সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০১৪

মুনাজাত কিভাবে করতে হবে?



মুনাজাত কিভাবে করতে হবে?

মুনাজাত করার আদব হচ্ছে -

১. যেকোন সময় মুনাজাত করা যায়, দিনে রাতে, দাঁড়ানো, শুয়ে-বসে, ওযু ছাড়া বা ওযু করে। এমনকি গোসল ফরয এমন অবস্থায় বা নারীদের ঋতু অবস্থাতেও দুয়া করতে পারবেন। তবে ফরয নামাযের পরপরই মুনাজাত করবেন না। আগে কিছু সুন্নতী যিকির করে এর পরে ইচ্ছা হলে একাকী মুনাজাত করতে পারেন। অথবা ফরয, সুন্নত সব নামায শেষ করে এর পরে মুনাজাত করবেন। উল্লেখ্য, অনেক মনে করেনঃ নামাযের পরে মুনাজাত করতেই হবে। এটা ঠিকনা, নামাযের পরে আপনার ইচ্ছা হলে মুনাজাত করবেন, না হলে করবেন না আপনার ইচ্ছা। মুনাজাত করা নামাযের অংশ না। সালাম ফেরানোর মাধ্যমেই নামায শেষ হয়ে যায়।

২. ওযু অবস্থায় পশ্চিম দিকে ফিরে দুয়া করা মুস্তাহাব বা উত্তম। তবে এটা জরুরী নয়, ওযু ছাড়া অন্য দিকে ফিরেও মুনাজাত করা যাবে।

৩. মুনাজাতে দুই হাত তোলা মোস্তাহাব, আল্লাহ এটা পছন্দ করে যে মানুষ ভিক্ষুকের মতো তাঁর দরবারে বিনীতভাবে হাত তুলে দুয়া করবে। এইভাবে দুয়া করলে সেটা আল্লাহ কবুল করে নেন।
সালমান আল-ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

তোমাদের রব লজ্জাশীল ও দানশীল।। তাঁর বান্দা যখন তাঁর নিকট দুই হাত তুলে প্রার্থনা করে, তখন তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।
মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, বুলুগুল মারামঃ ১৫৮১।

৪. মুনাজাত করতে হবে বিনীত ভাবে, নিচু স্বরে, মন দৃঢ় আশা নিয়ে যে আল্লাহ সব কিছু করতে পারেন আর তিনি অবশ্যই আমার দুয়া কবুল করবেন। আমি এতো পাপী আল্লাহ কবুল করেন কিনা এইরকম সন্দেহ থাকলে বা আল্লাহ কবুল করবেন না, আমাকে ক্ষমা করবেন না আল্লাহ সম্পর্কে এমন খারাপ ধারণা নিয়ে দুয়া করলে আল্লাহ সেই দুয়া কবুল করেন না। বান্দা যতই পাপী হোক সে আন্তরিক তোওবা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের আশা রেখেই দুয়া করবে, বিপদ যত বড়ই হোক আল্লাহ সব ইচ্ছা পূরণ করতে পারেন এই আশা নিয়েই দুয়া করতে হবে। আর যে দুয়া করা হচ্ছে সেইদিকে মনোযোগ রেখে বুঝে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। উদাসীন হয়ে অন্তর থেকে না চেয়ে শুধু মুখে উচ্চারণ করে গেলে বা আন্তরিক দুয়া নাকরে দেখানো দুয়া করলে আল্লাহ সেই দুয়া কবুল করেন না। কান্নাকাটি করে বিনীতভাবে দুয়া করলে আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হন।

৫. মুনাজাতের প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে শুরু করতে হবে। এই বলে প্রশংসা করা যেতে পারে

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَواتُ، وَالطَّيِّباتُ

উচ্চারণঃ আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্‌সালাওয়া-তু ওয়াত্তায়্যিবা-তু।
অর্থঃ সমস্ত অভিবাদন, সকল সালাত ও পবিত্র কাজ একমাত্র আল্লাহ্‌র জন্য।
অথবা এটা বলে আল্লাহর প্রশংসা করা যাবে

الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ

উচ্চারণঃ আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহি।
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যে প্রশংসা পবিত্রতা ও বরকতপূর্ণ।
অথবা এটা বলে আল্লাহর প্রশংসা করা যাবে

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।
***এইরকম যেকোন এক বা একাধিক, বা এইরকম আল্লাহর জন্য প্রশংসামূলক অন্যবাক্য বলা যাবে।

৬. আল্লাহর প্রশংসার পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দুরুদ পড়তে হবে। ছোট বড় যেকোন দুরুদ পড়া যাবে আপনার যেটা ভালো লাগে। সর্বোত্তম দুরুদ হচ্ছে দুরুদে ইব্রাহীম, যেটা আমরা নামাযে পড়ি। এটা না পড়ে ছোট অন্য দুরুদও পড়া যাবে। যেমন

اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبَيِّنَا مُحَمَّدٍ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ এর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।
সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ১/২৭৩

একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখলেন এক ব্যক্তি দুআ করছে কিন্তু সে দুআতে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসুলের প্রতি দরূদ পাঠ করেনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, সে তাড়াহুড়ো করেছে। অতঃপর সে আবার প্রার্থনা করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে অথবা অন্যকে বললেন, যখন তোমাদের কেউ দুআ করে তখন সে যেন প্রথমে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তার গুণগান দিয়ে দুআ শুরু করে। অতঃপর রাসুলের প্রতি দুরুদ পাঠ করে। এরপর তার যা ইচ্ছা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে।” 
আবু দাউদঃ ১৪৮১, তিরমিজীঃ ৩৪৭৭, শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহ। 

৭. এর পরে নিজের পছন্দমতো নিজের জন্য বা অন্যের জন্য, দুনিয়া বা আখেরাতের যেকোন কল্যানের জন্য দুয়া করতে হবে। সবচাইতে কম কথায় সবচাইতে বেশি প্রার্থনা করার এই দুয়াটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বেশি বেশি করতেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অধিকাংশ দোআ হতঃ

اَللهم آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও-ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাও ওয়া-ক্বিনা আযাবান্নার।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ দাও এবং পরকালে জীবনেও কল্যাণ দান করো। আর আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও।

বিঃদ্রঃ আল্লাহুম্মা আতিনা...অথবা রাব্বানা আতিনা...এই দুইভাবেই পড়া যায়।
সহীহ মুসলিমের অন্য হাদীসে আছে, “আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন একটি দোআ করার ইচ্ছা করতেন, তখন ঐ দোআ করতেন। আবার যখন (বিভিন্ন) দোআ করার ইচ্ছা করতেন, তখন তার মাঝেও ঐ দোআ করতেন
সহীহুল বুখারী ৪৫২২, মুসলিম ২৬৮৮, তিরমিযী ৩৪৮৩, আবূ দাউদ ১৫১৯, আহমাদ ১১৫৭০।

এছাড়া জীবিত বা মৃত পিতা মাতার জন্য এই দুয়া বেশি করতে হবেঃ

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

উচ্চারণঃ রাব্বির হাম-হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার পিতা-মাতার প্রতি তেমনি দয়া করো যেইরকম দয়া তারা আমাকে শিশু অবস্থায় করেছিল।


৮. দুয়া করে আমিন অথবা আমিন ইয়া রাব্বাল আলামীন বলবেন। দুয়া শেষ মুখে হাত মোছা বা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা, এইগুলো সহীহ হাদীসে নাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কাজগুলো করতেন এটা বিশুদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমানিত হয়নি। তাই এইগুলো করবেন না। আমিন বলে হাত নামিয়ে ফেলবেন।

এপ্রিল ফুল - পহেলা এপ্রিল



পহেলা এপ্রিল
আ.স.ম শোআইব আহমাদ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লী আলা রাসূলিহীল কারীম। আম্মা বাদ,
এপ্রিল মাসে আমাদের দেশে দুটি দিবস পালন করা হয়ে থাকে। পহেলা এপ্রিল এবং পহেলা বৈশাখ বা ১৪ই এপ্রিল। পহেলা এপ্রিল বাংলায় ‘‘এপ্রিল ফুল’’ নামে পরিচিত। এখানে ফুল অর্থ ইংরেজী ফুল অর্থা বোকা, হাবা বা নির্বোধ। ইংরেজিতে বলা হয়ঃ
April Fools’ Day or All Fools' Day. এদিনে ‘‘প্র্যাকটিক্যাল জোক’’ বা বাস্তব বা ব্যবহারিক তামাশার নামে একে অপরকে মিথ্যা বলে ঠকানো হয়ে থাকে। এ উপলক্ষ্যে পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে নানা রকম উসবের ব্যবস্থা করা হয়।
এপ্রিল ফুলের রহস্য বুঝতে আমাদের মানব ইতিহাসের কয়েকটি তথ্য জানতে হবে।

আদম আলাইহিস সালাম-এর মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে মানব জাতির পথ চলা শুরু। তাঁর সন্তানেরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পরবর্তী প্রথম রাসূল ছিলেন নূহ আলাইহিস সালাম। নূহ আলাইহিস সালাম-এর প্লাবনের পর তাঁর সন্তানেরা ক্রমান্বয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তাঁর তিন ছেলের নাম ‘‘হাম’’, ‘‘সাম’’ ‘‘ইয়াফিস’’।. হামের বংশধরগণ ক্রমান্বয়ে আফ্রিকায় চলে যান। সামের বংশধরগণ মূলত মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করেন এবং কেউ কেউ পার্শবতী দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়েন। ভারতের দ্রাবিড়গণও তাদেরই বংশধর বলে বুঝা যায়। ইয়াফেসের বংশধরগণ অনেকে ইরানে বসবাস করেন। আরেক দল আর্য’’ নামে ভারতে আসেন এবং আরেক দল ইউরোপে চলে যান। এজন্য ইউরোপ, ভারতের আর্য ও প্রাচীন ইরানের ভাষা, কৃষ্টি ও ধর্মের মধ্যে অনেক অনেক মিল পাওয়া যায়। তার একটি দিক হলো পহেলা এপ্রিল।
বসন্তের শেষে ভারতে হিন্দুরা হোলি উসর পালন করেন। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুসারে ভগবান বিষ্ণুর অবতার বা মানবরূপ শ্রীকৃষ্ণের সাথে গোপিনীদের লীলাখেলার স্মৃতিপালন ও উদযাপনে তারা এ উসব করেন। এ হোলি উসবেরই প্রাচীন ইউরোপীয় রূপ ছিল প্রাচীন রোমান ধর্মের হিলারিয়া (Hilaria) সব। এ উপলক্ষ্যে নানারকম অশ্লীল, অশালীন আনন্দ উসব প্রচলিত ছিল ইউরোপে।

ইউরোপে খৃস্টধর্ম আগমনের পরে ‘‘ভিন্নমতের’’ কারণে লক্ষ লক্ষ খৃস্টান, ইয়াহূদী ও মুসলিমকে হত্যা ও আগুনে পোড়ানো হলেও, খৃস্টান পোপ-পাদরিগণ ধর্মকে সহজ করার নামে সকল প্রকার পাপাচার প্রশ্রয় দিয়েছেন। এ কারণে খৃস্টান ইউরোপে এপ্রিল ফুল দিবস নামে হিলারিয়া বা হোলি উসবের বিভিন্ন প্রকারের পাপাচার, মিথ্যাচার ও অশ্লীলতা প্রশ্রয় দেওয়া হয়। এমন একটি মহাপাপ, মিথ্যাচার ও বর্বরতা ছিল স্পেনের মুসলিমদের সাথে খৃস্টানগণের ‘‘এপ্রিল ফুল’’

স্পেনের অত্যাচারিত মানুষদের আহবানে সাড়া দিয়ে মুসলিম বাহিনী ৯২ হিজরী মুতাবেক ৭১১ খৃস্টাব্দে স্পেনে প্রবেশ করে। মুসলিমগণই ইউরোপের মানুষদেরকে জ্ঞানবিজ্ঞান শিক্ষা দেন। মুসলিম স্পেনের গ্রানাডা, কর্ডোভা ও অন্যান্য শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পড়তে আসত। প্রায় আট শত বসর মুসলিমগণ স্পেন শাসন করেন। শেষ দিকে তাদের মধ্যে আভ্যন্তরীন কোন্দল ছড়িয়ে পড়ে। ফলে খৃস্টানগণ ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন অঞ্চল মুসলিমদের থেকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। ৮৯৮ হিজরী মুতাবেক ১৪৯৩ খৃস্টাব্দে রাজা ফার্দিনান্দ ও রানী ইযাবেলার যৌথ খৃস্টান বাহিনী মুসলিমদের শেষ রাজধানী গ্রানাডা দখল করতে সক্ষম হয়। তারা এ সময়ে ‘‘এপ্রিল ফুল’’ নামে মুসলিমদের প্রতারণা করে তাদের মধ্যে গণহত্যা চালাতে সক্ষম হয়।

বিশ্বের যে কোনো ঐতিহাসিকের বই পড়ে দেখুন, ৮০০ বসরের শাসনামলে মুসলিমগণ কখনোই খৃস্টানদেরকে ধর্মান্তরিত করতে চেষ্টা করেন নি বা দেশ থেকে বের করে দেন নি। ইয়াহূদী-খৃস্টানগণ মুসলিম শাসনামলে সর্বোচ্চ নাগরিক অধীকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করেছেন। কিন্তু মুসলিমদের পরাজিত করার পরে পাদরীগণের নেতৃত্বে খৃস্টানগণ মুসলিমদের উপর যে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছেন তার কোনো নযির বিশ্বের ইতিহাসে পাবেন না। লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে মসজিদে আটকে আগুনে পুড়িয়ে, পাহাড় থেকে ফেলে, সমূদ্রের মধ্যে জাহাজ ডুবিয়ে ও গণজবাই অনুষ্ঠানে জবাই করে হত্যা করা হয়। অনেককে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়। এরপরও প্রায় একশত বসর পরে ১৬০৯ খৃস্টাব্দের ৪ আগস্ট প্রায় ৫০ লক্ষ মুসলিমকে স্পেন থেকে বিতাড়িত করা হয়। কার্ডিনাল বা খৃস্টান ধর্মগুরুর আদেশে জ্ঞানবিজ্ঞানের মূল সূত্র লক্ষ লক্ষ আরবী পুস্তক পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।

শুধু মুসলিমগণ নয়, ইয়াহূদীদের উপরও খৃস্টানগণ একইরূপ অত্যাচার করে। অনেককে জোর করে খৃস্টান বানায়। অধিকাংশকে স্পেন থেকে বিতাড়িত করে। বিতাড়িত ইয়াহূদীরা ইউরোপের কোনো দেশে ঠাই না পেয়ে মুসলিম তুরস্কে এসে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। জুইশ এনসাইক্লোপিডিয়া ও অন্যান্য সকল এনসাইক্লোপিডিয়া ও ইতিহাস গ্রন্থে আপনারা এ সকল তথ্য দেখতে পাবেন।

এ হলো খৃস্টানদের এপ্রিল ফুলের ইতিহাস। যদি ইসলামে প্র্যাকটিক্যাল জোক নামে বা আনন্দ উল্লাসের নামে মিথ্যা বলার অনুমতি থাকত তাহলেও এ দিনে কোনো মুসলিম আনন্দ করতে পারতেন না। কারণ প্রথমত তা প্যগান বা মুর্তিপূজকদের ধর্মীয় উসবের অংশ ও অনুকরণ। দ্বিতীয়ত এ দিবসটি মুসলিমদের জন্য দুঃখের ও প্রতিবাদের দিন, আনন্দের নয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, হাসি-মস্করার নামে মিথ্যা বলা ইসলামে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম।
মিথ্যা ইসলামে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হারাম গোনাহগুলির অন্যতম। মিথ্যা বলা মুনাফিকের অন্যতম চিহ্ন। মিথ্যা সর্বাবস্থায় হারাম। সবচেয়ে জঘন্যতম মিথ্যা হলো আল্লাহ বা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে, হাদীসের নামে বা ধর্মের নামে মিথ্যা বলা। এরপর জঘন্য মিথ্যা হলো মিথ্যার মাধ্যমে কোনো মানুষের অধিকার নষ্ট করা, সম্পদ দখল করা বা মিথ্যা কথা বলে কিছু বিক্রয় করা। বিভিন্ন হাদীসে এরূপ কর্মের জন্য কঠিন অভিশাপ ও কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
ইসলামে হাসি-মস্করা, আনন্দ ও বিনোদনকে উসাহ দেওয়া হয়েছে। কিন্ত সে জন্য মিথ্যা বলা বৈধ করা হয় নি। রাসূলুল্লাহ নিজে হাঁসি-মস্করা করতেন, কিন্তু মিথ্যা পরিহার করতেন। এক বৃদ্ধাকে বলেন, কোনো বুড়ো মানুষ তো জান্নাতে যাবে না। এতে বেচারী কান্নাকাটি শুরু করে। তখন তিনি বলেন, বুড়োবুড়িকে আল্লাহ জোয়ান বানিয়ে জান্নাতে দিবেন। অপর একব্যক্তি তাঁর কাছে এসে সফরের জন্য একটি উট চান। তিনি বলেন, তোমাকে আমি একটি উটনীর বাচ্চা দিব। লোকটি হতাশ হয়ে বলে, বাচ্চাতে আমার কি হবে? তিনি বলেন, সকল উটই তো উটনীর বাচ্চা। এরূপ অনেক ঘটনা হাদীসে রয়েছে। সাহাবীগণও হাসি-মস্করা করতেন, তবে মিথ্যা বর্জন করতেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‘‘যে ব্যক্তি মানুষ হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস!’’ অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘‘যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বর্জন করে, মস্করা বা কৌতুক করতেও মিথ্যা বলে না, তার জন্য জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ির জন্য আমি দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।’’
মস্করা বা কৌতুকচ্ছলে কাউকে ভয় পাইয়ে দেওয়াও জায়েয নয়। এক সফরে সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ -এর সাথে ছিলেন। একজন সাহাবী ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তখন অন্য একজন গিয়ে তার রশিটি নিয়ে আসেন। এতে ঘুমন্ত ব্যক্তি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠে পড়েন। তার ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থা দেখে সাহাবীগণ হেসে উঠেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা হাসছ কেন? তারা ঘটনাটি বললে তিনি বলেন:
‘‘কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে, সে অন্য মুসলিমকে ভয় পাইয়ে দিবে।’’

আমরা অনেক সময় কৌতুকভরে বা ভুলানোর জন্য শিশুদের সাথে মিথ্যা বলি। অথচ এরূপ মিথ্যাও মিথ্যা এবং গোনহের কাজ। শুধু তাই নয়, এরূপ মিথ্যার মাধ্যমে আমরা শিশুদেরকে মিথ্যায় অভ্যস্ত করে তুলি এবং মিথ্যার প্রতি তাদের ঘৃণা ও আপত্তি নষ্ট করে দিই। কিশোর সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমির বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ আমাদের বাড়িতে বসা ছিলেন, এমতাবস্থায় আমার মা আমাকে ডেকে বলেন, এস তোমাকে একটি জিনিস দিব। রাসূলুল্লাহ বলেন, তুমি তাকে কি দিতে চাও? তিনি বলেন: আমি তাকে একটি খেজুর দিতে চাই।
রাসূলুল্লাহ বলেন:
‘‘তুমি যদি তাকে কিছু না দিতে তবে তোমার নামে একটি মিথ্যার গোনাহ লেখা হতো।’’
নিজের সাথে নিজে মিথ্যা বলাও বৈধ নয়। আর এজন্যই কেউ যদি নিজের মনে শুধু নিজের জন্যই কোনো বিষয়ের কসম করে যে, আমি অমুক কাজটি করব বা করব না, কিন্তু পরে তার ব্যক্তিগত কসম না রাখতে পারে তবে তাকে কসমের কাফ্‌ফারা দিতেই হবে। কাজেই নিজের মনে নিজের জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা পূরণ করুন, নিজের মনকে মিথ্যায় অভ্যস্ত করবেন না।

শুধু নিশ্চিত মিথ্যাই নয়, মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে এরূপ কথা বলতে বা যা কিছু শোনা যায় সবই বলাবলি করতে নিষেধ করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তিনি বলেন:
‘‘একজন মানুষের মিথ্যাবাদি হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই বলবে।’’
এ অপরাধটি আমরা সকলেই করি। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব ইত্যাদি সম্পর্কে মুখরোচক গল্প, গণমাধ্যমের খবর ইত্যাদি যা কিছু শুনি তাই বলি। অথচ বিষয়টি সঠিক কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কথা বলা ঠিক নয়। যদি কোনো মানুষের ব্যক্তিগত মর্যাদাহানী বা গীবত জাতীয় কিছু না হয়, তবে সে ক্ষেত্রে বড়জোর বলা যেতে পারে যে, অমুক একথা বলেছে বলে শুনেছি, সত্য মিথ্যা বলতে পারি না।
সর্বদা সত্য বলুন। সত্যপ্রীতি আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

‘‘তোমরা সর্বদা সত্য আঁকড়ে ধরবে; কারণ সত্য পুণ্যের দিকে ধাবিত করে আর পুণ্য জান্নাতে নিয়ে যায়। একজন মানুষ যখন সর্বদা সত্য বলতে থাকে এবং সত্য বলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে তখন সে এক পর্যায়ে আল্লাহর কাছে ‘‘সিদ্দীক’’ বা মহাসত্যবাদী বলে লিখিত হয়ে যায়। আর তোমরা মিথ্যা সর্বোতভাবে বর্জন করবে। কারণ মিথ্যা পাপের পথে পরিচালিত করে এবং পাপ জাহান্নামে নিয়ে যায়। একজন মানুষ যখন মিথ্যা বলে এবং মিথ্যা বলার সুযোগ খুঁজে বেড়ায় তখন সে এক পর্যায়ে আল্লাহর নিকট মহামিথ্যাবাদী বলে লিখিত হয়ে যায়।

রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৪

শরীয়তঃ- তরীকতঃ - মারেফত- হাকিকতঃ



Collected from Shaykh Monoar Hossen

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ বলেছেন। রাসুল সা.ইসলামকে ভাঙেননি। শরীয়াহকে অটুট রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। যত ভাল নিয়তই থাক ইসলামকে এভাবে ভাগ করা কতটুকু যৌক্তিক?
শরীয়তঃ- তরীকতঃ - মারেফত- হাকিকতঃ
_______________________________________________________
ক) শরীয়তঃ ইসলামী জীবন ব্যবস্থার যাবতীয় বিধানকে শরীয়ত বলা হয়। সর্বপ্রথম শরীয়তের পূর্ণ অনুসারী হতে হয়। শরীয়তের যাবতীয় বিধানের মধ্য দিয়ে সুফী তার প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রিত করে প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর অনুগত করেন। শরীয়তের পূর্ণ অনুসরণ ব্যতীত কেউ সুফী হতে পারবে না। সুফীরা এ কথাটি জোর দিয়ে বললেও তাদের আচার-আচরণ এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ অনেক সুফীকেই দেখা যায় তারা মারেফতের দোহাই দিয়ে শরীয়তের বিধান মানতে আদৌ প্রস্তুত নন।
খ) তরীকতঃ সুফীদের পরিভাষায় তরীকত হচ্ছে; শরীয়তের যাবতীয় বিধান অনুশীলনের পর তাকে আধ্যাত্মিক গুরুর শরণাপন্ন হতে হবে। এ পর্যায়ে তাকে বিনা প্রশ্নে গুরুর আনুগত্য করতে হবে।
গ) মারেফতঃ সুফীদের পরিভাষায় মারেফত হচ্ছে, এমন এক স্তর যার মধ্যে বান্দাহ উপনীত হলে সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে অবগত হতে পারে। এ স্তরে পৌঁছতে পারলে তার অন্তর আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। তখন তিনি সকল বস্তুর আসল তত্ত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করেন। মানব জীবন ও সৃষ্টি জীবনের গুপ্ত রহস্য তার নিকট সপষ্ট হয়ে ভেসে ওঠে।
ঘ) হাকিকতঃ সুফীদের ধারণায় তাদের কেউ এ স্তরে পৌঁছতে পারলে আন্তরিকভাবে আল্লাহর প্রেমের স্বাদ ও পরমাত্মার সাথে তার যোগাযোগ হয়। এটা হচ্ছে সুফী সাধনার চুড়ান্ত স্তর। এ স্তরে উন্নীত হলে সুফী ধ্যানের মাধ্যমে নিজস্ব অস্তিত্ব আল্লাহর নিকট বিলীন করে দেন।

উপরোক্ত নিয়মে ভক্তদের নামকরণ করা ও স্তরভেদ করা একটি বানোয়াট পদ্ধতি। ইসলামের প্রথম যুগে এগুলোর কোন অস্থিত্ব ছিল না। পরবর্তীতে সুফীরা এগুলো নিজের খেয়াল খুশী মত তৈরী করেছে।

ফেইসবুক না ফেতনাবুক?



ফেইসবুক না ফেতনাবুক?

ফেইসবুক মাধ্যমটার সমালোচনার শেষ নেই। এমনকি এই তথাকথিত ইসলামী পেজের নামেও অনেক ফেতনা ও পাপাচার হচ্ছে। এই ব্যপারে কিছু গাইডলাইন দেওয়া হলো – অবহেলা করবেন না। পাপে জড়িয়ে পড়া মানুষের জন্য সবচাইতে বড় বিপদ – কারণ এর প্রতিদান জাহান্নাম, নাউযুবিল্লাহ!

***নারীদের চেহারা দেখিয়ে (হিজাবী/আধা হিজাবী) ছবি দেখানো সম্পূর্ণ হারাম!
অনেক নারী বেপর্দা ছবি দিয়ে কমেন্ট করে। অনেক পুরুষ এতে তাদের দিকে আকৃষ্ট হয়ে তাদের প্রোফাইলে যায়, তাদেরকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়, তাদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে...এইভাবে কত যে কাহিনী ও কত পাপ হচ্ছে আল্লাহ ভালো জানেন। নারীরা ছবি দিয়ে কমেন্ট করবেন না, গায়ের মাহরাম পুরুষদেরকে ইসলামী সুরতে ফ্রেন্ড লিস্টে ঢুকাবেন না। আপনি দ্বীন শিখবেন আলেমদের কাছে থেকে তাদের বই পুস্তক পড়ে, ওয়াজ লেকচার শুনে – আপনার কোনো ছেলেকে ফলো করার দরকার নাই। আর কোনো পুরুষেরও দরকার নাই, ইসলাম শেখার নাম করে নারীদের ফলো করার। এই লোকটা মূর্খ, সহীহ আকীদার আলেম ওলামাদের কাছে না গিয়ে যে নারীদের পেছনের ঘুরে (বাস্তবেই হোক, ফোনে যোগাযোগ করে, মেয়ে বন্ধুর কাছ থেকে বা ফেইসবুকে ফ্রেন্ড হয়ে) সে আহলুল হাওয়া – প্রবৃত্তি পূজারী। এ আসলে নারীদের প্রতি আকৃষ্ট, দ্বীনের নামে আসলে মুখোশ পড়ে আছে।

১. নায়ক-নায়িকার ছবি প্রোপিক দিবেন না। এখনো ক্ষেতের মতো ফিল্ম স্টারের ছবি দিয়ে রাখেন? ভালো করে ইসলাম শিখুন...
২. অশ্লীল ছবি প্রোপিক দিবেন না। কি বাজে দেখা যায়, অশ্লীল ছবি দিয়ে রেখেছেন, আবার কমেন্ট করেন ইন শা’ আল্লাহ, মা শা’ আল্লাহ। দুইমুখী নীতি, কমস সেন্সের বিষয়।
৩. নারীর ছবি দিবেন না। এটা ফেইসবুকে সবচেয়ে বড় ফেতনা! নিজেদেরকে ফেতনাবাজের কাতারে ফেলবেন না। হিজাব পর্দা নারীদের সম্মান। ফেইসবুকে থার্ডক্লাস পুরুষদের লাইক পাওয়ার লোভে নিজেদের সম্মানকে বিসর্জন দেবেন না।
*অনেকে মনে করে মাথায় রুমাল বেঁধে মুখ খোলা নারীদের ছবি দেওয়া জায়েজ?...তথাকথিত অনেক ইসলামিক পেজে দেখি নারীদের ছবি আপলোড করে লাইক পাওয়ার আশায়...ভুয়া হিজাবীর ছবিতে অজ্ঞ মুসলমানেরা লাইক দেয়, শেয়ার করে, কমেন্ট করে মা শা’ আল্লাহ!
লা হা’উলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ...যেমন এডমিন তেমন ফলোয়ার!
৪. পুরুষের ছবিও দিবেন না। দুনিয়ার সব নারী আপনার মাহরাম না। আপনার ছবি দিয়ে নারীদের ফেতনায় ফেলবেন না।
৫. দাঁড়ি বিহীন পুরুষের ছবিতো আরো মারাত্মক। নিজের পাপ কাজের হাজার হাজার স্বাক্ষী রাখছেন!
৬. বাচ্চাদের ছবি দেবেন না, বাচ্চাদের নযর লাগতে পারে।
৭. কার্টুনের ছবি দেবেন না। অনেকে দেখি এমন গার্ল কার্টুন দিয়ে রাখে বেপর্দা! অনেকে ভৌতিক, উদ্ভট, দেখতে খারাপ ছবি দিয়ে রাখে। কি আজিব...!
৮. কোনো প্রাণীর ছবি দিবেন না।
৯. প্রাণীর ছবি দিয়ে, অশ্লীল, অভদ্র, গালি সংবলিত ছবি দিয়ে কমেন্ট করবেন না। পেজে কুরআন ও হাদীস প্রচার করার চেষ্টা করা হয়। দয়া করে সেই পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
১০. প্রোপিক হিসেবে ন্যাচারাল বিউটি, বন, পাহাড় এইসব প্রাণহীন বস্তুর ছবি দিবেন।
১১. গায়ের মাহরামদের সাথে যোগাযোগ করবেন না, প্রাইভেট মেসেজে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করবেন না। আপনি বিবাহিত হলে সুখ দুঃখের আলাপ সব স্বামী বা স্ত্রীর সাথে করুন। বিবাহিত না হলে ধৈর্য ধরুন, আল্লাহর কাছে দুয়া করুন। আর বেশি কঠিন মনে হলে রোযা রাখুন। অবৈধ সম্পর্ক যোগাযোগ, মিথ্যে ভালোবাসার পেছনে ছুটবেন না। পুরুষদের জন্য নারীর চাইতে বড় ফেতনা আর নেই। ফেতনাকে ভয় করুন। 
বিঃদ্রঃ দলীল উল্লেখ করা হয়নি এমন একটা পোস্ট, যদিও এর পক্ষে অনেক অনেক দলীল রয়েছে। আমি অনেক আলেম ওলামাকে এইগুলোর ব্যপারে অত্যন্ত কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করতে দেখেছি।
হাদীসটা ভালো করে পড়ুন...

"হালালও স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু'য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়-যা অনেকেই জানেনা। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে তার উদাহরণ ঐ রাখালের মত, যে তার পশু বাদশাহর সংরক্ষিত চারণভূমির আশে পাশে চরায়, অচিরেই সেগুলো সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ যে, সে গোশতের টুকরাটি হল কলব।"


[বুখারী, ১ম খন্ড, ঈমান অধ্যায়, হাদীস নং ৫০]

নবী সম্পর্কে আকীদাহ



বেদাতপন্থীরা কতোবড় আহাম্মক...

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নাকি মৃত্যুবরণ করেন নি!!?

*রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেন নি, তাহলে সাহাবীরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে কবর দিলেন কেনো?
সাহাবীরা কি জিন্দা মানুষকেই কবর দিয়ে ফেললেন (নাউযুবিল্লাহ)!!

ওহ...
বেদাতীরাতো রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে মানুষ বলাই চরম অপরাধ মনে করে!!

আসলে যারা কুরআনের আয়াতকে অস্বীকার করে এরা যে কতবড় বোকা হতে পারে, এটা তার একটা বাস্তব প্রমান...দেখুন আল্লাহ কি বলছেন, আর বেদাতীরা আমাদেরকে কি বলতে চায়...

আল্লাহর পক্ষ থেকে অগ্রীম ঘোষণা, নবী মৃত্যুবরণ করবেন...
...(হে নবী) নিশ্চয় আপনার মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে।...
সুরা যুমারঃ ৩০।

আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা, নবী একজন মানুষ ও আল্লাহর দূত (নবী/রাসুল)...
...বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ...
সুরা কাহফঃ ১১০।

বাংলাদেশের কয়েকটি পথভ্রষ্ট দলের লোকেরা বিশ্বাস করে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেন নি, তিনি আমাদের মতোই তাঁর কবরে জীবিত আছেন...
কট্টরপন্থী আরো কিছু লোক মনে করে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কারো কারো জন্য হাত বের করে দেন মুসাহাফা করার জন্য, কারো সালামের জবাব দেন...
এইজন্য অনেকেই বিপদে পড়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কবরে গিয়ে তাঁর কাছে সাহায্য চায়, তাঁর কাছে দুয়া করে...নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক...
সম্পূর্ণ কুফুরী ও শিরিকি কথাবার্তা, এইসব ভুয়া কিচ্চা লেখা আছে এদের ভেজাল কিতাবে...আর সাধারণ মানুষ অজ্ঞতার জন্য এই শেরেকী ধরতে পারেনা, এইগুলো বিশ্বাস করে মনে করে এইটা বড় কেরামতের কথা...
লা হা'উলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ...এইসব কেরামত না - এইসব মিথ্যা ভুয়া কাহিনী নবীর নামে চালিয়ে কবর পূজার দরজা উন্মুক্ত করেছে বিদাতী আলেমরা...
ইন শা' আল্লাহ এইসমস্ত কুফুরী আকীদার পোস্ট মর্টেম করা হবে...

তবে সংক্ষেপে একটা দলীল উল্লেখ করা হলো...

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর দুনিয়ার জিন্দেগী শেষ হয়ে গেছে। মৃত্যুর পরে আমাদের সবার আরেকটা জিন্দেগী আছে। কবরের জীবনকে বলা হয় - হায়াতে বরযখ বা পর্দার জীবন। এই জীবন দুনিয়ার জীবন থেকে আলাদা। আর একবার যে হায়াতে বরযখে চলে যায় সে আর কোনো দিন দুনিয়াতে আসতে পারেনা। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকীদা। পক্ষান্তরে কবর পূজারীরা অনেক কুসংস্কার বিশ্বাস করে, এইজন্য নবী রাসুল ও অলি-আওলিয়াদের কাছে সাহায্য চাওয়ার নামে কবর-মাযার পূজায় লিপ্ত।

মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০১৪

নাশিদ/ইসলামিক গান/ গজল/কাওয়ালী নিয়ে সউদী আলেমদের ফতোয়া




নাশিদ/ইসলামিক গান/ গজল/কাওয়ালী/সামানিয়ে সউদী আলেমদের ফতোয়াঃ

ফতোয়া :
প্রশ্নঃ শায়খ বিভিন্ন জলসা সমাবেশে ধফ বা কোনো মিউজিক্যাল এফেক্ট ছাড়া যেইসলামিক নাশিদগাওয়া হয় এর হুকুম কি?
উত্তরঃ এর কোনো ভিত্তি নেই, এটা একটা নতুন আবিষ্কার (বিদআ) 
এই নাশিদকে ইসলামের অংশ বলা হচ্ছে এবং নাম দেওয়া হয়েছেইসলামিক গান. এর দ্বারা তারা বুঝাতে চাচ্ছেইসলাম এই ধরণের গানের হুকুম দিয়েছে কিন্তু এর কোনো ভিত্তি নেই 
অপরদিকে এই গানগুলো যদি আল্লাহর আনুগত্য নৈকট্য অর্জনের জন্য লেখা হয়ে থাকে, নিশ্চিতভাবে এটা সুফীদের লক্ষণ সুফীরাই প্রথম মুসলমানদের মাঝে নাশিদ চালু করেছিলো তারা এটাকে আল্লাহর ইবাদত হিসেবে চালু করেছিলো (একটা বেদাত) 
একজন মুসলিমদের জন্য সর্বোত্তম হচ্ছে সে এইগুলোর দিকে লক্ষ্য করবেনা যেই সমস্ত কবিতার মাঝে উপকারী ভালো কথা আছে সেইগুলোর মাঝে কোনো দোষ নেই এইগুলো কেউ একজন আবৃত্তি করলে কোনো দোষ নেই, কিন্তু কোনো জলসা সমাবেশে না, বা কয়েকজন একসাথে গাইবে এমন না কবিতার কিছু উপকারী দিক আছে, মানুষ এইগুলো থেকে উপকৃত হতে পারে যেমন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সময় এমন সাহাবী ছিলো যিনি কবিতা লেখতেন তারা তাদের কবিতা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে শোনাতেন এমনিভাবে কেউ কাজ করতে করতে ক্লান্তি দূর করার জন্য কবিতা আবৃত্তি করতে পারে এটা নাশিদ না, এর দ্বারা সে কিছুটা কাজের বিরতি নিলো কিন্তু সমাবেশে সে এইগুলো গাইবেনা, বা কয়েকজন একসাথে কোরাসে গাওয়াএইসবগুলো মানুষ আবিষ্কার করে নিয়েছে 
কেউ যদি এইগুলোকে ইসলামের দিকে আরোপ না করে করে তাহলে সেটালাহু” - নিতান্তই বাজে কথা 
আর কেউ যদি এইগুলোকে ইসলামের দিকে আরোপ করে (অর্থাত ইসলামিক গান বলে) তাহলে সেটা বিদআ হবে 
প্রশ্নকর্তাঃ শায়খ, আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন কিছু মানুষ এইগান শোনা অভ্যাসে পরিণত করেছে তারা বাড়িতে, গাড়িতে এইগানগুলো শুনছে, একা বা ছেলেমেয়েদের সাথেএরজন্য অনেক সময় নষ্ট করছে 
শায়খঃ যেহেতু এর কোনো ভিত্তি নেই সুতরাং এটা একটা ফিতনাহ তাদের উচিত হচ্ছে কুরআনুল কারীমের তেলাওয়াত শোনা অনুরূপভাবে ইসলামি শিক্ষামূলক ওয়াজ, লেকচার শোনা নাশিদের জন্য সময় অপচয় করা ঠিকনা এতে কোনো কল্যান নেই, বিনোদন ছাড়া 
ফতোয়া দিয়েছেন সউদী আরবের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, আল্লামাহ শায়খ সালিহ বিন ফাওজান আল-ফাওজান ফতোয়ার লিংক

http://www.youtube.com/watch?v=4Ee3kH0Ox88

ফতোয়া :
প্রশ্নঃ শায়খ কিছু নাশিদ আছে যা কয়েকজন একসাথে ধফের সাথে গাওয়া হয় এই গানগুলোর ভালো অর্থ আছে এবং মানুষকে উতসাহ উদ্দীপনা দেয় এইগুলোর ব্যপারে আপনার মতামত কি?
উত্তরঃ ইসলামিক নাশিদের ব্যপারে অনেক কথা বলা হচ্ছে অনেকদিন আগে আমি নিজে এইগুলো শুনেছিলাম প্রথমদিকে যখন এইগুলো আসে তখন এটা ঠিক ছিলো তখন এইগুলোর সাথে ধফ ছিলোনা আর এইগুলো গানের মতো করে সুন্দর মিষ্টি সুরে গাওয়া হতোনা তাই এইগুলো তখন কোনো ফিতনাহ সৃষ্টি করেনি এই জিনিসগুলো (সুর/গান/বাদ্যযন্ত্রসহ গাওয়া) পরবর্তীতে মানুষ আবিষ্কার করে নিয়েছে আস্তে আস্তে মানুষ এইগুলো সাথে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে, ধফ বা অন্যান্য এবং হারাম গানের মতো করে সুন্দর করে গাওয়ার প্রতিযোগিতা চালু হয় তাই, আমি এই নাশিদগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট না এর সবগুলো হারাম বলা যাবেনা, আবার সবগুলোকে হালালও বলা যাবেনা বরং আমি যেই জিনিসগুলোর কথা বলেছি এইগুলো মুক্ত হলে নাশিদ জায়েজ হবে তবে যাই হোক, নাশিদগুলো যদি ধফ, গানের মতো সুন্দর করে সুর দিয়ে গাওয়া হয় তখন এইগুলো শোনা না-জায়েজ
ফতোয়া দিয়েছেন সউদী আরবের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, আল্লামাহ শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসায়মিন ফতোয়ার লিংক -

http://www.youtube.com/watch?v=Vv3wtH03bRg 

ফতোয়া :
প্রশ্নঃ সম্মানিত শায়খ, মার্কেটে কিছু টেপ বিক্রি করা হয় যেইগুলোতে বাদ্যযন্ত্র যেমন ধফ বা তবলা সহকারে নাশিদ আছে এইগুলো শোনার হুকুম কি?
উত্তরঃ এইগুলো শোনা জায়েজ নয়যদি এই বাদ্যযন্ত্র থাকে, ধফ বা অন্য যেকোনো কিছু কিন্তু যদি কোনো প্রকার বাদ্যযন্ত্র না থাকে তাহলে এর কথার দিকে দেখতে হবে এইগুলো কি ভালো না খারাপ? 
আমার উপদেশ তরুণদের প্রতি, তোমরা উপকারী জিনিসগুলো শোনো উপকারী জিনিস হচ্ছে - কুরআনের তাফসীর, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদীসের ব্যখ্যা, ইসলামী জ্ঞানের উপরে কোনো আলোচনা, যার দ্বারা সে নিজে অন্যেরাও উপকৃত হতে পারে 
কিন্তু এই নাশিদগুলো যেগুলোতে ধফ ছাড়া অন্যকোন বাদ্যযন্ত্র নেই, কথাগুলো ভালো হয় তাহলে বিয়ের উপলক্ষ্যে শুধু নারীরা ক্রয় করে, তাহলে তাদের জন্য এটা জায়েজ রয়েছে 
ফতোয়া দিয়েছেন সউদী আরবের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, আল্লামাহ শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসায়মিন (রহঃ) 
মূল ফতোয়ার লিংক -

http://www.youtube.com/watch?v=EvBSmUtWgUo&list=PL