প্রসংগঃ “কুরবানী”
- আনসারুস সুন্নাহ
__________________________
১. যিনি কুরবানী দেবেন,
কেবল তিনিই যিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর হতে কুরবানীর পশু জবাই করা
পর্যন্ত নিজের চুল, গোঁফ, নখ কিছুই
কাটবেন না।
মিশকাতঃ ১৪৫৯।
যদি ভুলে কেটে ফেলেন তাহলে এর জন্য তোওবা এবং ইস্তেগফার করতে হবে, কোন কাফফারা দিতে হবেনা।
পরিবারের অন্য সবাই কাটতে পারবে। পরিবারের সবাইকে চুল, নখ
কাটা হতে বিরত থাকতে হবে-- এমন ধারণা ভুল।
২. ছাগল তথা খাসী কুরবানী করা উত্তম।
মিশকাতঃ ১৪৬১;
সুবুলুস সালামঃ ৪/ ১৮৫।
৩. চার ধরণের পশু কুরবানী করা নাজায়েজ।
ক. স্পষ্ট খোঁড়া।
খ. স্পষ্ট কানা।
গ. স্পষ্ট রোগী,জীর্ণ শরীর।
ঘ. অর্ধেক কান কাটা কিংবা ছিদ্র এবং অর্ধেক শিং ভাংগা।
মিশকাতঃ ১৪৬৫।
৪. কেনার পরে খুঁত পাওয়া গেলে উক্ত পশু কুরবানী করা বৈধ।
উৎসঃ ইমাম উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী, মিরআতুল মাফাতিহঃ ২/৩৬৩।
৫. গরু এবং উটে ৭ জনে ভাগে কুরবানী দেওয়া জায়েজ আছে। তবে ভাগে ২/৪/৫ জন বা
৭ জনে ভাগে গরু কুরবানী দেওয়ার চাইতে,
একা একটা ছাগল বা দুম্বা কুরবানী দেওয়া ভালো এবং বেশি সওয়াব। যদিওবা
সেটার দাম কম হোক, যদিওবা সেটার গোশত কম হোক।। একটা ছাগল বা
একটা দুম্বা পুরো একটা পরিবারের জন্যে সবার পক্ষ থেকে কুরবানী হিসেবে যথেষ্ঠ,
যদিও সেই পরিবারে ১০-১৫ জন বা আরো অধিক ৫০ জন লোক থাকুক না কেনো। আর
কুরবানীর পশু হিসেবে মহিষ অথবা আকীকার পশু হিসেবে গরু দেওয়ার কোন দলিল নেই। সুতরাং
কুরবানী হিসেবে মহিষ এবংআকীকার পশু হিসেবে গরু দিবেন না। আমাদের উচিৎ, যা কিছু আমল করা সেটা ক্বুরান ও সহীহ হাদীসে যেইভাবে এসেছে ঠিক সেইভাবে
করা, এবং নিজেদের মনমতো পরিবর্তন না করা।
৬. ধূসর রঙের পশু কুরবানি করা উত্তম।
__________________________
১. কুরবানি কাদের উপর ফরয?
কুরবানি দেওয়া ফরয নয়,
সুন্নতে মুয়াক্কাদা। যার সামর্থ্য আছে পশু কেনার, তিনি কুরবানী দেওয়ার চেষ্টা করবেন, এটা অনেক
গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ একটা সুন্নত।
২. ৬ পরিবারের সদস্যদের মাঝে যদি ৬ জনই আয় করে, এবং কুরবানি করার সামর্থ্য
রাখে তাহলে কি তাদের সবাইকেই কুরবানি দিতে হবে? নাকি একজন
দিলে একজনের পক্ষ থেকেই সবার জন্য কবুল হবে?
ছয়জন আলাদা হলে আলাদা কুরবানি দিতে হবে, আর সবাই একসাথে হলে
পরিবারের গার্জিয়ান একা কুরবানি দিলেই হবে।
৩. ঋণ থাকলে কি কুরবানি হয়?
হ্যা হয়, ঋণদাতা
যদি সময় দেয় তাহলে সে কুরবানি দিতে কোন সমস্যা নাই।
৪. বড় বড় ব্যাবসায়িরা বড় বড় ঋণ নেয়। যার সময় থাকে ৫ বছর থেকে ১০ বছর কিংবা
আরও বেশী। তারা বড় বড় কুরবানিই দেয়। কুরবানি কি এভাবে হয়?
হবে, যদি
হালাল টাকায় কেনা হয় আর ইখলাস ঠিক থাকে। লোক দেখানো হলে বা হারাম উপার্জনের টাকায়
কেনা হলে কুরবানি বাতিল।
৫. কেও যদি ঋণী থাকে,
ঋণ দাতা যদি বলে ঋণ আস্তে ধীরে দেয়ার জন্য, সে
যদি ঋণ না দিয়ে কুরবানি দেয় তার কুরবানি কি কবুল হবে? যদি ঋণ
দাতার মনে কষ্ট না থাকে।
ইন শা আল্লাহ হবে,
তবে তার কুরবানী করা থেকে ঋণ পরিশোধ করা জরুরী। অবশ্য যদি এমন হয়
অনেক টাকা, আর আস্তে আস্তে পরিশোধ করছে, আর সে নিশ্চিত ঋণ পরিশোধ করতে পারবে সময়ের মাঝে, তাহলে
কুরবানি কিনতে পারে।
৬. একটা গরুর ভাগে ৭ জন যদি দেয়,
এর মাঝে একজনও যদি কুরবানির
গোশত লোভ করে সবার কুরবানি কি বাতিল হবে?
হ্যা হবে,
এইজন্যে ভালো দ্বীনদার ছাড়া অন্য কাউকে নেওয়া যাবেনা, এবং পশু ক্রয় করার পূর্বে যাচাই করে নিতে হবে বা শরীকদেরকে ইখলাসের
ব্যপারে সতর্ক করে নিতে হবে।
৭. সাত ভাগের এক গরুর কোনও ভাগ যদি কম বেশী হয় কারো অসততার কারনে, কুরবানি কি সবারটাই বাতিল
হবে?
বাতিল হবেনা,
তবে ইচ্ছাকৃত গাফিলতি থাকলে অন্যের হক নষ্ট করার জন্যে দায়ী থাকবে।
৮. কেও একজন ছাগল দিতে চাইল,
তার কিছু টাকা কম পরল, অন্য কেও কুরবানির জন্য টাকা দিতে চাইলে সে কি নিতে
পারবে? যে দিতে চাইবে তার টাকা হালাল না হয়? কুরবানি কি হবে?
জেনে শুনে হারাম টাকা নিয়ে কুরবানি দিলে হবেনা। আল্লাহ পবিত্র আর তিনি
পবিত্র ছাড়া কোন কিছু কবুল করবেন না। হালাল টাকা ব্যবস্থা করে কুরবানি দিতে হবে।
৯. এক পরিবারের পক্ষ থেকে যে কারো নামে একটা ছাগল দিতে চাইলে সওয়াব কি সবার
হবে যদিও ইনকাম একজনই করে এবং বাকিরা অসামর্থ্য থাকে?
যিনি কুরবানি দিবেন তিনি নিয়ত করবেন এই পশু তার এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে, তাহলে সকলেই সওয়াব পেয়ে
যাবেন উল্লেখ্য এতে কুরবানিদাতার সওয়াব কমবেনা।
১০. কুরবানির পশু যারা জবেহ করবে তাদের কি কুরবানির গোশত দিয়ে পারিস্রমিক
দেওয়া যাবে, না
আলাদা করে টাকা দিতে হবে? উল্লেখ্য আমাদের দেশে বেশির ভাগ
জায়গায় কুরবানির গোশত দিয়ে পারিস্রমিক দেয়া হয়।
না, কুরবানির
গোশত দিয়ে পারিশ্রমিক দেওয়া যাবেনা, আলাদা করে মূল্য
নির্ধারণ দিতে হবে।
১১. কুরবানির গোশত কি ৭ দিনের মাঝেই খেতে হবে?
এমন কোন নিয়ম নেই,
নিজের অংশ অতিরিক্ত থেকে গেলে ৭ দিন পরে খেতে কোন সমস্যা নেই।
১২. ছোটবেলায় শুনতাম যে কুরবানির পশু যত বেশী তরতাজা হবে, যত বেশী খিপ্র হবে, তত দ্রুত পুলসিরাত পার হওয়া যাবে,
কতটা সত্য? পুলসিরাতের সাথে কি কুরবানির কোনও
সম্পর্ক আছে?
এ সম্পর্কে একটা কথা আছে,
কিন্তু সেটা জয়ীফ হাদীস। জয়ীফ হাদীসের কথা গ্রহণযোগ্য নয়।
১৩. ধরা যাক কেও একজন একটা গরু
কুরবানি দেয়ার পর তার পুরো একটা রান গরীবদের দিয়ে বাকিটা কি নিজের পরিবারের জন্য
খরচ করতে পারবে?
হ্যা, পারবে।
১৪. কুরবানির ঈদে ও কি নতুন জামা
পড়া সুন্নত?
ঈদের দিন উত্তম পোশাক পড়া সুন্নত, নতুন জামা পড়া কোন সুন্নত
নয়। উত্তম পোশাক নতুন বা পুরোনোও হতে পারে। বাঙ্গালী নামধারী মুসলমানেরা ঈদের আগে
যেইভাবে নতুন কাপড় কিনতে শপিং করছে এটা সুন্নত নয়, জাহালাত।
শতকরা ৮০% মহিলাই বেপর্দা যাচ্ছে, তাদের পুরুষেরা তাদেরকে
কন্ট্রোলে রাখেনা। মুসলমানদের অজ্ঞতা মূর্খতাই তাদের ইহকাল ও পরকাল ধ্বংস করছে।
১৫. কুরবানির পশুর চামড়ার টাকা কয়দিনের
মাঝে দিতে হবে?
কাজের বুয়াকে দিলে হবে?
যত দ্রুত দেওয়া যায়,
কাজের বুয়া অস্বচ্ছল হলে দেওয়া যাবে।
১৬. কুরবানি আর আকিকা একি ছাগল দিয়ে কি হবে?
না, হবেনা।
১৭. কুরবানির মাংস কে মাংস বলা যাবে না, গোশত বলতে হবে, এটা ঠিক? যদি
ঠিক হয় তো কেন? মাংস বাংলা ভাষা, অনেকে
বলে হিন্দু থেকে এসেছে, আমরাও তো ইংরেজি ভাষা বলি যেটা কি না খ্রিষ্টানদের
থেকে এসেছে, তাহলে এটা ও কি বেঠিক?
মাংস বলা ঠিক না,
গোশত বলতে হবে কারণ মাংস অর্থ মায়ের অংশ। হিন্দুরা গরুকে মা মনে
করে। এইজন্য গরুর গোশতকে তারা মাংশ মনে করে খায়না। ভাষা আল্লাহর সৃষ্টি, হিন্দু বা খ্রিষ্টানদের নয়।
১৮. নিয়ত কীভাবে করতে হবে ?
যিনি জবাহ করবেন তাকে বলতে হবে নাকি যে কুরবানি দিচ্ছে তাঁর বললেই
চলবে?
"হে আল্লাহ আমার এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে এই কুরবানি কবুল
করো" - এইভাবে মনে মনে নিয়ত করবে।
১৯. মৃত বেক্তির নামে কুরবানি দেয়া যাবে ?
না ঠিক নয়,
কুরবানি দিতে হয় জীবিতদের পক্ষ থেকে, এটা শায়খ
মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহর ফতোয়া।
২০. হযরত মোহাম্মাদ সাল্লালাহু
আলাইহিওয়াস সাল্লাম এর নামে অনেকে কুরবানি দেয়, কত টুকু ঠিক ?
সাহাবীরা দিতেন না,
অথচ আমাদের চাইতে তাঁরা রাসুল সাল্লালাহু আলাইহিওয়াস সাল্লাম কে
বেশি ভালোবাসতেন।
২১. যে লোক কুরবানির পশু জবেহ করবে তাকে খুশি হয়ে টাকা দিলে গুনাহ হবে? কিংবা সে যদি ডিমান্ড করে পারিশ্রমিকের
এটা কি তার জন্য হালাল হবে?
হালাল, গুনাহ
হবেনা। সে চাইলে তাকে পারিশ্রমিক দিতে হবে, এটা তার জন্যে
বৈধ।