বুধবার, ২৮ মে, ২০১৪

সাইয়্যেদিনা ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর দুয়া



সাইয়্যেদিনা ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর দুয়া.....

ছোটবেলায় নবী-রাসূলদের কাহিনী পড়া বা শোনার সময় যে নবীর কাহিনী সবচাইতে বেশি হৃদয় স্পর্শ করে যেত তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন - সাইয়্যেদিনা ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ আলাইহিস সালাম।

যেইভাবে তিনি একাই তার পিতাসহ পুরো সমাজের বিরোধীতা করেন মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে এবং মানুষকে “তাওহীদ” এর দাওয়াত দেন - সত্যিক বিস্ময়কর একটা ঘটনা।

এইভাবে “তাওহীদ” এর দাওয়াত দেওয়ার কারণে পুরো দেশবাসী যখন তার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয় তখন জালেম শাসক নমরুদ ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে আগুনে নিক্ষেপ করতে আদেশ করেন। আল্লাহর হুকুমে বিশাল অগ্নিকুন্ড ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর জন্য হয়ে যায় শীতল ও আরামদায়ক।

নবী-রাসূলদের কাহিনীগুলো জানা ও পড়া সকলের জন্যই একান্ত কর্তব্য, কারণ তারা হচ্ছেন আমাদের জন্য রোল মডেল। তবে, মা-বোনদের উচিত এইগুলো আরো বেশি করে পড়া ও গল্প বলার অভ্যাস আয়ত্ত করা। একজন “মা” হচ্ছেন তার সন্তানদের জন্য শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। মা যদি ভালো হয় আশা করা যায় ছেলে-মেয়েদের “তারবিয়া” ভালো হবে। আজকাল হিন্দী ও কাফের মুশরেকদের অশ্লীল সংস্কৃতির ছোবলে মুসলিমদের পরিবারে ইসলাম চর্চাতো উঠেই যাচ্ছে। আজকাল শিশুরা যতগুলো হিন্দুদের দেব-দেবী আর কার্টুনের নাম জানে এতোগুলো নবী-রাসুলদের নাম জানেনা, যতগুলো হিন্দী অশ্লীল গান মুখস্থ এতোগুলো সুরা তাদের মুখস্থ না। এই দোষ তাদের বাবা-মায়ের, কারণ তাদের বাবা-মায়েরও একই দশা! তবে বিশেষ করে বাবার কাপুরুষতা এই জন্য বেশি দায়ী। আজকাল অধিকাংশ ভাইয়েরাই তাদের স্ত্রীদেরকে হিন্দী সিরিয়াল দেখা থেকে বিরত রাখতে পারেনা, ইসলাম এর ব্যপারে জানাতে পারেনা। পারবে কি করে, নিজের অবস্থাই হচ্ছে…

যাইহোক, ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম পরবর্তীতে আল্লাহর হুকুমে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তার স্ত্রী ও প্রিয় সন্তান ইসহাক আলাইহিস সালামকে মক্কার কাবার কাছে রেখে যান, যাতে করে কালক্রমে এখানে বসতি গড়ে উঠে। মাঝে মাঝে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে দেখতে যেতেন। এমনই একসময় মুওয়্যাহিদ (তাওহীদবাদীদের) ইমাম, সাইয়্যেদিনা ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ আলাইহিস সালাম এর তার সন্তান ও বংশধরদের জন্য হৃদয় ছুয়ে যাওয়া কিছু দুয়া যা কুরানুল কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে.....

ক্বারীঃ শায়খ আইয়ুব, তিনি একসময় মদীনার মসজিদুন-নববী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইমাম ছিলেন। ২০১১ সালে মদীনার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটির একটা অনুষ্ঠানের শুরুতে তার তেলাওয়াত করা কিছু অংশ। কুরানে বর্ণিত এই দুয়গুলো মুখস্থ করে দুয়া করতে পারলে ভালো।

'উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।
৩৫. যখন ইব্রাহীম বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা! আপনি এই শহরকে শান্তিময় করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান-সন্ততিকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন।
৩৬. হে আমার পালনকর্তা! এরা (মূর্তিগুলো) অনেক মানুষকে বিপথগামী করেছে। অতঃপর, যে আমার অনুসরণ করল, সে আমার এবং যে আমার অবাধ্যতা করল, (তার ব্যপারে আমি আশা করি) নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৩৭. হে আমাদের পালনকর্তা! আমি আমার এক সন্তানকে তোমার পবিত্র গৃহের (কাবার) সন্নিকটে চাষাবাদহীন উপত্যকায় আবাদ করেছি; হে আমাদের পালনকর্তা, যেন তারা নামায কায়েম রাখে। অতঃপর, আপনি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের দিকে আকৃষ্ট করে দিন এবং তাদেরকে ফল দ্বারা রিযক দান করুন, সম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।
৩৮. হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি তো জানেন, আমরা যা কিছু গোপনে করি এবং যা কিছু প্রকাশ্যে করি। আল্লাহর কাছে পৃথিবীতে ও আকাশে কোন কিছুই গোপন নয়।
৩৯. সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য! যিনি আমাকে এই বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন, নিশ্চয় আমার পালনকর্তা দোয়া শ্রবণ করেন।
৪০. হে আমার পালনকর্তা! আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা আপনি আমাদের দুয়া কবুল করুন।
৪১. হে আমাদের পালনকর্তা! যেদিন হিসাব কায়েম করা হবে সেই দিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সমস্ত মুমিনদেরকে ক্ষমা করুন। (আমীন)
সুরা ইব্রাহীমঃ ৩৫-৪১। 

কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের মাঝে দ্বীনের ব্যপারে উদাসীনতা



হালালকে হারাম মনে করা অথবা হারাম জিনসকে হালাল মনে করা কুফুরি কাজ এবং এর দ্বারা আললাহর প্রতি মিথ্যারোপ করা হয়। আল্লাহ কঠোরভাবে কুরানে নিষেধ করেছেন তোমরা জিহবা দিয়ে (মনগড়া ফতোয়াবাজি করে) বলোনা এইটা হালাল এইটা হারাম। এর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ, এমনকি এর দ্বারা কেউ দ্বীন থেকে খারেজ হয়ে কাফের হয়ে যেতে পারে (নাউযুবিল্লাহ)।

কিছুদিন আগে ভার্সিটির ছেলে মেয়েদের নিয়ে পোস্ট দিলে একজন দাবী করেছেন, আমি নাকি ভার্সিটির ছেলে-মেয়েদের প্রতি জেলাস! তাদেরকে দেখতে পারিনা এইজন্য তাদের সমালোচনা করি। কি হাস্যকর কথা, কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ে এমন ভালো ছেলে মেয়ে থাকতে পারে আবার অনেক বেদ্বীন ছেলে মেয়েও থাকতে পারে, এখানে জেলাসীর কি থাকতে পারে? এইভাবে সমালোচনা করা বা মানুষকে খারাপ বিষয় থেকে সতর্ক করতে গেলে আপনারা যদি বলেন আমরা জেলাস তাহলেতো অর্ধেক দাওয়াতের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ দাওয়াতের অর্ধেক হচ্ছে খারাপ কাজ থেকে মানুষকে সতর্ক বা নিষেধ করা, আর বাকি অর্ধেক হচ্ছে ভালো কাজের ব্যপারে মানুষকে দাওয়াত দেওয়া।

যাইহোক, কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের মাঝে খুব কমন কিছু কাজ যা তাদের দ্বীনের ব্যপারে উদাসীনতা ও অনীহার বহির্প্রকাশঃ

১. দ্বীন শিক্ষা না করা, কুরান ও সুন্নাহ স্টাডি না করা। না তাদের বাবা-মা, না তাদের সমাজ, শিক্ষক তাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেয়। শুধুমাত্র ছোটবেলায় ২-৪টা সুরা মুখস্থ করার মাঝেই ইসলাম শিক্ষা সীমাবদ্ধ।

২. বেশিরভাগ হচ্ছে বেনামাযী, নামাযের ধার ধারেনা। নামায না পড়লে ঈমান থাকেনা, এইটা ঠিকমতো জানেনা বা জানলেও কোন পড়োয়া করেনা।

৩. বেশিরভাগ ছেলেই মেয়েদের অনুকরণ করে দাড়ি রাখেনা। অনেকে দাড়ি রাখে, পোশাক-আশাক ও চাল-চলনে কাফের-মুশরেক ব্যভিচারী নায়কদের অনুকরণ করে, রাসুল সাঃ কে অনুসরন করেনা।

৪. বেনামাযী ছেলেদের কথা নাহয় বাদ, অনেক নামাযী ছেলেও টাখনুর নিচে প্যানট পড়ে। অথচ একজন মানুষ জাহান্নামী হওয়ার জন্য এই একটা কবীরা গুনাহই যথেযষ্ঠ (নাউযুবিল্লাহ)!

৫. বেশিরভাগ মেয়েই হিজাব পর্দা করেনা, অর্ধ নগ্ন ড্রেস আপ করে বা এমন, পোশাক পড়েও উলংগ। আর অনেকে হিজাব করে মনগড়া হিজাব, যা আসলে শরয়ী হিজাবের শর্ত পূরণ করেনা।

৬. ছেলে মেয়েরা ফ্রী মিক্সিং, বন্ধুত্ব, প্রেম ভালোবাসাকে স্বাভাবিক কালচার হিসেবে নিয়েছে অথচ এটা বড় একটা মুনকার যা গোটা সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যে যত বেশি অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায় লিপ্ত হচ্ছে সে তত বেশি স্মার্ট, ছেলে মেয়েরা জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে ক্রেডিট হিসেবে নিচ্ছে।

৭. কাফের মুশরেকদের ষড়্যন্ত্রে দ্বীনকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন শিরকী-কুফুরী ও হারাম শিক্ষা করছে।

৮. নামাযের সময় না দিয়ে সেই সময়ে ক্লাস দিয়ে, রমযানে পরীক্ষা দিয়ে আর অন্য সময় ছটি দিয়ে, এইভাবে বিভিন্নভাবে দ্বীনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

৯. অনেক প্রতিষ্ঠানে নারীদেরকে হিজাদ পর্দা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, যারা করতে চায় তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ কাফের-বেদ্বীন মেয়েরা অর্ধনগ্ন হয়ে আসছে, জিনা ব্যভিচারে লিপ্ত কর্তৃপক্ষ জানা সত্ত্বেও কোন উদ্যোগ নেয়না।

১০. গান বাজনা, টিভিতে নাটক সিনেমা খেলা দেখা, গল্পের বই এইগুলো থেকে বেচে আছে এমন ছেলে মেয়ের সং্খ্যা আসলে খুবই কম। এইসবগুলোর মাঝে আছে অশ্লীলতা, যিনা ব্যভিচারের দিকে দাওয়াত ও শিক্ষা দেওয়া, শিরক ও কুফর, মুর্তি পূজা। আশ্চর্যজনকভাবে মুসলিম দাবোদার নারী ও পুরুষেরা এইগুলোকে হালাল এর মতো করে নিয়েছে, কোন পরোয়া নেই। অনেক পথভ্র্ষ্ট লোকেরা শিল্প-সাহিত্য নাম দিয়ে এইগুলোর পক্ষে তর্ক করে।

১১. বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুযষ্ঠান ও দিবস উদযাপন নামে হাতে কলমে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে খারাপ কাজের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

১২. ছাত্র রাজনীতি নাম দিয়ে সন্ত্রাস্যি, খুনি, চাদাবাজ, ধর্ষক গ্রে তোলা হচ্ছে।

হে মুসলিম ভাই ও বোনেরা সতর্ক হন! শয়তানের ধোকায় পড়বেন না, কাফেরদের ষড়্যন্ত্রে পড়ে ঈমানকে সামান্য দুনিয়ার কারণে বিক্রি করে দেবেন না।


#দুনিয়া_মুমিনদের_জন্য_কারাগার_কাফেরদের_জন্য_জান্নাত

মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০১৪

বাংলাদেশী “দেওবন্দী আকাবির” (বুজুর্গদের) মাঝে শিরকের প্রাদুর্ভাব


বাংলাদেশী “দেওবন্দী আকাবির” (বুজুর্গদের) মাঝে শিরকের প্রাদুর্ভাবঃ

***পোস্টটা বড় হলেও এড়িয়ে যাবেন না, দেওবন্দী আকীদার মাঝে কি ধরণের শিরক আছে জানার জন্য এই পোস্টে দলীল দেওয়া আছে।

আমাদের দেশের অনেক লোক আছে, তারা আরব দেশের বড় বড় আলেম-ওলামাদেরকে দেখতে পারেন নাহ! তাদের মতে, আরব দেশের শায়খ আব্দুল আজীজ ইবনে বাজ, শায়খ নাসিরউদ্দীন আলবানী, শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ-উসাইমিন, শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদী, শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আফীফি, শায়খ মুহাম্মাদ আমিন আল-শাঙ্কিতি, শায়খ আব্দুন-নাসির আস-সাদী, ইনারা নাকি কোন আলেমই নাহ!

তাদের কাছে আলেম হচ্ছে শুধুমাত্র ভারতের “দেওবন্দ মাদ্রাসার” লোকেরাই যেমনঃ- আশরাফ আলী-থানবী, রশিদ আহমাদ গাঙ্গোহী, হুসাইন আহমাদ মাদানী, কাসিম নানুতুবি, খলিল আহমাদ সাহারানপুরী…

তাদের মতে, গোটা আরব বিশ্বে নাকি কোন আলেম নেই! সব আলেম শুধু হিন্দুস্থানেই জন্ম নেয়!

যাইহোক, এরা দেওবন্দ মাদ্রাসার যেই আকীদা ও তাদের আলেমদের অনুসারী। প্রচলিতভাবে তারা “দেওবন্দী” নামে পরিচিত। দেওবন্দী আকীদার অনুসারী আমাদের দেশের অনেকেই, তাদের মাঝে যারা বড় আলেম তাদের কিছু শিরক, কুফর ও বেদাতী আকীদা তুলে ধরা হলো। উল্লেখ্য, বাংলাদেশী দেওবন্দী আর তাদের মূল দেওবন্দ মাদ্রাসার আলেমদের আকীদাহ আসলে একই, এদের কিতাবে যে শিরক পাওয়া যাবে, দেওবন্দী আলেমদের মাঝেই সেইম জিনিস পাওয়া যাবে। মূলত এরা হিন্দুস্তানের আলেমদের কাছে থেকে “সূফীবাদ” নাম দিয়ে এইসমস্ত বাতিল জিনিসকে “ইসলাম” বলে চালানোর চেষ্টা করছে!
________________________

১. বাংলাদেশে সবচাইতে বড় দেওবন্দী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল, দেশে দেওবন্দীদের সবচাইতে বড় আলেম, মাওলানা আহমাদ শফি সাহেব তার কিতাব “ইরশাদাতে মুরশিদীতে” লিখেছেনঃ

“হোসাইন আহমদ মাদানীকে মদীনায় তার ছাত্ররা প্রশ্ন করলো, রাসুল সাঃ কি কবরে জীবিত?
তিনি বললেন, আলমে মেছালীতে রাসুল সাঃ জীবিত, কিন্ত ছাত্ররা দলিল প্রমাণাদী পেশ করলো যে কোরআনে সূরা যুমারের ৩০নং আয়াতে বলা হয়েছে
“(হে নবী!) নিশ্চয় আপনি মৃত্যুবরণ করবেন আর তারাও মৃত্যুবরণ করবে”।
মাদানী ছাত্রদেরকে বিভিন্ন দলিলের মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করলেন, কিন্ত তারা বুঝতে অপ্রস্তুত, এরপর মাদানী ছাত্রদেরকে নিয়ে রওযায়ে আতহারের কাছে নিয়ে গেলেন এবং হাত দিয়ে ইশারা করলেন, এই ইশারাতে রাসুল সাঃ রওযা থেকে মাথা উঠিয়ে সকলকে দেখা দিয়ে আবার মাটির নিচে লুকিয়ে গেলেন”!!?
ইরশাদাতে মুরশিদী, পৃষ্ঠা ৪২।

মন্তব্যঃ ডাহা বানোয়াট, মিথ্যা কাহিনী দিয়ে মৃত্যুর পরেও কোন ব্যক্তি দুনিয়াতে আসে - এই কুফুরী আকীদা বয়ান করা হয়েছে। এছাড়া একজন মানুষের ডাকে রাসুল সাঃ কবর থেকে বের হয়ে এসেছেন – এইরকম ভুয়া কাহিনী বলে রাসুল সাঃ এর সম্মান ও মর্যাদারও হানি করা হয়েছে (নাউযুবিল্লাহ)।

বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ- “হায়াতুন্নবী”, “জিন্দানবী” বলা কুরআন বিরোধী আকীদা

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/05/blog-post_2258.html
____________________________

২. দেওবন্দ মাদ্রাসার শিক্ষা নিয়ে যেই দলটি সারা বিশ্বে “দেওবন্দী আকীদাহ” প্রচার করে যাচ্ছে সেটি হচ্ছে তাবলীগ জামাত। এদের কিতাবে বহু শেরেকী কথা-বার্তা আছে যা সাধারণ মানুষ ধরতে পারেনা। সাধারণ মানুষেরা ফযীলতের ধোকায় পড়ে, ফাযায়েল কিতাবগুলোকে পবিত্র কিতাব মনে করে মসজিদে মসজিদে শেরেকী কিতাবের তালীম করে যাচ্ছে।

“তাবলীগ জামাতের” লেখক মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলবী সাহেব কর্তৃক লিখিত, তাবলিগ জামাতের মূল পাঠ্যসূচি, ফাযায়েলে সাদাকাতে কবর-মাযার পূজার শিক্ষাঃ

“মিশরে একজন নেক বখত লোক ছিলেন। অভাবগ্রস্ত হইয়া কোন এক লোক তাহার নিকট আসিলে তিনি চাঁদা উসুল করিয়া তাহাকে দিয়া দিতেন। একদা জনৈক ফকির তাহার নিকট আসিয়া বলিল আমার একটা ছেলে হইয়াছে, তাহার এছলাহের ব্যবস্থার জন্য আমার নিকট কিছুই নাই। এই ব্যাক্তি উঠিল ও ফকিরকে অনেক লোকের নিকট লইয়া গিয়াও ব্যর্থ হইয়া ফিরিল। অবশেষে নৈরাশ হইয়া একজন #দানবীর_ব্যাক্তির_কবরের_নিকট_গিয়া (!) সমস্ত কথা তাহাকে শুনাইল। রাত্রি বেলায় সেই লোকটি কবরওয়ালাকে স্বপ্নে দেখিল যে, সে বলিতেছে, আমি_তোমার_যাবতীয়_অভিযোগ_শুনিয়াছি(!), কিন্তু বলিবার অনুমতি দেওয়া হয় নাই। তুমি আমার ঘরে গিয়া পরিবারস্থ লোকদিগকে বল ঘরের অমুক অংশে যেখানে চুলা রহিয়াছে, উহার নিচে একটা চিনা বরতনে পাঁচশত আশরাফী রহিয়াছে তাহারা যেন উঠাইয়া সেই ফকিরকে দিয়া দেয়”।
ফাজায়েলে সাদাকাত, মাওলানা জাকারিয়া সাহারানপুরি; অনুবাদক ছাখাওয়াত উল্লাহ; ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা নঃ- ৩২২; তাবলিগী কুতুবখানা ১৪২৬ হিজরী।
___________________________

মন্তব্যঃ নেককার লোকদের কবরের কাছে গিয়ে তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া, দুয়া করা, এটাই হচ্ছে কবর-মাযার পূজা। জাকারিয়া সাহেব – ফাযায়েলে সাদাকাত নাম দিয়ে ভুয়া কাহিনী প্রচার করে এই শিক্ষাই দিলেন যে - এইভাবে কবরের কাছে প্রার্থনা করা জায়েজ আর এইভাবে কবরবাসীর কাছে সাহায্য চেয়ে নাকি উপকৃতও হওয়া যায় (নাউযুবিল্লাহ - ডাহা শেরেক)!
_____________________________

৩. সিলেটের বড় দেওবন্দী আলেম, আন্তর্জাতিক খ্যাতি(পড়ুন-ক্ষতি)সম্পন্ন বক্তা, কুরানের অপ-তাফসীরকারক, মাওলানা নুরুল ইসলাম অলিপুরী সাহেবের মাঝে মানসুর হাল্লাজের শিরকি আকীদা… 

বিবেক বুদ্ধি যাদের লোপ পায় নাই, আশা করি এই ভিডিওটা দেখলে অলিপুরীর শিরকি-কুফুরী ধরা পড়বে। আর গোড়ামী, অন্ধত্ব যাদের ধর্ম তারা অন্ধকারেই ঘুরে বেড়াক যতক্ষণ না আল্লাহ তাদের হেদায়েত করেন।

সুবাহা'নাল্লাহ! মানুষ এতো অন্ধ হয় কি করে ? শিরকি কথা বলতে কি মানুষের বুক একটুও কাঁপেনা ?
হুসাইন বিন মানসুর হাল্লাজ একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত সাধক, দরবেশ, যে কিনা মুশরেক হিন্দুদের মতো “হুলুল” (মানুষের মধ্যে স্রষ্টার বসবাস) ও “ইত্তিহাদ” (স্রষ্টার আত্মার সাথে মানুষের আত্মার সম্পূর্ণ একাত্মতা) মতবাদে বিশ্বাসী ছিল। তার এই কোরআন বিরোধী, ইসলাম বিরোধী জঘন্য শিরকি আকীদার জন্য ততকালীন শাসক আলেমদের ঐক্যমতে হাল্লাজকে কাতল করেন।

এই শয়তানটাকে ইমাম ইবনে কাসীর তার আল-বিদায়া ওয়ান নিয়াহাতে জিন্দীক (বেদ্বীন), যাদুকর (কাফের!) বলে ঘোষণা করেছেন।

আজকাল তথাকথিত অনেক গোমরাহ আলেম হাল্লাজকে আল্লাহর ওলী হিসেবে প্রচার করেন এবং বলেন, মানুষ হাল্লাজের কথা বুঝতে পারেনি! শয়তানের শিরককে তাওহীদপন্থীরা নাকি বুঝতে পারেনি ?

এই পীরের নাম নুরুল ইসলাম অলিপুরী । যেহেতু সকল পীর সুফীবাদের অনুসারী, তিনিও যিন্দীক হাল্লাজের শিরক কে অন্ধভাবে সমর্থন করে নিজের বেদাতি দায়িত্ব পালন করছেন। আল্লাহ সকলকে শিরক ও কুফর থেকে নিরাপদ রাখুন (আমীন) ।

ইবলীস শয়তান হাল্লাজের কবিতা শোনেন -
“আমি হচ্ছি সে যাকে আমি ভালোবাসি এবং যাকে আমি ভালোবাসি সে হচ্ছে আমি;
আমরা দুটি আত্বা বাস করি একই দেহে।
আমার দিকে তাকিয়ে তুমি দেখতে পারো তাকে,
এবং আমাদের উভয়কেই দেখতে পারো যখন তার দিকে তাকাও ।
লা হাউলা ওয়া কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ ।
হে মুসলিম ভাই ও বোনেরা, হাল্লাজ শয়তানের শেরেকের বিরুদ্ধে আপনাদের দৃষ্টি কি এখনো খুলবেনা? যদি চক্ষু না খোলেন তবে আল্লাহর এই আয়াতটা মন রাখবেন -
"আল্লাহ শেরেকের গুনাহ কোনোদিন ক্ষমা করবেন না"

https://www.facebook.com/photo.php?v=699191796780237&set=vb.125167817515974&type=3&video_source=pages_video_set

*চরমোনাই পীরের মাঝে “আনাল হক্ক” এর শিরকী আকীদা ও এর ব্যখ্যাঃ

https://www.facebook.com/photo.php?v=481941395235482&set=vb.125167817515974&type=3&video_source=pages_video_set
___________________________

৪. বাংলাদেশে দেওবন্দী সিলসিলার পীর, যারা নিজদেরকে “হাক্কানী পীর” হিসেবে দাবী করে, তাদের মাঝে সবচাইতে বেশি মুরীদ ও নাম-ডাক জুটিয়েছেন চরমোনাই পীর বরিশাল, যার বর্তমান গদীনশীন পীরের নাম হচ্ছে রেজাউল করীম সাহবে। কথিত এই হাক্কানী পীর, চরমোনাই সাহেবের শিরকী কথাবার্তার কিছু ওয়াজ ও বই এর অংশঃ

ক. কেয়ামতের দিন বড় বড় জাহাযে করে তার বাপ-দাদারা (বিগত চরমোনাই পীর সাহেবেরা) মুরীদদের জান্নাতে নিয়ে যাবে! ওয়াজটি পীর সাহেবের নিজের মুখ থেকে শুনুনঃ-

http://www.youtube.com/watch?v=Q2po6LT6vuo

মন্তব্যঃ এইভাবে জান্নাতের লোভ দেখিয়ে কৌশলে সাধারণ মানুষদেরকে মুরীদ বানানো হচ্ছে। অথচ কেয়ামতের দিন অন্য কাউকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়াতো দূরের কথা, পুলসিরাতের সামনে নবী-রাসুলরা পর্যন্ত ইয়া নাফসী ইয়া নাফসী করবেন। আর এই অজ্ঞ হুজুরেরা নাকি তাদের মুরীদদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবে (নাউযুবিল্লাহ)!

খ. চরমোনাই পীর সাহেবের মাঝে শেরেকী “কুতুব” এর আকীদা…

কুতুব শব্দের অর্থ কি?

সিমিলারাটিস বিটুইন হিন্দুইজম এন্ড সূফীজম – হিন্দু ধর্ম সূফীবাদের মাঝে মিল…

সূফীবাদী পীর, ফকির, মারেফাতী লাইনের লোকেরা আর কবর-মাযার আর অলি-আওলিয়ার পূজারীরা বিশ্বাস করে বিশ্বাস করে যেঃ

আল্লাহ যেহেতু একা, সুতরাং একা তাঁর পক্ষে পুরো বিশ্বজগত পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ফলে তিনি তাঁর বিশ্ব পরিচালনার সুবিধার্থে আরশে মুআ’ল্লায় একটি পার্লামেন্ট কায়েম করেছেন। সেই পার্লামেন্টের সদস্য সংখ্যা মোট ৪৪১ জন। আল্লাহ তাদের স্ব স্ব কাজ বুঝিয়ে দিয়েছেন। তন্মধ্যে

নাজীব - ৩১৯ জন,
নাক্বীব - ৭০ জন,
আবদাল - ৪০ জন,
আওতাদ - ৭ জন,
কুতুব - ৫ জন এবং
একজন হ’লেন গাওছুল আযম, যিনি মক্কায় থাকেন।

এছাড়াও, উম্মতের মধ্যে “আবদাল” ৪০ জন আল্লাহ তা‘আলার মধ্যস্থতায় পৃথিবীবাসীর বিপদাপদ দূরীভূত করে থাকেন। তারা অলীগণের দ্বারা সৃষ্টজীবের হায়াত, রুযী, বৃষ্টি, বৃক্ষ জন্মানো ও মুছীবত বিদূরণের কাজ সম্পাদন করেন।
________________________

এইবার এই আকীদার সাথে হিন্দুদের দেব-দেবীদের গুণাবলী মিলিয়ে দেখুন। হিন্দুরা বিশ্বাস করে, ঈশ্বর এক, কিন্তু বিভিন্ন দেবতা বিভিন্ন কাজ করে, কেউ বিদ্যা দেয় (স্বরস্বতী), কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যের ডিপার্টমেন্ট দেখাশোনা করে (কার্তিক), কেউ বিপদ থেকে উদ্ধার করে (দূর্গা) করার দায়িত্বে নিয়োজিত ইত্যাদি…

তাদের বিশ্বাস মতে – কুতুবেরা পৃথিবী নিয়ন্ত্রন করে, একেক এলাকার কুতুব একেক এলাকা দেখাশোনা করে।

এবার চরমোনাই পীর সাহেবের ওয়াজটা শুনে দেখুন – দেওবন্দী পীর চরমোনাই, যে বড় গলায় নিজেকে হাক্কানী পীর দাবী করে সে কিভাবে “কুতুবদের কেরামতির” আজগুবী শিরকি কাহিনী বলে মুরীদদের শিরকি আকীদা শিক্ষা দিচ্ছে……

রশিদ আহমাদ গাংগোহী নাকি “কুতুবে আলম” – পৃথিবীর খুটি! সে নাকি নিমিষেই সারা দুনিয়া ঘুরে আসতে পারে, একসাথে ২-৩ জায়গাতে থেকে নিজের ক্ষমতা দেখাতে পারে, সমুদ্র জাহাজ ডুবতে বসলে কাধে করে জাহাজ তীরে পৌছিয়ে দিতে পারে!!?

নাউযুবিল্লাহ! ডাহা শিরকি কুফুরী কথা, যা মক্কার মুশরেকরাও বলতোনা।
সমস্ত জগতের প্রতিপালক হচ্ছেন এক “আল্লাহ”!

https://www.facebook.com/photo.php?v=770083169691099&set=vb.125167817515974&type=3&video_source=pages_video_set

গ. চরমোনাই মুরিদদের ভন্ডামিঃ
চরমোনাই পীর সাহেব তার বইয়ে লিখেছেঃ
“যদি কেহ মাওলার প্রেমে মত্ত হইয়া বেলা এখতিয়ার (অনিচ্ছাকৃতভাবে) চিখ দেয় (চিতকার করে উঠে) অথবা হাত-পা আছড়ায়, তবে সে আল্লাহর ওলী”।
ভেদে মারেফতঃ ২২ পৃষ্ঠা, ৩য় লাইন।

কুরানে বলা হয়েছে – যারা ঈমান আনে ও আল্লাহকে ভয় করে তারাই আল্লাহর ওলী।

আর পীর সাহেব বলে – চিতকার করলে বা হাত পা আছড়ালে নাকি আল্লাহর ওলী!

এই কথা কুরানে নাই, হাদীসে নাই – আছে “সূফীবাদ” আর “মারেফাত” নাম দিয়ে পীর ফকিরদের গোপন মিথ্যা ধর্মে। এইভাবে অনেকেই “মাওলাকে পাইতে চায়” বা “আল্লাহর ওলী হইতে চায়”।

সেইজন্য – এইসমস্ত পীর ফকিরদের দরবারে তাদের মুরীদেরা ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় (শয়তান জিনেরা বেশি আসর করে, বেদাতী ও মুশরিকের উপরে), তাদের বাশে ধরে ঝুলে থাকে, বাশ ধরে পোল ড্যান্স, ব্রেক ড্যন্স, বান্দর নাইচ ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেদেরকে আল্লাহর ওলী প্রমান করার চেষ্টা করে, আর পীর সাহেব তার শিখানো ভুয়া ধর্ম মুরীদেরা পালন করছে দেখে খুশী হয়।

ভিডিওটাতে দেখুন – চরমোনাই পীর তার মাহফিলে বসে কিভাবে তার ভক্ত মুরীদের বান্দর নাইচ উপভোগ করছে।

ভিডিওটা দেখলে চরমোনাই ওয়ালাদের সার্কাস দেখে একটু হাসতে পারতেন। 

https://www.facebook.com/photo.php?v=711070888925661&set=vb.125167817515974&type=3&video_source=pages_video_set

হায় আফসোস! বেদাতী মোল্লারা ধর্মের নামে মানুষকে ধোকা দিচ্ছে…
_________________________

হায় আফসোস!
সাধারণ মানুষেরা অন্ধ ভক্তিতে এইসমস্ত হুজুরদের শিরকী কাহিনী শুনে নাউযুবিল্লাহ” না বলে “সুবহা’নাল্লাহ” বলে!

এইভাবে পীর ফকিদের কাছ থেকে মুরীদেরা শিরক বেদাত শিক্ষা করে পথভ্রষ্ট হয়ে কেয়ামতের দিন এরা বলবেঃ

“তারা আরও বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের পালনকর্তা! আজকে তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদেরকে মহা অভিসম্পাত করুন”।
সুরা আল-আহজাবঃ ৬৭-৬৮।

“কাফেররা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়”।
সুরা হা মীম সাজদাহ।


আল্লাহ আমাদের ভন্ডদের শয়তানি কথা-বার্তা থেকে নিরাপদ রাখুন, আমিন।

সোমবার, ২৬ মে, ২০১৪

জান্নাত ও জান্নাতীদের বর্ণনা.....


জান্নাত ও জান্নাতীদের বর্ণনা.....

আল্লাহর প্রিয় মুমিন বান্দাগণ জান্নাতের বিভিন্ন প্রকার চিরস্থায়ী নেয়া’মতের মাঝে অবস্থান করবেন। হে মুসলিম ভাই! মুসলিম বোন! জান্নাতের নেয়া’মত এবং তার মধ্যে আল্লাহ মুমিনদের জন্যে যা কিছু তৈরী করে রেখেছেন তার পরিপূর্ণ বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। যতই দীর্ঘ বর্ণনা দেয়া হোক না কেন অসম্পূর্ণ থেকেই যাবে। তাই এখানে সকল বর্ণনাকে একত্রিতকারী হাদীছটি উল্লেখ করা হলো। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা হাদীছে কুদছীতে বলেনঃ

"আমি আমার প্রিয় বান্দাদের জন্যে এমন নেয়া’মত তৈরী করে রেখেছি যা কোন চোখ দেখেনি, যার বর্ণনা কোন কান শ্রবণ করেনি এবং যা কোন মানুষের হৃদয় কল্পনাও করতে পারেনা। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ তোমরা চাইলে এই আয়াতটি পাঠ কর,

কোন ব্যক্তিই জানেনা যে মুমিন বান্দাদের জন্য কি ধরণের চক্ষু শীতলকারী বিষয় গোপন রাখা হয়েছে। (সূরা সিজদাহঃ ১৭)
  
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) বলেনঃ
"কিভাবে সেই জান্নাতের বর্ণনা দেয়া সম্ভব হবে যার বৃক্ষসমূহ আল্লাহ নিজ হাতে রোপন করেছেন, তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্যে উহাকে বাসস্থান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, তাঁর রহমত ও সন্তুষ্টি দিয়ে উহাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, যার নেয়া’মত অর্জন করাকে মহান সাফল্য বলে আখ্যায়িত করেছেন, যার রাজত্বকে বিশাল রাজ্য বলে উল্লেখ করেছেন, যাতে সকল প্রকার নেয়া’মত গচ্ছিত রেখেছেন এবং যাকে সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে সমপূর্ণ মুক্ত রেখেছেন!!!

যদি তুমি জান্নাতের মাটি সম্পর্কে প্রশ্ন কর তবে জেনে নাও যে উহার মাটি তৈরী করা হয়েছে মিস্‌ক এবং জাফরান দিয়ে।
  
তুমি জান্নাতের ছাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেনে রাখো যে উহার ছাদ হল আল্লাহর আরশ।
   আর যদি তুমি জান্নাতের নির্মাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর তবে জেনে নাও যে উহার একটি ইট রূপার তৈরী এবং অপরটি তৈরী।

জান্নাতের বৃক্ষরাজিঃ
জান্নাতের বৃক্ষসমূহ ও তার পাতাগুলো সোনালী ও রূপালী বর্ণের হবে। ফলগুলো হবে কলসীর ন্যায় বৃহদাকার ও মাখনের ন্যায় নরম এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। বেহেশতের একটি বৃক্ষের ছায়া এত দীর্ঘ হবে যে একজন দ্রুতগামী অশ্বারোহী একশত বছরেও তার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছতে পারবেনা। জান্নাতের বৃক্ষসমূহে বাতাস প্রবাহের ফলে পাতাগুলো থেকে এমন বাজনার শব্দ শোনা যাবে যার তালে তালে জান্নাতবাসীগণ আনন্দে মেতে উঠবেন।

জান্নাতের নদীসমূহঃ
জান্নাতে বিভিন্ন প্রকার নদী থাকবে।
১) দুধের নদী থাকবে যার রঙ কখনও পরিবর্তন হওয়ার নয়।
২) মদের নদী প্রবাহিত হবে। তবে তা দুনিয়ার মদের মত নয়। তা হবে অত্যন্ত জান্নাতের শরাব পান করার পর মাথা ব্যথা, নেশা বা বমি হবেনা যা দুনিয়ার মদ পান করার পর হয়ে থাকে; বরং তা পান করার পর শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
৩) জান্নাতে আরও থাকবে পরিচ্ছন্ন খাঁটি মধুর নহর যা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জন্যে তৈরী করে রাখা হয়েছে।
৪) পরিস্কার পানির নদীও থাকবে সেখানে।

হাউজে কাউছারের বর্ণনাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাউজে কাউছার যার পানি হবে দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং তার সুঘ্রাণ হবে কস্তুরীর চেয়েও অধিক পবিত্র। আকাশের তারকার সমপরিমাণ তার পেয়ালার সংখ্যা হবে। যে ব্যক্তি একবার তা থেকে পান করবে চিরদিনের জন্যে তার পিপাসা মিটে যাবে।

জান্নাতে পানাহারের বর্ণনাঃ
আপনি যদি জান্নাতীদের খাদ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তবে জেনে নিন তাদের খাদ্য হবে তাদের পছন্দ মত ফলমূল এবং রুচী সম্মত পাখীর গোশত। তাদের পানীয় হবে তাসনিমের পানি এবং কর্পুর ও আদার রস মিশ্রিত শরবত। তাদের পানাহারের পাত্রগুলো হবে সোনা ও রূপার তৈরী। তবে তার রং হবে পানপাত্রের রঙ্গের মত। তারা পানাহার করবে; কিন্তু প্রস্রাব-পায়খানার প্রয়োজন হবেনা। শরীর থেকে এমন ঘাম বের হবে যার সুগন্ধ হবে কস্তূরীর সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম। 

জান্নাতীদের পোষাকের বর্ণনাঃ
তাদেরকে রেশমের পোষাক ও স্বর্ণের অলংকার পরিধান করানো হবে। তাদের বিছানাও হবে মোটা রেশমের তৈরী।

জান্নাতের প্রশস্ততা
আপনি যদি জান্নাতের প্রশস্ততা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে জেনে নিন যে, বেহেশতের দরজার দুই দরজার মধ্যখানের প্রশস্ততা হবে চল্লিশ বছরের রাস্তা। জান্নাতের ছাদের উচ্চতা হবে আকাশে উদীয়মান নক্ষত্রের দূরত্বের সমান।

জান্নাতীদের বয়সঃ
জান্নাতবাসীদের বয়স হবে ৩৩বছর। তাদের মুখে কোন দাড়ি- মোচ থাকবেনা। তাদের যৌবন শেষ হবে না এবং পোষাকও পুরাতন হবেনা। তাদের প্রথম দলটির চেহারা হবে পূর্ণিমার রাত্রির চাঁদের মত উজ্জ্বল। দৈর্ঘ্য ও শরীরের গঠন হবে মানব জাতির পিতা আদম (আঃ)এর সমান।

জান্নাতবাদসীদের গান শ্রবণঃ
জান্নাতীদের মনের তৃপ্তির জন্য হুরদের মধ্য থেকে তাদের স্ত্রীগণ সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। তারা সেখানে ফেরেশতা ও নবী-রাসূলগণের কথাও শুনতে পাবেন। তাছাড়া সেখানে বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর কথা শ্রবণ করবেন।

জান্নাতের যানবাহনের পরিচয়ঃ
জান্নাতীগণ যে ধরণের যানবাহনের উপর আরোহন করে পরস্পরে সাক্ষাৎ করবেন। আপনি যদি তার পরিচয় জানতে চান তবে জেনে নিন যে উহা এমন এক প্রকার দ্রুতগামী বাহন, যা আল্লাহ তাআলা নিজ পছন্দমত জিনিষ হতে তৈরী করেছেন। এ সমস্ত বাহনে আরোহন করে জান্নাতীরা নিজেদের খুশীমত যেখানে ইচ্ছা ঘুরে বেড়াবেন।

জান্নাতের সেবকদের পরিচয়ঃ

জান্নাতবাসীদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে মণি-মুক্তার মত উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট বালকেরা। তারা সদাসর্বদা একই বয়স ও অবস্থায় থাকবে।

শুক্রবার, ২৩ মে, ২০১৪

হায়াতুন্নবী বলা কুরআন বিরোধী আকীদা



আজকাল দেওবন্দী বেরেলবী তরীকার লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাঃ কে জিন্দা নবী, হায়াতুন নবী বলে প্রচার করে, আর এইগুলোর বিরোধীতা করলে ওহাবী বলে গালি দেয়, নবী সাঃ কে অপমান করা হচ্ছে বলে চিল্লাচিল্লি করে...

অথচ দেখেন - আবু বকর রাঃ কি বলেছিলেন, যারা বিশ্বাস করতে চাইছিলোনা যে, নবী সাঃ মৃত্যুবরণ করেছেন। আবু বকর রাঃ ঐ ভাষণের পরে সমস্ত সাহাবী কিন্তু - এই কথা মেনে নেন যে, নবী সাঃ ইন্তেকাল করেছেন।

হায় আফসোস! চরমপন্থী লোকেরা নিজেরা ভ্রান্ত আকীদা রাখে, আর য্রারা সাহাবাদের সহীহ আকীদার কথা বলে - তাদেরকে গালি-গালাজ করে।

যাইহোক একটি প্রশ্ন ও উত্তরের দিকে দেখুনঃ

আমাদের পেইজে একজন মন্তব্য করেছেনঃ

বর্তমানে অনেক দল আছে যারা প্রিয় নবীকে মৃত বলে, তারা গোমরাহি হয়েগেছে, হায়াতুন্নবীর অর্থই হলো জিন্দা নবী|একজন মুফতি থেকে জেনেনিন, ঈমান বাঁচান|

আমাদের উত্তরঃ

আপনি বলছেন নবী সাঃ কে মৃত বললে গোমড়া হয়ে গেছে, অথচ আবু বকর রাঃ বলেছেন - যে নবীকে জিন্দা মনে করে সে যেনো নবী সাঃ কে পূজা করে!

আমরা কার কথা বিশ্বাস করবো? আপনার, এই উম্মতের ১ নাম্বার ঈমানদার শ্রেষ্ঠ অলী, আবু বকর রাঃ এর, নাকি আপনার অজ্ঞাত (দেওবন্দী/বেরেলবী) মুফতি সাহেবের?
___________________________

কুরআন দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একজন মানুষ ছিলেন এবং তিনিও মৃত্যু বরণ করবেন। আল্লাহ বলেন -

“ইন্নাকা মায়্যিতুন ওয়া ইন্নাহুম-মায়্যিতুন” – (হে নবী) আপনিও মৃত্যু বরণ করবেন আর তারাও মৃত্যু বরণ করবেন।
সুরা আল-যুমার, আয়াত ৩০।

এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ও একদিন মৃত্যুবরণ করবেন। সুতরাং যার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জীবিত মনে করে তাদের আকীদা বা বিশ্বাস হলো ইসলাম বিরোধী, কুরআন বিরোধী।

এছাড়া, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর পরে সাহাবীরা আশ্চর্য হয়ে পড়েন একজন নবী কি করে মারা যেতে পারেন? উমার (রাঃ) খোলা তলোয়ার নিয়ে ঘোষণা করেন, যেই ব্যক্তি বলবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তার ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলবো।
তখন এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি, আবু বকর (রাঃ) এই ভুল ধারণা দূর করে দেন সমস্ত সাহাবীদের অন্তর থেকে এই বলে,

“যেই ব্যক্তি মুহাম্মাদের পূজা করতো সে জানুক মুহাম্মাদ মারা গেছেন। আর যেই ব্যক্তি আল্লাহর উপাসনা করে সে জানুক আল্লাহ চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী।”

তখন তিনি দলীল হিসেবে কুরআনের এই আয়াত পেশ করেন –

“মুহাম্মাদ, তিনিতো আল্লাহর রাসুল ছাড়া আর কিছু নন, তার পূর্বে অনেক রাসুল মৃত্যু বরণ করেছেন। এখন তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন বা নিহত হন তোমরা কি তোমাদের পূর্ব অবস্থায় (কুফুরীতে) ফিরে যাবে? প্রকৃতপক্ষে যেই ব্যক্তি তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদেরকে প্রতিদান দিবেন।”
সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৪।

বিঃদ্রঃ মানুষের জীবন দুই প্রকার, একটা মৃত্যুর আগে আরেকটা পরে যাকে পরকাল বলে। আর কবর থেকে নিয়ে কিয়ামতে হাশর হওয়া পর্যন্ত জীবনকে “বরযখের জীবন” বা পর্দার জীবন বলা হয়। মানুষ মারা গেলে তার দুনিয়ার জীবন শেষ হয়ে যায় আর বরযখের জীবন শুরু হয় যা দুনিয়ার জীবন থেকে আলাদা। আর ঐ কবরের জীবন কেমন, কিরকম এটা বুঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। সে সম্পর্কে কুরআন হাদীসে আমাদের যতটুকু জানানো হয়েছে আমরা ততটুকু কোনোরকম প্রশ্ন ছাড়াই ইমান আনবো। কিন্তু কোনো প্রকার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা অতিরিক্ত প্রশ্ন করবোনা। এটাই হলো ইমান বিল গায়েব – অদৃশ্যে বিশ্বাস।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে আমাদের দুরুদগুলো ফেরশতারা পোঁছে দেন, আমাদের দুনিয়ার জীবনের কিছু কথা আমাদের মৃত আত্মীয় স্বজনদের কাছে বলা হয়, পরিচিত মৃত ব্যাক্তিদের আত্মাদের মাঝে দেখা সাক্ষাত হয়, অনেক মৃত ব্যাক্তিকে কবরে শাস্তি দেওয়া হয়, - এইসবগুলো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। আমরা এইগুলো বিশ্বাস করবো কিন্তু ব্যাখ্যা করা বা দুনিয়ার জীবনের সাথে তুলনা করার চেষ্টা করবোনা।

হায়াতুন-নবী – অর্থ হলো যে নবী জীবিত। এই কথা না কুরআনে আছে না কোনো সহীহ হাদীসে আছে। বরং উপরের আলোচনা থেকে এই কথা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হায়াতুন্নবী বলা কুরআন বিরোধী আকীদা।

রজব মাসকে কেন্দ্র করে কতিপয় (বেদআত)


রজব মাসকে কেন্দ্র করে কতিপয় নতুন আবিষ্কৃত আমল (বেদআত)

১. রজব মাসের রোজাঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবাদের থেকে রজব মাসের রোজার ফজিলতের ব্যাপারে প্রামাণ্য কোন দলিল নেই। তবে অন্যান্য মাসের মত এ মাসেও, সপ্তাহের সোমবার, বৃহস্পতিবার, মাসের তেরো, চৌদ্দ, পনেরো তারিখ, একদিন রোজা রাখা, পরের দিন না রাখা- সওয়াবের, বৈধ ও সুন্নত। ওমর রা. রজব মাসের রোজা হতে নিষেধ করতেন। কারণ, এতে ইসলাম-পূর্ব কুসংস্কারাচ্ছন্ন জাহেলি যুগের সাথে সামঞ্জস্য বিদ্যমান।

হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন, রজবের নির্দিষ্ট-অনির্দিষ্ট দিনের রোজা, কিংবা রজবের নির্দিষ্ট কোন রাতের রোজার ব্যাপারে প্রমাণ যোগ্য কোন সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। যে কয়টি সুস্পষ্ট অর্থবহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তা দুভাগে বিভক্ত। জইফ বা দুর্বল, মওজু বা (বানোয়াট) জাল হাদিস। তিনি সব কয়টি হাদিস একত্র করেছেন, দেখা গেছে, ১১টি দুর্বল হাদিস, ২১টি জাল হাদিস।

ইবনে কাইয়ূম রহ. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাগাতার তিন মাস (রজব, শাবান, রমজান) রোজা রাখেননি-যেমন কিছু লোক করে থাকে। রজবে কখনো রোজা রাখেননি, রোজা পছন্দও করেননি।

লাজনায়ে দায়েমার ফতওয়াতে আছে,
"রজবের কতক দিনকে রোজার জন্য নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে আমাদের কোন দলিল জানা নেই"।

২. রজব মাসে ওমরা :
কোন হাদিসে প্রমাণ নেই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসে ওমরা করেছেন। এ জন্য নির্দিষ্ট ভাবে রজবে ওমরা করা কিংবা এতে ওমরার বিশেষ ফজিলত আছে-বিশ্বাস করা বেদআত।

শায়েখ মুহাম্মাদ ইব্রাহিম রহ. তার ফতওয়াতে বলেন,
"রজব মাসকে জিয়ারত ইত্যাদির মত আমল দ্বারা নির্দিষ্ট করার পিছনে কোন মৌলিক ভিত্তি নেই। কারণ, ইমাম আবু শামা স্বীয় কিতাবে كتاب البدع والحوادث প্রমাণ করেছেন, শরিয়তকে পাশ কাটিয়ে বিশেষ কোন সময়ের সাথে কোন এবাদত নির্দিষ্ট করা অনুচিত, অবৈধ। কারণ, শরিয়ত কর্তৃক বিশেষ কিংবা সাধারণ আমলের জন্য কোন সময় নির্ধারণ করণ ব্যতীত, সব দিন-ক্ষণ-সময় সমান মর্যাদার। এ জন্যই ওলামায়ে কেরাম রজব মাসে বেশি বেশি ওমরা করতে নিষেধ করেছেন। তবে কেউ যদি স্বাভাবিক নিয়মে (ফজিলতের বিশ্বাস বিহীন) রজব মাসে ওমরা করে, তাতে দোষ নেই। কারণ, এ সময়েই তার জন্য ওমরা করার সুযোগ হয়েছে"।

৩. সালাতে রাগায়েব :
হাদিস শাস্ত্রে কতিপয় মিথ্যাচারের দ্বারা এ নামাজের সূচনা হয়। এ নামাজ রজবের প্রথম রাতে পড়া হয়। এ ব্যাপারে ইমাম নববি রহ. বলেন, এটি নিন্দনীয়, ঘৃণিত, জঘন্যতম বেদআত। যা কয়েকটি অপরাধ ও নিষিদ্ধ কর্মের সমন্বয়ে রচিত। সুতরাং একে পরিত্যাগ করা, এর থেকে বিরত থাকা এবং এর সম্পাদনকারীকে নিষেধ করা কর্তব্য।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
"ইমাম মালেক, শাফি, আবু হানিফা, সাওরি, লাইস প্রমুখের মতে সালাতে রাগায়েব বেদআত। হাদিস বিশারদগণের দৃষ্টিতে এ ব্যাপারে বর্ণিত সকল হাদিস জাল, বানোয়াট"।

৪. রজব মাসের ২৭ তারিখ রজনী লাইলাতুল মিরাজ মনে করে জমায়েত হওয়া ও মাহফিল করাঃ

মেরাজের রজনী কিংবা মেরাজের মাস নির্ধারণের ব্যাপারে কোন প্রমাণ দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে অনেক মতভেদ আছে, সত্য অনুদ্ঘাটিত। তাই এ ক্ষেত্রে নিশ্চুপ থাকাই শ্রেয়। মেরাজের রজনি নির্দিষ্ট করণের ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়নি। যা বিদ্যমান আছে, সব জাল, ভিত্তিহীন। (বেদায়া নেহায়া ২:১০৭, মাজমুউল ফতওয়া ২৫:২৯৮) অতএব এ রাতে অতিরিক্ত এবাদত ধার্য করা, যেমন রাত জাগা, দিনে রোজা রাখা, অথবা ঈর্ষা, উল্লাস প্রকাশ করা, নারী-পুরুষ অবাধ মেলা-মেশা, গান-বাদ্যসহ মাহফিলের আয়োজন করা, যা বৈধ, শরিয়ত কর্তৃক স্বীকৃত ঈদেও না-জায়েজ-হারাম, এখানের তো বলার অপেক্ষা রাখে না। উপরন্তু মেরাজ রাত্রি ঐতিহাসিকভাবেও সুনির্দিষ্ট নয়। প্রমাণিত মনে করলেও এতে মাহফিল করার কোন জো নেই। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম এবং আদর্শ পূর্বসুরীগণ হতে এ ব্যাপারে কোন দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

৫. রজব মাসে গুরুত্বসহকারে কবর জিয়ারত করাঃ
এটিও বেদআত। কারণ, কবর জিয়ারত বছরের যে কোন সময় হতে পারে।

৬. রজব মাসে পশু জবাই বা এ জাতীয় কিছু উৎসর্গ করাঃ
জাহিলিয়াতে রজব মাসকে নির্দিষ্ট করে এ ধরনের আমল সম্পাদন করা হত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা নিষেধ করেন।
ইমাম ইবনে রজব বলেন,
"রজব মাসে পুন্য মনে করে জবাই করা, ঈদ-উৎসব উদযাপন করার মত"।

রজব মাসে করণীয় ও বর্জনীয়ঃ
নিজের কিংবা অন্যের উপর জুলুম করা হতে বিরত থাকা, যার অর্থ – ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা, বেশি বেশি নেক আমল করা, আল্লাহ কর্তৃক সংরক্ষিত ও নিষিদ্ধ বিষয় বস্তু পরিত্যাগ করা।

অর্থাৎ নিখাদ তওবা করা, আল্লাহ তাআলার শরণাপন্ন হওয়া, রমজান মাসের ভাগ্যবান ও লাইলাতুল কদরের মুক্তিপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া।

সুপ্রিয় পাঠক, বর্তমান রজব মাস থেকে তৈরি হন। এবাদত, আনুগত্য, অনুসরণ এবং আল্লাহ বশীভূত হওয়ার জন্য অন্তর ও শরীরের অনুশীলনের ব্রত গ্রহণ করুন।

লেখকঃ সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনাঃ কাউসার বিন খালেদ
ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ

Islamhouse.com

দেশি মুফতি, মুহাদ্দিস আর মাওলানাদের “হাল” বা অবস্থা!



দেশি মুফতি, মুহাদ্দিস আর মাওলানাদের “হাল” বা অবস্থা!!!

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটা গুরুত্বপূর্ণ হাদীসঃ
“আমার উম্মতের জন্য আমি ৩টা জিনিসের ব্যপারে বেশি ভয় করি। তার মাঝে প্রথম হচ্ছেঃ আয়াম্মায়ে দ্বোয়াল্লিন বা পথভ্রষ্ট ইমাম।
মুসনাদে আহমাদ, হাদীসের সনদ সহীহ।

হুজাইফা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“(ফিতনার যুগে) কিছু লোক এমন হবে যারা জাহান্নামের দরজার দিকে মানুষকে দাওয়াত দিবে (অর্থাৎ তাদের দাওয়াত এমন ভ্রষ্টতাপূর্ণ হবে, যা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে); যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে”।
সহীহ বুখারীঃ হাদীস নং-৩৩৩৬, ৬৬৭৯।

পথভ্রষ্ট বক্তা, আলেমদের ফেতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে শায়খ সালেহ আল-ফাওজান বলেনঃ
“বর্তমান যুগে অন্য অনেক ফেতনার সাথে এই উম্মত সবচাইতে বড় যে ফেতনার সম্মুখীন সেটা হচ্ছে - অনেক দ্বায়ী আছে যারা ইলম ছাড়া অজ্ঞতাবশত মানুষকে গোমরাহী ও বাতিলের দিকে দিকে দাওয়াত দিচ্ছে।”
__________________________

চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল, বাংলাদেশে দেওবন্দীদের বড় আলেম, মাওলানা আহমাদ শফি সাহেব তার কিতাব “ইরশাদাতে মুরশিদীতে” লিখেছেনঃ

“হোসাইন আহমদ মাদানীকে মদীনায় তার ছাত্ররা প্রশ্ন করলো, রাসুল সাঃ কি কবরে জীবিত?
তিনি বললেন, আলমে মেছালীতে রাসুল সাঃ জীবিত, কিন্ত ছাত্ররা দলিল প্রমাণাদী পেশ করলো যে কোরআনে সূরা যুমারের ৩০নং আয়াতে বলা হয়েছে
“!হে নবী!) নিশ্চয় আপনি মৃত্যুবরণ করবেন আর তারাও মৃত্যুবরণ করবে”।
মাদানী ছাত্রদেরকে বিভিন্ন দলিলের মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করলেন, কিন্ত তারা বুঝতে অপ্রস্তুত, এরপর মাদানী ছাত্রদেরকে নিয়ে রওযায়ে আতহারের কাছে নিয়ে গেলেন এবং হাত দিয়ে ইশারা করলেন, এই ইশারাতে রাসুল সাঃ রওযা থেকে মাথা উঠিয়ে সকলকে দেখা দিয়ে আবার
মাটির নিচে লুকিয়ে গেলেন”।√√√
ইরশাদাতে মুরশিদী, পৃষ্ঠা ৪২।

উপস্থিত সকলে তা দেখে নিল এবং সবাই তা মেনে নিল যে, নাবীজী সাঃ এখনো জীবিত । তিনি জিন্দা নাবী হায়াতুন্নাবী। এইছিল মাদানীর কারামত।

উপরের ঘটনাটিও ডাহা মিথ্যা ও বানোয়াট কুফুরী একটা কাহিনী, রাসুল সাঃ এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ ও তার সম্মান হানি করা হয়েছে – এই ভুয়া কাহিনীটি দিয়ে। যেই এইরকম মিথ্যা কুফুরী কাহিনীর প্রতি ঈমান আনে, তার “আকীদাহ” ঠিক না, সে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ একজন লোক। রাসুল সাঃ কি জীবিত না মৃত জানতে হলে এই পোস্ট পড়ুনঃ

__________________________

“জামাতে ইসলামী”র আমীর এটা কি লিখেছেন!!?

“ইসলামী আন্দোলনঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা” নামে ছোট একটি কিতাবে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর আমীর ও বিএনপি আমলের সাবেক শিল্পমন্ত্রী, জনাব মতিউর রহমান নিজামী লিখেছেনঃ-

“মানবজাতিকে আল্লাহ তাআ’লা দুনিয়ায় যে কাজের জন্য পাঠিয়েছেন, সেই কাজটার নামই “ইসলামী আন্দোলন”।
“ইসলামী আন্দোলনঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা” নামক বইয়ের ১ নাম্বার পৃষ্ঠার ১ নাম্বার লাইন!!!

মহান আল্লাহর কথার সাথে এই দার্শনিক সাহেবের কথাকে মিলিয়ে দেখুনঃ-
আমি মানুষ ও জিনকে শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যে সৃষ্টি করেছি।
সুরা আয-যারিয়াত, আয়াত ৫৬।
এইরকম অপব্যখ্যা করেই এরা “ইসলামী আন্দোলন” নাম দিয়ে মনমতো ইসলাম পালন করে।
_______________________


বিঃদ্রঃ উপরের দুইটা ব্যপার সুবিবেচক ভাই ও বোনদের চিন্তার খোরাক হিসেবেই রেখে দিলাম। উল্লেখ্য, মাওলানা শফি সাহেব বা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সাথে আমাদের কোনো ব্যাক্তিগত বিরোধ নেই। সাধারণ মানুষকে গোমরাহী থেকে বাচানোই আমাদের মূল লক্ষ্য।আল্লাহ তাআ’লা মানুষকে ভ্রান্ত আকিদা থেকে রক্ষা করুন.....

বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০১৪

পাপ কাজ থেকে বাচার জন্য কিছু উপায়…


পাপ কাজের ফসল হচ্ছে জাহান্নাম।
পাপ কাজ থেকে বাচার জন্য কিছু উপায়…

মানুষের অন্তরটা একটা পাত্রের মতো। আপনি যদি অন্তরটাকে ভালো জিনিস দ্বারা পূর্ণ করেন তাহলে খারাপ জিনিসগুলো ঢুকতে পারবেনা। আবার আপনি যদি আপনার অন্তরটাকে খবিস জিনিস দ্বারা আচ্ছন্ন করে রাখেন, নফস (প্রবৃত্তি) ও শাহওয়াত (লোভ-লালসা/কামনা-বাসনা ইত্যাদি), শয়তানের আনুগত্যকে মেনে নেন, ভালো জিনিসগুলো আপনার অন্তরে প্রবেশ করবেনা।

উদাহরণস্বরূপ, যার অন্তরে কুরানুল কারীমের নূর, হেদায়েত প্রবেশ করবে তার অন্তরে গান-বাজনা, ফাসেক (পাপিষ্ঠ) গায়ক/গায়িকার জন্য সম্মান, ভালোবাসা জায়গা করতে পারেনা। সে তার অন্তরে খবিস (নাপাক) ও মুনকার (হারাম ও খারাপ কাজগুলো) জিনিসের প্রতি এতোটা তীব্র ঘৃণা ও বিতৃষ্ণা পোষণ করবে যে, তার গান শুনতে ভালো লাগলেও, গান শোনার প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও ভয়ের কারণে এইগুলো থেকে দূরে থাকবে। এইজন্য ওলামারা বলেছেন - কোনো বান্দার অন্তরে গান-বাজনা ও কুরান, এই দুইটা জিনস একই সাথে স্থান দখল করতে পারেনা। কারণ, কুরান হচ্ছে আল্লাহ তাআ’লার নাযিল করা ঈমানের নূর বা আলো, আর গান-বাজনা হচ্ছে মুনাফেকীর অন্ধকার।

আপনি খারাপ কাজ থেকে বাচতে হলে – সবচেয়ে জরুরী হলো - আপনার ঈমানকে মজবুত করা। ঈমানের একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে – “আল-ওয়ালা ওয়াল বারা” - শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই কোন কিছুকে ভালোবাসা আর শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই কাউকে ঘৃণা করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “আল-ওয়ালা ওয়াল বারাকে” ঈমানের মজবুত একটি হাতল বলেছেন।

কাফেরদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আজকাল অধিকাংশ নারীরাই নিজেদের সম্মান ও ইজ্জত বিসর্জন দিয়ে বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করে, স্কুল-কলেজ, রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, মার্কেট সব জায়গাতেই বেপর্দা, অর্ধনগ্ন, কাপড় পড়েও উলংগ - এমন নারীদের সংখ্যা মহামারীর মতো বেড়ে গেছে। চরিত্রহীন, লম্পট নারী-পুরুষেরা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হচ্ছে।

অপরদিকে পুরুষদের জন্য নারীদেরকে এমনিতেই মোহনীয় ও আকর্ষণীয় করে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিবেশে দ্বীনদার ভাইদের জন্য চোখের জেনা, অন্তরের জেনা, অংগ-প্রত্যংগের জেনা থেকে বাচা কঠিন হয়ে গেছে। অপরদিকে আল্লাহর প্রতি দাসত্ব ও আনুগত্য হিসেবে, জাহান্নানের কঠিন শাস্তি (আগুনে পুরে রোস্ট হওয়া, নাইযুবিল্লাহ) থেকে বাচার জন্য নিজেকে হারাম ও পাপ কাজ থেকে বাচা ছাড়া উপায় নেই। প্রবৃত্তির গোলামী করে নিজের নফস ও শাহওয়াত অনুযায়ী চলে, শয়তানের আনুগত্যের প্রতিদান জাহান্নামের অপমামানজনক শাস্তি ছাড়া আর কিছুইনা।

এই ধরণের পাপ কাজ থেকে বাচতে হলে আপনাকে এই ব্যপারগুলো সম্পর্কে সচেতন হবে -

১. যারা বেপর্দা চলাফেরা করে, ফাহেশা নারী, দাইয়ুস পুরুষ, এরা কারা, এদের সংজ্ঞা কি, ইসলামে কেনো এরা নিন্দনীয়, দুনিয়া ও আখেরাতে এদের কি ভয়াবহ শাস্তির অপেক্ষা করছে যা কুরান ও সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে - এসম্পর্কে বিস্তারিত ব্যখ্যা বিশ্লেষণ সহকারে আপনাকে জানতে হবে। এটা হলো দ্বীন সম্পর্কে “ইলম” (জ্ঞান) হাসিল করা। এর জন্য আপনাকে কুরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী সহীহ আকীদার আলেমদের বই পত্র পড়তে হবে, তাদের ওয়াল লেকচার শুনতে হবে, সম্ভব হলে তাদের হালাকা ও দারসগুলোতে সরাসরি নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে হবে। এইভাবে আপনার “ইলম” বৃদ্ধি পেলে আপনার “ঈমান” মজবুত হবে। ঈমান বৃদ্ধি পেলে দুনিয়া, আখেরাত, জান্নাত-জাহান্নাম, পাপের কাজ পুণ্যের কাজ এই ব্যাপারগুলো আপনার কাছে পরিষ্কার হবে - অন্তর্দৃষ্টিতে এইগুলোর সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জিত হবে। এর ফলে আরো বেশি করে সতকর্মের দিকে আগ্রহী হবেন, পাপ কাজ সেটা যতই প্রিয় ও আকর্ষণীয় হোক - সেটা থেকে বাচার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।

এখানে একটা অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে – বর্তমান অধিকাংশ মুসলিন নারী ও পুরুষেরা দ্বীন শেখার ব্যপারে অত্যন্ত গাফেল ও মারাত্মক রকমের অলস। সবাই দুনিয়ার পেছনের ছুটছে, গান-বাজনা, অবৈধ নারী পুরুষের পেছনে টাকা ও সময় নষ্ট করছে। একেতো দ্বীন শেখার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম খুবই কম, তার উপরে কেউ দ্বীন শিখতে আগ্রহী না। এ ধরণের মানুষগুলোই রাগের মাথায় বিবিকে ১০০ তালাক দিয়ে পরে এসে ফতোয়া জানতে চায় – কিভাবে বিবিকে হালাল করা যায়, “হিল্লার” মতো নিকৃষ্ট খবিস পথ খুজে বেড়ায়। এইভাবে অজ্ঞ থেকে সে নিজেকে ও তার আশেপাশের মানুষদেরকে বিপদে ফেলে।

যাইহোক, দ্বীন শেখার জন্য আপনাকে অনেক মেহনত করতে হবে। শুধু ফেইসবুক, টিভি এইরকম মাধ্যমগুলোর উপরে আপনারা নির্ভর করবেন না। বড় বড় আলেমদের লেখা “সহীহ কিতাব” পড়বেন, এইগুলো অধ্যায়ন করে এর থেকে দ্বীনের জ্ঞান আহরণ করবেন। এমন যাতে নাহয় কালকে ছেলের আকীকা দেবেন – আজকে এসে বলবেন, ইমার্জেন্সি আকীকার উপরে পোস্ট দেন। আপনাকে মনে রাখতে হবে মুফতি মুহাদ্দিস সবসময় আপনার জন্য রেডী থাকবেনা – আপনার জন্য ফতোয়া দেওয়ার জন্য। আলেমরা আগে থেকেই তাদের দারসে এইগুলো শিক্ষা দিয়েছেন, এর উপরে সহীহ বই লিখে প্রকাশ করছেন। আপনি কোনদিন সেই বই কিনে পড়বেন না, ওয়াজ লেকচার শুনবেন না, আর আশা করবেন – আপনার জন্য কেউ না কেউ সবসময় রেডি থাকবে – চাহিবা মাত্রই ফতোয়া দেওয়ার জন্য? জান্নাতে যাওয়া কি শুধু হুজুরদেরই গরজ, আপনার দ্বীন সম্পর্কে জেনে তার উপর আমল করার কোন প্রয়োজন নেই?

আর সাবধান!
এমন অনেক প্রশ্নের উত্তরদাতা এখন আছে, মনগড়া ফতোয়াবাজি করে বেড়ায়, ইসলাম নাম দিয়ে মানুষকে শিরক-বেদাত শিক্ষা দিয়ে জাহান্নামে পাঠায়! কেয়ামতের আগে আমরা এখন সেই সময়ে বসবাস করছি – যখন প্রকৃত “ফকীহ” কম, আর “ওয়ায়েজ” বা বক্তার সংখ্যা বেশি! এইরকম বহু ওয়ায়েজ ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে – যারা আলেম না থাকার কারণে মানুষ তাদেরকেই বড় আলেম মনে করে, আর সেই সমস্ত মূর্খ বক্তারা মনগড়া ফতোবাজি করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত/পথভ্রষ্ট করছে…

আপনি যদি ইসলাম শেখার ব্যপারে সিরিয়াস ও সিনসিয়ার নাহন, খুব সহজেই এইসমস্ত এফএম মুফতিদের পাল্লায় পড়ে দ্বীনকে ধ্বংস করবেন (ওয়াল ইয়াযু বিল্লাহ)!


২. পাপ কাজ ও যাদেরকে সতর্ক করে দেওয়ার পরেও পাপ কাজে লিপ্ত থাকে তাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করাঃ

“পাপীকে নয় পাপ কাজকে ঘৃণা করো” – এই রকম কোন কথা কুরান হাদীসে নাই, বরং এর বিপরীত অনেক কথাই আছে।

যারা শিরক বেদাতে লিপ্ত থাকে, যারা প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে শয়তানের গোলামি করে বেড়ায়, এদের প্রতি অন্তরে ঘৃণা পোষণ করা - এটা আপনার “ঈমানী” দায়িত্ব। আপনি যদি একটা বেপর্দা মেয়েকে দেখে তার প্রতি ঘৃণা ও বিতৃষ্ণা পোষণ করেন, তাহলে আপনার জন্য সহজ হবে তার সৃষ্ট ফেতনা থেকে নিজেকে বাচাতে। কিন্তু আপনি যদি তাদেরকে সহজ-স্বাভাবিকভাবে নেন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখেন – মোস্ট প্রবাবলি আপনার আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও ভয় কমে যাবে, আপনি ঐ নারীর ফেতনায় ডুবে আপনার তাক্বওয়া, দ্বীনদারী ধ্বংস হয়ে যাবে।

এখানে একটা ব্যপার লক্ষণীয়, ঘৃণা পোষণ করার অর্থ এইনা যে, ব্যক্তিগতভাবে আপনি কাউকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবেন, অপমান করবেন। না, বরং পাপ কাজে লিপ্ত থাকে যারা তাদেরকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন, সুন্দর করে বোঝানোর ও উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু যদি তারা পাপকাজের প্রতি অনড় থাকে আর উপদেশ নাশুনে, তাহলে নিজেকে তাদের ফেতনা থেকে দূরে রাখবেন। কারণ পাপীদের সাথে উঠাবসা করা, তাদের পাপ কাজের প্রতি দুর্বল অবস্থান নেওয়া – আপনার নিজের ইমানের জন্যই ক্ষতিকারক।

এইরকম ক্ষেত্রে আপনাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর “সীরাত” (জীবনী) থেকে মধ্যমপন্থাকে বেছে নিতে হবে – মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে। আর সেইজন্য আপনাকে নির্ভরযোগ্য সীরাত গ্রন্থ থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ জেনে নিতে হবে।  

তবে এখানে উল্লেখ্য যে, সম্পর্ক রাখা বলতে গায়ের মাহরাম পুরুষ নারীর মাঝে উদ্দেশ্য না, গায়ের মাহরাম নারী-পুরুষের যোগাযোগ অনেক রেস্ট্রিক্টেড একটা ব্যাপার। অনেক ভাইদেরকে দেখা যায় ছেলে বন্ধুদের থেকে মেয়ে বন্ধুদের হেদায়েতের জন্য বেশি পরিশ্রম করে, এটা আসলে মেয়েদের সাথে যোগাযোগ রাখা, কথা বলার একটা বাহানা।

৩. সবসময় ভালো কাজ দিয়ে অন্তরটাকে দখল করে রাখার জন্য চেষ্টা করা, যাতে করে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিতে না পারে, কোনো ফেতনা আপনাকে সহজেই গ্রাস করতে না পারে। ভালো কাজ করার জন্য ও খারাপ কাজ থেকে বেচে থাকার জন্য নিজের অন্তরের বিরুদ্ধে “মুজাহাদা” (কঠোর সংগ্রাম) করা। আপনাকে চেষ্টা করতে হবে – যথাসম্ভব নেকের কাজে নিজেকে জড়ীত রাখা। হারাম থেকে বেচা থাকা, ফরয দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি নফল সালাত, নফল সাওম, যিকর-আযকার, দুয়া-দুরুদ, দান-সাদাকা, পরোপকার…

এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকারী হচ্ছে “যিকর” – বা আল্লাহকে স্বরণ করা। এটা আসলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী কার্যকরী একটা উপায়। যিকরের ফলে সবসময় আপনার অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভয়, বিনয় ও ভালোবাসা, তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমার কথা জাগ্রত থাকবে। এমন অবস্থায় চরম ফাহেশা কোন মেয়েও যদি আসে, অথবা শয়তান আপনাকে বড় রকমের কোন পরীক্ষায় ফেলে সেটাকে উপেক্ষা করে আল্লাহর অনুগত থাকা আপনার জন্য সহজ হবে।

ঘুম থেকে উঠা থেকে নিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখন কোন দুয়া পড়েছেন, কোন কাজটা কিভাবে করেছেন – এইগুলো মুখস্থ করতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে এইগুলো সাধ্য অনুযায়ী আমল করার – এটাই হচ্ছে চূড়ান্ত সফলতার রাস্তা। সংক্ষেপে সুন্নাহ ও দুয়া জানার জন্য “১০০০ সুন্নত” ও “হিসনুল মুসলিম” এই বই দুইটা বারবার পড়বেন, কখনোই হাতছাড়া করবেন না। অবসর সময় পেলেই বইগুলো পড়বেন, দুয়াগুলো আস্তে আস্তে মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন। আর “সুন্নাহ” বা জীবন আদর্শ জানার জন্য

. আর দুয়া করা – কারণ আমরা বলি লা হা’উলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাত ইল্লা বিল্লাহ – আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত পাপ কাজ থেকে বেচে থেকে নেকের কাজ করার জন্য আমাদের কোন সামর্থ্য বা শক্তি নাই। বেশি বেশি করে হেদায়েত, তাক্বওয়া, হায়াতে ত্বাইয়্যিবা, কবুল আমল এইগুলো চাইবেন। আর এ সম্পর্কিত কুরানে ও হাদীসে যেই দুয়াগুলো আছে সেইগুলো অর্থসহ আরবীতে মুখস্থ করবেন।
আরবীতে হৃদয়কে বলা হয় ক্বালব, যার একটা অর্থ হচ্ছে - যেই জিনিস খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়
একারণে মানুষ আজকে যাকে ভালোবাসে, কাল তাকে ঘৃণা করে
কেয়ামতের আগে এমন হবে মানুষ সকালে ঈমানদার থাকবে, সন্ধ্যা সময় কাফের হয়ে যাবে আবার মানুষ সন্ধ্যা সময় ঈমানদার থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে

এইজন্য হৃদয় যাতে পরিবর্তন না হয়ে যায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বার বার এই দুয়া করতেনঃ

يَـا مُـقَـلِّـبَ الْـقُـلُـوْبِ ثَـبِّـتْ قَـلْـبِـىْ عَـلَـى دِيْـنِـكَ

উচ্চারণঃ ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব! সাব্বিত ক্বালবী আ'লা দ্বীনিক

অর্থঃ হে হৃদয় সমূহের পরিবর্তন করার মালিক! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর অবিচলভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখো
সুনানে তিরমিযী

اَللهم إِنِّي أَسْأَلُكَ الهُدَى، وَالتُّقَى، وَالعَفَافَ، وَالغِنَى

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোআ’ করতেনঃ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আ’ফা-ফা ওয়ালগি’না”
অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট হেদায়েত, পরহেজগারি, অশ্লীলতা হতে পবিত্রতা এবং স্বচ্ছলতা প্রার্থনা করছি।

৫. পাপ কাজের মাধ্যম বা রাস্তাগুলো বন্ধ করা –
পাপাচারী, বেদ্বীন, দ্বীনের ব্যপারে উদাসীন, খারাপ কাজে লিপ্ত ও সেইদিকে দাওয়াত দেয় এমন বন্ধু/বান্ধবী, সম্প্রদায়, মাধ্যম, স্থান – এমন যাকিছু সমস্ত কিছুকে বর্জন করা, তাদেরকে বাধা দেওয়া বাতাদের সাথে বিরোধীতা করা। গায়ের মাহরাম নারীদের সাথে যোগাযোগ সম্পর্ক ছিন্ন করলে আপনার প্রেম-ভালোবাসা, পরকীয়ার নোংরামি শেষ হবে, টিভি চ্যানেল, পত্রিকা বাদ দিলে অশ্লীলতা দূর হবে। এইরকম যেটা আপনাকে পাপ কাজের দিকে নিয়ে সেটা  জায়েজ হলেও সেটাকে বাদ দিতে হবে।

______________________________