শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

নাসীহাহ ১

(১) আমার অত্যন্ত প্রিয় একটা আয়াত, যা বার বার শুনতে ইচ্ছে করেঃ
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো। ধৈর্য ধারণের ব্যপারে তোমরা একজন আরেকজনের সাথে প্রতিযোগীতা করো এবং (শত্রুদের বিপক্ষে) সর্বদা প্রস্তুত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পারে। [সুরা আলে-ইমরানঃ ২০০]
(২) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা উপদেশঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে আর নয়তো চুপ থাকে।” [সহীহ বুখারী]
(৩) এই মুবারক হাদীসের আলোকে ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, তুমি যদি কোন কথা বলতে চাও, তাহলে তার পূর্বে চিন্তা করে নিও। যদি মনে করো যে, এই কথার ফলে কোন ক্ষতি নেই, তাহলে সেটা বলো। আর যদি মনে করো যে, এই কথা বললে ক্ষতি হবে, তাহলে তুমি চুপ থাকো।
(৪) আমাদের জীবনে সবচাইতে মূল্যবান জিনিস হচ্ছে সময়, অথচ আমরা এই জিনিসটারই সবচাইতে বেশি নষ্ট বা অপচয় করি। হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে; যেমনঃ অন্যের গীবত করে, গান শুনে, টিভি দেখে, গায়ের মাহরামদের সাথে রসের গল্প জমিয়ে ইত্যাদি, অথবা বেহুদা কাজ করে; যেমনঃ বিভিন্ন আড্ডায়, ফেইসবুকে ফাসেক ও বোকা লোকদের সাথে নিজের বিষয় নয় এমন অপ্রয়োজনীয় কথা বলে বা তাদের কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করে, এইভাবে আমরা আমাদের মূল্যবান সময়কে ধ্বংস করি। ধরুন আমরা যদি ১০টা মিনিট সময় নষ্ট করি কারো সাথে বেহুদা আড্ডা দিয়ে, এতে দুনিয়া বা আখেরাতের কোন লাভ নেই, বরং এর মাঝে যদি হারাম কোন কথা বলি যেমন গীবত করা, কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দেই বা অহংকার করি, তাহলেতো বরং গুনাহ হবে, যার জন্য শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। পক্ষান্তরে আমরা যদি এক মিনিটে মাত্র একবার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি বলি, আল্লাহর যিকিরের কারণে আমাদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল হবে, আর পরকালের জন্যে জান্নাতে একটা করা গাছ লাগানো হবে। আর বাকি নয়টা মিনিট যদি বিশ্রাম নেই তাহলে সেটা শরীর ও মনের জন্যে উপকারী হবে। কারণ চুপ থাকাও একতা ইবাদত, আর অতিরিক্ত কথা ও হাসি মানুষকে অন্তরকে মেরে ফেলে। অথবা এই সময়ের মাঝে নিজে কোন কষ্ট না করে শুধু কোন আলেমের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি বা ক্বুরান তেলাওয়াত শুনি, এর দ্বারাও অনেক উপকৃত হব। সুতরাং আমাদের সব সময়ে খেয়াল রাখতে হবে, কোন জিনিসে আমাদের উপকার আছে, আর কোন জিনিসে ক্ষতি বা শুধু শুধু সময় নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যপারে পরকালের আশা রাখে এমন একজন ঈমানদারকে আর দশটা মানুষের চাইতে অনেক বেশি বুদ্ধি ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
(৫) একজন সাহাবীর সুন্দর একটা ঘটনা শুনুন। আবু দুজানা রাদিয়াল্লাহু আনহু মৃত্যুরোগে বিছানায় শায়িত ছিলেন। এসময় তাঁর চেহারা একেবারে চাঁদের মতো উজ্জ্বল হয়ে ছিলো। এ ব্যপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, আমার কাছে (পরকালের হিসাব-নিকাশের ব্যপারে) ভরসা করার মতো দুইটি আমল ছাড়া তেমন কিছুই নেই। তার প্রথমটি হচ্ছে এই যে, আমি কখনোই অনর্থক কথা বলতাম না। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, মুসলিমদের জন্যে আমার অন্তর সব সময় পরিষ্কার ছিলো।
অন্তর পরিষ্কার রাখা কথাটির অর্থ হচ্ছেঃ মুসলিমদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, অহংকার বা শত্রুতা পোষণ না করা।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সাহাবাদের মতো করেই আলাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করার তোওফিক দান করুন।

আমাদের পেইজের লেখাগুলো উপকারী মনে করলে আপনাদের বন্ধুদের মাঝে প্রচার করুন এবং সাদকায়ে জারিয়ার সওয়াব লাভ করুন। পেইজ থেকে পোস্ট শেয়ার করার চাইতে লেখাগুলো কপি করে নিজের টাইমলাইনে পোস্ট করুন, এতে মানুষ শেয়ারকৃত পোস্টের চাইতে পড়তে বেশি আগ্রহী হবে। আর আমাদের বা কোন আলেমের কাছ থেকে লেখা সংগ্রহ করলে, মূল লিখকের নাম উল্লেখ করে দিবেন। 

সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

মিডিয়াতে যাদের ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য

আজকাল ফেইসবুক ইউটিউবের মতো মিডিয়ার যুগে আমরা সবাই আলেম। কিছু লাইক শেয়ার পেলেই আমরা নিজেদেরকে মুফতি মুহাদ্দিস বলে মনে করছি, আর নিজের অল্প বুদ্ধি নিয়ে যত্রতত্র ফতোয়া ও মতামত দিয়ে বেড়াচ্ছি। এভাবে আমরা দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে উল্টা সত্যিকারে দাওয়াহ-কে নষ্ট করছি এবং সাধারণ মানুষদের মাঝে অনেকে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে। যাই হোক, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করছিঃ
(১) যাদের বয়স ৪০ বা ৪৫-এর কম। কারণ যার বয়স যত কম হবে, তার জ্ঞান ও হিকমাহ তত কম হবে।
(২) ঘন ঘন নিজের ছবি বা সেলফি পোস্ট করা। এটা একটা মানসিক ব্যাধি।
(৩) বিভ্রান্ত হয়েছে এমন বক্তা ও লিখকদের কাছ থেকে দ্বীন নেওয়া, তাদের প্রশংসা করা ও তাদেরকে প্রমোট করা। এটা একপ্রকার জাহালত বা অজ্ঞতা এবং নিজের দ্বীনের দৈন্যতার পরিচয়।
(৪) হিজবীয়াঃ ইউটিউব ও ফেইসবুকে সেলেব্রিটি বক্তা ও লিখকের প্রভাব বলয়ে থাকা এবং জ্ঞান ছাড়াই তাদের গোমরাহীকে অন্ধভাবে সমর্থন করা।
(৫) চরমপন্থা অবলম্বন করা। যেমনঃ পান থেকে চুল খসলেই একজন সাধারণ মানুষকে বিদাতী, হিজবী, মনপূজারী বা এমন অপমানজনক লেবেল দেওয়া।
(৬) ক্বুরআন ও সুন্নাহর দিকে আহবানকারী এমন নিষ্ঠাবান দ্বাইয়ীদের ভুলকে অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা ও উদ্দেশ্যহীহভাবে মানুষের মাঝে সেইগুলো প্রচার করা, তাদেরকে অপমান ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা।
(৭) প্রশংসা এবং সমালোচনার ব্যপারে বাড়াবাড়ি ও সীমা লংঘন করা।
(৮) দ্বীনের দাওয়াত নাম দিয়ে ব্যক্তিগত কথা-বার্তা, অভিজ্ঞতা ও মতামত, সার্টিফিকেট প্রচার করা।
(৯) হাতে-গোনা কয়েকটা বিষয়ের মাঝেই দাওয়াতকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা। এর কারণ হচ্ছে সিলেক্টেড কয়েকটা বিষয় ছাড়া দ্বীনের অন্যান্য ব্যপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই যে সেইগুলো প্রচার করবে।
(১০) সৌদি আরব এবং তার সরকারকে কাফের বা তাগুত বলে ফতোয়া দেওয়া অথবা, আমিরুল মুমিনিন, বর্তমান যুগের সালাউদ্দিন আইউবী বলে প্রশংসার ব্যপারে সীমা লংঘন করা।
(১১) ফতোয়া শপিংঃ জ্ঞান ছাড়াই প্রবৃত্তি অনুযায়ী আলেমদের ফতোয়া গ্রহণ এবং বর্জন করা।
(১২) নিজের দলের প্রতি অন্ধভক্ত হওয়া।
(১৩) আলেমদের কথা প্রচার করার চাইতে নিজস্ব ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ ও মতামত প্রচার করতে ব্যস্ত হওয়া।
(১৪) আলেমরা বর্তমান দুনিয়ার খবর জানেন না, বা পূর্ব যুগের আলেমদের মতো বর্তমান যুগের আলেমরা অতটা নির্ভরযোগ্য নন বলে শয়তানী ওয়াসওয়াসায়র শিকার হওয়া।
(১৫) আলেমরা টিভি দেখে ফতোয়া দেন, তাঁদের সম্পর্কে এমন খারাপ ধারণা রাখা।
(১৬) নিজের প্রিয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন আলেম সতর্ক করলে তাঁকে চরমপন্থী বলে তুচ্ছ করা।
(১৭) বিদআতী বা পথভ্রষ্ট দল বা আলেমদের অনুসারী ব্যক্তিদের সাথে সু সম্পর্ক রাখা এবং জনপ্রিয়তা বা বন্ধুত্বের স্বার্থে শিরক ও বিদআতের ব্যপারে নীরব থাকা।
(১৮) আলেমদের সাহচর্য দূরে থাকা এবং তাঁদের জ্ঞান থেকে উপকৃত না হওয়া।
(১৯) নিজের ব্যক্তিগত জীবন, স্ত্রী সন্তান বা ছেলে মেয়েদের কথা প্রচার করার মোহ ত্যাগ না করা।
(২০) উঠতি বয়সী ছাত্রদেরকে নিজের শায়খ/রাহবার হিসেবে গ্রহণ করা।
(২১) (পুরুষদের জন্যে) ফেইসবুকে নারী লেখিকাদের ফলো করা, তাদের পোস্টে নিয়মিত লাইক ও শেয়ার করা।
(২২) অপ্রয়োজনীয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকা এবং আক্বীদাহ ও অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞানকে অবহেলা করা বা বঞ্চিত থাকা।
(২৩) অন্যের লেখা নিজের নামে বা পেইজে পোস্ট করা। এটা একপ্রকার মিথ্যা এবং প্রতারণা। যেই জ্ঞান নিজের নয়, তা নিজের বলে দাবী করা। অনেকে আবার "কালেক্টেড" লিখে দিয়ে মূল লেখকদের নাম গোপন রাখতে চায়।
(২৪) দাওয়াতের স্বার্থে(!) নারীদের ছবি পোস্ট করা, হোক সেটা বেপর্দা, হিজাবী বা আধা হিজাবী। এইভাবে কিছু বোকা লোকেরা ইসলাম প্রচার নাম দিয়ে নারীলোভী পুরুষদেরকে আকর্ষণ করে।
(২৫) ভক্ত শ্রোতাদেরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করার জন্যে ফেইক আইডি ব্যবহার করা। মুসলমান হয়ে হিন্দু বা কাফেরদের নাম গ্রহণ করা, পুরুষ হয়ে নারী নাম নিয়ে দ্বীন প্রচা করা। কোন সন্দেহ না এরা প্রতারক, এরা দাওয়াতী কাজ করেনা, এরা নিজেদের অজ্ঞতা দিয়ে দাওয়াতকে ধ্বংস করা।

(২৬) দ্বীন প্রচারের নামে ফানি শায়খের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া। দ্বীনি বিষয় নিয়ে কৌতুক বা জোকারি করা এবং সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টিকে হালকা করে উপস্থাপন করা। উদ্ভট কথা বলে বা ম্যাজিক দেখিয়ে মানুষকে হাসানোর চেষ্টা করা, হাহা/হিহি, লুলামি মার্কা কথা বা ছবি পোস্ট করা। এরা দ্বাইয়ী নয়, এরা জোকার। এরা আলেম বা ইসলাম প্রচারকারী নয়, এরা নিকৃষ্ট চিড়িয়া। 

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

দেওবন্দী আলিমদের ফিকহের খেদমতঃ

দেওবন্দী আলিমদের ফিকহের খেদমতঃ
শায়খ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন, অজ্ঞতা, মূর্খতা ও অন্ধভাবে নিজের মতের ব্যপারে পক্ষপাতিত্ব করার কারণে মানুষ ধংসপ্রাপ্ত ও বিপদগ্রস্থ হয়।
_________________________
(১) মসজিদে আমিন জোরে বলা নতুন ফেতনাহ। - আহমাদ শফি, হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল।
নোটঃ মালেকী, শাফেয়ী এবং হাম্বালী এবং প্রায় মুহাদ্দিসিনদের মতে, আমিন জোরে বলা মুস্তাহাব
(২) রফউল ইয়াদাইন করা, জোরে আমিন বলার কারণে সোলোফিরা সৌদি আরব থেকে রিয়াল পায়, মাসে চাইরশো, পাঁচশো করে রিয়াল পায়। - আহমাদ শফি, হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল।
নোটঃ কুতুবে সিত্তাহর সবগুলো হাদীসের কিতাবেই এনিয়ে স্পষ্ট সহীহ হাদীস এবং অনুসরণীয় ইমামদের ফতোয়া লিপিবদ্ধ রয়েছে। বর্তমান সৌদি রাষ্ট্র যখন ছিলোনা, তখন তাঁরা কার কাছ থেকে রিয়াল খেয়ে ফতোয়া দিয়েছিলেন?
(৩) মসজিদের আমিন বলার পূর্বে তোমরা তোমাদের বিবিদেরকে তালাক্ব দাও। কথিত আল্লামাহ এবং হাক্কানী পীর নুরুল ইসলাম অলিপুরী।
নোটঃ মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বালিদের ঘরে স্ত্রো রাখতে হলে হানাফী মাযহাব গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নাই!
(৪) আহলে হাদীসরা নারীদের উপভোগ করতে মসজিদে যায়। - কথিত আল্লামাহ এবং হাক্কানী পীর নুরুল ইসলাম অলিপুরী।
(৫) আহলে হাদীসদের নারীদের চেহারা দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যে শায়খ আলবানী চেহারা খুলে রাখার অশ্লীল(!) ফতোয়া দিয়েছেন! - রফিকুল ইসলাম মাদানী (মাদানী নামের কলংক)।
(৪+৫)-এর নোটঃ কথিত হানাফীদের জ্বালার কারণ হচ্ছে শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ নারীদের চেহারা ঢাকা ওয়াজিব নয় বলে ফতোয়া দিয়েছেন।
এবার এনিয়ে আমরা হানাফী এবং আহলে হাদীস ওলামাদের বক্তব্য দেখব। ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ-এর মতে নারীদের চেহারা এমনকি তাদের নখ পর্যন্ত ঢেকে রাখা ওয়াজিব। একই মত ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ, ক্বুরানের সমস্ত মুফাসসিরিনরা এবং আধুনিক যুগের সমস্ত সালাফী ওলামাদের, নারীদের চেহারা তাদের আওড়াহ, এবং তা ঢেকে রাখা ওয়াজিব।
পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানীফাহ রাহিমাহুল্লাহর মতে, ফিতনাহর আশংকা থাকলে ওয়াজিব, এমনিতে ওয়াজিব নয়। আধুনিক যুগের আলেমদের মাঝে শুধুমাত্র শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ এই দুর্বল মতটিকে গ্রহণ করেছেন।
(৪+৫)-এ উল্লেখিত দুইজন জাহিল আল-মুরাক্কাব নিজেদের ইমামের খবর না জেনেই বিপক্ষের সমালোচনায় সীমালঙ্গঘন করেছেন, অথচ সেটা তাদের নিজেদের ইমামের বিরুদ্ধেই যে যায়, সেই হুঁশ নেই।
(৬) আল-কাউসার নামক একটি পত্রিকার সম্পাদককে হানাফী ফিকহের পক্ষে হাদিস অন্বেষণে ব্যপক গবেষণায় ব্যস্ত দেখা যায়। আহলে হাদীসরা এক রাকাত বিতির পড়ে যে হাদীসের বিরোধীতা করতাছে, এটা নিয়ে তাদের ধারাবাহিক সিরিজ চলে। কিন্তু একশ্রেণীর জাহেল সাধারণ মানুষের মাঝে আনাল হক্ক মতবাদ প্রচার করে তাদের ঈমান নষ্ট করছে, বানরের নাচকে আল্লাহর ওলী হওয়ার রাস্তা বানিয়েছে, রাসুল (সাঃ)-কে জিন্দা দাঁড় করিয়ে তাঁর মানহানী করা হচ্ছে, এইগুলো নিয়ে তাদের কোন গবেষণা, লিখনী, ফিতনাহ দমনের লিফলেট বিতরণ কিংবা মাথাব্যথা চোখে পড়েনা। বরং এইগুলো নিয়ে যারাই একটু মুখ খোলার সাহস করেছেন, তারা যে প্রকৃত হানাফী হতে পারেন না, একথা প্রচার করে তাদের ভক্তদেরকে সতর্ক করছেন।
(৭) লুতফুর ফারাজী নামক রুয়াইবিদাহর কথাগুলো বলে সময় নষ্ট করলাম না। এই চিড়িয়া খুব অল্পদিনেই তার উত্তরসূরীদের ছাড়িয়ে গেছে। তোওবাহ না করে মারা গেলে আশা করি বিচার দিনে এর উপযুক্ত প্রতিদান সে পাবে।


বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আপনার দ্বীন সম্পর্কে জানুন

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে, যিনি অত্যন্ত দয়াপরবশ হয়ে আমরা চাওয়ার পূর্বেই আমাদেরকে মুসলমান বানিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর দেওয়া এই অতুলনীয় নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে আসুন আমরা সকলেই অন্তর থেকে বলি আলহামদুলিল্লাহ! অতঃপর, আল্লাহ আমাদের নবীর প্রতি তাঁর সমস্ত স্ত্রী ও বংশধরদের প্রতি অসংখ্য ও অগণিত দুরুদ ও শান্তি বর্ষণ করুন, আমিন।
(১) এই পৃথিবীতে সবচাইতে কষ্টে আছেন তারাই, যারা এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অর্থ খুঁজে পান না। এই দুনিয়ার আলো বাতাসে যারা আর বেঁচে থাকতে চান না। আমাদের পেইজের কোন ভাই বা বোন যদি এই যন্ত্রনার স্বীকার হয়ে থাকেন আর এ ব্যপারে কোন উপদেশ বা পরামর্শ পেতে চান, তাহলে আমাদেরকে ইনবক্স করতে পারেন। অনেক সময় এমন হয় একজন মানুষ অনেক জ্ঞানী বা পরহেযগার, কিন্তু খারাপ বা অপছন্দনীয় একটা অবস্থায় পড়ে অথবা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে, তার যেই কাজটা করা উচিৎ, যে কাজটা করলে তিনি কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন, সেটা করতে পারেন না, বা করতে সাহস পান না। তখন কোন ভালো বন্ধু যদি আন্তরিক উপদেশ দেয় সেই কঠিন কাজটাও সহজ বলে মনে হয়, আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা ফিরে আসে। সুতরাং আমাদের উচিৎ, এক ভাই আরেক ভাইকে উপদেশ দেওয়া, তার ভুল সংশোধন করে দেওয়া।
(২) ফেইসবুকে যেমন হাতে গোনা ২-৪ জন ভালো মানুষ আছেন, তেমন নিম্ন মানের অনেক ফালতু নারী ও পুরুষও আছে। খারাপ লোকদের কথা শোনা, তাদের লেখা পড়া, তাদের সংশ্রব থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে, কারণ তারা হচ্ছে বিষের মতো। বিশেষ করে অনেক অল্প বয়ষ্ক জাহিল নারী ও পুরুষ আছে যারা ইলম ছাড়াই দ্বীনি বিষয়ে কথা বলে সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করে, তাদের ব্যপারে সাবধান। বিভ্রান্তিকর বক্তা ও লিখকদের চমকপ্রদ উপস্থাপনা দেখে তাদের ভক্ত শ্রোতারা তাদেরকে আলেম/আলিমাহ মনে করে ধোঁকার মাঝে পড়েন। এমন ব্যক্তিদের দুই-একটা সুন্দর সুন্দর কথার আড়ালে আসলে পথভ্রষ্টতা ও গোমরাহী লুকানো থাকে। আচ্ছা একটু পড়ে দেখি কি লেখা আছে. . ., এমন আগ্রহ নিয়ে তাদের কথা পড়তে গেলে হতে পারে শয়তান তাদের গোমরাহীগুলো আপনার অন্তরে ঢুকিয়ে দেবে। আপনি মিথ্যাকেই সত্য আর সত্যকে মিথ্যা বলে পা পিছলে জাহান্নামে চলে যাবেন। আল্লাহ যাকে নিরাপত্তা দেন একমত্র সে ব্যক্তিই নিরাপদ থাকতে পারে। আমাদের নিজেদের কারো সাধ্য নাই নিজেদেকে বাঁচানোর।
(৩) আল্লাহ সবাইকে সব নিয়ামত বা সুযোগ-সুবিধা দেন না। পুরুষদেরকে আল্লাহ যেই নিয়ামতগুলো দিয়েছেন তার মাঝে একটা হচ্ছে মসজিদে সালাত আদায় করার বিধান দেওয়া। আপনি চিন্তা করে দেখুন, পুরুষদের জন্য মসজিদ কত বড় একটা নিয়ামত, সুবহানাল্লাহ! কেউ যদি বাসা থেকে ওযু করে ফরয সালাত আদায়ের জন্যে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে তাহলে প্রত্যেকটা কদমের জন্য একটা করে সওয়াব লেখা হয়, তার একটা করে গুনাহ মাফ করা হয় আর একটা করে মর্যাদা বাড়ানো হয়। অতঃপর কেউ যদি জামাত শুরু হওয়ার আগে গিয়ে মসজিদের আদব রক্ষা করে সালাতের জন্যে বসে থেকে অপেক্ষা করে তাহলে, সে যতক্ষণ ওযুসহ বসা থাকবে তার পুরো সময়টাই সালাতের মধ্যেই বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ, ঐ সময়টাতে সালাত না পড়লেও, সালাতের জন্যে অপেক্ষা করার জন্যে সালাতের সওয়াব তার আমল নামায় লিখা হতে থাকবে, সুবহানাল্লাহ। আর আপনি যত আগে যাবেন আর ওয়াক্তের সুন্নত সালাত বা তাহিয়াতুল মসজিদের সালাত পড়ার পরে চুপ করে বসে থেকে আল্লাহকে স্বরণ করবেন, যিকির আযকার বা ক্বুরান তেলাওয়াত করবেন, দেখবেন আল্লাহর যিকির আপনার অন্তরে সুকুন বা প্রশান্তি এনে দেবে। আপনার অন্তরে শান্তি ফিরে আসবে, আপনার অন্তরকে পবিত্র ও কোমল করবে। আর এইভাবে বসে থেকে ফরয সালাতের জন্যে অপেক্ষা করতে থাকলে দেখবেন সালাতে আপনার মনোযোগ অনেকগুণ বেড়ে যাবে। সালাত পড়লে ঠিক সেইরকম মনে হবে, যেমনটা হাদীসে এসেছেঃ ক্বুররাতা আইনুন, অর্থাৎ এমন সালাত যা আদায় করলে চক্ষু জুড়িয়ে যায়। এছাড়া এইভাবে জামাতের আগে আগে মসজিদে গেলে আরেকটা লাভ হচ্ছে, ইকামতের পূর্বের সময়টাতে দুয়া করার সময় পাওয়া যায়, কারণ আযান ও ইকামতের মাঝখানের সময়ের দুয়া আল্লাহ তাআআলা প্রত্যাখ্যান করেন না। আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তোওফিক দান করুন, আমিন।
(৪) শারীরিক শক্তির দিকে থেকে নারীরা পুরুষের দিক থেকে দুর্বল হলেও মানব সন্তান জন্ম দেওয়া ও লালন-পালন করার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটা আল্লাহ নারীদেরকেই দিয়েছেন। সন্তান প্রসব করার জন্যে যে কষ্ট আমাদের মায়েরা সহ্য করেছেন, একবার চিন্তা করে দেখুনঃ যতই শক্তিশালী পুরুষ হোক না কেনো, এই দায়িত্ব দেওয়া হলে কয়জন রাজী হবেন? আল্লাহ হচ্ছেন সর্বউত্তম সৃষ্টিকারী, তাই তিনি ভালো জানেন কে কোন কাজের জন্যে যোগ্য, কে কোন কাজ ভালো পারবে। আর সেজন্যেইতো শক্তির দিক থেকে দুর্বল হলেও কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা, আদর ভালোবাসা, মায়া মমতা দিয়ে সন্তান লালন করার ব্যপারে একটা পুরুষের চাইতে আল্লাহ একটা নারীকে অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন করে সৃষ্টি করেছেন। শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্যে নারীদের কষ্টের কারণে তাদের অনেক গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এছাড়া সওয়াবের নিয়তে সন্তানকে দুধ খাওয়ালে, লালন-পালন করলে আল্লাহর কাছে থেকে এর জন্যে অনেক বড় প্রতিদান পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ।
(৫) মুসলমানদের মাঝে ৭২টা বিদআতী দলের মাঝে সবচাইতে নিকৃষ্ট দুইটি দল হচ্ছে শীয়াখারেজী
শীয়াঃ বর্তমান যুগের ইরান হচ্ছে শিয়াদের মূল ভূমি। ইরানীরা পূর্বে ছিলো মাজুসী বা অগ্নিপূজক। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু ইরান দখল করে সেখানে ইসলামের প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ইরানের মাজুসীরা সাময়িকভাবে ইসলাম কবুল করলেও ইসলামের লেবেল নিয়ে তারা আবার সাবেকী মানুষ পূজা, কবর পূজা, মূর্তি পূজার ধর্মে ফিরে যায়। একারণে শীয়ারা আজ পর্যন্ত উমারের প্রতি সবচাইতে বেশি শত্রুতা রাখে, কারণ তিনি মাজুসীদের সাম্রাজ্যের কোমর ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। যাই হোক ইরান থেকে শীয়ারা সিরিয়া, লেবানন, ইরাক, ইয়েমেন এমন কয়েকটি দেশে ক্ষমতা বিস্তার করে সেখানে আহলে সুন্নাহর মুসলমানদেরকে নির্বিচারে হত্যা করছে। আলহামদুলিল্লাহ, সৌদি আরবের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং আফ্রিকার কয়েকটি মুসলিম দেশ শীয়াদের আগ্রাসন ঠেকানোর জন্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্যে একমত হয়েছে। আল্লাহ মুসলমান যে যেখানেই থাকুক, তাদের সকলকেই হেফাজত করুন। আর আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের পথে সেইভাবে জিহাদ করার তোওফিক দান করুন, যেইভাবে জিহাদ করা উচিৎ।  
খারেজীঃ বিদআতী দলগুলোর মাঝে সবচাইতে ধ্বংসাত্বক ফেরকা খারেজীরা উসমান এবং আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, এই দুইজন খলিফাহকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। তারা নিজেদেরকে এতো বেশি জ্ঞানী ও আল্লাহওয়ালা মনে করতো যে, তারা সাহাবাদেরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে তাদেরকে যেখানে পেত সেখানেই হত্যা করতো। তারা এতো হিংস্র ছিলো যে, উসমান রাদিয়াল্লাহুকে ক্বুরআন তেলাওয়াতরত অবস্থায় এবং আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সালাতরত অবস্থায় আক্রমন করে হত্যা করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস অনুযায়ী নিকৃষ্ট এই বিদআতীদের বংশধরেরা যুগে যুগেই বিদ্যমান ছিলো এবং মুসলমানদের অনেক ক্ষয়-ক্ষতি করেছে। কিয়ামতের পূর্ব বর্তমান যুগে সাধারণ মুসলমানদের মাঝে দ্বীনি জ্ঞান না থাকায় খারেজীরা অনেক মুসলমানদেরকে গোমরাহ বানিয়েছে। তাদের ক্বুরান হাদীস থেকে বিভ্রান্তিকর দলিল দেওয়া, অতি ধার্মিকতার লেবাস দেখে অনেকে খারেজীদেরকেই আলেম/মুজাহিদ বলে মনে করে ধোঁকা খায়। আমি দ্বীনি ভাই ও বোনদেরকে সতর্ক করছি, ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন মিডিয়াতে খারেজীদের প্রচার ও প্রোপাগান্ডা দেখে ধোঁকা খাবেন না। খারেজী বা খারেজীদের মতোই ব্যক্তি ও দলগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য আমি আপনাদের সামনে উল্লেখ করছি, যাতে করে তাদের ফিতনাহ বুঝতে পারেন।
(ক) খারেজীদের বয়স হবে কম, আর তাদের বুদ্ধি হবে মোটা।
(খ) তারা ক্বুরান ও হাদিসের দলিল দেয়, কিন্তু তার ভুল ব্যখ্যা করে।
(গ) সাধারণ মানুষ দ্বীনি জ্ঞানের অভাবে তাদেরকেই হক্ক বলে মনে করে, তাদের বিভ্রান্তির শিকার হয়।
(ঘ) খারেজীরা সাধারণ মুসলমানদেরকে এবং মুসলমান শাসকদেরকে কাফের বলে ফতোয়া দেয়। বর্তমান যুগে যারাই বলবে, সমস্ত বিশ্বের মুসলমান বাদশাহ, রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী কাফের, বুঝবেন তারা খারেজীদের বিষে ধ্বংস হয়েছে।
(ঙ) খারেজীরা আলেমদের সাথে সবচাইতে বেশী শত্রুতা পোষণ করে, তাদেরকে অপমান করে, তাদের নামে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে আলেমদের কাছ থেকে মানুষদেরকে দূরে রাখতে চায়। কারণ আলেমরা সব সময়েই খারেজীদের ব্যপারে মুসলমানদেরকে সতর্ক করে থাকেন। আমি একটা উদাহরণ দিচ্ছি, ইরাক ও সিরিয়া থেকে উদ্ভূত খারেজীদের দল দাইয়িশ বা আইসিস এর লোকেরা গোটা বিশ্বে সম্মানিত আলেমে-দ্বীন, শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ-কে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। আল্লাহ হেফাজত করুন, ইন শা আল্লাহ নিকৃষ্ট এই খারেজীরা আহলে সুন্নাহ ও তাদের আলেমদের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা, একমাত্র দুনিয়াবী কষ্ট দেওয়া ছাড়া। বরং শীঘ্রই তারাও পূর্ববর্তী খারেজীদের মতোই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।  
(চ) খারেজীরা কাফেরদের চাইতে মুসলমান দেশেই বেশি আক্রমন করে।
(ছ) খারেজীরা অন্যায়ভাবে মুসলমানদেরকে কাফের ফতয়া দেয়, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং মুসলমানদেরকে হত্যা করে।

আপনারা খারেজীদের নিয়ে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসগুলো পড়লে ইন শা আল্লাহ আরো অনেক বেশি জানতে ও বুঝতে পারবেন। 

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

Valentine Day ২০১৬ উপলক্ষ্যে কিছু কথা

হে মুসলমান যুবক -যুবতী ভাই ও বোনেরা!  
পরনারী বা পরপুরুষের প্রতি প্রেম ভালোবাসা ও আকর্ষণ, একটু খানি অবৈধভাবে স্পর্শ করা এবং যৌন সম্পর্কের লোভ থেকে বাঁচতে পারছেন না. . .এর চাইতে ১০০গুণ বেশি মারাত্মক, দাজ্জালের ধোঁকা থেকে নিজেদের ঈমানকে কিভাবে রক্ষা করবেন?
____________________________
শায়খ আব্দুল হামীদ মাদানী হাফিজুল্লাহর বই থেকে সংগৃহীত,
বলা হয়ে থাকে যে একদা রোমান সম্রাট (ক্লাউডিউস) রোমের সকল পুরুষদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে আদেশ করলে, কিন্তু অনেক পুরুষ তাতে আগ্রহ দেখালো না। কারণ বিশ্লেষণ করে জানতে পারেন যে, সে সকল পুরুষরা হল বিবাহিত এবং তারা তাদের স্ত্রী -সন্তান ছেড়ে যুদ্ধে যেতে রাজী নয়। তাই তিনি বিবাহ নিষিদ্ধ করে দিলেন। কিন্তু যাজক Valentine গোপনে গীর্জার মধ্যে লোকদের বিবাহের কাজ সম্পন্ন করতে থাকেন। এই খবর পেয়ে সম্রাট তাকে ২৬৯ খ্রীস্টাব্দের ১৪-ই ফেব্রুয়ারি প্রাণদন্ড দেয়। তারপর থেকে, সেই খ্রীস্টান পাদ্রীর স্মরণে এই দিনটিকে প্রেমের দিন হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। অতঃপর, গীর্জার তরফ থেকে ১৯৬৯ সালে ইটালীতে Valentine Day পালন সরকারিভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। যেহেতু তাদের মতে তা ছিল দ্বীন ও চরিত্র বিরোধী অবাস্তব উপকথাভিত্তিক। কিন্তু সাধারণ লোকেরা তা আজও পালন করে থাকে।
____________________________
কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে একের পর এক নিত্য-নতুন ফেতনা মুসলমানদেরকে গ্রাস করবে। তখনকার যুগে মানুষের ঈমানের অবস্থা কেমন হবে, সে সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
আঁধার রাতের অবিরাম খন্ডের মত কৃষ্ণ-কালো ফেতনা আবর্তিত হওয়ার পূর্বেই তোমরা দ্রুত নেক কাজে মনোনিবেশ কর। (এমন একটা সময় আসবে যখন) মানুষ সকাল বেলা মুমিন কিন্তু বিকেল বেলা সে হবে কাফের। আবার কেউ সন্ধ্যা বেলা মুমিন হবে তো সকাল বেলা হবে কাফের। দুনিয়াবি সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে সে দ্বীনকে বিক্রি করে ফেলবে। [সহীহ মুসলীম]
____________________________
আজকে যারা Happy Valentine Day লিখে বা বলে পাঠিয়েছেন, বিভিন্ন অশ্লীল ও হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে এই দিনটি উদযাপন করেছেন, তারা আল্লাহর কাছে লজ্জিত হয়ে তোওবা করুন এবং অবৈধ সম্পর্ক থেকে ফিরে আসুন।
____________________________
পুরুষদের মাঝে যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য আছে, তাদের প্রেমিকা যদি বিয়ে করার মতো উপযুক্ত হয়, তাহলে মেয়ের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। মেয়ের বাবা রাজি থাকলে আলহামদুলিল্লাহ! দেরী না করে শীঘ্রই আক্বদ করে হালাল করে নিন। আর মেয়ের বাবা যদি একান্তই রাজি না হয়, তাহলে এই মেয়ের সাথে যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিন্ন করে ধার্মিক দেখে পছন্দমতো অন্য মেয়েকে বিয়ে করে আল্লাহর পথে চলার চেষ্টা করুন।
____________________________
নারীদের মাঝে যারা এই ফিতনায় পড়েছেন, তাদের প্রেমিক যদি বিয়ে করার উপযুক্ত হয়, তাহলে আপনাকে পেতে চাইলে কালকেই আপনার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে বলুন। যদি আপনার বাবা রাজী থাকে, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ! শীঘ্রই বিয়ে সম্পন্ন করে হালাল করে নিন। ঐ পুরুষ যদি বিয়ে করতে রাজি না হয়, বা হেনতেন বলে বিয়ে করতে দেরী বা অস্বীকার করে, কিন্তু সম্পর্কে রেখে ঠিকই আপনাকে ভোগ করতে দাবী জানায়. . .তাহলে এমন লোককে সাক্ষাৎ ইবলিস মনে করে তার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। যা ক্ষতি হওয়ার হয়েছে, সেটা আর কোনদিন ফেরত আসবেনা। ইন্তু ভবিষ্যতে যাতে আল্লাহর নাফরমানি করে আপনার পরকাল নষ্ট না হয়, তার জন্যে প্রাণপন চেষ্টা করুন।
____________________________
আর যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, বা যাদের বাবা বিয়ে দিচ্ছেনা, তারা পরপুরুষ বা পরনারীর সংশ্রব ও যোগাযোগ থেকে বেঁচে থাকুন, কারণ তা ক্রমেই জিনার সম্পর্কের দিকে নিয়ে যাবে। ধৈর্য ধরতে না পারলে রোযা রাখুন, যা আল্লাহকে স্বরণ রাখতে সাহায্য করবে এবং আপনার যৌন কামনা ও আবেগকে নিয়ন্ত্রন করবে।
____________________________
এ ব্যপারে কারো কোন পরামর্শ বা সাজেশান দরকার মনে করলে, আমাদেরকে ইনবক্স করতে পারেন। ইংশা-আল্লাহ, আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান ও সাধ্য অনুযায়ী আমরা আপনাদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো। আমি দুয়া করি, আল্লাহ আমাদেরকে অশ্লীলতার ফিতনাহ, যা বর্তমান যুগে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, তা থেকে আমাদের ও আমদেরকে পুরিবারকে হিফাজত করুন।

- আনসারুস সুন্নাহ। 

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

এক বোনের মানসিক কিছু সমস্যাস জন্যে উপদেশ



আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন। হতাশ হবেন না, আল্লাহ আপনাকে ভুল বোঝার তোওফিক দিয়েছেন, সেইজন্য শুকরিয়া আদায় করুন, যে পাপ কাজে লিপ্ত থেকে দুনিয়াতে সাময়িক আনন্দ ফূর্তি করে পরকালে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন করতে চান না, একারণে দুনিয়াবী একটু কশটে ফেলেছেন যাতে করে তাঁর কাছে ফিরে যান। আপনার ক্বুরান ও সুন্নাহ ভিত্তিক চিকিৎসা দরকার।
_______________________
প্রথম দেখতে হবে, আপনি যাদুগ্রস্থ বা জিনের আসর হয়েছে কিনা। বা সিজোফ্রনিয়া বা অন্য কোন মানসিক রোগ আছে কিনা। ভালো কোন চিকিৎসা পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আপনি আমার এই পরামর্শগুলো ট্রাই করে দেখতে পারেন।
_______________________
(১) আপনি ক্বুরান ও হাদীস নিয়মিত অর্থসহ বুঝে পড়ার চেশটা করুন। আর দ্বীন জানা ও বুঝার জন্যে নিয়মিত সহীহ আকিদাহর আলেমদের ওয়াজ লেকচার শুনুন, এটা মাস্ট, যতই ব্যস্ততা থাকুক দ্বীনের জন্য এটা করতে হবে। সম্ভব হলে এই লেকচারটা অবশ্যই শুনুন। বাংলা বা ইংরেজীতেও অনেক ভালো বক্তা রয়েছেন।
https://www.youtube.com/watch?v=yoX7i2LaAkU&feature=youtu.be
বাংলা বা ইংরেজীতেও অনেক ভালো বক্তা রয়েছেন।
_______________________
(২) সারা দিনে সহীহ মাসনুন, দুয়া যিকির ও আমলগুলো জানার, শীখার ও আমল করার অভ্যাস করুন। আপনি যত বেশী আল্লাহকে স্বরণ করবেন তত বাজে ও বেহুদা চিন্তা থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন, ইন শা আল্লাহ। আল্লাহর যিকিররের দ্বারা আপনার অন্তর নরম, পবিত্র ও পরিছন্ন হবে, অন্তরে প্রশান্তি ফিরে আসবে। এতে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, ভয় ও তাওয়াক্কুল তৈরী হবে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে।
_______________________
(৩) কিছু বই আছে অন্তরকে নরম করে এই বইগুলো পড়বেন, নিয়মতি। এমন দুইটি বই আমি নাম ও লিংক দিচ্ছি -
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/08/blog-post_41.html
_______________________
আরেকটা বই আছে পরকালের পাথেয়,
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2015/11/blog-post_82.html
_______________________
(৪) প্রতিদিন সকাল, সন্ধ্যা ও ঘুমের পূর্বে নিয়মিত দুয়াগুলো পড়বেন -
সকাল ও সন্ধ্যা সময় যেই দুয়া পড়তে হয়
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/1143754402323972:0
_______________________
জিনদের নাম, পরিচয় ও তাদের কাজঃ
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/06/blog-post_2415.html
_______________________
প্রতিদিনের রুকইয়া ও ঝাড়ফুক
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/11/blog-post_6.html
_______________________
যিনি বিদ্বেষন, বশীকরণ বা অন্য কোন যাদুটোনা দ্বারা আক্রান্ত
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/12/blog-post.html
_______________________

(৫) মনে রাখবেন, আপনার সমস্যাটা একদিনে হয়নি, তাই একদিনে ভালো হবেনা। তবে আপনি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আস্তে আস্তে এই ফাদ থেকে বের হোওয়ার চেশষ্টা করুন, ইন শা আল্লাহ পারবেন।

সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

বিবাহের জন্যে মোহরের সুন্নাহ

বিবাহের জন্যে মোহরের সুন্নাহ
শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
(আধুনিক যুগের মুদ্রাতে সুন্নাহ অনুযায়ী বিয়ের জন্যে) সর্বনিন্ম মোহর হচ্ছে ১১২ সৌদি রিয়াল. . .আর সুন্নাহ অনুযায়ী সর্বোচ্চ মোহর হচ্ছে ১৪০ সৌদি রিয়াল। অথচ, বর্তমানে এটা ৭০,০০০ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
শারহ আল-মুমতিলা যাদ আল-মুস্তাকনিঃ খন্ড-১২, পৃষ্ঠা ২৫২-২৫৩।
*৪ই মার্চ, ২০১৬ইং তারিখে এক সৌদি রিয়ালের মূল্য বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২০.৯ টাকা। সে হিসাবে ১১২ সৌদি রিয়াল হচ্ছে ২৩৪০ টাকা, আর ১৪০ সৌদি রিয়াল হচ্ছে ২৯২৬ টাকা।
শায়খ মুহাম্মদ আল-ওয়াসসাবি হাফিজাহুল্লাহ বলেন,
সুন্নাহ হচ্ছে বিয়ের মোহর ৫০০ দিরহাম, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৫০০০ ইয়েমেনি রিয়ালের [১] সমান। আর সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে (আমি) মুহাম্মাদ-এর আদর্শ। [২] যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তাহলে সুন্নাহর অনুসারীদের উচিৎ (নবীজির এই আদর্শ বাস্তবায়নে) সবার অগ্রগামী হওয়া। [৩]
[১] শায়খ মুহাম্মদ আল-ওয়াসসাবি হচ্ছেন ইয়েমেনের একজন প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন, একারণে তিনি ইয়েমেনি মুদ্রায় ৫০০ দিরহামের দামের কথা উল্লেখ করেছেন। ৮ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ ইং তারিখে ইন্টারনেটে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৫০০০ ইয়েমেনি রিয়ালের দাম বাংলাদেশী টাকায় সর্বোচ্চ ১৮৩১ টাকা। এই পরিমান মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে সুন্নাহ বা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ। কোন মেয়ে বা মেয়ের ওয়ালী এর চাইতে বেশি বা এর চাইতে কমও মোহর নির্ধারণ করতে পারে, এ ব্যপারে এখতিয়ার রয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমাদের জন্যে আল্লাহর রসুলের মাঝে সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে। সুরা আহযাবঃ ২১।
[২] এটা একটা হাদীসের অংশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (কুরানুল কারমী), আর সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে (আমি) মুহাম্মাদ-এর আদর্শ। সহীহ আল-বুখারী, আচার ব্যবহার অধ্যায়, খন্ড ৮, অধ্যায় ৭৩, হাদীস নং-১২০।

[৩] শায়খের বক্তব্যের উৎসঃ অডিও টেপ আহকাম আয-যাওয়াজ (বিয়ের হুকুম)।