রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

ক্বুরান শিক্ষা করার গুরুত্ব

আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ইরশাদ করেছেন, আর আমি ক্বুরআনে এমন বিষয় নাযিল করেছি যা রোগের জন্যে শিফা (সুচিকিৎসা), এবং মুমিনদের জন্য রহমত স্বরূপ। [সুরা বনী ইসরাঈলঃ ৮২]
প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা! আপনারা সবাই কেমন আছেন? আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি, আর দুয়া করি আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের সকলকেই ভালো রাখুন। দুনিয়াবী ব্যস্ততা ও শয়তানের ধোঁকা আমাদেরকে আমাদের রব্বের যিকির থেকে, তাঁর দ্বীন থেকে ফিরিয়ে রাখে। আমাদের জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই আসলে পরীক্ষা, আমরা কি আমাদের সময়গুলোকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে ব্যয় করলাম, নাকি শয়তানকে খুশি করার জন্যে, নিজের কুপ্রবৃত্তি পূরণের জন্যে নষ্ট করলাম। ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেকটা জিনিসের হিসাব দিতে হবে। একারণে আমরা নারী হই কিংবা পুরুষ, আমাদের ব্যস্ততা ও প্রতিকূলতা যতই থাকুকনা কেনো, অবশ্যই আমাদেরকে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে, সত্যিকারের আলেমদের কাছ থেকে সঠিক দ্বীন শিক্ষা করতে হবে। চলুন শত ব্যস্ততার মাঝেও আজকে আমরা জেনে নেই, শুদ্ধ উচ্চারণে আরবী শিখা আমাদের জন্যে কতটুকু জরুরী। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তোওফিক দান করুন, আমিন।
প্রিয় নবী মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ  (লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ)।
সুনানে তিরমিজি, সুনানে ইবনু মাজাহ, সুনানে নাসাঈ, সহীহ ইবনে হিব্বান।
لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ
বাংলায় উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
আরবী অক্ষরগুলোর বানান হচ্ছেঃ লাম যবর লা, তার সাথে যুক্ত খালি আলিফ। আরবী কোন অক্ষরের বাম দিকে যদি খালি আলিফ থাকে, তবে পূর্বের হরফকে এক আলিফ লম্বা করে পড়তে হয়, এই নিয়মকে মদ্দে তবায়ী বলা হয়। সুতরাং কালিমার প্রথমে লা বলে এক আলিফ টান হবে।
এখন এই টান দিয়ে লা- বললে অর্থ হচ্ছেঃ না বা নেই, কক্ষণো না। আর লা-কে টান দিয়ে না পড়ে, ইলাহার সাথে মিলিয়ে দ্রুত পড়লে অর্থ হচ্ছেঃ হ্যা আছে, অবশ্যই আছে। এক আলিফ লম্বা করে পড়া ও না পড়া, দুইটার অর্থ সম্পূর্ণ বিপরীত, আকাশ ও পাতাল পার্থক্য। এবার পরবর্তী শব্দগুলোর অর্থ দেখুনঃ
ইলাহা = মাবূদ বা উপাস্য
ইল্লা+আল্লাহ = ইল্লাল্লাহ = অর্থ হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া
সুতরাং, লাম এর পরে এক আলিফ লম্বা করে লা- পড়লে অর্থ হবেঃ
লা- নেই, কক্ষণো না, ইলাহা = মাবূদ বা উপাস্য, ইল্লাল্লাহ = আল্লাহ ছাড়া
পুরো অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই
আর লাম-এর পরে এক আলিফ লম্বা না করে তাড়াতাড়ি লা ইলাহা একসাথে পড়লে অর্থ হবেঃ
লা = অবশ্যই আছে, ইলাহা = মাবূদ বা উপাস্য, ইল্লাল্লাহ = আল্লাহ ছাড়া
পুরো অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহ ছাড়া অবশ্যই আরো মাবূদ আছে
নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক! লাম যবর লা-কে ভুল উচ্চারণ করে পড়লে কালিমায়ে তাওহীদ এর পরিবর্তে কালিমায়ে শিরক হয়ে যাবে।
এবার চিন্তা করুন, ক্বুরানের ভেতরে এমন কত শত অক্ষর আছে, প্রতিটি আয়াতে আয়াতে, আর সেইগুলোর সঠিক উচ্চারণ না করলে, না জেনেই আমরা কত কুফুরী ও শিরক করে ফেলবো, আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। যদিও আল্লাহকে ভালোবেসে, ক্বুরানের প্রতি মহব্বত রেখে আমরা অত্যন্ত ভক্তি ও মনোযোগ সহকারে ক্বুরআন পড়বো, কিন্তু ভুল উচ্চারণে ক্বুরআন পড়ে তার অর্থ নষ্ট করে কত বড় অভিশাপ আমরা উপার্জন করবো?
প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ক্বুরআন তোমার পক্ষে দলিল কিংবা তোমার বিপক্ষে দলীল হবে। [সহীহ মুসলিমঃ ৩২৮]
ভুল উচ্চারণ করে ক্বুরআনের অর্থকে ধ্বংস করলে নিশ্চয় কিয়ামতের দিন ক্বুরআন আমাদের বিপক্ষে সাক্ষী দেবে। একারণে শুদ্ধ উচ্চারণে ক্বুরান তেলাওয়াত শিক্ষা করা আমাদের জন্যে ফরজ। বিশেষ করে, আমরা সালাতে যতটুকু অংশ আরবী পড়ি, সেইগুলোর শুদ্ধ উচ্চারণে না পড়লেতো আমাদের সালাতই কবুল হবেনা। আসুন আমরা ক্বুরান শিখি, ক্বুরান পড়ি, দেখবেন আমাদের জীবনটা পরিবর্তন হয়ে যাবে ইং শাআল্লাহ।
বিঃদ্রঃ আমার এই পোস্ট পড়ে কেউ হতাশ হবেন না, আপনাদেরকে হতাশ করা আমার লিখার উদ্দেশ্য না। হ্যা এটা ঠিক, ক্বুরান শুদ্ধ করে না পড়লে আল্লাহর রাজি-খুশি নয়, বরং আল্লাহর অভিশাপ আমাদের উপরে আসবে। তবে আল্লাহ অসীম দয়ার মালিক, আমরা চাওয়ার আগেই ক্বুরানুল কারীমকে তিনি অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আর আমি এই ক্বুরআনকে বুঝা ও স্বরণ রাখার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, তোমাদের মধ্যে কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি? [সুরা ক্বামারঃ ১৭]
আল্লাহ ক্বুরানকে সহজ করে দিয়েছেন, কিন্তু তার জন্যে আমদের চেষ্টা ও মেহনত করতে হবে। আমাদের বয়স যতই হোক না কেনো, আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত সময় রয়েছে শিক্ষার জন্যে। আমাদের সময়গুলকে কাজে লাগাতে পারলে, আল্লাহকে ডাকার মতো ডাকতে পারলে, নিশ্চয়ই তিনি আমাদেরকে বিফল করবেন না। সর্বশেষ আল্লাহ তাআলার একটি আয়াত দ্বারা আজকের মতো এখানেই শেশ করছি,

আর যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করবে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎ কর্মপরায়ণদের সাথেই আছেন। [সুরা আনকাবুতঃ ৬৯]

শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৬

সিগারেট, শিশা, জর্দা, তামাক খাওয়া হারাম, হারাম এবং হারামঃ

সিগারেট, শিশা, জর্দা, তামাক খাওয়া হারাম, হারাম এবং হারামঃ
কঠিন শাস্তির পূর্বে আমি তাদেরকে হালকা শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে করে তারা প্রত্যাবর্তন করে। [সুরা সাজদাহঃ ২১]
সিগারেট, শীশা, তামাক, জর্দা খাওয়া হারাম না নিষিদ্ধ কারণ, এর দ্বারা স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়, এটা একটা খবিস (নাপাক) স্বভাব, এবং মুসলমানদের মূল্যবান সম্পদের অপচয় ও নষ্ট হয় আরব বিশ্বের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং সম্মানিত যেই সমস্ত রব্বানী আলেমগণ ধূমপান করা হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন,
(১) শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম (রহঃ),
(২) শায়খ আব্দুল আজিজ ইবনে ইবনে বাজ (রহঃ),
(৩) শায়খ মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন আলবানী (রহঃ),
(৪) শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন (রহঃ),
(৫) শায়খ আব্দুল আজিজ আলে-শায়খ (হাফিঃ),
(৬) শায়খ সালিহ আল-ফওজান (হাফিঃ)
(৭) শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে গুদায়্যান (রহঃ),
(৮) শায়খ বাকর আবু জায়েদ (রহঃ)
আরো অসংখ্য আরব ও অনারব আলেমে-দ্বীন গন।
অপচয় করা কবীরাহ গুনাহ, আল্লাহ তাআলা সুরা বনী ইসরাঈলে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলেছেন। অথচ মুসলমান দেশগুলোতে প্রতিদিন হাজার-হাজার, কোটি-কোটি টাকার সিগারেট ও তামাক কেনা-বেচা হচ্ছে। অনেক নামাযি ভাইয়েরাও এই খবিস জিনিসটা খেয়ে জীবন, যৌবন ও টাকা নষ্ট করছে। একেকটা সিগারেটের দাম ৮ টাকা, ১০টাকা করে। অথচ এই টাকা দিয়ে একটা পাউরুটি কেনা যায় যা একজন বড় মানুষের একবেলার জন্যে যথেষ্ঠ। সিরিয়া, ফিলিস্থিন, আফগানিস্থানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের মুসলমানদের ছোট ছোট বাচ্চারা দিনের পর দিন খাবার না পেয়ে শুকিয়ে কংকাল হয়ে যাচ্ছে. . .অন্যদিকে কিছু ভাইয়েরা প্যাকেটের পর প্যাকেট খেয়ে নিজেকে এবং সম্পদ বিনষ্ট করছে। অনেক কাপুরুষ যুবক ভাইয়েরা গার্লফ্রেন্ড নামক নব্য রক্ষিতাদের সাথে সারারাত ধরে প্রেম-পিরিতীর গল্প করছে, মোবাইলে, ইন্টারনেটে যৌনতাপূর্ণ অশ্লীল কথা বলছে, ঝগড়া করে নিজের আত্মাকে নষ্ট করছে আর সাথে সাথে প্যাকেটের পর প্যাকেট সিগারেট পুড়িয়ে তার মাঝে সান্ত্বনা খুঁজছে। কেউবা আবার পরীক্ষার টেনশানে আল্লাহর কাছে দুয়া না করে সিগারট খেয়ে, গাজা খেয়ে শয়তানের কাছে আত্মসমর্পণ করছে। কেউবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ইয়াবার কেনার টাকার জন্যে চুরি ও ছিনতাই করছে। ধূমপানের অভ্যাসটা কত খবিস ও নিকৃষ্ট হতে পারে চিন্তা করে দেখুন, কত যে মানুষ বাথরুমের মতো নাপাক জায়গায় গিয়ে সিগারেট খেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করছে, সিগারেটের ধোঁয়া, বাথরুমের দুর্গন্ধ খেয়ে পেট ভর্তি করছে। যাই হোক, এমনই এক যুবক সাব্বির (ছদ্ম নাম) আর দশটা ছেলের মতোই বাথরুমে গিয়ে সিগারেট খেতে অভ্যস্থ। অনেক সময় বাথরুমের সুয়ারেজের ময়লা পচে প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরী হয়ে থাকে। একদিন সাব্বির বাথরুমে গিয়ে সিগারেট খাওয়ার জন্যে লাইটার জ্বালানো মাত্রই বাথরুমে জমে থাকা সেই গ্যাসে আগুন ধরে গেলো। নিমিষের মধ্যে বাথরুমের ভেতর বিশাল বড় আগুন জ্বলে প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরণ হয়ে সাব্বির বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে ছিটকে এসে বাইরে পড়লো। গুরুত অগ্নিদগ্ধ হয়ে সাব্বির শরীরে প্রায় ৩৫% পোড়া নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি হয়েছেসাব্বিরের ভাগ্য কিছুটা ভালো যে, বিস্ফোরণের ফলে সে বাথরুমের দরজা ভেংগে বাইরে এসে পড়ে, যার কারণে পুরো অগ্নিকান্ডে দগ্ধ হয়ে কয়লা হয়ে যায়নি। সে তুলনায় জনাব রিজভী হোসাইনের (ছদ্মনাম) ভাগ্য এতোটা ভালো ছিলোনা। সাব্বিরের মতো তিনি বাথরুমে সিগারেট খেতে গিয়ে আগুন জ্বলে পুরো অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, এবং দুইদিন চিকিৎসার পরে মৃত্যুবরণ করেন।
এই হচ্ছে হারাম কাজের, আল্লাহর আদেশ নিষেধকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বা সেই ব্যপারে ভ্রুক্ষেপ না করে দিনের পর দিন সীমা লঙ্ঘন করার সামান্য দুনিয়াবী শাস্তি। এইরম হাতে নাতে নগদ শাস্তি আল্লাহ সবাইকে দেন না, কারণ চূড়ান্ত বিচার ফয়সালার দিনতো বাকী। তবে পাপীর সংখ্যা যখন অনেক বেশি হয়ে যায় তখন তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে, তাদেরকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সামান্য কয়জনকে দুনিয়াবী শাস্তি দিয়ে বাকিদেরকে সতর্ক করে দেন।
অনেকে মনে করতে পারেন, বাথরুমে গিয়ে না খেলেই বুঝি নিরাপদ। তাদের জন্যে বলছি আল্লাহ চাইলে বান্দাকে হাজারটা উপায়ে শাস্তি দিতে পারেন। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে প্রধান যেই রোগগুলো হার্ট এটাক, হার্ট ব্লক, ব্রেইন স্ট্রোক, এজমা, ফুসফুসের ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এমন অনেক রোগের প্রধান রিস্ক ফ্যাক্টর হচ্ছে স্মোকিং এবং মদ পান, সেটা আপনি যেকোন ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেই সত্যতা জানতে পারবেন। তাহলে প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে অনেকও ডাক্তারও কেনো খায়? জ্বি, এটা সত্য। এমনও ডাক্তারের উদাহরণ আমি জানি, যে নিজে ধূমপান করে, ধূমপান করে ধূমপান বিরোধী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে যায়। ক্বুরানের আল্লাহ তাআলা ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের উপমা দিয়েছেন পুস্তক বহনকারী গাধার মতো, যারা জ্ঞান অর্জন করেছে কিন্তু সেই জ্ঞান তাদের কোন উপকারে আসেনা। যেই সমস্ত ডাক্তার মেডিক্যাল সাইয়েন্স পড়েও ধূমপান করে বা মদ খায় তাদের উপমা এই পুস্তক বহনকারী গাধাদের মতোই!
কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়া বর্তমানে বহু ছেলে সিগারেট বা মদের নেশায় আসক্ত। সুতরাং, দ্বীনি বোনেরা বিয়ে করার পূর্বে ভালো করে জেনে নেবেন। কারণ, কে চাইবে শুধুমাত্র দুনিয়াবি বিষয় দেখে দেখে এমন লোকদেরকে বিয়ে করতে আর দুইদিন পরে হার্ট এটাক করে মরে অল্প বয়সে বিধবা হতে?

আমার কথায় কেউ কষ্ট পেলে মাফ করবেন, আপনাদেরকে কষ্ট দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্বীনি ভাই হিসেবে আপনাদেরকে সতর্ক করা, যেই জ্ঞান আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন সেটা আপনাদের সাথে শেয়ার করা। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং আমাদের প্রতি রহম করুন, আমিন।

শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৬

হৃদয় গলানো একটা হাদীস

আল্লাহর রহমত ও বড়ত্ব সম্পর্কে, বান্দাদের প্রতি তাঁর অসীম দয়া ও অনুগ্রহ নিয়ে হৃদয় গলানো একটা হাদীসঃ
আবু যর আল-গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় ও সুমহান রবের নিকট হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ্ বলেছেন:
=> হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুমকে আমার জন্য হারাম করে দিয়েছি, আর তা তোমাদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি; অতএব তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না।
=> হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে হেদায়াত দিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। সুতরাং আমার কাছে হেদায়াত চাও, আমি তোমাদের হেদায়াত দান করব।
=> হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে অন্ন দান করেছি, সে ছাড়া তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাও, আমি তোমাদের খাদ্য দান করব।
=> হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সবাই বিবস্ত্র, সে ব্যতীত যাকে আমি কাপড় পরিয়েছি। সুতরাং আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্রদান করব।
=> হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন গুনাহ্ করছ, আর আমি তোমাদের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেই। সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।
=> হে আমার বান্দাগণ! তোমরা কখনোই আমার ক্ষতি করার শক্তি রাখ না যে, আমার কোন ক্ষতি করবে। আর তোমরা কখনোই আমার ভালো করার ক্ষমতা রাখ না যে, আমার ভালো করবে।
=> হে আমার বান্দাগণ! তোমরা পূর্বের ও পরের সমস্ত মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মোত্তাকী ও পরহেযগার ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই বৃদ্ধি করবে না।
=> হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বের ও পরের সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে পাপী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই কমাতে পারবে না।
=> হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বের ও তোমাদের পরের সকলে, তোমাদের সমস্ত মানুষ ও তোমাদের সমস্ত জিন যদি সবাই একই ময়দানে দাঁড়িয়ে আমার কাছে চায় এবং আমি সকলের চাওয়া পূরণ করে দেই তবে আমার নিকট যা আছে তাতে সমুদ্রে এক সুঁই রাখলে যতটা কম হয়ে যায় তা ব্যতীত আর কিছু কম হতে পারে না।
=> হে আমার বান্দাগণ! আমি তোমাদের আমলকে (কাজকে) তোমাদের জন্য গণনা করে রাখি, আর আমি তার পুরোপুরি প্রতিফল দিয়ে দেব। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তম প্রতিফল পাবে তার উচিৎ হবে আল্লাহর প্রশংসা করা। আর যে তার বিপরীত পাবে, তার শুধু নিজেকেই ধিক্কার দেওয়া উচিত।"

[সহীহ মুসলিমঃ ২৫৭৭]

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৬

ইমামের ইক্তিদা প্রসংগে জরুরী কিছু কথা


আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি (ক) আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, (খ) আমাদের ক্বিবলাহমুখী হয় আর (গ) আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সে ব্যক্তি একজন মুসলিম, যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীতে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।
সহীহুল বুখারী। তাওহীদঃ ৩৯১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৮৪।
হাদীসে বর্ণিত এই তিনটি শর্ত পূরণ করে, এমন যেকোন মুসলিম ব্যক্তির ইমামতিতে সালাত আদায় করা জায়েজ। সুতরাং হানাফীদের ইমামতিতে কোন আহলে হাদীসের এবং, আহলে হাদিসের ইমামতিতে কোন হানাফী সালাত আদায় করতে পারবে, এ ব্যপারে কোন ইখতিলাফ নেই। তবে মুসলিম দাবীদার কোন ব্যক্তি যদি স্পষ্ট কোন শিরকি বা কুফুরী আকীদাহ রাখে বা এমন কোন কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে তার পেছনে সালাত আদায় করা শুদ্ধ নয়। কিছু স্পষ্ট শিরকি কুফুরী আকিদাহর নমুনা নিচে দেওয়া হলো।  
(১) যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা আরশের উর্ধে, এই কথাকে অস্বীকার করে এবং আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বাস করে যে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। অর্থাৎ, মহাবিশ্বের সর্বত্র এবং সবকিছুর মাঝেই আল্লাহ আছেন। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক, শিরকি আকিদাহ।
শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান অথবা, যে আল্লাহ সবকিছুর উর্ধে এ কথাকে অস্বীকার করে, সে ব্যক্তি কাফির। কারণ, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কথাকে মিথ্যা বলেছে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের ইজমাকে অস্বীকার করেছে।
(২) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক, কুফুরি আকিদাহ।
(৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়েব জানেন। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক, শিরকি আকিদাহ।
শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস করবে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নূর (বা আল্লাহর যাতী নূর) মানুষ নন, তিনি গায়েবের খবর জানেন, সে আল্লাহ এবং রাসূলের সাথে কুফরী করল। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দুশমন, বন্ধু নয়। কেননা তার কথা আল্লাহ ও রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, সে কাফের।
শায়খ আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নূরের তৈরী বলে বিশ্বাস করে, তাকে ইমাম নিয়োগ করা এবং তার পিছনে সালাত আদায় করা জায়েজ নয়।
ফতোয়া আরকানুল ইসলাম, ঈমান অধ্যায়, প্রশ্ন নং-৪৭।
(৪) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিফায়ী নামক একজন বিদআতী সূফীর জন্যে কবর থেকে হাত বের করে দিয়েছিলেন। এটা তাবলিগ জামাতের কিতাব ফাজায়েলে হজ্জে লিখা আছে।
এ ব্যপারে সম্মানিত মুফতিরা উল্লেখ করেছেন, যে ইমাম এই কাহিনী বিশ্বাস করে তার পেছনে সলাত আদায় করা জায়েজ হবে না, কারণ তিনি তাঁর আক্কিদাগত দিক দিয়ে খাঁটি মুসলিম নন এবং তিনি কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন।
ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, ফতোয়া নং- ২১৪১২, খণ্ড- ২, পৃষ্ঠা- ২৮২-২৮৪।
(৫) হুসাইন আহমাদ মাদানির ডাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর থেকে উঠে এসেছিলেন। এটা হাটহাজারি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং হেফাজতে ইসলামের প্রধান, আহমাদ শফী তার কিতাব ইরশাদাতে মুরশিদীতে লিখেছেন।
(৬) মানসুর হাল্লাজ, বায়েজীদ বুস্তামীদের হুলুল, আনাল হক্ক্, ওহদাতুল ওজুদের মতো শিরকি আকিদায় যারা বিশ্বাসী এবং তাদেরকে আল্লাহর ওয়ালী মনে করে।

(৭) যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মানিত সাহাবিদেরকে বা কোন একজন সাহাবীকে গালি-গালাজ করে, তাঁদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে, এটা একটা কবীরাহ গুনাহ। যদিও এটা শিরক বা কুফুরী নয়, তবে শায়খ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাস হাফিজাহুল্লাহ এমন ফাসেক ইমামদেরকে বর্জন করতে উপদেশ দিয়েছেন। বিশেষ কিছু রাজনৈতিক দলের মুকাল্লিদরা আমীরে মুয়াবিয়া, আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কে গালি দেয়, এমনকি শায়খ নিজে মসজিদুল হারামে এই জঘন্য কাজে লিপ্ত হতে দেখেছেন কিছু জাহিলকে, তাদের ব্যপারে আলোচনা প্রসংগে শায়খ এই কথা বলেছিলেন।

শনিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৬

ফ্যাশানের দাঁড়ি ও টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী আলেমদের ফেতনাহ

কাফির দেশে বসবাসকারী কিছু ইসলামিক বক্তা কাফিরদেরকে সন্তুষ্ট করে, এমন বিভ্রান্তিকর ওয়াজ-লেকচার দিয়ে তরুণদের মাঝে খুবই জনপ্রিয়। অথচ তাদের ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞানে রয়েছে মারাত্মক ত্রুটি। তাদের মন ভোলানো আধা ইসলামিক কথা-বার্তা শুনে, মিডিয়াতে চমকপ্রদ উপস্থাপনা থেকে অনেক ভক্ত শ্রোতারাই তাদেরকে আলেম মনে করে ধোঁকার মাঝে রয়েছেন। এদের মাঝে কেউ কেউ এমনও রয়েছে যে, ১০টা হাদীস জানে কিনা সন্দেহ, হাদীস নিয়ে জঘন্য মিথ্যা কথা বলে, তবুও নিজেকে ক্বুরান এক্সপার্ট, মডারেট আলেম বলে দাবী করে ক্বুরান-হাদীসের মনমতো ব্যখ্যা করে. . .বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ব্যপার হচ্ছে, তাদের অনেকের মুখে দাঁড়ি নেই, বা নিয়মিত ট্রিম করে এমন ফ্যাশানের দাঁড়ি। অনেকের কাপড় টাখনুর নিচে এবং সবার সামনেই টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে ক্বুরান শীক্ষা(!) দিতে বিন্দুমাত্র লজ্জা বোধ করে না। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন প্রকার লোক এমন রয়েছে, যাদের সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না, আর না কেয়ামতের দিন তাদের দিকে তাকাবেন, আর না তাদের পবিত্র করবেন বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আমি (আবু হুরাইরা) বললাম, আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? ওরা তো ক্ষতিগ্রস্ত! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী, ব্যবসার সামগ্রী মিথ্যা কসম দিয়ে বিক্রয়কারী এবং কাউকে কিছু দান করার পর তার খোটাদাতা। [সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, নং ২৯৪]
দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এমন জাহিল বক্তাদেরকে অনেকে আলেম মনে করে, অন্ধ ভক্তিতে তাদের ভ্রান্ত কথা-বার্তাগুলোকে সঠিক বলে মনে করে তাদের পক্ষ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে। অবশ্য এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই কারণ,
যেমন বক্তা, তেমনই তার শ্রোতা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের একটা লক্ষণ হচ্ছে যে, মানুষ জাহেল (মূর্খ) লোকদের কাছ থেকে ইলম (দ্বীনের জ্ঞান) অর্জন করবে।
[তাবারানি, জামি আস-সাগীরঃ ২২০৩]

আল্লাহ আমাদেরকে গোমরাহী থেকে হেফাজত করুন, আমিন।

স্বর্ণ দিয়ে লিখে রাখার মতো জ্ঞানী ব্যক্তিদের উপদেশঃ (পর্ব-২)

স্বর্ণ দিয়ে লিখে রাখার মতো জ্ঞানী ব্যক্তিদের উপদেশঃ (পর্ব-২)
ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
যে ব্যক্তি তার সময়গুলোকে আল্লাহর যিকর, ক্বুরান তেলাওয়াতে ব্যয় করবে, নেককার লোকদের সাহচর্য গ্রহণ করবে এবং মূর্খ ও খারাপ লোকদের বর্জন করবে, তাহলে তার আত্মা পবিত্র ও কোমল হবে।
মাজমু ফাতাওয়া শায়খ ইবনে বাজঃ ৫/২৪৪।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
তিনটা জিনিস শরীরকে অসুস্থ করেঃ
(১) কথা বেশি বলা,
(২) অধিক নিদ্রা এবং
(৩) অতিরিক্ত পানাহার করা।
চারটা জিনিস শরীরকে ধ্বংস করেঃ
(১) দুঃশ্চিন্তা ও পেরেশানি,
(২) দুঃখ ও হতাশা,
(৩) ক্ষুদা এবং
(৪) অধিক রাত্রি পর্যন্ত জেগে থাকা।
চারটা জিনিস চেহারাকে মলিন করে এবং আনন্দ ও সম্মান কেড়ে নেয়ঃ
(১) মিথ্যা,
(২) ঔদ্ধত্য ও অহংকার,
(৩) জ্ঞান ছাড়া অতিরিক্ত প্রশ্ন করা এবং
(৪) লজ্জাহীনতা ও অশ্লীলতা।
চারটা জিনিস আনন্দ ও সম্মান ফিরিয়ে আনেঃ
(১) তাক্বওয়া,
(২) সত্যবাদীতা,
(৩) দানশীলতা এবং
(৪) আত্মসম্মান।
চারটা জিনিস রিযক বৃদ্ধি করেঃ
(১) কিয়ামুল লাইল বা রাত জেগে সালাত আদায় করা,
(২) সূর্যোদয়ের পূর্বে অধিক পরিমানে আল্লাহর যিকর করা,
(৩) নিয়মিত দান-সাদাকা করা এবং
(৪) দিনের শুরু ও শেষে আল্লাহর যিকর করা।
চারটা জিনিস রিযক কমিয়ে দেয়ঃ
(১) (ফজরের পরে) সকাল বেলা ঘুমিয়ে থাকা,
(২) সালাতে ত্রুটি বা কম করা,
(৩) অলসতা এবং
(৪) প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা।

যাদ আল-মায়াদ; চিকিৎসা অধ্যায়ঃ ৪/৩৭৮।