বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪

উপমহাদেশের বিখ্যাত কবি ইকবাল বলেছিলেনঃ
ওজা মে তুম হো নাসারা, তু তামুদ্দুন মে হুনুদ,
ইয়ে মুসলমান হ্যায়, জিনহে দেখে শারমায়ে ইয়াহুদ
অর্থঃ তোমরা পোষাক-পরিচ্ছেদে, কৃষ্টি-কালচারে খ্রীস্টানদের মতো, আচার-অনুষ্ঠানে হিন্দুদের মতো

তোমরা আজ এমন মুসলমান হয়েছ যে, যাদেরকে দেখলে চির অভিশপ্ত ইয়াহুদীরাও লজ্জা পায়। 

মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪

আইসিস (ISIS) খারেজীদের ভ্রান্ত আকীদাহঃ আবু বারা

আইসিস (ISIS) ভয়ংকর রক্তপিপাসু খুনির দল।
- শায়খ মুহাম্মদ বিন রামযান হাজিরি।

ইসলামী আকীদাহঃ
> নাবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের পর বলেছিলেন, আজকের পর (মক্কা থেকে) আর কোন হিজরত নেই; তবে জিহাদ ও নিয়্যত অবশিষ্ট আছে। আর যখন তোমাদেরকে জিহাদের জন্য বের হতে বলা হবে তখন তোমরা বের।
উপরের এই হাদীস দ্বারা, মক্কা বিজয়ের পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত এর নিয়তে অন্য কোথাও যাওয়াকে রহিত করে দিয়েছেন।

আইসিস (ISIS) খারেজীদের ভ্রান্ত আকীদাহঃ
> আইসিস (ISIS) এর জাহেল আল-মুরাক্কাব মুফতিরা ফতোয়া দিয়েছে, মুসলমানদের জন্য মক্কা-মদীনা থেকে হিজরত করে বাগদাদে চলে যাওয়া ফরয। (আউযুবিল্লাহিমিনাশ শাইতানির রাযীম)!

তাদের যুক্তি কি?
নিকৃষ্ট এই খারেজীদের আকিদাহ হচ্ছেঃ বর্তমানে আইসিসের প্রতারক খুনি নেতা আবু বকর বাগদাদী ছাড়া বিশ্বে আর কোথাও কোন মুসলমান শাসক নেই! তাদের মতে তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান কাফের (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক), আরব আমিরাতের বাদশাহ খলিফাহ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান কাফের (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক), সৌদি আরবের বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ কাফের (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক),...
এইরকম তাদের মতো সমস্ত মুসলমান দেশের রাজা-বাদশাহ ও প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীরা কাফের হয়ে গেছে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক),  মুসলমানদের জন্য সারা বিশ্বই নাকি এখন দারুল কুফর হয়ে গেছে। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। 

আবু বারা নামের একজন অল্পবয়ষ্ক জাহেল ইংলিশ স্পিকিং বক্তা খারেজীদের এই ফতুয়া(!) ইংল্যান্ডে প্রচার করে তারমতোই অন্য তরুণ ছেলেপিলেদেরকে বিভ্রান্ত করছে, যদিও সে নিজেই ইউকে ছেড়ে বাদদাদে হিজরত করে চলে যাচ্ছেনা। এদের মতো বিভ্রান্ত বক্তারা জিহাদ জিহাদ করে আর মুসলমানদেরকে কাফের-মুশরেক বলে দিনরাত ফতোয়াবাজি করে, কিন্তু নিজেরা কোনদিন কথিত সেই জিহাদে শরীক হয়না। আমাদের দেশের জসীম উদ্দিন হচ্ছে তার আদর্শ উদাহরণ। 

অল্পবয়ষ্ক মূর্খ ফতোয়াবাজদের ব্যপারে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ শেষ যামানায় একদল তরুণ বয়সী, নির্বোধ লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সবচাইতে উত্তম কথা বলবে। তারা ইসলাম থেকে এত দ্রুত গতিতে বের হয়ে যাবে যেইভাবে তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়। তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে সেখানেই হত্যা করবে। কারণ যে তাদেরকে হত্যা করবে তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট নেকী রয়েছে। [বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদঃ ৪৭৬৭, নাসাঈ]


এদের পথভ্রষ্ট বক্তাদের ফেতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লামাহ, শায়খ সালেহ আল-ফাওজান হাফিজাহুল্লাহ বলেন, বর্তমান যুগে অন্য অনেক ফেতনার সাথে এই উম্মত সবচাইতে বড় যে ফেতনার সম্মুখীন সেটা হচ্ছে, অনেক দ্বায়ী আছে যারা জ্ঞান ছাড়াই অজ্ঞতাবশত মানুষকে গোমরাহী ও বাতিলের দিকে দিকে দাওয়াত দিচ্ছে।

‘ইসলাম’ কেমন দ্বীন?

ইসলাম কেমন দ্বীন?
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
নসীহত, অর্থাৎ অন্যের কল্যান কামনা করাই হচ্ছে দ্বীন।
সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, কার জন্য কল্যাণ কামনা?
তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল এবং মুসলমানদের নেতৃবর্গ ও সমস্ত মুসলমানদের জন্য।

সহীহ মুসলিম।

রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

বিদআত কি? ধর্মে বিদআতের কু-প্রভাব ও বিদআতকারীর পরিণাম

বিদআত কি? ধর্মে বিদআতের কু-প্রভাব ও বিদআতকারীর পরিণাম।

বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ= নতুন আবিষ্কার।
শরিয়াতের পরিভাষায় বিদআত হচ্ছে ধর্মের নামে নতুন কাজ, নতুন ইবাদাত আবিষ্কার করা।

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার ব্যাপারে আমার শরীতের নির্দেশনা নেই, উহা প্রত্যাখ্যাত।” (মুসলিম হা/৩২৪৩)

তিনি আরো বলেন- " নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহ্‌র কিতাব, সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পদ্ধতি। আর নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে শরীয়াতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা, এবং প্রত্যেক বিদ'আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা। (মুসলিমঃ ৭৬৮)

"রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন-যে আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়। [বুখারীঃ ৫০৬৩]
অর্থাৎ যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পদ্ধতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নতুন নতুন ইবাদাত আবিষ্কার করবে অথবা আল্লাহ্‌র নৈকট্যের জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করবে সে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পদ্ধতিকে তুচ্ছ মনে করল।

যে কোন সাধারন মানুষকে যদি জিজ্ঞাস করা হয় যে- আল্লাহ্‌ যথাযথ ইবাদের জন্য এবং আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের জন্য রাসুল (সাঃ) এর দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এবং ইবাদাত সমূহ উত্তম নাকি কোন বড় আলেমের দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এবং ইবাদাত সমূহ উত্তম???

-নিঃসন্দেহে রাসুল (সাঃ)-এর দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি-ই এবং ইবাদাত সমূহ-ই উত্তম হবে।

অতএব কেউ যদি আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর রাসুল (সাঃ)-এর দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এবং ইবাদাত সমূহকে উত্তম মনে না করে, বর্তমান যুগের আলেমদের দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এবং ইবাদাত সমূহকে উত্তম মনে করে তবে উপরের হাদিস অনুযায়ী সেই ব্যক্তি আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উম্মত-ই থাকবে না।

তাহলে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উম্মত-ই থাকবে না, কিয়ামতের দিন তার সুপারিশের কি অবস্থা হবে? তাকে কি আল্লাহ্‌ ক্ষমা করবেন?

এবার আসুন বিদআত সমূহ চিহ্নিত করার চেষ্টা করিঃ
দ্বীনের মধ্যে বিদআত মূলত দু’প্রকার।
(১) বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত
(২) আমলের ক্ষেত্রে বিদআত।

বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআতঃ ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে ঈমান, তথা বিশ্বাস। যে যে বিষয়য়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয় সেই সব জিনিষের সাথে যদি আরো নতুন নতুন বিষয় বিশ্বাস করা হয় তবে সেটাই হবে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত। বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত হচ্ছে ঐ সমস্ত বিদআত যে গুলো নাবী (সাঃ) ঈমান আনার জন্য বিশ্বাস করতে বলেন নি, যে সকল বিশ্বাস সাহাবায়ে কেরাম করতেন না। যেমনঃ আল্লাহ্‌ নিরাকার, আল্লাহ্‌ সর্বাস্থানে বিরাজমান, নাবী (সাঃ) নূরের তৈরী, নাবী (সাঃ)-কে সৃষ্টি না করলে কিছুই আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করতেন না ইত্যাদি সব-ই বাতিল আকীদা সমূহ। এই ধরণের নতুন নতুন আকিদাই হচ্ছে- বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত।

আমলের ক্ষেত্রে বিদআতঃ যেহেতু বিদআত মানেই হচ্ছে এই শরিয়াতে নতুন নতুন আবিষ্কার করা তাই আমলের ক্ষেত্রেও নাবী (সাঃ) যে সলক আমল করতে নির্দেশ দেননি, সাহাবায়ে কেরামগণ যে সকল আমল করেন নি বা করতেন না, বর্তমান যুগের সেই সমস্ত আমলই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
এটা আবার কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। যেমনঃ- (১) নতুন কোন ইবাদত আবিষ্কার করা, (২) শরীয়ত সম্মত ইবাদতের মধ্যে বৃদ্ধি করা, (৩) যেকোন একটি ইবাদত রাসুল (সাঃ) এর পন্থায় আদায় না করে নতুন, বিদআতী নিয়মে পালন করা এবং (৪) শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট করা, যা শরীয়তে নির্ধারিত নয়।

নতুন ইবাদত আবিষ্কার করা ইসলামী শরীয়তের সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা মহান আল্লাহ্‌ বলেন-
"আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। (সুরা আল মাইদাঃ ৩)

উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যায় যে- দ্বীন পূর্ণাঙ্গ। পূর্ণাঙ্গ কোন জিনিষের ভিতরে নতুন করে কিছু ঢোকানোর থাকে না। একটি গ্লাসে যদি পানি পরিপূর্ণ থাকে তবে সেখানে কি নতুন করে পানি দেয়া যাবে?

আল্লাহ্‌র দ্বীন পরিপূর্ণ। কেউ যদি এই দ্বীনের মধ্যে নতুন ইবাদাত সংযুক্ত করে তবে সে যেন মনে করছে দ্বীন পরিপূর্ণ নয়, দ্বীনের মধ্যে আরো কিছু বাকী আছে। এজন্যই যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন ইবাদাতের অবতারণা করল সে মূলত আল্লাহ্‌কে অপমানিত করল।

মহান আল্লাহ্‌ বলেন-
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না। (সুরা মুহাম্মাদঃ ৩৩)

তাই আল্লাহ্‌ যা বলেছেন ঠিক তাই করতে হবে, রাসূল (সাঃ) যা বলেছেন ঠিক তাই করতে হবে, এর উল্টা-পাল্টা করলে কোন আমল তো কবুল হবেই না বরং তা বিনষ্ট হয়ে যাবে, উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ্‌ একথাই বলেছেন।

মহান আল্লাহ্‌ আরো বলেন-
"মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রসূলের চেয়ে আগে বাড়িও না এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন। (সুরা হুজুরাতঃ ১)

তাই আমাদের কখনোই উচিৎ হবে না রাসুল যা দিয়েছেন তা বর্জন করে নিজে নতুন কিছুর অবলম্বন করা। রাসুল যা করেছেন তার চেয়ে আগে বেড়ে যাওয়া।

রাসুলে পদ্ধতি বাদ দিয়ে ইবাদাত করলে তা গ্রহনযোগ্য হবে না। বুক ফাটিয়ে কান্না-কাটি করে ইবাদাত করলেও তা কবুল হবে না।

নাবী (সাঃ) বলেন-
“যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার ব্যাপারে আমার শরীতের নির্দেশনা নেই, উহা প্রত্যাখ্যাত।” (মুসলিম হা/৩২৪৩)

তাই আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর পদ্ধতিতেই ফিরে আসতে হবে, উনার পদ্ধতিই যে আলেমের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ।
মহান আল্লাহ্‌ বলেন-
"যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। (সুরা আল আহযাবঃ ২১)

উল্লেখ্য যে, বিদআত হচ্ছে সেটাই যেটাকে দ্বীনের অংশ মনে করে করা হয় এবং নেকীর আশায় করা হয়।

বিদআতের কতিপয় উদাহরণঃ
যেমন কোন ব্যক্তি আছর কিংবা যোহরের নামায এক রাকাত বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে আদায় করল।
শরীয়ত সম্মত ইবাদাত বিদআতী নিয়মে পালন করা। যেমন হাদীছে বর্ণিত জিকিরের বাক্যগুলি দলবদ্ধভাবে সংগীতাকারে। উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করা। কিংবা ইবাদত পালনে নফসের উপর এমন কষ্ট দেয়া, যা রাসূল (সাঃ)এর সুন্নাতের বিরোধী।
শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে এমন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে আদায় করা, যা শরীয়ত নির্ধারণ করেনি। যেমন, শাবান মাসের ১৫ তারিখ দিনের বেলা রোজা রাখা এবং রাতে নির্দিষ্ট নামায আদায় করা। মূলতঃ রোজা ও নামায শরীয়ত সম্মত ইবাদত। কিন্তু ইহাকে নির্দিষ্ট সময়ের সাথে খাছ করার কোন দলীল নেই।
রোজা নির্দিষ্ট মাস এবং নামায নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রতিটি ইবাদত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে হবে। কিন্তু শাবান মাসের ১৫ তারিখে শব-ই-বরাত নাম দিয়ে দিনের বেলা রোজা রাখা এবং সারা রাত নফল নামায আদায় করা নিশ্চিতভাবে বিদআত। কারণ এ সম্পর্কে কোন সহীহ দলীল নেই।

বিদআত সম্পর্কে আমাদের মাঝে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। বিদআত জিনিষটা যে আসলে কি তা অধিকাংশ মুসলিমরা-ই বুঝে না। এমন অনেক আলেম-ওলামাও বিদআতের সঠিক দিক-নির্দেশনাই বুঝতে ভুল করে। কোন কোন বিষয় গুলো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হবে আর কোন কোন বিষয় গুলো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হবে না, এই বিষয়টি বুঝতে না পারার কারনে তারা এখতেলাফ করতে শুরু করে যে- এটা বিদআত হলে ওটা বিদআত হবে না কেন?  এটা বিদআত হলে সেটা বিদআত হবে না কেন ইত্যাদি ইত্যাদি?
তাই বিদআত আসলে কোনটা তা চিহ্নিত করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। বিদআত হচ্ছে সে আমলটাই যার কোন দলিল কুরআন ও সহিহ হাদিসে নেই, কুরআন ও সহিহ হাদিসে না থাকার পরও যদি কেউ কোন আমল করে তবে সেটাই হবে বিদআত।

উদাহরণ স্বরূপ, কুরআন ও হাদিসে দৈনিক ১০ ওয়াক্ত সালাতের কথা কোত্থাও নেই, এখন যদি কেউ দৈনিক ১০ ওয়াক্ত সালাতের প্রচলন করে তবে সে বিদআত করল।  আরো যেমন, কেউ যদি খতমে ইউনুস করে তবে সে বিদআত করল। কেননা এই আমলের কথা কুরআন ও হাদিসের কোত্থাও নেই। নাবী (সাঃ) এমন আমলের কথা কখনো বলেন নি।  মৃতের জন্য সুরা ফাতেহা ও সুরা ইখলাস, সুরা ইয়াসিন পাঠ করে নেকি পৌঁছানো। কেননা এমন কথাও কুরআন ও হাদিসের কোত্থাও নেই।
অনেক সময় কাউকে যদি বলা হয় যে এই জিনিষটা বিদআত, তখন সে প্রশ্ন করে এটা যে বিদআত এমন কথা   কুরআন-হাদিসের??

-এটি বোকার মত প্রশ্ন। আমি পূর্বেই বলেছি, বিদআত হচ্ছে সে আমলটাই যার কোন দলিল কুরআন ও সহিহ হাদিসে নেই, কুরআন ও সহিহ হাদিসে না থাকার পরও যদি কেউ কোন আমল করে তবে সেটাই হবে বিদআত। তাই ঐ সব আমল কুরআন-হাদিসে আসবে কোত্থেকে? 



দ্বীনের মধ্যে বিদআতের বিধানঃ
দ্বীনের ব্যাপারে সকল প্রকার বিদআতই হারাম ও গোমরাহী। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,

وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَة

অর্থঃ তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা।

উপরের হাদীছগুলোর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের মধ্যে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই হারাম ও গোমরাহী। তবে এ হারাম বিদআতের প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বিদআতের কিছু কিছু প্রকার প্রকাশ্য কুফরীরই নামান্তর। যেমন কবরবাসীদের নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে কবরের চতুর্দিকে কাবা ঘরের তাওয়াফের ন্যায় তাওয়াফ করা, কবরের উদ্দেশ্যে পশু যবাই করা, নযর-মান্নত পেশ করা, কবরবাসীর কাছে দু’আ করা, তাদের কাছে আশ্রয় চাওয়া ইত্যাদি। এমন কিছু বিদআতও রয়েছে, যা শির্ক না হলেও মানুষকে শির্কের দিকে নিয়ে যায়। যেমন কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করা, কবর উঁচু করা, পাকা করা, কবরের উপর লিখা, কবরের কাছে নামায আদায় করা, দু’আ করা ইত্যাদি।


একটি সতর্কতাঃ
আমাদের দেশের কিছু কিছু বিদআতি আলেম বিদআতকে জায়েজ করার জন্য বিদাতে হাসানা এবং বিদাতে সাইয়েআ এদু’ভাগে ভাগ করে থাকে। বিদআতকে এভাবে ভাগ করা সম্পূর্ণ ভুল এবং রাসূল (সাঃ)এর হাদীছের সম্পূর্ণ বিপরীত। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা।
আর এই শ্রেণীর আলেমগণ বলে থাকে, প্রত্যেক বিদআত গোমরাহী নয়। বরং এমন কিছু বিদআত রয়েছে, যা হাসানা বা উত্তম বিদআত।

আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) বলছেন- “প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী”

এখানে আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) প্রত্যেক বলেছেন, কতিপয় বলেন নি।

সুতরাং বিদআতে হাসানার পক্ষে মত প্রকাশকারীদের কোন দলীল নেই। কিছু লোক তারাবীর নামাযের ব্যাপারে উমার (রাঃ) এর উক্তি “এটি কতই না উত্তম বিদআত ” এ কথাটিকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। তারা আরও বলেন, এমন অনেক বিদআত আবিষ্কৃত হয়েছে, যা সালাফে সালেহীনগণ সমর্থন করেছেন। যেমন গ্রন্থাকারে কুরআন একত্রিত করণ, হাদীছ সঙ্কলন করণ ইত্যাদি।

উপরোক্ত যুক্তির উত্তর এই যে, শরীয়তের ভিতরে এ বিষয়গুলোর মূল ভিত্তি রয়েছে। এগুলো নতুন কোন বিষয় নয়। উমার (রাঃ) এর কথা, “এটি একটি উত্তম বিদআত”, এর দ্বারা তিনি বিদআতের শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করেছেন। ইসলামের পরিভাষায় যাকে বিদআত বলা হয়, সে অর্থ গ্রহণ করেন নি। মৌলিকভাবে ইসলামী শরীয়তে যে বিষয়ের অস্তিত্ব রয়েছে, তাকে বিদআত বলা হয়নি। এমন বিষয়কে যদি বিদআত বলা হয়, তার অর্থ দাড়ায় জিনিষটি শাব্দিক অর্থে বিদআত, পারিভাষিক অর্থে বিদআত নয়। সুতরাং শরীয়তের পরিভাষায় এমন বিষয়কে বিদআত বলা হয়, যার পক্ষে কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অর্থাৎ দুনিয়ার ক্ষেত্রে যদি কেউ নতুন কোন কাজ করে যা রাসুল (সাঃ) এর যুগে ছিল না সেটি শাব্দিক অর্থে বিদআত হলেও শরিয়াতগত পরিভাষায় নয়। যেমন রাসুল (সাঃ) মোবাইল ব্যাবহার করেন নি, তাহলে কি মোবাইল ব্যাবহার করা বিদআত?
রাসুল (সাঃ) উটে ছড়েছেন, কিন্তু আমরা বাস, ট্রেন, বিমান ইত্যাদিতে চড়ি তাহলে কি এগুলোতে চড়া কি বিদআত?

-জী না এগুলো বিদআত নয়। কেননা বিদআত হচ্ছে সেটাই যেটাকে দ্বীনের অংশ মনে করে করা হয় এবং নেকীর আশায় করা হয়। দুনিয়া এবং দ্বীন ভিন্ন জিনিষ। দুনিয়ার ক্ষেত্রে কেউ নতুন নতুন জিনিষ আবিষ্কার করলে বা ব্যাবহার করলে সেটা শাব্দিক অর্থে বিদআত হলেও শরিয়াতগত পরিভাষায় বিদআত নয়।
কেননা রাসুল (সাঃ) বলেছেন- নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে শরীয়াতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা।  (মুসলিমঃ ৭৬৮)

তাই মাইকে আযান দেয়া, ফেসবুক ব্যাবহার করা ইত্যাদি এগুলো বিদআত নয়।

আর গ্রন্থাকারে কুরআন সংকলনের পক্ষে দলীল রয়েছে। নবী (সাঃ) কুরআনের আয়াতসমূহ লিখার আদেশ দিয়েছেন। তবে এই লিখাগুলো একস্থানে একত্রিত অবস্থায় ছিলনা। তা ছিল বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায়  সাহাবাগণ তা এক গ্রন্থে একত্রিত করেছেন। যাতে কুরআনের যথাযথ হেফাযত করা সম্ভব হয়।

তারাবীর নামাযের ব্যাপারে সঠিক কথা হলো, রাসূল (সাঃ) তাঁর সাহাবাদেরকে নিয়ে জামাতবদ্বভাবে কয়েকরাত পর্যন্ত তারাবীর নামায আদায় করেছেন। ফরজ হয়ে যাওয়ার ভয়ে পরবর্তীতে ছেড়ে দিয়েছেন। আর সাহাবাগণের প্রত্যেকেই রাসূল (সাঃ) এর জীবিতাবস্থায়ও মৃত্যুর পর একাকী এ নামায আদায় করেছেন। পরবর্তীতে উমার (রাঃ) সবাইকে এক ইমামের পিছনে একত্রিত করেছেন, যেমনিভাবে তাঁরা রাসূল (সাঃ) এর পিছনে তাঁর ইমামতিতে এ নামায আদায় করতেন। তাই ইহা বিদআত নয়।

হাদীছ লিখিতভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারেও দলীল রয়েছে। রাসূল (সাঃ) কতিপয় সাহাবীর জন্য তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাদীছ লিখে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণ দেয়ার পর আবু শাহ নামক জনৈক সাহাবী রাসূল (সাঃ) এর কাছে ভাষণটি লিখে দেয়ার আবেদন করলে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, اكتبوا لأبى شاه)) অর্থাৎ আবু শাহের জন্য আমার আজকের ভাষণটি লিখে দাও। তবে রাসূল (সাঃ)এর যুগে সুনির্দিষ্ট কারণে ব্যাপকভাবে হাদীছ লিখা নিষেধ ছিল। যাতে করে কুরআনের সাথে হাদীছ মিশ্রিত না হয়ে যায়। পরবর্তীতে যখন রাসূল (সাঃ) ইনে-কাল করলেন এবং কুরআনের সাথে হাদীছ মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূরিভুত হলো, তখন মুসলমানগণ হাদীছ সংরক্ষণ করে রাখার জন্য তা লিখার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। যারা এ মহান কাজে আঞ্জাম দিয়েছেন, তাদেরকে আল্লাহ তায়া’লা উত্তম বিনিময় দান করুন। কারণ তারা আল্লাহর কিতাব এবং নবী (সাঃ)এর সুন্নাতকে বিলুপ্তির আশংকা থেকে হেফাজত করেছেন।


বিদআতের কু প্রভাবঃ
১. সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে- বিদআতি ব্যক্তির তওবা নসীব হয় না, কেননা সে তো এটা নেকি মনে করে করছে। চোরের মনে এক সময় অনুশোচনা আসে, মদখরের মনে এক সময় অনুশোচনা আসে কিন্তু বিদআতি ব্যক্তির মনে অনুশোচনা আসে না।

২. বিদ’আত ইসলামী লোকদের মাঝে দুশমনী , ঘৃণা , বিভেদ ও বিভক্তি সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহ্‌ বলেন : “নিশ্চয় এটিই আমার সোজা সরল পথ তোমরা তারই অনুসরণ কর , তোমরা বহু পথের অনুসরণ করো না , কারণ তা তোমাদেরকে তাঁর এক পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দিবে” – সূরা আন’আম : ১৫৩ ।

৩. বিদ’আত সহীহ সুন্নাহকে বিতাড়িত করে তার স্থলাভিষিক্ত হয়। বাস্তব নমুনায় এর বিরাট প্রমাণ রয়েছে। যেমন ফরজ সালাত শেষে কিছু সুন্নাতি যিকর, দুয়া রয়েছে। কিন্তু জামা’বদ্ধ হয়ে হাত তুলে দো’আ করলে , সালাতের পরে পঠিতব্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত দো’আ ও যিকিরগুলো পড়া হয় না । অতএব বিদআত করলে সহীহ সুন্নাহ বিতাড়িত হবেই।

৪. যারা বিদআত করে তারা সর্বদা আল্লাহ্‌ থেকে গাফেল থাকে এবং জান্নাতের জন্য শর্টকাট খুঁজে। যেমন, যারা নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে না তারা জুম্মার দিনে মুনাজাত দ্বারা পার পেতে চায়। যারা সারা বছর ফরজ ইবাদাত করে না, তারা শব-ই-বরাতের মত বিদআত তৈরি করে শর্টকাটে জান্নাত পেতে চায়।

৫. সুন্নাতকে ঘৃণা করে বিদআত করলে ফিতনায় পরে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। মহান আল্লাহ্‌ বলেন-
“যারা রাসুলের নির্দেশের বিরোধীতা করবে তারা যেন সতর্ক হয় তাদেরকে ফিতনা পেয়ে বসবে বা তাদেরকে পীড়াদায়ক শাস্তি দ্বারা গ্রাস করা হবে।” (সূরা আন-নূর : ৬৩)

৬. যারা সহিহ সুন্নাহর উপর আমল করে তাদেরকে বিদআতিরা গালি-গালাজ করে।


বিদআতের পরিনামঃ
উপরোক্ত আলচনায় এটা স্পষ্ট যে, বিদআত করা সম্পূর্ণ হারাম। বিদআতের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। বিদআত করলে ইবাদাত কবুল হয় না। বিদআতের শেষ পরিণাম জাহান্নাম।

বিদআত করলে কিয়ামতের দিন যখন সূর্য মাথা অতি নিকটে থাকবে তখন সকলে তৃষ্ণায় পানি পান করতে চাইবে, আর তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার উম্মতকে হাউজে কাউসার  থেকে পানি পান করাবেন। কিন্তু আফসোস বিদআতিরা সেই দিন পানি পান করতে পারবে না।

আবু হাসেম হতে বর্ণিত , তিনি বলেন আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন , “আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে , আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন : তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত । তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো : দূর হয়ে যা , দূর হয়ে যা” (সহীহ মুসলিম হা/৪২৪৩)।

এর চেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে???

বিদআতের কারনে জাহান্নাম অবধারিত-
রাসূল (সাঃ) বলেছেন : ‘সব বিদ’আতই ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিনাম-ই হচ্ছে জাহান্নাম। (আবু দাউদ)

তাবলীগ জামাত” সম্পর্কে মক্কা-মদীনার আলেমদের ফতোয়া

তাবলীগ জামাত সম্পর্কে মক্কা-মদীনার আলেমদের ফতোয়া
=============================
>> তাবলীগ জামাতের লোকদের আকিদাহ ও আমল কেমন?
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, ইমাম আবদুল আযিয ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহর ফতোয়াঃ
তাবলীগ জামাতের অনুসারী লোকেরা আকিদা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখে না, কাজেই তাদের সাথে যাওয়ার অনুমতি নেই। তবে যে ব্যক্তির শরিয়ত সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে এবং আহল সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদাহ সম্পর্কে যার সঠিকতা নির্ণয় করার এবং তা বুঝার ক্ষমতা আছে, সেব্যক্তি তাবলিগিদের সাথে যেতে পারবে। কেননা সে (কোন আলেম বা তালিবুল ইলম যদি তাদের সাথে যায় তাহলে) তাবলিগিদেরকে সঠিক পথ দেখাতে পারবে, তাদেরকে সুন্দরভাবে উপদেশ দিতে পারবে এবং ভালো কাজে তাদের সাথে সাহায্যও করতে পারবে কারণ তাবলিগিরাই খুবই কর্মপরায়ণ। কিন্তু তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের আরও অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন এবং তাওহীদসুন্নাহ সম্পর্কে পথ নির্দেশনা দেবার ক্ষমতা রাখে এমন ব্যক্তিদের দরকার। আল্লাহ ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝার ক্ষমতা দিয়ে আমাদের সবাইকে রহমত দান করুন এবং তা ধরে রাখার কাজে দৃঢ়তা দান করুন। [আমিন]
তথ্য সূত্রঃ মাযমু ফাতাওয়া আল শাইখ ইবন বাযঃ ৮/৩৩১।
=============================
>> তাবলীগ জামাতের সাথে চিল্লা দেওয়া যাবে?
সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন ও মুফতি, আল্লামাহ শায়খ সালেহ আল-ফাওজান হাফিজাহুল্লাহর ফাতওয়াঃ
প্রশ্নঃ আল্লাহ আপনার সাথে ভালো আচরণ করুন হে সম্মানিত শায়খ! এটা কি জায়েজ কোথায় বেড়িয়ে পড়া এক মাসের জন্য, এক সপ্তাহের জন্য অথবা একদিনের জন্য যেইভাবে তাবলিগ জামাতের লোকেরা করে থাকে? এটা কি সুন্নত নাকি বিদআ? শরীয়তের জ্ঞান অর্জনে অধ্যায়নরত এমন কারো জন্য এটাকি জায়েজ, এই জামাতের সাথে চিল্লা দেওয়া বা বের হওয়া?
উত্তরঃ এটা জায়েজ নয়, কারণ এটা একটা বিদআত। এভাবে বেড়িয়ে যাওয়া ৪০ দিন, ৪ দিন, ৪ মাস এটা হচ্ছে বিদ'আত। এটা প্রমানিত যে, তাবলিগ জামাআত হচ্ছে ভারতীয় দেওবন্দীদের মধ্য থেকে একটা সূফী জামাত। তারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায় তাদের সূফীবাদ প্রচার করার জন্য। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী ব্যক্তি, তাওহীদের অনুসারী কোন ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, তাবলিগ জামাতের সাথে তাবলীগে বের হবে। কারণ সে যদি তাবলিগিদের সাথে যায়, তাহলে সে তাদেরকে বিদআত প্রচার করতে সাহায্য করলো। এবং লোকেরা তাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করবে। অমুক (আলেম বা শিক্ষিত লোক) তাদের সাথে তাবলীগে যায়, অথবা এটা বলবে সাধারণ মানুষ সবাই আমাদের সাথে যায় অথবা তারা বলবে আরে তাবলিগ জামাত এইদেশে (সৌদি আরবে) বৈধ।”. এইজন্য তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব, তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব এবং তাদের দিকে মনোযোগ দেওয়া যাবেনা (তাদের কথা শোনা যাবেনা)।. এটা এজন্য যে, তাদের কথা না শুনলে বা তাদেরকে কোনভাবে সাহায্য-সহযোগিতা না করলে তারা তাদের বিদআত তাদের দেশে নিয়ে ফিরে যাবে, আমাদের আরব দেশগুলোর মাঝে ছড়াতে পারবেনা। এছাড়া তাদের সাথে গিয়ে তাদেরকে শিক্ষা দেওয়াও জায়েজ নয়। এটা ভুল, কারণ তারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করতে চায়না। তারা জ্ঞান অর্জন করতে চায়না কারণ তারা ধোকাবাজ লোক, তাদের বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। তারা এসেছে তোমাদেরকে (সূফীবাদ ও ইলিয়াসি তরীকা) শিক্ষা দেওয়ার জন্য, তারা এজন্য আসেনি যে তোমাদের কাছ থেকে কিছু শিখবে। তারা এসেছে তোমাদেরকে তাদের সূফীবাদ ও তাদের মাযহাব শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তারা তোমাদের কাছে শিখতে আসেনাই, তারা যদি শিখতে আসতো তাহলে তারা আরব দেশের ওলামাদের সাথে মসজিদে বসতো এবং তাদের কাছ থেকে কিতাব অধ্যায়ন করতো। এসব ভুলের মধ্য থেকে এর দ্বারা ধোকায় পড়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নাআম।
তথ্যসূত্রঃ শায়েখের ফতোয়ার ভিডিও দেখুন এই লিংক এ
https://www.youtube.com/watch?v=RsDXXtYsK_U
=============================
>> তাবলীগ জামাতের ভ্রান্ত আকিদার কারণে তাদেরকে ব্যন করে দেওয়া উচিতঃ
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে-শাইখ রাহিমাহুল্লাহর ফতোয়াঃ
আমি (তথ্য মন্ত্রনালয়ের প্রধান) মহোদয়ের নিকট এই প্রতিবেদন পেশ করছি যে, তাবলিগ জামাতের কোনই ফায়দা নেই, এটা একটা বিদআতী এবং পথভ্রষ্ট সংগঠন। তাদের নিসাব গ্রন্থ (ফাযায়েলে আমাল) পড়ে দেখলাম, তাতে গোমরাহী এবং বিদআতে ভরপুর। এতে কবর-মাযার পূজা এবং শিরকের দিকে আহবান করা হয়েছে। বিষয়টি এমনই মারাত্মক যে, এই ব্যাপারে চুপ থাকা যায় না। এজন্য আল্লাহ যদি চান, তাহলে অবশ্যই আমি এর প্রতিবাদ লিপি পাঠাব যেন এর বিভ্রান্তি ও বাতিল প্রকাশ হয়ে পড়ে। আল্লাহর নিকট দুআ করি তিনি যেন তাঁর দ্বীনকে সাহায্য করেন এবং কালিমাকে সুউচ্চে রাখেন। [আমীন]
তারিখঃ ২৯/০১/১৩৮২ হিঃ।   
তথ্য সূত্রঃ ফতওয়া ও চিঠিপত্র, শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে শাইখ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৬৭-২৬৮। [সাবেক গ্রান্ড মুফতী, সৌদী আরব তাঁর রাজকীয় তথ্য মন্ত্রনালয়ের প্রধানকে লেখা পত্র]
=============================
শায়খ হামুদ আত-তুওাইজিরি রাহিমাহুল্লাহ তাঁর কওয়াল আল-বালিগ নামক কিতাবে বলেছেন,
তাবলীগীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই হচ্ছে তাবলীগ ই নিসাব (ফাযায়েলে আমাল নামেও পরিচিত), যেই বইটি তাদের একজন নেতা লিখেছেন যার নাম মুহাম্মাদ যাকারিয়া কান্দলভী। তারা এই বইটাকে এতটাই গুরুত্ব দেয় যেমনটা আহলুস সুন্নাহ সহিহাইন (বুখারী ও মুসলমি) এবং অন্যান্য হাদিসের বইকে গুরুত্ব দেয়। তাবলীগীরা এই বইটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই হিসেবে ভারতীয় এবং অন্যান্য অনারব মানুষের নিকট তুলে দিয়েছে, যারা এই দলটিকে সমর্থন দেয়। এই বইটিতে পরিপূর্ণভাবে রয়েছে শিরক, বিদয়াত, কিচ্ছা-কাহিনী এবং জাল ও দুর্বল হাদিস। আসলে এই বইটি হচ্ছে এমন একটি বই যা মন্দ, পথহারা এবং ফিতনাহ এর সমষ্টি।
=============================
বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ইমাম মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ্‌, যাকে শায়খ ইবনে বাজ এবং শায়খ মুক্ববইল সহ অন্যান্য ওলামারা বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ বলে ফতোয়া দিয়েছেন, তাঁর নিকট প্রশ্ন করা হয়েছিলোঃ
প্রশ্নঃ তাবলীগ জামাত সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? এদের সাথে কোন তালিমে ইলম বা অন্য কেউ আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে বের হতে পারে কি?
উত্তরে শায়খ আলবানি রহঃ বলেনঃ তাবলীগ জামাত আল্লাহর ক্বুরআন এবং রসূলের সুন্নাহর তরীকার উপর প্রতিষ্ঠিত নয় এবং আমাদের সলফে সালিহীনদের পন্থার উপর নয়। অবস্থা যখন এই, তখন তাদের সাথে বের হওয়া জায়েজ হবে না। কেননা এটা আমাদের সালফে সালিহীনদের (সাহাবাদের) তাবলীগের পদ্ধতির পরিপন্থী। দাওয়াতের কাজে বের হবেন আলেম বা বিদ্বান ব্যক্তি। আর এরা যারা বের হচ্ছে, তাদের উপর অবশ্য করণীয় হচ্ছে, প্রথমে নিজের দেশে জ্ঞান শিক্ষা করা, মসজিদে মসজিদে জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা করা, যাতে করে যারা দাওয়াতের কাজ করবে এমন আলেম তৈরী হয়। এ অবস্থায় তালিবে ইলমদের উচিত যেন এদেরকে তাদের দেশেই কুরআন-হাদীস শিক্ষার জন্য আহবান জানায়। মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত তাবলীগীরা কুরআন ও সুন্নাহকে তাদের মূলনীতি হিসাবে গণ্য করে না। বরং তারা এই দাওয়াতকে বিভক্ত করে ফেলেছে। এরা যদিও মুখে বলে যে, তাদের দাওয়াত কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক তা নিছক মুখের কথা, তাবলিগিদের একক কোন আক্বীদা (বিশ্বাস) নেই যা তাদেরকে একত্রিত করতে পারে। এজন্যই দেখা যায় তাবলিগ জামাতের লোকেরা হল সূফী ও মাতুরিদী, আশায়িরীর আর, আশারি-মাতুরিদিরা তো কোন মাযহাবেই নেই। এর কারণ হচ্ছে তাদের আক্বীদাহ বিশ্বাস হচ্ছে জট পাকানো। তাবলিগ জামাতের লোকদের রয়েছে স্বচ্ছ জ্ঞানের অভাব। এদের জামাত প্রতিষ্ঠার প্রায় অর্ধশত বছর পার হয়ে গেল, কিন্তু এত লম্বা সময়ের পরও তাদের মাঝে কোন আলেম তৈরী হলো না। আমরা এজন্যই বলি আগে নিজেরা জ্ঞানার্জন করো, তারপর একত্রিত হও, যেন একত্রিত হওয়া যায় নির্দিষ্ট ভিত্তির উপর, যাতে কোন মতভেদ থাকবে না ।
তাবলিগ জামাত বর্তমান যুগে সূফী মতবাদের ধারক ও বাহক একটি জামাত। এরা মানুষের চরিত্র সংশোধনের দাওয়াত দেয় কিন্তু মানুষের আক্বীদা-বিশ্বাসের সংস্কার ও সংশোধনের জন্য দাওয়াত দেয় না। (শিরক বিদাত মুক্ত) আকিদা সংশোধনের ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। কেননা তাদের ধারণা মতে, মানুষকে সহীহ আকদার দাওয়াত দলে মানুষের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি হবে। জনাব সাআদ আল-হুসাইন ভাই এবং ভারত-পাকিস্তানের তাবলীগ জামাতের মুরব্বীদের মাঝে বেশ কিছু পত্র যোগাযোগ হয়। এর দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাবলিগ জামাতের লোকেরা ওয়াসীলা, উদ্ধারকারী (ইস্তিগাসা) এবং এ ধরনের অনেক  (শিরকি)ধারণাকে সমর্থন করে। প্রত্যেক তাবলীগীকে চারটি তরীকার যেকোন একটী ভিত্তিতে বাইয়াত গ্রহণ করতে হয়। কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন যে, এদের প্রচেষ্টায় অনেক মানুষই আল্লাহর পথে ফিরে এসেছে। বরং, এদের সাথে বের হবার জন্য কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার জন্য কি এটা যথেষ্ট নয়? এ ব্যাপারে আমি বলছি যে, এ ধরণের কথা আমরা অনেক শুনেছি এবং জানি, সূফীদের কাছে থেকে অনেক ঘটনাই জানি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি শাইখের আক্বীদাহ ফাসিদ হয়, হাদীস জানে না বরং লোকজনের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে এতদ্বসত্ত্বেও অনেক ফাসিক লোক তার হাতে তাওবাহ করে। যে দলই ভাল বা কল্যাণের দিকে ডাকবে অবশ্যই তার কিছুনা কিছু অনুসারী পাওয়া যাবেই। কিন্তু আমরা দৃষ্টি দিবো যে, সে কিসের দিকে আহবান করছে? সে কি মানুষকে কুরআন, সুন্নাহ এবং সালফে সালিহীনের আক্বীদার দিকে ডাকছে এবং কোন মাযহাবের ব্যাপারে কোন রকম গোঁড়ামী করে না এবং যেখানেই সুন্নাত পায় সেখান থেকেই তার উপর আমল করে। তাবলীগ জামাতের কোন ইলমী তরীকা বা পন্থা নেই। তাদের পন্থা হল স্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে তার জন্ম হয়েছে। এরা সব রঙেই রঙ্গীন হয়।
উৎসঃ ইমারতী ফতওয়া, শায়খ আলবানী, পৃষ্ঠাঃ ৩৮।
=============================




‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ পালন করা বিদাত

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা বিদাতঃ

কারো জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে ইত্যাদি উপলক্ষে বিশেষ দিবস বা বার্ষিকী উদযাপন করা একটি ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের বিজাতীয় সংকৃতি, আর মুসলমানদের জন্য অমুসলিমদের সংস্কৃতির অনুকরণ করা সম্পূর্ণ হারাম।

খ্রীস্টানরা ঈসা আঃ এর জন্ম উপলক্ষে ক্রিসমাস বা বড়দিন পালন করে। খ্রীস্টানদের দেখাদেখি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মৃত্যুর প্রায় ৪৫০ বছর পরে ইরাকের শিয়ারা মুসলমানদের মাঝে প্রথম রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কথিত জন্মদিন, ১২ই রবিউল আওয়াল উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী নামে বিদাতী একটা অনুষ্ঠান চালু করে। ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশের অল্প শিক্ষিত হুজুরেরা ইরাকের বিভ্রান্ত শিয়াদের দেখাদেখি ঈদে মিলাদুন্নবী নামের এই বিদাতী ঈদ পালন করা আমাদের দেশেও আমদানি করেছে।

মুসলমানদের ঈদ হচ্ছে ঈদুল ফিতুল এবং ঈদুল আযাহ। এর বাইরে ঈদে মিলাদুন্নবী নামে কোন ঈদের কথা ক্বুরান হাদীসের কোথাও নেই, রাসুল সাঃ এই নামে কোন ঈদ আমাদেরকে পালন করতে বলেন নি, তাঁর সাহাবারাও করেন নি। এমনকি ঈদে মিলাদুন্নবী নামে কোন শব্দ ক্বুরান হাদিসে নাই। আমি সেই সমস্ত লোকদেরকে বলছি, যারা শিয়াদের দেখাদেখি ঈদে মিলাদুন্নবী নামে নতুন ঈদ উদযাপন করার পক্ষপাতী, তারা ঈদে মিলাদুন্নবী কথাটা ক্বুরানের কোন একটি আয়াত থেকে অথবা রাসুল সাঃ এর একটি সহীহ হাদীস থেকে বের করে দেখান। আপনারা কেয়ামত পর্যন্ত ঈদে মিলাদুন্নবী নামে কোন কিছু ক্বুরান হাদীস থেকে প্রমান করতে পারবনে না।

দলিল বিহীন, ম্যান মেইড (মানুষের বানানো) মনগড়া কোন ইবাদত আল্লাহ তাআলা কস্মিনকালেও কবুল করেন না। সুতরাং, ঈদে মিলাদুন্নবী নামের বিদাতী ঈদ পালন করা থেকে বিরত থাকুন। বিদাতী আমল আল্লাহ্‌ কবুল করেন না এনিয়ে কিছু হাদীসঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে (দ্বীনের মাঝে) নতুন আবিষ্কার করা বিষয়গুলো। আর প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় হচ্ছে বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হচ্ছে পথভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক পথভ্রষ্টতার পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম।
[সহীহ মুসলিমঃ ১৫৩৫, সুনানে আন-নাসায়ীঃ ১৫৬০, হাদীসের বাক্যগুলো নাসায়ী থেকে নেওয়া]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা, এর কোন অংশ নয়, তবে সেটা মারদুদু বা প্রত্যাখ্যাত হবে।
[সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম]

উল্লেখ্য, রাসুল সাঃ এর জন্ম ১২ই রবিউল আওয়ালে হয়েছিলো এই কথা ক্বুরান হাদীসের কোথাও উল্লেখ করা নেই এবং ঐতিহাসিকভাবে নিশ্চত জানা যায়না রাসুল সাঃ আসলে কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাসুল সাঃ এর জন্ম কোন তারিখে হয়েছিলো, এনিয়ে কয়েকটি তারিখ ও মতামত পাওয়া যায়। এর মাঝে, রাসুল সাঃ এর জন্ম ৯ই রবিউল আওয়াল হয়েছিলো, এই মতটাই ওলামাদের কাছে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী বলে গণ্য, বিস্তারিত জানার জন্য আপনারা আর-রাহিখুল মাখতুম বইটা দেখতে পারেন।

সর্বশেষ, দলিল বিহীন কোন ইবাদত অর্থাৎ বিদাত করলে তার শাস্তিঃ
বিদআত করা সম্পূর্ণ হারাম। বিদআতের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। বিদআত করলে ইবাদাত কবুল হয় না। বিদআতের শেষ পরিণাম জাহান্নাম। বিদআত করলে কিয়ামতের দিন যখন সূর্য মাথা অতি নিকটে থাকবে তখন সকলে তৃষ্ণায় পানি পান করতে চাইবে, আর তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার উম্মতকে হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করাবেন। কিন্তু আফসোস বিদআতিরা সেই দিন পানি পান করতে পারবে না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ
আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে , আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন : তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত । তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো : দূর হয়ে যা , দূর হয়ে যা।
[সহীহ মুসলিমঃ ৪২৪৩]

এর চেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে? তাই মিলাদ খাওয়া আর মিলাদ পড়া ভাইয়েরা সাবধান। হাউজে কাউসারের মিষ্টি পানি থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে বিদাতী মিলাদের অনুষ্ঠান সহ যাবতীয় বিদাতী আকিদাহ ও আমল বর্জন করুন।

মিলাদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আপনারা শায়খ মতিউর রহমান মাদানী হাফিজাহুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ এই লেকচারটা অবশ্যই দেখবেন


https://www.youtube.com/watch?v=28gMWYW3-kQ

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

জোরে আমিন বলা

আহমদ শফী সাহেব কোন আল্লামাহ নয়, একজন জাহেল আল-মুরাক্কাবঃ

দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারী, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হানাফী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আহমাদ শফী সাহেব তার এক ওয়াজে বলেন,

“জোরে আমিন বলা নতুন একটা ফেতনা।”

তার বক্তব্যের লিংক –
https://www.youtube.com/watch?v=UmWYo2WouJ4&feature=youtu.be

এ কারণে তিনি সালফীদেরকে মসজিদে মসজিদ জোরে আমিন বলতে নিষেধ করেন। তাঁর দেখাদেখি সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মসজিদের হানাফী মুকাল্লিদ (অন্ধ অনুসারী) ইমামরাও আমিন জোরে বলা যাবেনা বলে ফতুয়া(!) দিচ্ছেন।
এতে নাকি ফেতনা হবে, ভয় পেয়ে হানাফীদের নামায ভংগ হয়ে যাবে ইত্যাদি...

- এই হচ্ছে মাযহাব নাম দিয়ে সহীহ হাদিসকে উপেক্ষা করে উম্মতকে ভাগ করার পরিণাম। মুখে বলবে ৪ মাযহাব হক্ক, কিন্তু অন্য মাযহাবের আমল দেখলে হিংসায় জ্বলে-পুড়ে মরবে। তাকিলিদ এর পক্ষে তর্ক করার সময় সবাই সমান, কিন্তু বাস্তবে আমাদের মাযহাব ছাড়া অন্য সব ভুল - এই অহংকারে ভুগবে। সহীহ হাদীস মেনে তাদের বুজুর্গদের অন্ধ অনুকরণ না করলেই ফেতনা!!

শফী সাহেবের মতো জ্ঞানপাপী, বিভ্রান্ত লোকেরা যদি জাতির রাহবার হিসেবে চেপে বসে, তাহলে সেই জাতির জন্য অকল্যান বৈ কল্যান কোন কিছু নেই, ৫ই মের ঘটনা দিয়ে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা তার প্রমান ইতিমধ্যেই পেয়েছেন।

সবচাইতে হাস্যকর ব্যপার হচ্ছে, এইরকম জাহেল আল-মুরাক্কাবকে জিহাদী(!) আলেম বলে ভুল করে ২০-২২ বছরের কি-বোর্ড মুজাহিদরা আল্লামাহ(!) বলতে অজ্ঞান।

বিদ্রঃ কারো আমিন জোরে বা আস্তে বলার হাদীসগুলোর তাহকীক জানার আগ্রহ থাকলে ইনবক্স করুন।
বিষয়ঃ নামায ও মাযহাব।
১. নামাযে আমিন আস্তে বলতে হবে, নাকি জোরে বলতে হবে?
২. তিরমিযি শরীফের এক হাদিসে বলা হয়েছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আমিন আস্তে বলতেন, অন্য হাদিসে বলা হয়েছে জোরে বলতেন। কোনটা সহীহ আর কোনটা জয়ীফ? কোন হাদীসটা মানবো?
. ইমাম আবু হানীফার মতে আমিন আস্তে বলতে হবে। ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ ও ইমাম ইসহাক ইবনে রাওয়াহ এর মতে জোরে বলতে হবে। কার কথা সঠিক?  

প্রাসংগিক কিছু কথাঃ দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারী, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হানাফী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আহমাদ শফী সাহেব সম্প্রতি তার এক ওয়াজে বলেন, “জোরে আমিন বলা নতুন একটা ফেতনা।”
তার বক্তব্যের লিংক –
https://www.youtube.com/watch?v=UmWYo2WouJ4&feature=youtu.be

একারণে তিনি মসজিদে জোরে আমিন বলতে নিষেধ করেন। তাঁর দেখাদেখি সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মসজিদের হানাফী মুকাল্লিদ (অন্ধ অনুসারী) ইমামরাও আমিন জোরে বলা যাবেনা বলে ফতুয়া(!) দিচ্ছেন। এতে নাকি ফেতনা হবে, হানাফীদের নামায ভংগ হয়ে যাবে ইত্যাদি...

উত্তরঃ সুরা ফাতেহার শেষে নামাযে আমিন বলা সুন্নত, এ ব্যপারে সকলেই একমত। কিন্তু যেই নামাযে ক্বিরাত উচ্চস্বরে পড়া হয় (মাগরিব, ইশা ও ফযরের ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাত), তখন আমিন আস্তে বলতে হবে নাকি জোরে বলতে হবে এই ব্যপারে দুইটি মত পাওয়া যায়।
. ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) ও তাঁর অনুসারীদের মতে, আমিন আস্তে বলা সুন্নত।

. ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক ইবনে রাওয়াহ, ইমাম বুখারী, ইমাম তিরমিযী, ইমাম নাসায়ী, ইমাম ইবনে খুজায়মা, সহ অন্য ইমামদের মতে আমিন জোরে বলাই সুন্নত।

এ ব্যপারে তারা কিছু হাদীস পেশ করে থাকে, যেই হাদীসগুলো আসলে সহীহ নয়। বরং আমিন জোরে বলার হাদীসগুলো সহীহ। একারণে

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামযে আমিন জোরে বলেছেন। এনিয়ে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। যেমন –

১. ওয়াইল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) “ওয়ালাদ্দল্লীনপাঠ করার পরআমীনজোরে বলতেন
ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ (কিতাবুস স্বলাত) হাদিস নং- ৯৩২।
হাদীসটির সনদের মানঃ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) এই হাদীসের সনদকে ‘সহীহ’ বলেছেন, দেখুন – তার রচিত কিতাব আত-তালখীসুল হাবীরঃ ১/২৩৬, আল্লামাহ শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী (রহঃ) ও এই হাদীসের সনদকে ‘সহীহ’ বলেছেন। হাদীসটির মূল আরবী পাঠঃ

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ سَلَمَةَ، عَنْ حُجْرٍ أَبِي الْعَنْبَسِ الْحَضْرَمِيِّ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَرَأَ ‏{‏ وَلاَ الضَّالِّينَ ‏}‏ قَالَ ‏ "‏ آمِينَ ‏"‏ ‏.‏ وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهُ

. ওয়াইল ইবন হুজর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে “গায়রিল মাগদ্বুবি আ’লাইহিম ওয়ালাদ্বোয়াল্লি-ন” পাঠ করার পর আমীন বলতে শুনেছি। এ সময় তিনি তা (আমিন) দীর্ঘস্বরে পাঠ করেছেন।”
দেখুনঃ আত্-তিরমিজি, অধ্যায় ২ (সালাত অধ্যায়), হাদিস নং- ২৪৮।
হাদীসটির সনদের মানঃ ইমাম তিরমিযী রাহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন। ইমাম দারা কুতনী এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন দারা কুতনীঃ (১/৩৩৪)।
ইমাম বাগাভী এইহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, শরাহুস সুনাহঃ ৫৮৬।
এই হাদীসের অনেক শাহেদ থাকায় শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে ‘সহীহ’ সাব্যস্ত করেছেন।
হাদীসটির মূল আরবী পাঠঃ

قَالَ وَفِي الْبَاب عَنْ عَلِيٍّ وَأَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ وَبِهِ يَقُولُ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالتَّابِعِينَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ يَرَوْنَ أَنَّ الرَّجُلَ يَرْفَعُ صَوْتَهُ بِالتَّأْمِينِ وَلَا يُخْفِيهَا وَبِهِ يَقُولُ الشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَقُ وَرَوَى شُعْبَةُ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ عَنْ حُجْرٍ أَبِي الْعَنْبَسِ عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ
{ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ }
فَقَالَ آمِينَ وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ قَالَ أَبُو عِيسَى و سَمِعْت مُحَمَّدًا يَقُولُ حَدِيثُ سُفْيَانَ أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ شُعْبَةَ فِي هَذَا وَأَخْطَأَ شُعْبَةُ فِي مَوَاضِعَ مِنْ هَذَا الْحَدِيثِ فَقَالَ عَنْ حُجْرٍ أَبِي الْعَنْبَسِ وَإِنَّمَا هُوَ حُجْرُ بْنُ عَنْبَسٍ وَيُكْنَى أَبَا السَّكَنِ وَزَادَ فِيهِ عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ وَلَيْسَ فِيهِ عَنْ عَلْقَمَةَ وَإِنَّمَا هُوَ عَنْ حُجْرِ بْنِ عَنْبَسٍ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ وَقَالَ وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ وَإِنَّمَا هُوَ وَمَدَّ بِهَا صَوْتَهُ قَالَ أَبُو عِيسَى وَسَأَلْتُ أَبَا زُرْعَةَ عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ فَقَالَ حَدِيثُ سُفْيَانَ فِي هَذَا أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ شُعْبَةَ قَالَ وَرَوَى الْعَلَاءُ بْنُ صَالِحٍ الْأَسَدِيُّ عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ نَحْوَ رِوَايَةِ سُفْيَانَ

জোরে আমিন বলা নিয়ে ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, “এ বিষয়ে (আমিন জোরে বলার উপরে) আলী ও আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে।”
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) আরো বলেছেন, “ওয়াইল ইবন হুজর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এই হাদীসটি হাসান ও সহীহ। একাধিক সাহাবী, তাবিঈ ও পরবর্তী যুগের আলিম (আমিন জোরে বলতে হবে) এই মত ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেন আমিন নীরবে না বলে উচ্চস্বরেই বলতে হবে।”
ইমামদের মাঝে ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমদ ও ইমাম ইসহাক (রহঃ) এর অভমত এ-ই।
দেখুনঃ আত্-তিরমিজি, অধ্যায় ২ (সালাত অধ্যায়), হাদিস নং- ২৪৮।

. আতা ইবনে আবি রাবাহ (রহঃ) বলেন, “আমি মসজিদুল হারামে ২০০ জন সাহাবায়ে ইকরাম (রাঃ) কে পেয়েছি, যখন “ওয়ালা দ্বোয়াল্লিন” বলা হতো তখন সকলেই “আমিন” জোরে বলতেন।”
বায়হাকীঃ ২/৫৯।

আমিন জোরে বলা নিয়ে আলেমদের ও বিভিন্ন মাযাহবের অবস্থানঃ
. শাফেয়ী মাযহাবঃ “জেহরী নামাযে আমিন জোরে বলা মোস্তাহাব”
শাফেয়ী মাযহাবের বিখ্যাত আলেম, ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “যদি নামায এমন হয়ে থাকে যে, যেই নামাযে ক্বিরাত চুপিচুপি পড়া হয়, তাহলে ক্বিরাতের অনুযায়ী ইমাম ও মুক্তাদির উচিৎ সেই নামাযগুলোতে আমিন আস্তে বলা। আর যদি নামায এমন হয়ে থাকে যেখানে ক্বিরাত উচ্চস্বরে পড়া হয়, তাহলে মুসল্লিদের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে আমিন উচ্চস্বরে বলা। এই ব্যপারে কোন মতপার্থক্য নেই।” 
আল-মাজমু ৩/৩৭১।

. হাম্বালি মাযহাবঃ “জেহরী আমিন জোরে বলা সুন্নত”
ইমাম ইবনে কুদামাহ রাহিমাহুল্লাহ তাঁর বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব ‘আল-মুগনি’ তে উল্লেখ করেছেন, “ইমাম ও মুক্তাদীদের জন্য সুন্নত হচ্ছে যখন ক্বিরাত উচ্চস্বরে পড়া হয় তখন আমিন উচ্চস্বরে বলা, এবং যখন ক্বিরাত নিচু স্বরে পড়া হয়, তখন আমিন নিচুস্বরে বলা।”
আল-মুগনীঃ ২/১৬২।

. হানাফী মাযহাবঃ “জেহরী, সিররি সকল নামাযে আমিন আস্তে বলা সুন্নত”
হানাফী ফুকাহারা আমিন আস্তে বলার দলিল হিসেবে কিছু হাদীস পেশ করে থাকে। সেই হাদীসগুলো এবং তার সনদের অবস্থা নিচে বর্ণনা করা হলো।

১. শুবা (রহঃ) এই হাদীছটি সালামা ইবন কুহায়ল, হুজর আবুল আব্বাস, আলকামা ইবন ওয়াইল, সে তাঁর পিতা ওয়াইল রাদিয়াল্লাহু আনহ এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল “গায়রিল মাগদ্বুবি আ’লাইহিম ওয়ালাদ্বোয়াল্লি-ন” পাঠের পর আমীন আস্তে বলেছেন.”

এই হাদীসটি (তিরমিযীঃ হা/২৪৯) একই সাহাবী থেকে বর্ণিত পূর্বের ((তিরমিযীঃ হা/২৪৮) হাদীসের বিপরীত। সুতরাং, হয় এই হাদীসটির সনদটি সহীহ, পূর্বের সনদটি জয়ীফ/জাল। অথবা পূর্বের সনদটি সহীহ, এই সনদটি জাল/জয়ীফ। রাসুল সাঃ এর কথা বা হাদীস সহীহ বা দুর্বল হয়না, রসুলের সব কথাই মানতে হবে। কিন্তু রাসুল সাঃ থেকে হাদীসটি আমাদের পর্যন্ত পৌছাতে যেই রাবী বা মানুষগুলো ছিলেন – তারা কতটুকু সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ন ও নির্ভরযোগ্য ছিলেন তাঁর উপরে ভিত্তি করে হাদীস সহীহ (হাদীসটি নিশ্চিতভাবে রাসুল সাঃ এর কথা বলে প্রমানিত), জয়ীফ (হাদীসটি সন্দেহপূর্ণ, অর্থাৎ এই কথাটি রাসুল সাঃ আসলেই বলেছিলেন কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়না, ৫০-৫০ অবস্থা) অথবা জাল (এটা কোন হাদীস বা রাসুল সাঃ এর কথা নয়, মিথ্যুক লোকেরা রাসুল সাঃ নামে এই কথা প্রচার করেছে)।

যাইহোক, আমিন আস্তে বলতে হবে, এই (২৪৯ নাম্বার হাদীস যেখানে রাসুল সাঃ আমিন আস্তে বলতেন বলা হয়েছে) হাদীসের নিচে ইমাম তিরমিযী নিজেই মন্তব্য লিখেছেন,
“আমি মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল (তাঁর উস্তাদ, যিনি ইমাম বুখরী নামে বেশি পরিচিত) তাঁকে বলতে শুনেছি যে, এই বিষয়ে সুফইয়ান (রহঃ) বর্ণিত রিওয়ায়াতটি (২৪৮ নং) শুবার রিওয়ায়াতটি (২৪৯ নং) থেকে অধিকতর সহীহ। শুবা এই রিওয়ায়াতটির একধিক স্থানে ভুল করেছেন।
ক. তিনি সনদে হুজর আবুল আম্বাস এর কথা বলেছেন অথচ তিনি হলেন হুজর ইবনুল আম্বাস, তাঁর উপনাম হল আবুস সাকান;
খ. আলকামা ইবন ওয়াইলেন নাম অতিরিক্ত উল্লেখ করেছেন অথচ এই সনদে আলকামার উল্লেখ হবে না; প্রকৃত সনদটি হল, হুজর ইবন আম্বাস ওয়াইল ইবন হুজর রাদিয়াল্লাহু আনহু,
গ. তাঁর বণনায় আছে। خفض بها صوته রাসূল নিম্নস্বরে আমীন পাঠ করেছেন অথচ প্রকৃত কথা হল مد بها صوته তিনি উচ্চস্বরে তা পাঠ করেছেন।

ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) আরো বলেনঃ “আমি ইমাম আবূ যুরআকেও এই হাদিসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছেন, সুফইয়ানের রিওয়ায়াতটিই অধিক সহীহ।”

আলা ইবন সালিহ আল আসাদীও সালামা ইবন কুহায়লেন সূত্রে এই হাদীছটি সুফইয়ানের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

قَالَ أَبُو عِيسَى حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ أَبَانَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ حَدَّثَنَا الْعَلَاءُ بْنُ صَالِحٍ الْأَسَدِيُّ عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ عَنْ حُجْرِ بْنِ عَنْبَسٍ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوَ حَدِيثِ سُفْيَانَ عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ

ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী রহ.বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবন আবান আবদুল্লাহ ইবন নুমায়র আলা ইবন সালিহ আল আসাদী ইবন কুহায়ল হুজর ইবন আম্বাস ওয়ালি ইবন হুজর সূত্রে সুফইয়ানের অনুরূপ এই হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, ইমাম তিরমিযী আমিন আস্তে বলার হাদীস উল্লেখ করে এই হাদীসকে ইমাম বুখারী ও ইমাম যুরআ’হ যে সহীহ নয় এবং কেন সহীহ নয় সেটাও উল্লেখ করে দিয়েছেন।

.