খারেজীদের নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর
- আনসারুস সুন্নাহ
__________________________
১. খারেজী কারা?
খারেজী হচ্ছে ৭২টা বেদাতী জাহান্নামী দলের মাঝে প্রাচীন
একটা দল, যারা ক্বুরানের আয়াতের
ভুল ব্যখ্যা করে আলী রাঃ ও মুয়াবিয়া রাঃ কে মুর্তাদ ফতোয়া দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে
জিহাদের(!) ঘোষণা করে। এরা আলী রাঃ, আমর ইবনুল আস রাঃ সহ
বেশকিছু সাহাবী ও অনেক মুসলিমদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। ইতিহাসে বিভিন্ন
সময়ে খারেজী মতবাদের অনুসারী বিভিন্ন ব্যক্তি ও দলের উপস্থিতি মুসলিম উম্মাহর মাঝে
লক্ষ্য করা যায়।
খারেজীদের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এটা পড়ুন –
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/05/httpswww.html
__________________________
২. খারেজীদের সম্পর্কে রাসুল সাঃ কি বলেছেন?
উত্তরঃ খারেজীরা মানুষের মাঝে সবচাইতে ভালো ভালো কথা বলবে, তারা অনেক নামায রোযা করবে, অর্থাৎ ব্যক্তি জীবনে খারেজীরা অত্যন্ত ধার্মিক হবে। এদের বয়স কম হবে,
কুরান তেলাওয়াত করবে কিন্তু তাঁর অর্থ না বুঝে অপব্যখ্যা করবে।
রাসুল সাঃ এদেরকে জাহান্নামের কুকুর বলেছেন।
__________________________
৩. বর্তমান যুগে কি এমন কোন খারেজী আছে?
উত্তরঃ হ্যা, অবশ্যই আছে এবং দাজ্জাল না আসা পর্যন্ত খারেজীরা বিভিন্ন নাম
বা সুরতে মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিদ্যমান থাকবে। দাজ্জাল এই খারেজীদের মাঝেই
আত্মপ্রকাশ করবে। যদিও কিছু মানুষ বর্তমান যুগের খারেজীদের অস্তিত্বকে অস্বীকার
করছে, সম্ভবত তাদের সাথে খারেজীদের লক্ষণ মিলে যাবার কারণে।
যাই হোক, মুসলিম উম্মাহর মাঝে যে খারেজীরা থাকবেই – এই কথার দলিলঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“এমন কিছু
মানুষ আসবে, যারা ক্বুরান তেলাওয়াত
করবে কিন্তু ক্বুরান তাদের গলার নিচে যাবেনা। যখনই তাদের কোন দল বের হবে তাদেরকে
কেটে ফেলা হবে।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ বলেন, রাসুল সাঃ ‘যখনই তাদের কোন দল বের হবে তাদেরকে কেটে ফেলা হবে’ এই কথাটা প্রায় ২০ বারের বেশি সময় বলার পরে বললেন, “যতখক্ষণ পর্যন্ত না তাদের (অর্থাৎ, খারেজীদের) মধ্য থেকেই দাজ্জাল বের হবে।”
শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন, সহিহ ইবনে মাজাহঃ ১/৭৫-৭৬, নং-১৪৪।
__________________________
৪. খারেজীদের ব্যপারে হুকুম কি?
উত্তরঃ আহলে সুন্নাহর শাসকদের যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে
তাদেরকে দমন করার জন্য তাদেরকে হত্যা করতে হবে, এটা রাসুল সাঃ এর আদেশ। যদিও তারা নিজেদের মুসলিম দাবী করে
এবং অনেক ইবাদত করে, কিন্তু তাদের ধ্বংসাত্মক কাজ ও মনোভাবের
কারণে তাদেরকে যে হত্যা করবে আল্লাহর কাছ থেকে সে বিরাট প্রতিদান পাবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“শেষ
যামানায় একদল তরুণ বয়সী, নির্বোধ লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সবচাইতে উত্তম
কথা বলবে। তারা ইসলাম থেকে এত দ্রুত গতিতে বের হয়ে যাবে যেইভাবে তীর ধনুক থেকে বের
হয়ে যায়। তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে
সেখানেই হত্যা করবে। কারণ যে তাদেরকে হত্যা করবে তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর
নিকট নেকী রয়েছে।”
বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদঃ ৪৭৬৭, নাসাঈ।
__________________________
প্রশ্নঃ আধুনিক যুগে এমন কিছু খারেজীর নাম বলুন।
উত্তরঃ বর্তমান যুগেও এমন কিছু খারেজী লক্ষ্য করা যায়, বা এমন অনেক ব্যক্তি বা দল আছে যাদের মাঝে
খারেজীদের গুণ দেখা যায়। যেমন -
১৯৭৯ সালে সৌদি আরব সরকারকে কাফের ফতোয়া দিয়ে “জুহাইমান আল-ওতাইবি” নামের এক লোক বিদ্রোহ করে ক্ষমতা দখল করার
চেষ্টা করে। সে তার কিছু স্বপ্নকে ইমাম মাহদীকে নিয়ে বর্ণিত হাদীসের সাথে মিলিয়ে
তার এক আত্মীয়কে যে কিনা ক্বুরাইশ বংশের ছিলো, তাকে ইমাম
মাহদী বলে বিশ্বাস করা শুরু করে। আনুমানিক ৩০০-৪০০ লোক নিয়ে সে প্রথমে কাবা দখল
করে এবং সেখানে তাদের মধ্য থেকে একজনকে “ইমাম
মাহদী” দাবী করে তার হাতে বায়াত করে তাকে শাসক
হিসেবে মেনে নিতে দাবী করে। এরা “মসজিদুল
হারাম” যেখানে কেয়ামত পর্যন্ত রক্তপাত কঠোরভাবে
নিষিদ্ধ, সেখানে অনেক মানুষদেরকে হত্যা করে। অবস্থা এতো
সংকটময় দেখে ইমাম বিন বাজ রহঃ সহ তখনকার বড় আলেমরা ফতোয়া দেন – এ খারেজী হয়ে গেছে – এর
ক্ষতি থেকে মুসলিমদের বাচানোর জন্য কাবাঘরে এদের উপর আক্রমন করা জায়েজ হবে,
যদিও হারামে রক্তপাত চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ। কিন্তু সংকটপূর্ণ
অবস্থায় মাসয়ালা পরিবর্তন হয়ে যায়, আর এর মতো লোককে না সরালে
সে আরো ফেতনা ও রক্তপাত করবে, তাই এইক্ষেত্রে হারামে তাদের
উপর আক্রমন করলে গুনাহ হবেনা। যাইহোক তাদের উপর আক্রমন করা হলে তারা একটা টানেলে
আশ্রয় নেয় যেখান থেকে তাদেরকে ধরা যাচ্ছিলোনা, তাদেরকে ধরতে
কোন সৈন্য গেলে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করতো। পরে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করে ও
টানেলে পানি ঢেলে তাতে কারেন্ট দিয়ে তাদেরকে আহত করে জুহাইমানসহ তার প্রায় ৭৭জন
সাথীকে গ্রেফতার করা হয়। কথিত ইমাম মাহদী আগেই মারা গিয়েছিল আক্রমনের সময়। গ্যাসে
জুহাইমানের চেহারা কালো হয়ে যায়, পরে শরিয়াহ মোতাবেক
জুহাইমানসহ আনুমানিক ৭০ জনের মতো খারেজীকে প্রকাশ্যে কতল করা হয়।
জুহাইমানকে এই ভিডিওতে দেখতে পারবেন –
https://www.youtube.com/watch?v=5Aot1WeZVqw
__________________________
বর্তমান যুগে আলেমদের সর্বসম্মত ঐক্যমতে কথিত
"খিলাফতের" দাবীদার আইসিস বা আইএস খারেজীদের একটি দলের মাঝে
অন্তর্ভুক্ত। আইসিস এর জাহেল মুফতিরা সমস্ত মুসলিম শাসকদেরকে এবং তাদের নেতা আবু
বকর বাগদাদীর কাছে যারা 'বায়াত'
করবেনা তাদেরকে 'মুর্তাদ' ফতোয়া দিয়ে ইরাক এবং সিরিয়াতে অনেক সুন্নী মুসলিমদেরকে হত্যা করেছে,
এবং বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম এবং কাফের দেশগুলতে বোমা মেরে
নির্দয়ভাবে মানুষ হত্যা করছে। এরা ক্বুরান ও হাদীসের অপব্যখ্যাকারী দল, যাদের প্রধান কাজ হচ্ছে জিহাদ সম্পর্কে ভুল ধারণা প্রচার করা, যাকে বাহানা করে ইয়াহুদী এবং খ্রীস্টানরা মুসলিম দেশগুলো আক্রমন করে
মুসলিমদেরকে হত্যা করতে পারে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, দ্বীন
সম্পর্কে অজ্ঞ অনেক সরলমনা তরুণ নারী ও পুরুষদেরা এদের চমকপ্রদ কথা শুনে এবং হলিউড
স্টাইলে ডিজিটাল স্টুডিওতে বানানো HD ভিডিও দেখে এদের
ব্যপারে ধোঁকা খাচ্ছে। এই সমস্ত খারেজীদের ব্যপারে মুসলিম জাতিকে সতর্ক করা ওলামা
এবং দ্বাইয়ীদের জন্যে ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক দায়িত্ব)।
__________________________