প্রশ্নঃ ট্যাক্স নেওয়া কি জায়েজ? সরকারী রাজস্ব বা ট্যাক্স বিভাগে চাকরী করা যাবে?
উত্তরঃ মুসলমানদের জন্য আল্লাহ দিয়েছেন বাধ্যতামূলক যাকাত,
আর
ঐচ্ছিক
হিসেবে
দান-সাদাকাহ। এর বাইরে সরকারে পক্ষ থেকে ট্যাক্স নেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। এটা অন্যায়ভাবে
মানুষের
সম্পদ
আত্মসাতের
মাঝে
পড়ে, যা মারাত্মক একটা জুলুম। ক্ষমতায় বসে মানুষের উপর ট্যাক্স আরোপ করা একটা কবীরা গুনাহ, এমনকি সহীহ হাদীসে এমনও বর্ণনাও পাওয়া যে, ট্যাক্স আরোপ করা জিনা থেকেও বড় গুনাহ (নাউযুবিল্লাহ)!
যে মানুষের কাছ থেকে ট্যাক্স (শুল্ক) সংগ্রহ করবে তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“যে মানুষের কাছ থেকে ট্যাক্স সংগ্রহ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবেনা।”
আহমাদ,
আবু-দাউদ, আল-হাকিম।
“যে মানুষের কাছ থেকে ট্যাক্স সংগ্রহ করে সে জাহান্নামী।”
মুসনাদে আহমাদ।
তবে জরুরী প্রয়োজনে (যেমন দুর্ভিক্ষ,
মহামারী)
ধনীদের
কাছে
থেকে
সাময়িকভাবে
যাকাতের
অতিরিক্ত
অর্থ
নেওয়া
যাবে, শর্ত হলো কারো প্রতি জুলুম করা যাবেনা ও এবং সম্পদ ন্যায্যভাবে
বন্টন
করতে
হবে।
অনেকে প্রশ্ন করেন,
ট্যাক্স না দিলে সরকার কিভাবে চলবে? এর উত্তর হচ্ছে – কে কিভাবে চলবে সেটা নির্ধারণ করে দিয়েছেন আল্লাহ তাআ’লা,
তাই সেটা নিয়ে আপনার আমার চিন্তা না করলেও হবে। বান্দা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে
- আল্লাহর আইন-কানুন জানা এবং বিনা প্রশ্ন বা আপত্তিতে মেনে নেওয়া। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় সরকারের আয়ের উতস হচ্ছে মুসলিমদের কাছ
থেকে যাকাত,
দান-সাদাকাহ, লিল্লাহ, ওয়াকফ, ফি সাবিলিল্লাহ বা যুদ্ধে প্রাপ্ত গনীমতের সম্পদ, দেশে বসবাসরত কিংবা নিরাপত্তার চুক্তিতে আবদ্ধ অমুসলিমদের
কাছ থেকে প্রাপ্ত জিযিয়া ইত্যাদি। এর বাইরে অনেক নামধারী মুসলিম দেশের সরকার অন্যায়ভাবে ১০%-২০% ট্যাক্স চাপিয়ে দিচ্ছে সাধারণ মানুষের উপরে যেখানে ধনী-গরীব কোন পার্থক্য করা হচ্ছেনা। সেই তুলনায় চিন্তা করে দেখুন যাকাত হচ্ছে মাত্র ২.৫%, যা নেওয়া হয় শুধুমাত্র ধনীদের কাছ থেকে, আর বন্টন করা হয় গরীবদের মাঝে। কিন্তু আল্লাহর আইন অস্বীকার
কিংবা অমান্যকারী সরকারেরা নিজেদের বাপ মায়ের হারাম নাজায়েজ ছবি-মূর্তি বানানোর জন্য,
শিরকী শহীদ মিনার দিয়ে জনগণকে শিরকি কাজ করানোর জন্য, বাপ ভাইয়ের নামে মাযার কমপ্লেক্স বানানোর জন্য, সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের নামে পতিতা, চরিত্রহীন, নষ্ট নারী-পুরুষ ও নাস্তিকদের পোষার জন্য জনগণের কাছ থেকে তাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নিচ্ছে!
এই সমস্ত হারাম ট্যাক্স সংগ্রহকারী লোকেরা জিনা থেকেও বড় পাপে লিপ্ত তার হাদীস দেখুনঃ
“গামেদী গোত্রের এক মহিলা (রাসুল সাঃ এর নিকট) আগমন করলো এবং বলল, হে আল্লার রাসুল!
আমি ব্যভিচার করেছি। সুতরাং আপনি আমাকে
(রজমের শাস্তি দিয়ে জিনার পাপ থেকে) পবিত্র করুন। তখন তিনি তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন। পরবর্তী দিন আবার ঐ মহিলা আগমন করলো এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)!.
আপনি কেন আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন? আপনি কি আমাকে ঐভাবে ফিরিয়ে দিতে চান, যেমন ভাবে আপনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মায়াযকে? আল্লাহর কসম করে বলছি,
নিশ্চয়ই আমি গর্ভবতী। তখন তিনি বললেনঃ তুমি যদি ফিরে যেতে না চাও,
তবে আপাততঃ এখনকার মত চলে যাও এবং প্রসবকাল সময় পর্যন্ত অপেক্ষা কর। রাবী বলেনঃ এরপর যখন সে সন্তান প্রসব করল তখন তিনি সন্তানকে এক টূকরা কাপড়ের মধ্যে নিয়ে তাঁর কাছে আগমন করলেন এবং বললেনঃ এই সন্তান আমি প্রসব করেছি। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ যাও তাকে (সন্তানকে)
দুধ পান করাও গিয়ে। দুধপান করানোর সময় উত্তীর্ণ হলে পরে এসো। এরপর যখন তার দুধপান করানোর সময় শেষ হল তখন ঐ মহিলা শিশু সন্তানটিকে নিয়ে তার কাছে আগমন করলো এমন অবস্হায় যে, শিশুটির হাতে এক টূকরা রুটি ছিল। এরপর বললো, হে আল্লাহর নবী! এইতো সেই শিশু যাকে আমি দুধপান করানোর কাজ শেষ করেছি। সে এখন খাদ্য খায়। তখন শিশু সন্তানটিকে তিনি কোন একজন মুসলমানকে প্রদান করলেন। এরপর তার প্রতি
(ব্যভিচারের শাস্তি) প্রদানের নির্দেশ দিলেন। মহিলার বুক পর্যন্ত গর্ত খনন করানো হল এরপর জনগণকে
(তার প্রতি পাথর নিক্ষেপের) নির্দেশ দিলেন। তারা তখন তাকে পাথর মারতে শুরু করল। খালিদ ইবন ওয়ালীদ (রাঃ) একটি পাথর নিয়ে অগ্রসর হলেন এবং মহিলার মাথায় নিক্ষেপ করলেন, তাতে রক্ত ছিটকে খালিদ
(রাঃ) এর মুখমণ্ডলে এসে পড়লো। তখন তিনি
(খালিদ রাঃ বিরক্ত হয়ে) মহিলাকে গালি দিলেন। নবী
(সাঃ) সেই গালি শুনতে পেলেন। তিনি সাঃ বললেনঃ হে খালিদ সাবধান!
সেই মহান আল্লাহর মসম, যার হাতে আমার জীবন, জেনে রেখো!
নিশ্চয়ই সে এমন তাওবা করেছে, যদি কোন অন্যায় ট্যাক্স আরোপকারী ব্যক্তিও এমন তাওবা করতো, তবে তারও ক্ষমা হয়ে যেতো। এরপর তার জানাযার সালাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন। তিনি সাঃ তার জানাযায় সালাত আদায় করলেন। এরপর তাকে দাফন করা হলো।
সহিহ মুসলিমঃ অপরাধের
(নির্ধারিত)
শাস্তি অধ্যায়ঃ ৪২০৬।
বিস্তারিত জানতে দেখুন –
যেহেতু ট্যাক্স নেওয়া হারাম সুতরাং এই
হারাম কাজে সাহায্য করাও হারাম। ক্বুরানের এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ হারাম কাজে
সাহায্য-সহযোগিতা করা হারাম করে দিয়েছেন।
“সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় তোমরা একজন আরেকজনকে সাহায্য কর, কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনের
ব্যাপারে একে অন্যের সাহায্য করো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা।”
সুরা আল-মায়েদাহঃ ২।