শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬

জান্নাতে যাওয়ার সহজ আমল

জান্নাতে যাওয়ার সহজ আমল

আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন দুর্বলভাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বলভাবে। সুরা আন-নিসাঃ ২৮।
মানবিক এই দুর্বলতার কারণে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়, জেনে হোক কিংবা না জেনে, নিজের কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, শয়তানের ধোঁকায় পড়ে, মানুষের চাপে পড়ে, প্রলোভনের শিকার হয়ে, কিংবা বাজে সংগীর সাহচর্যের কারণে মানুষ ছোট কিংবা বড় গুনাহতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। মানুষের এমন অনেক পাপ আছে যা মানুষ বুঝতেই পারেনা যে, কোন কথা বা কাজের কারণে বাম পাশের ফেরেশতা তার আমল নামায় পাপ লিখে ফেলছেন। মানুষ তার এই দুর্বলতা ও পাপে লিপ্ত হওয়ার কারণে, আল্লাহ তাআলার রহমত ছাড়া শুধুমাত্র নিজের আমল দ্বারা মানুষের কেউই জান্নাতে যেতে পারবেনা।
আল্লাহর রহমত ব্যতীত, শুধুমাত্র নিজের আমল দিয়ে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়ঃ
উম্মুল মুমিনিন আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহ তাআলার রহমত এবং করুণা ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এমন কোন মানুষ নেই যে, আল্লাহ তাআলার রহমত ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
তখন আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা আবার জিজ্ঞেস করলেন, এমনকি আপনিও নন ইয়া রাসুলুল্লাহ?
তিনি বললেন, না, এমনকি আমিও না। তবে আল্লাহ তাআলা তাঁর স্বীয় রহমত দ্বারা আমাকে ঢেকে রাখবেন।
এ কথাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার বললেন।
সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবিহঃ ৪০৮ পৃষ্ঠা।

মানুষ যাতে আল্লাহর রহমত পেতে পারে, সেইজন্য আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর ইবাদত করার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। সেই ইবাদত করে মানুষ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পারে, বিনিময়ে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে জান্নাত দিবেন। কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত এমন বিশেষ কিছু ইবাদত বর্ণনা করা হলো, যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।

(১) আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে কালেমার সাক্ষ্য দেওয়া ও তার হক্ক আদায় করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এমন ব্যক্তির উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে সাক্ষ্য দিয়েছে। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর রাসুল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন সহীহ বুখারীঃ ৩৪৩৫, সহীহ মুসলিমঃ ২৮, সুনানে তিরমিযিঃ ২৬৩৮

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য দান করল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। তিনি (ঈসা) তাঁর এমন এক কালিমা (বাক্য), যা তিনি মরিয়াম আলাইহিস সালামের প্রতি প্রেরণ করেছেন, এবং তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রূহ বা আত্মা। জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য। সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা জান্নাত দান করবেন, তার আমল যাই হোক না কেন। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমঃ ৮০।

(২) শিরক থেকে মুক্ত থাকা এবং তাওহীদের উপরে মৃত্যুবরণ করাঃ
ছোট কিংবা বড়, প্রকাশ্য কিংবা গোপন, সমস্ত প্রকার শিরক থেকে বেঁচে থেকে তাওহীদের উপরে মৃত্যুবরণ করা একজন মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি যদি দুনিয়া পরিমান গুনাহ নিয়ে আমার কাছে হাজির হও, আর আমার সাথে কাউকে শরিক না করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ কর, তাহলে আমি দুনিয়া পরিমাণ মাগফিরাত (ক্ষমা) নিয়ে তোমার দিকে এগিয়ে আসবো। সুনানে তিরমিযীঃ ২৩৫৭, হাদীসটির সনদ হাসান।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মৃত্যু বরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে মৃত্যু বরণ করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। সহীহ বুখারীঃ ২৮৫৬, সহীহ মুসলিমঃ ১৫৩।

সাহাবী মুআয বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে একটি গাধার পিঠে বসে ছিলাম। তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, হে মুআয! তুমি কি জানো, বান্দার উপর আল্লাহর কি হক রয়েছে? আর আল্লাহর উপর বান্দার কি হক আছে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে এই যে, তারা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হচ্ছে যারা তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না, তাহলে তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন না। আমি (মুআয) বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি কি এই সুসংবাদ লোকদেরকে জানিয়ে দেব না? তিনি বললেন, তুমি তাদেরকে এই সুসংবাদ দিওনা, তাহলে তারা ইবাদত ছেড়ে দিয়ে (আল্লাহর উপর ভরসা করে) হাত গুটিয়ে বসে থাকবে। সহীহ মুসলিমঃ ৪৬, সহীহ বুখারীর কিতাবুল রিক্বাক, হাদীস নং-৫০৭।

অনেক মুসলিম রয়েছে, যারা জেনে কিংবা না জেনে অনেক সময় এমন কথা বলে ফেলে, কিংবা অজ্ঞতাবশত এমন কাজ করে বসে, আসলে যা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। শিরকি কথা ও কাজ থেকে বাঁচার জন্য প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয দায়িত্ব হচ্ছে, কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী কোন কাজগুলো শিরক, এ ব্যপারে পূর্ণাংগ জ্ঞান অর্জন করা। এজন্য আমাদের তাওহীদ ও শিরকের উপরে লিখিত কিতাবগুলো পড়া উচিত এবং সহীহ আকিদার অনুসারী আলেমদের ওয়াজ-লেকচার শোনা উচিত। বিশেষ করে শায়খুল ইসলাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহহাব রাহিমাহুল্লাহর কিতাবুত তাওহীদ বইটা সকলের পড়া ও বুঝা উচিত, যাতে করে তারা শিরক থেকে সতর্ক হতে পারে ও বেঁচে থাকতে পারে।
জানা-অজানা যে কোন শিরক থেকে বাঁচার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো ছোট্ট একটা দুয়া আছে, কেউ যদি প্রতিদিন সকাল বিকালবেলা একবার করে এই দুয়াটা পড়ে, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে শিরক থেকে হেফাজত করবেন। দুয়াটা হচ্ছেঃ
اللَّهُمَّ  إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আলাম, ওয়া আস-তাগফিরুকা লিমা লালাম
অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি আর আমার অজানা অবস্থায় কোনো শিরক হয়ে গেলে আমি তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
দুয়াটা পাবেন হিসনুল মুসলিম বইয়ের ২৪৬ পৃষ্ঠামুসনাদে আহমাদ ৪/৪০৩, হাদীসটি সহীহ, সহীহ আল-জামে ৩/২৩৩।
দুয়াটা মুখস্থ করে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায়, সালাম ফেরানোর পূর্বে কিংবা মুনাজাতে পড়া উচিত।

(৩) প্রকাশ্যে ও গোপনে, সর্বদা তাক্বওয়া অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাঃ
তাক্বওয়ার প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
(সেই দিন) মুত্তাক্বীদের জন্য জান্নাতকে নিকটবর্তী করা হবে। সুরা আশ-শুআরাঃ ৯০।
আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দুইটি (জান্নাতের) বাগান। সুরা আর-রাহমানঃ ৪৬।
আর যারা পরম দয়াময় (আল্লাহকে) না দেখে ভয় করে, এবং (আল্লাহ) অভিমুখী অন্তর নিয়ে উপস্থিত হয়, (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা শান্তির সাথে (জান্নাতে) প্রবেশ কর; এটা অনন্ত জীবনের দিন। সেখানে তারা যা কামনা করবে, তাই পাবে এবং আমার নিকট রয়েছে তারও অধিক* সুরা আল-ক্বফঃ ৩৩-৩৫। এই আয়াতে অধিক অর্থ হচ্ছে, জান্নাতে আল্লাহকে দেখতে পারার নেয়ামত।
আর যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করেছে এবং প্রবৃত্তি বা খেয়াল-খুশি থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত। সুরা আন-নাযিআতঃ ৪০-৪১।

আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হল, কোন আমল সবচাইতে বেশি পরিমাণে মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, তাক্বওয়া, সদাচরণ ও উত্তম চরিত্র। তাঁকে আবার প্রশ্ন করা হল, কোন আমল সবচাইতে বেশি পরিমাণে মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, মুখ ও লজ্জাস্থান। ইবনে মাজাহ, তিরমিযীঃ ২০০৪, মিশকাতঃ ৪৬২১।

(৪) মৃত্যুর পূর্বে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যার জীবনের শেষ কথা হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবু দাউদঃ ৩/১৯০, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ তিরমিযীঃ ৩/১৫২।
এজন্য যে ব্যক্তি মনে করবে যে, তার মৃত্যুর সময় চলে এসেছে, তাহলে সে একটু পরপর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে থাকবে। মুমূর্ষ ব্যক্তিকে তার কাছের আত্মীয়-স্বজনেরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার জন্য স্বরণ করিয়ে দিবে। খেয়াল রাখতে হবে, কোন কথা বলে ফেললে কথা শেষ করে পুনরায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে হবে। যাতে করে তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত সর্বশেষ কথাটা হয় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহলা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পর কিছুক্ষণ চুপ করে বা অজ্ঞান থাকার পরেও যদি মৃত্যু হয়, তবুও তার সর্বশেষ কথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে ধরে নেওয়া হবে, এবং সে ব্যক্তি এই হাদীসে বর্ণিত ফযীলত, অর্থাৎ জান্নাত পাবে বলে আশা করে যায়।

(৫) ওযুর পরে কালিমা শাহাদাত পাঠ করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযু করবে, অতঃপর কালিমা শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে যেটা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। মুসলিমঃ ১/২০৯, মিশকাতঃ ২৮৯।
কালিমা শাহাদাত হচ্ছেঃ আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকা-লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।

(৬) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ওয়াক্ত অনুযায়ী আদায় করতে যত্নবান হওয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। সুতরাং, যে ব্যক্তি (এই পাঁচ ওয়াক্ত) সালাতের হকের ব্যপারে কোন প্রকার কমতি ও তাচ্ছিল্য না করে সঠিকভাবে সেইগুলো আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহ এ অংগীকার করেছেন যে, তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। আর যে এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ব্যাপারে কমতি ও তাচ্ছিল্য করে তা আদায় করবে, তার প্রতি আল্লাহর কোন অংগীকার নেই। তিনি চাইলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন, আবার ক্ষমাও করতে পারেন’’। হাদীসটি মুয়াত্তা ইমাম মালিক, মুসনাদে ইমাম আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে। শায়খ আলবানী এই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে সহীহ বুখারীঃ ২৬৭৮, সহীহ মুসলিমঃ ১০৯।

(৭) ফযর ও আসরের সালাত সঠিক সময়ে আদায় করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি দুইটি ঠান্ডা সময়ের (অর্থাৎ, ফযর ও আসর) সালাতের হেফাজত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সহীহ বুখারীঃ ৫৭৪, সহীহ মুসলিমঃ ১৪৭০।
এই দুইটি সময়ে ব্যস্ততা বা ঘুমের কারণে অনেকেই উদাসীন হয়ে সালাত কাযা করে ফেলে। একারণে এই দুইটি সালাত হেফাজত করার বিশেষ ফযীলত হিসেবে সে জান্নাতে যাবে।

(৮) মানুষের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল তার জিহবা ও লজ্জাস্থানের হেফাযত করা। কারণ, এই দুইটি অংগের কারণে সবচাইতে বেশি মানুষ জাহান্নামে যাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি এই দুইটি জিনিসের হেফাযতের দায়িত্ব নিবে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জান্নাতের ব্যাপারে দায়িত্ব নিবেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (জিহবা) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (লজ্জাস্থান) হেফাযতের নিশ্চয়তা দিবে, আমি তার জান্নাতের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেব। সহীহ বুখারী।

(৯) প্রত্যেক ফরয সালাতের পরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করে, মৃত্যু ছাড়া আর কোন কিছুই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। নাসায়ী, ইবনু হিব্বান, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী।

(১০) প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যাবেলায় আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে সাইয়েদুল ইস্তেগফার দুয়া পড়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সাইয়েদুল ইস্তিগফার হচ্ছে বান্দার এই কথা বলা যে, আল্লা-হুম্মা আংতা রাব্বি. . .শেষ পর্যন্ত। যে ব্যক্তি দিনে (সকাল বেলা) দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দুয়াটি পড়বে, অতঃপর সে যদি সেইদিন সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বেই মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (সন্ধ্যাবেলা) এই দুয়াটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়ে, অতঃপর সে যদি সেই রাতে ভোর হওয়ার পূর্বেই মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতীদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হবে। সহীহ বুখারীঃ ৬৩০৬, তিরমিযীঃ ৩৩৯৩, নাসায়ী।
সাইয়েদুল ইস্তিগফার অর্থ হচ্ছে, বান্দার কৃত গুনাহ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সর্বোত্তম দুয়া।

(১১) প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার জান্নাতের জন্য দুয়া করা ও তিনবার জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্যে দুয়া করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তিনবার জান্নাত প্রার্থনা করে, তখন জান্নাত আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তুমি তাকে জান্নাত দান করো। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তিনবার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তখন জাহান্নাম আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তুমি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও। তিরমিযিঃ ২৫৭২, ইবনে মাজাহ ৪৩৪০, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ আল-জামিঃ ৬২৭৫।
জান্নাত প্রার্থনা করা ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্য দুয়াঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকাল জান্নাতা, ওয়া আউযুবিকা মিনান্নার।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি, আর আমি আপনার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

(১২) প্রতিদিন সুরা মুলক পড়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট এমন একটি সুরা আছে, যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষা পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর সেটা হলো তাবা-রাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক (সুরাহ মুলক)। তিরমিযীঃ ২৮৯১, আবু দাউদঃ ১৪০০, ইবনে মাজাহঃ ৩৭৮৬, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী।

(১৩) অহংকার, গুলুল ও ঋণ থেকে মুক্ত থাকাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি অহংকার, গুলুল ও ঋণ; এই তিনটি জিনিস থেকে মুক্ত থাকা অবস্থায় মারা যাবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে। ইবনে মাজাহঃ ২৪০৩, তিরমিযীঃ ১৫৭২, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ তিরমিযী।
গুলুল হচ্ছে জিহাদে প্রাপ্ত গনীমতের সম্পদ বন্টন করার পূর্বেই লুকিয়ে রেখে বা চুরি করে আত্মসাৎ করা।

(১৪) মনোযোগী হয়ে, আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে আযানের উত্তর দেওয়াঃ
আযানের সময় মুয়াজ্জিন যা যা বলে, তার সাথে তাই বলতে হবে। শুধুমাত্র মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা আলাস সালাহ হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলবে, তখন তার উত্তরে সেটা না বলে বলতে হবে লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে আযানের উত্তর দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। সহীহ মুসলিমঃ ৩৮৫।

(১৫) আযানের দুয়া পড়াঃ
মুয়াজ্জিনের সাথে আযানের জবাব দেওয়ার পর, যেকোন সহীহ একটা দুরুদ পাঠ করে, অতঃপর আযানের যেই দুয়া রয়েছে সেটা পড়তে হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আযান শুনে কেউ যদি আযানের দুয়া পড়ে, কিয়ামতের দিন ঐ ব্যাক্তির জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য অনিবার্য হয়ে যাবে। সহীহ বুখারীঃ ৬১৪, তিরমিযীঃ ২১১১।

(১৬) সুরা ইখলাসকে ভালোবাসাঃ
একদিন এক সাহাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন হে আল্লাহর রাসুল! আমি এই (সুরা) ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদকে ভালবাসি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এই (সুরার প্রতি) ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। সহীহ বুখারী, তিরমিযী ২৯০১, আহমাদ ১২০২৪।
সুরা ইখলাসকে ভালোবাসার উপায় হচ্ছে এটা অধিক পরিমানে তেলাওয়াত করা, এর অর্থ ও তাফসীর জানা, এর শিক্ষা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা, মানুষকে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেওয়া। আর বিশেষ করে ফযর, মাগরিবের সুন্নত সালাতের দ্বিতীয় রাকাতে, এবং বিতির সালাত তিন রাকাত পড়লে, তৃতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পাঠ করা। এছাড়া প্রত্যেক ফরয সালাতের পরে তিন ক্বুল সুরা পড়া ইত্যাদি।

(১৭) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, তাঁর সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের সকলেই জান্নাতে যাবে, শুধুমাত্র যারা জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে তারা ছাড়া। সাহাবীগণ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এমন কে আছে যে, জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে যাবে, আর যে আমার নাফরমানী করবে ও অবাধ্য হবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে। সহীহুল বুখারীঃ ৭২৮০।

(১৮) জিহাদকারী ব্যক্তির জন্য জান্নাত নিশ্চিতঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং তাঁর কালিমাকে সত্য বলে প্রমাণিত করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়। আল্লাহ তাকে শহীদের সাওয়াব করেন অথবা, গণীমত লাভে ধন্য করে গাজী হিসাবে ঘরে ফিরিয়ে আনেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি উটের দুধ দোহনের মধ্যবর্তী সময়টুকু (অর্থাৎ, সামান্য সময়) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। নাসায়ীঃ ৩১৪১, আবু দাউদঃ ২৫৪১, তিরমিযীঃ ১৬৫৭, হাদীসটি সহীহ।

(১৯) শান্তির সাথে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য
হে মানব সকল! তোমরা সালামের প্রসার কর, মানুষকে খাদ্য দান কর, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ, আর রাতের বেলা লোকেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা নফল সালাত আদায় কর। তাহলে তোমরা শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। সুনানে তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

(২০) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৈধ উপার্জন দ্বারা সঠিক নিয়মে হজ্জ করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক উমরাহ থেকে আরেক উমরাহ মধ্যবর্তী সকল গুনাহের জন্য কাফফার স্বরূপ। আর হজ্জে মাবরুর (যেই হজ্জ কবুল হয়েছে বলে আশা করা যায়), তার প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।’’ সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম।

(২১) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান-সাদাকাহ করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান-খয়রাত করে, এর প্রতিদান হিসাবে তাকে জান্নাতে দেওয়া হবে। ইমাম আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

(২২) বিপদগ্রস্থ ঋণ গ্রহীতাকে সময় দেওয়া বা ছাড় দেওয়াঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক ব্যক্তি মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার পর তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা নো হলো। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে লোকটি বললো, আমি মানুষের সাথে কেনাবেচা করতাম। বিপদগ্রস্ত দরিদ্রদেরকে ঋণ পরিশোধের সময় দিতাম এবং কিছু টাকা পয়সা মাফ করে দিতাম। ফলে আল্লাহ আমাকেও মাফ করে দিয়েছেন। সহীহ মুসলিম।

শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

আলেম কে, আলেমের যোগ্যতা কি?

_____________________________________
মুফতী কাকে বলা হয়?
যেই আলেমের ইজতেহাদ করে অর্থাৎ, ক্বুরান ও হাদীস গবেষণা করে ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতা রয়েছে, তাকে মুফতী বলা হয় ফতোয়া হচ্ছে দ্বীনের কোন বিষয়ে মতামত দেওয়া যেমন, কোন আলেমকে জিজ্ঞেস করা হলো, অমুক কাজটা কি হালাল নাকি হারাম? এর উত্তরে তিনি বললেন, ক্বুরান ও হাদীসের উপরে আমার গবেষণা অনুযায়ী এই কাজটি হারাম অথবা, শরিয়তের দৃষ্টিতে এই কাজটি হারাম এমন বলা, এটা হচ্ছে সেই আলেমের ফতোয়া কোন আলেম কোন কিছুকে হালাল বা হারাম বানাতে পারেনা, হালাল বা হারাম বলার মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলার মুফতিরা শুধুমাত্র ক্বুরান ও হাদীস গবেষণা করে বের করেন, আল্লাহ এটাকে হালাল করেছেন নাকি, হারাম করেছেন   
একজন আলেমের কোন ফতোয়া সঠিক হতে পারে, আবার ভুলও হতে পারে কারণ, আলেমরাও মানুষ, তাই কোন আলেমের ফতোয়া ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক তবে ফতোয়া ভুল হোক আর সঠিক হোক, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যে দ্বীনের ব্যপারে কোন প্রশ্নের উত্তর বের করার জন্যে তিনি যে কষ্ট করে গবেষণা করেছেন, এর বিনিময়ে তার জন্যে সওয়াব রয়েছে কোন আলেম যদি গবেষণা করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন এবং সঠিক ফতোয়া দেন, তাহলে তার জন্যে দুইটি পুরষ্কার রয়েছে একটি পুরষ্কার হচ্ছে গবেষণা করার জন্যে, আরেকটি হচ্ছে সঠিক ফতোয়া দেওয়ার জন্য আর কোন যোগ্য আলেম যদি নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করেন, কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্তে পোঁছাতে সক্ষম না হন, তবুও তার চেষ্টার জন্যে তিনি একটি পুরষ্কার পাবেন কোন আলেমের ফতোয়া ভুল হোক আর সঠিক হোক, আমাদের কাছে তাঁরা সব সময়েই সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী
আলেমদের মাঝে সবাই মুফতী নন অর্থাৎ, অনেকে আলেম হতে পারেন, ক্বুরান ও হাদীস সম্পর্কে একজন ব্যক্তি অনেক জ্ঞানী হতে পারেন, কিন্তু তার মানে এই না যে, তিনি একজন মুফতি আলেমদের মাঝে সবচাইতে জ্ঞানী, পরহেজগার, সুন্নতের অনুসারী, প্রখর স্মৃতিশক্তি ও তীক্ষ্ণ মেধা সম্পন্ন জ্ঞানী, যারা ইজতেহাদ করার মতো যোগ্যতায় পৌঁছাতে সক্ষম হন, তাঁরা হচ্ছেন মুফতি একজন আলেমের ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জনের জন্যে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয় আমাদের দেশের কওমী মাদ্রাসার অনেকে মনে করেন, কোন ব্যক্তি এতো হাজার ফতোয়া মুখস্থ বলতে পারলে সে একজন মুফতি, এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত একটা ধারণা অন্য আলেমদের ফতোয়া মুখস্থ করে যে ব্যক্তি তার অন্ধ অনুসরণ করে, সে কোনদিন মুফতি হতে পারেনা, বরং তিনি একজন মুকাল্লিদ বা অন্ধ অনুসারী কোন আলেম নিজস্ব যোগ্যতার ভিত্তিতে ফতোয়া দিয়ে, এবং অন্য আলেমদের কাছেও মুফতি হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং স্বীকৃত হলে, তাঁকে আমরা একজন মুফতি বলতে পারি
মুসলমানদের প্রাণের ভূমি, ইসলামের কেন্দ্র, মক্কা মদীনার দেশ সৌদি আরবের বর্তমান প্রধান মুফতির নাম হচ্ছে, শায়খ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ আহলুশ-শায়খ হাফিজাহুল্লাহ বর্তমান সারা বিশ্বের মাঝে জীবিত আলেমদের মাঝে তিনি শীর্ষস্থানীয় একজন আলেম হিসেবে বিবেচিত ১৯৯৯ সালে সৌদি আরবের প্রাক্তন প্রধান মুফতি আল্লামাহ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ মৃত্যুবরণ করার পর শায়খ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ আহলুশ-শায়খ সম্মানিত এই আসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে নির্বাচিত হন উল্লেখ্য, আপনারা প্রতিবছর হজ্জের সময় ৯-ই জিলহজ্জ আরাফাহর ময়দানে ইহরামের সাদা পোশাক পড়া অবস্থায় যাকে খুতবা দিতে দেখেন, তিনিই হচ্ছেন শায়খ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ আহলুশ-শায়খ সুবহানাল্লাহ, এটা আল্লাহর একটা নিয়ামত যে, তিনি একাধারে বিগত ৩৪ বছর ধরে আরাফার ময়দানে খুতবা দিয়ে আসছেন শায়খ এর জন্ম হয়েছিলো ১৯৪ সালে, অর্থাৎ বর্তমানে তাঁর বয়স ৭৩ বছর মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেন আল্লাহ তাঁর দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন, কিন্তু এর পরিবর্তে তাঁকে সবচাইতে মূল্যবান জিনিস দ্বীনের জ্ঞান দান করেন ফা লিল্লাহিল হামদ
সৌদি আরবের আরেকজন বড় আলেম, শায়খ সালেহ আল-ফাওজান হাফিজাহুল্লাহ মুফতি হিসেবে আরব, অনারব সর্বত্র অত্যন্ত পরিচিত এবং গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিত্ব বিগত শতাব্দীর শীর্ষস্থানীয় দুইজন আলেম ও মুফতি, শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ এবং শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ-কে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, আপনার পরে ফতোয়া নেওয়ার জন্যে আমরা কার কাছে যাবো? তাঁদের দুইজনেই প্রথমেই যারা নাম বলেছিলেন এবং যার প্রশংসা করেছিলেন তিনি হচ্ছেনঃ শায়খ সালেহ আল-ফাওজান শায়খ সালেহ আল-ফাওজান হাফিজাহুল্লাহ ১৯৩৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, বর্তমান (২০১৬ সালে) তাঁর বয়স হচ্ছে ৮৩ বছর আকিদাহ, ফিকহ এবং দ্বীনের অনেক বিষয়ের উপরে তাঁর অসংখ্য কিতাব রয়েছে, যার অনেকগুলো ইতিমধ্যে বাংলা, ইংরেজীসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতে অনুদিত হয়েছে
__________________________________________
দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ
বর্তমানে টেলিভিশন, ইউটিউব, ফেইসবুক কিংবা ইন্টারেন্টে এমন অনেক জনপ্রিয় বক্তা বা লিখক আছে, যাদেরকে মানুষ বড় আলেম বা দ্বাইয়ী মনে করে, কিন্তু তারা সালফে সালেহীন (সাহাবীদের) আক্বীদাহ (ধর্মীয় বিশ্বাস) ও মানহাজে (কর্ম পদ্ধিত বা চলার নীতিতে) বিশ্বাসী নয় কিন্তু তারা সেটা প্রকাশ করেনা বা তাদের আক্বিদাহ কি, তা কখনো স্পষ্ট করে বলেনা অনেক সময় তারা মনভোলানো যুক্তি ও কথার দ্বারা আহলে সুন্নাহর বিরোধীতা করে এবং কৌশলে তার ভক্ত-শ্রোতাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে এমন ব্যক্তি যারা মূলত বিদআতের অনুসারী, কিন্তু মানুষের কাছে নিজেদের বিদআতকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে, তাদের চেনার সহজ উপায় হচ্ছেঃ সে কার সাথে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রাখে, সে কোন ব্যক্তিদের সাথে উঠা-বসা করে, কার প্রশংসা করে, সেইদিকে লক্ষ্য করা কারণ, একজন মানুষ সাধারণত তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়ে থাকে
(১) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একজন মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়ে থাকে সুতরাং সে যেনো লক্ষ্য রাখে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে তিরমিজিঃ ২৩৭৮, হাদীসটি হাসান সহীহ, শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ
(২) এজন্যেই ইমাম আল-আউযায়ী (মৃত্যু-১৫৮ হিজরী) রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের কাছে তার বিদআতকে লুকিয়ে রাখে, সে কখনো আমাদের কাছে তার সংগীদেরকে লুকিয়ে রাখতে পারবেনা আল-ইবানাহঃ ২/৪৭৬
অনেকে ইসলামী বক্তা ও লেখক প্রকাশ্য বিদআতি ব্যক্তি বা দলগুলোকে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে সমর্থন করার চেষ্টা করে এমন ব্যক্তিদের ব্যপারেও আমাদের আলেমরা সতর্ক করেছেন
(৩) ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি বিদআতিদের প্রতি সু-ধারনা রাখে এবং এই দাবি করে যে, তাদের অবস্থা অজ্ঞাত, তাহলে তাকে তাদের (বিদআতিদের) অবস্থা সম্বন্ধে অবহিত করতে হবে সুতরাং, সে যদি বিদাতীদের ব্যপারে বিরোধী মনোভাবাপন্ন না হয়, এবং তাদের প্রতি প্রতিবাদমূলক মনোভাব প্রকাশ না করে, তাহলে তাকেও বিদআতিদেরই মতাবলম্বী ও দলভুক্ত বলে জানতে হবে মাজমুয়া ফাতাওয়াঃ ২/১৩৩ 
(৪) শায়খ সালিহ আল-লুহাইধান হাফিজাহুল্লাহ কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো,
প্রশ্নকর্তাঃ এক ব্যক্তি আহলে সুন্নাহ এবং আহলে বিদআহ সবার সাথেই বসে এবং বলে, এখন উম্মতের মাঝে অনেক বিভক্তি হয়েছে, তাই আমি সবার সাথেই বসি এমন দ্বাইয়ীদের ব্যপারে কি বলা হবে?
উত্তরে শায়খ বলেনঃ সে একজন বিদআতি উম্মতের ঐক্যের স্বার্থে হক্ক (আহলে সুন্নাহ) ও বাতিল (আহলুল বিদআহ, যেমন শীয়া, সূফী, খারেজী ইত্যাদি দলের মাঝে) কোন পার্থক্য না করা, এটা একটি বিদআ আমরা তার হেদায়েতের জন্য দুয়া করি
বিঃদ্রঃ আমার এই লেখায় নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা দলের নাম উল্লেখ করা হলোনা কারণ, তা অনেক সময় মানুষের জন্যে ফিতনাহ হয়ে দাঁড়ায় কোন ব্যক্তি বা দলের প্রতি আবেগ বা ভালোবাসার কারণে অনেকে লেখার মূল উদ্দেশ্য নিয়ে ভুল বুঝেন আমাদের উদ্দেশ্য মানুষের মাঝে ইলম তুলে ধরা, গ্রহণ করা বা না করা সেটা সবার নিজ নিজ ব্যক্তিগত ব্যপার
(৫) সর্বশেষ, প্রখ্যাত তাবেয়ী বিদ্বান, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রহিমাহুল্লাহ এর মূল্যবান একটা উপদেশ দিয়ে এখানেই শেষ করছি তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই এই ইলম , এটাই হচ্ছে তোমার দ্বীন সুতরাং, তোমরা কার নিকট থেকে ইলম অর্জন করছো, তার সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিও সহীহ মুসলিম, মুকাদ্দিমা
__________________________________________
আলেম কে? বর্তমান যুগের আলেম কারা? বিসমিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ
ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ
আম্মা বাআ আজকাল মানুষ যাদেরকে আলেম বলে মনে করেঃ
১. টিভিতে কাউকে কুরআন ও হাদীস নিয়ে কিছু কথা বলতে দেখলে,
২. কুরান হাদীসের মনগড়া ব্যখ্যা করে কিছু লেখালিখি করতে পারলে,
৩. ইউটিউব বা ইন্টারনেটে কিছু ওয়াজ-লেকচার ছেড়ে জনপ্রিয়তা পেলে,
৪. ফেইসবুক, টুইটারে কয়েক লক্ষ লাইক, ফলোয়ার বা একনিষ্ঠ মুরীদ জোটাতে পারলে,
৫. বড় কোন মাদ্রাসা বা সংগঠনে পজিশান বা ক্ষমতা দখল করে বসে থাকলে,
৬. মুফতি, মুহাদ্দিস হিসেবে সার্টিফিকেট নিতে পারলে অথবা নামের পূর্বে মাওলানা, শায়খ ইত্যাদি টাইটেলে যোগ করলে,
৭. হৃদয় গলানো বা গরম গরম আবেগী বক্তৃতা দিয়ে বা মনভুলানো কিছু লেখালিখি করে মানুষের মগজ ধোলাই করতে পারলে
যাই হোক, এইগুলো কি আসলেই কারো আলেম হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ?
ইসলাম কি আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, এই গুণগুলো কারো মাঝে থাকলেই সে আলেম হয়ে যাবে?
আমাদের পূর্ব যুগের মুসলমানেরা এইভাবে মানুষকে আলেম হিসেবে গ্রহণ করতোনা কারণ আমরা যারা সাধারণ মানুষ, দ্বীন সম্পর্কে, কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে জ্ঞানী না, তাদের সামনে যদি একজন মূর্খ লোকও সামান্য কিছু পড়াশোনা করে আলেমের লেবাস ধরে, আমরা কিন্তু ধরতে পারবোনা এই লোকটা আসলেই কি একজন আলেম? নাকি আলেম না হয়েও আলেম সেজে আমাদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে? যেমন একজনু জুহুরীই কেবলমাত্র চিনতে পারে কোনটা আসল রত্ন কোনটা সস্তা পাথর, একজন স্বর্ণকারই চিনতে পারে কোনটা খাঁটি স্বর্ণ আর কোনটা সিটি গোল্ড বা ইমিটেশান ঠিক তেমনি একজন প্রকৃত আলেমই আসলে চিনতে পারেন, কে আলেম আর কে জাহেল (মূর্খ)
এজন্য সাহাবীদের পর থেকে তাবেয়ীদের যুগ থেকে, যখন থেকে মুসলমানদের মাঝে উলামায়ে সু (মন্দ বা পথভ্রষ্ট আলেম) ও আয়াম্মায়ে দ্বোয়াল্লিন (পথভ্রষ্ট ইমাম বা নেতা) মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রবেশ করেছে, তখন থেকেই আমাদের আলেমরা বার বার সতর্ক করে গেছেনঃ ইসলাম শেখার জন্য যাকে-তাকে উস্তাদ বা শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ না করার জন্য অপরিচিত কোন ব্যক্তি, যাকে সম সাময়িক আলেমরা চিনেন না, বা যারা আলেমদের কাছ থেকে দ্বীন শিখেনি, তাঁদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখেনা, তাদের কথা বা ওয়াজ-লেকচারা শোনা বা বই না পড়ার দ্বীনের ব্যপারে প্রকৃত আলেম ছাড়া অপরিচিত, অজ্ঞ লোকদেরকে আলেম মনে করে তাদের কথা বিশ্বাস করবেনা যদি করো, তাহলে যেন তুমি তোমার দ্বীনকেই ধ্বংস করলে!
অপরিচিত (অজ্ঞ/বেদাতী) লোকদের কথা শোনা খুবই মারাত্মক একটা বিষয় কারণ অতীত থেকে আজ পর্যন্ত এমন অনেক ঘটনাই হয়েছে যে একজন অপরিচিত লোক, সে কি প্রকৃত আহলে সুন্নাহ নাকি আহলে বিদআ'ত ভালোভাবে খোজ না নিয়েই তার কথা শুনেছে আর ধোঁকাবাজ, চতুর লোকেরা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে কৌশলে শিরক-বিদআ'ত ও তাদের গোমরাহী সুন্দরভাবে সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থানপন করেছে প্রথম প্রথম অনেকেই, উনার কথা শুনতে ভালো লাগে, সেতো কুরান হাদীসের কথাই বলছে এই যুক্তিতে তার কথা শুনেছে, কিন্তু জ্ঞানের অভাবে তার ভুল অথবা শিরক-বিদআ'ত ধরতে না পেরে অনেক সৎ ও ধার্মিক মুসলমানও শেষ পর্যন্ত সেই সমস্ত শিরক-বিদআ'তগুলোর মাঝে পতিত হয়ে তাদের দ্বীনকে ধ্বংস করেছে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি
এজন্য আলেমরা অপরিচিত কেউ এবং কেউ প্রকৃত আহলে সুন্নত নাকি ভেজাল আহলে সুন্নত, আহলে বিদআতের লোক কিনা, আলেম নাকি জাহেল, এই বিষয়গুলো ভালোভাবে যাচাই না করে তার কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান নিতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন
এই ব্যপারে প্রখ্যাত তাবেয়ী, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ১১০ হিজরী), তিনি বলেছেন, এই যে জ্ঞান (দ্বীনের ব্যপারে), এটাই হচ্ছে তোমার দ্বীন সুতরাং, কার কাছে থেকে তুমি দ্বীনের জ্ঞান নিচ্ছ সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকো সহীহ মুসলিম  
এইজন্য আমার যাকে ভালো লাগে, যার বই পড়ে বা ওয়াজ শুনে আমার কাছে বড় আলেম, জ্ঞানী ব্যক্তি মনে হয়, তাকেই আলেম হিসেবে মনে করা মারত্মক ভুল বরং দেখতে হবে, যার ব্যপারে কথা হচ্ছে, তার ব্যপারে তার পূর্বে যারা আলেম ছিলেন, তারা কি তাকে একজন আলেম বলে মনে করতেন, নাকি জাহেল (মূর্খ) বলে মনে করতেন?
ইলম বা দ্বীনের জ্ঞান আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়ায় না, যার ইচ্ছা নিয়ে সে আলেম হয়ে যাবে অথবা এমনটা ঠিকনা যে, বই পড়েই কেউ আলেম হয়ে যাবে এটা ঠিক ভালো কিছু বই পড়ে, বা কিছু উপকারী কথা শুনে আমার ইলম বাড়বে, কিন্তু তার মানে এইনা যে এর দ্বারা আমি বড় কোন মুফতি, আলেম, আল্লামাহ হয়ে যাবো যেমন কেউ নিজে নিজে ডাক্তারীর উপরে কিছু বই পড়েই ডাক্তার হয়ে যায়না, তার জন্য তাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হবে, প্রফেসর ডাক্তারদের কাছ থেকে হাতে-কলমে ডাক্তারী শিখতে হবে ঠিক তেমনি কেউ নিজে নিজে শুধু কুরআন হাদীস পড়েই আলেম হয়ে যেতে পারেনা তাকে অবশ্যই আলেমদের কাছে যেতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে থেকে, তাদের সাথে সময় কাটিয়ে কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হবে এইভাবে আলেমদের সাথে ছাত্র-শিক্ষকের যে সম্পর্ক তৈরী হবে, এর মাধ্যমেই আসলে পরবর্তী প্রজন্মের আলেম তৈরী হয় অর্থাৎ, পূর্বের যারা আলেম, তাঁরা তাদের ছাত্রদের মাঝে যারা জ্ঞানী, বিচক্ষণ, আল্লাহওয়ালা তাদেরকে আলেম বলে ঘোষণা করে যান উম্মতের লোকদেরকে তাদের কাছ থেকেই উপকৃত হতে নসীহত করে যান
এর উদাহরণ হিসেবে ইমাম মালেক এর বিখ্যাত ঘটনা বলা যেতে পারে ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেনঃ আমি ততদিন পর্যন্ত কোন ফাতওয়া দেইনি, যতদিন পর্যন্ত না ৭০ জন আলেম আমাকে ফাতওয়া দিতে বলেছেন
অর্থাৎ ইমাম মালেক নিজে থেকে কোন ফাতওয়া দেন নি (অর্থাৎ আলেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নি), যতদিন পর্যন্ত না ৭০ জন আলেম তাকে আলেম বলে ঘোষণা করেছেন এইভাবে পূর্ববর্তী আলেমরা যখন কাউকে আলেম হিসেবে ঘোষণা করেন, আমরা সাধারণ মানুষেরা ঐ আলেমদেরকে অনুসরণ করবো, তাদের কাছ থেকে ইলম নেবো তবে অন্ধভাবে নয়, কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে
মুসলিমদের চিরাচরিত নীতি অনুযায়ী, বর্তমান যুগের আলেম কে এটা জানার জন্য আমরা দেখবো এর আগের যুগে যারা আলেম ছিলেন তারা কাকে আলেম বলে ঘোষণা করেছেন বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আলেমদের মাঝে সৌদি আরবের সাবে প্রধান মুফতি আল্লামাহ শায়খ আব্দুল আজীজ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বাজ রাহিমাহুল্লাহ, শীর্ষস্থানীয় অন্য আরেকজন আলেম আল-ফকীহ, শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন, এই দুইজনকেই যখন প্রশ্ন করা হয়েছিলোঃ আপনাদের পরে ফতোয়া নেওয়ার জন্য আমরা কার কাছে যাবো? তারা দুইজনেই সবার প্রথম যার কথা বলেছিলেন তিনি হচ্ছেনঃ আল্লামাহ সালেহ আল-ফাওজান হাফিজাহুল্লাহ উল্লেখ্য শায়খ বিন বাজ, শায়খ উসাইমিনসহ আরো অন্যান্য বড় বড় আলেমরা আমাদেরকে শায়খ ফাওজানের কাছ থেকে ইলম নিতে বলেছেন
এমনিভাবে বর্তমান যুগে জীবিত আছেন, এমন আরো কিছু আলেমদের নাম নিচে দেওয়া হলো উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গা ছাড়াও আহলে সুন্নতের আরো কিছু বড় আলেম রয়েছেন, আল্লাহ তাদের সকলকে হেফাজত করুন, আমিন
১. শায়খ সালেহ আল-ফাওজান হাফিজাহুল্লাহ
২. শায়খ আব্দুল আজীজ ইবনে আব্দুল্লাহ আর-রাজিহি হাফিজাহুল্লাহ
৩. শায়খ আব্দুল আজীজ আলে-শায়খ হাফিজাহুল্লাহ
৪. শায়খ সুলায়মান আর-রুহাইলি হাফিজাহুল্লাহ
৫. শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ হাফিজাহুল্লাহ
৬. শায়খ রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী হাফিজাহুল্লাহ
৭. শায়খ সালেহ বিন আব্দুল আজীজ আলে-শায়খ হাফিজাহুল্লাহ
৮. শায়খ উয়াসী উল্লাহ আব্বাস হাফিজাহুল্লাহ
৯. শায়খ সালেহ আল-লুহাইধান হাফিজাহুল্লাহ
১০. শায়খ উবায়েদ আল-জাবেরী হাফিজাহুল্লাহ
১১. শায়খ সালেহ আস-শুহাইমি হাফিজাহুল্লাহ
১২. শায়খ ফালাহ ইসমাঈল মান্দিকার হাফিজাহুল্লাহ
১৩. শায়খ মুহাম্মদ রামাজান আল-হাজিরি হাফিজাহুল্লাহ
১৪. শায়খ মুহাম্মাদ সাঈদ রাসলান হাফিজাহুল্লাহ
১৫. শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বিন আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ হাফিজাহুল্লাহ
*******************************
আলেম কে? একজন আলেম এর কি কি যোগ্যতা থাকা চাই?
এই পোস্টটি লিখেছেনঃ শায়খ আব্দুর রাকীব বুখারী
বাংলা ভাষায় দ্বাইয়ীঃ খাফজী ইসলামিক সেন্টার সৌদি আরাবিয়া
এই বিষয়টির উপর ৪০০ হিজরীর একজন বড় আলেম, ইমাম আব্দুল বার (রহঃ) তার জামি বায়ানুল ইলম ওয়াল-ফাজলি নামক কিতাবে একজন আলেম হওয়ার জন্য যে সমস্ত শর্ত আরোপ করেছেন, নিম্নে তা উল্লেখ করা হল
(১) ক্বুরানুল কারীম সম্পর্কে জ্ঞান
হাফেজে কিতাবুল্লাহ, ৩০ পারা অর্থাৎ সম্পূর্ণ ক্বুরানুল কারীম তার মুখস্থ থাকতে হবে কোন ব্যক্তির আলেম হওয়ার জন্য এটা আব্যশক, তবে ওয়াজিব নয়
=> জরুরী হল আয়াতে আহকাম অর্থাৎ যে সমস্ত আয়াতগুলো হুকুম (আদেশ-নিষেধ) আছে সেগুলো হিফজ করা
=> আয়াতের শানে নুজুল ও তাফসির জানা
=> ক্বুরান বোঝার জন্য সকল উৎস জানা
=> নূন্যতম ১০ পারা হিফজ করা
(২) হাদীস বা সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞান
কুতুবে সিত্তাহ তথা প্রসিদ্ধ ৬টি হাদীসের কিতাব আর সেইগুলো হচ্ছে,
ক. সহীহ বুখারী, খ. সহীহ মুসিলীম,
গ. জামি তিরমিজি, ঘ. সুনানে আবু দাউদ,
ঙ. সুনানে নাসাঈ, চ. সুনানে ইবনে মাজাহ
(এবং) অন্যান্য হাদীসের কিতাবগুলো যেমন,
সুনানে দারেমি,
মুসনাদে আহমাদ
বাইহাক্বী ও
সহীহ ইবনে খুজাইমা
এই সমস্ত কিতাবের সবগুলো হাদিসে কারিমা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা, কোনটা সহীহ, কোনটা জাল বা জয়ীফ বিস্তারিত তাহকীক সহ
(৩) ৫টি কিতাব সম্পর্কে জ্ঞান
উপরে বর্ণিত হাদীসের কিতাবগুলো থেকে সংকলন করা গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাদীস নিয়ে ৫ জন ইমামের লিখিত পাঁচটি কিতাব সম্পর্কে একজন আলেম এর ইলম থাকা জরুরী সেই কিতাবগুলো হচ্ছে
ক. বুলুগুল মারআম মিন আদিল্লাতীন আহকাম
খ. উমদাতু আল-আহকাম
গ. আল মোহাররার হাদিসিল আহকাম
ঘ. আল ইলমাম
ঙ. মিশাকাতুল মাসাবিহ
(৪) উসুলে হাদিসের ইলম বা হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞান
(৫) উসুলে ফিকহের ইলম বা ফিকহ শাস্ত্রের মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞান
(৬) আরবি গ্রামার এর ইলম
(৭) নাসেখ, মানসুখের ইলম
(৮) নাহু ছরফের ইলম
(৯) ইজমা এ উম্মাহ বা উম্মতের ঐক্যমতের দলিল জানা ইত্যাদি
সমাপ্ত
পরিশেষে বলছি, এই গুণগুলোর অধিকারী এমন ব্যক্তি যাকে একজন আলেম হিসাবে মানা যায়, আমাদের দেশে এই রকম কেউ আছে বলে আমি (আব্দুর রাকীব বুখারী) জনিনা
জাজাকাল্লাহু খাইরান এডমিন কর্তৃজ কিছুটা সম্পাদিত আপনারা আরো জানার জন্য শায়খের এই লেকচারটা দেখুন
আলেম কাকে বলে এবং আলেমদের পরিহাস করা কেমন?

https://www.youtube.com/watch?v=byX8867pyvk&feature=youtube_gdata_player