবনে আবদুল আজিজ) সেই রাজতন্ত্রের পরে মিনহাজুন নাবুওয়া (নবুওয়তের আদলে) এর খলীফা। আর একথা পাঠ করে তিনি পুলকিত হন ও আশ্চর্য বোধ করেন

৭. ইমাম আল বাগাবি রাঃ বলেন, খলীফা হলেন তারা যারা খেলাফাতের মূল উদ্দেশ্য কাজের মধ্যে দিয়ে বাস্তবায়ন করেন। রাসূল সঃ এর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। যদি তা না করেন খলীফা নাম দিলেও তারা রাষ্ট্রপ্রধান মাত্র। আর যারা করেন তাদেরকে খলিফা না বললেও খলীফা। রাসুলের স্থলাভিষিক্ত। তারা মানুষের দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণ সাধনে কাজ করেন।

৮. রাসূল সঃ এর পর সকল খেলাফা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুসলমানদের স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণ মত প্রকাশের মধ্যে দিয়ে। তরবারির দ্বারা, বন্দুকের মাথায়, ভয় ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে, গলা কেটে ও রক্ত স্নান এর মাধ্যমে কোন খেলাফা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ইমাম মালেক রাঃ বলেন, যেমন চাপে পড়ে তালাক দিলে তালাক হয় না। তেমনি জোর করে বাইয়াত নিলে বাইয়াত হয়না

৯. জ্ঞানীদের কেউ বলেন, বিড়াল যতক্ষণ বিড়াল থাকে ততক্ষণ তার পাওনা আদরের সাথে পেয়ে থাকে। যখন সে আত্ম-অহমিকায় সিংহ বলে বনের রাজা ঘোষণা করে, তখন সে তার আসল মূল্যটুকুও হারিয়ে ফেলে। বর্তমান জিহাদিদের অবস্থাও তেমনি।

১০. খেলাফা দান করা لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ , নিরাপত্তা বিধান করা لَيُبَدِّلَنَّهُمْ, স্থায়িত্ব দান করা لَيُمَكِّنَنَّ সবই ক্রিয়া। এই ক্রিয়া গুলোর কর্তা আল্লাহ। তাই যে কাজ আল্লাহর তা নিয়ে কেন তার বান্দা ব্যস্ত তা মোটেও বোধগম্য নয়! পক্ষান্তরে آمَنُوا مِنْكُمْ প্রকৃত ইমান আনা, عَمِلُوا الصَّالِحَاتِ সৎ কাজ করা, আর لَا يُشْرِكُونَ শিরক মুক্ত থাকা এসব বান্দার কাজ। বান্দাহ এসবের প্রতি যত্ন শীল না হয়ে, অপরকে এসব বিষয়ে যত্ন শীল না করে কেন খেলাফা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাও বুঝে আসেনা। রাসুল ও তাঁর সাহবীগন কখনও এমন করেননি। কেননা ইমান ও আমলের মাধ্যমে আল্লাহকে খুশী করার চেষ্টা না করে অন্য কিছু করে তাঁকে খুশী করতে কেউ চাইতে পারেনা। অথচ তারা যেন তাই করেন। তারা বুঝতে চাননা যে, আমাদের কাজ আমরা সঠিক ভাবে আঞ্জাম দিলে আল্লাহ তার কাজগুলি অবশ্যই করে দিবেন, অথবা প্রয়োজনীয় উপায় বের করে দিবেন। এটা তাঁর ওয়াদা, তিনি কক্ষনও ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। কিন্তু খেলাফতের কর্মীরা নিজেরদের ও অন্যদের ঈমান আমল শুদ্ধ করার কাজ রেখে কেন আল্লাহর কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন আর তারই মাধ্যমে তালাশ করেন সফলতা তা বুঝে আসেনা।

আগামী সংখ্যায় সমাপ্য ইন শা আল্লাহ.....

Collected from শায়খ মুজাম্মেল আল-হাক্ক।