শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৬

জনপ্রিয় বক্তা ও লিখকদের ব্যপারে কিছু কথা

আজ (২৩শে এপ্রিল) Dr. Bilal Philips এর পেইজ থেকে #HalalHumor ক্যাপশান দিয়ে একটা পোস্ট করা হয়েছে, যেখানে ইসমাঈল মেঙ্ক এবং ড. বিলাল ফিলিপস-এর কিছু কাল্পনিক কথোপকথ ছবির সাহায্যে দেখানো হয়েছে। সম্পর্কে কিছু কথা উল্লেখ করছি।
(১) ফানি শায়খ
বর্তমানে অনেক বক্তা এবং দ্বাইয়ী দ্বীন প্রচারের নামে ফানি শায়খ এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তাদের মাঝে অনেকের মান এতোটাই নীচে নেমে গেছে যে, তাদের ভূমিকা এখন আর দ্বাইয়ীর পর্যায়ে বলা যায় না, বরং তারা যেন একজন জোকার, যাদের কাজ হচ্ছে ভক্ত শ্রোতাদেরকে বিনোদন দেওয়া। এদের স্পর্ধা এতোটাই বেশি যে, এরা দ্বীন শেখানোর নামে তাদের বক্তব্য ও কথার মাঝে হালাল হারামের মতো বিষয়াবলী, রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নাহ, সাহাবীদেরকে নিয়ে, পরহেজগার আলেম ওলামা ও তাদের ফতোয়া নিয়ে, আহলে সুন্নাহর অনুসারী লোকদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা ও কটাক্ষ করতে দ্বিধা বোধ করেনা। আমি এখানে যে বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা উল্লেখ করেছি, এমনই কিছু ঘটনার উদাহরণ দিচ্ছি। আল-মাগরিব ইনস্টিটিউট এর প্রতিষ্ঠতা মুহাম্মাদ আল-শরীফ, যে কিনা বিবাহ করাকে একপ্রকার জুলুম বলে কটাক্ষ করেছে। নোমান আলী খান, যে কিনা সাহাবীদের সম্পর্কে মিথ্যা কাহিনী বলে তাদের মানহানি করছে, এমনকি একজন সাহবীকে pokieman বলে কটাক্ষ করেছে। এছাড়া আরেকজন অভিনব বক্তা কামাল আল-মাক্কী তার দাওয়াতী কাজকে ফলপ্রসূ করার জন্যে যাদু(!) বিদ্যাকে বেছে নিয়েছেন। এমনকি তিনি তার এই ভ্রান্ত কাজকে ডিফেন্ড করার জন্যে হাতের কারসাজির চাইতে জঘন্য বিষয়, লেভেটেশান (শূণ্যে উড়ে দেখানোর) মতো কুফুরী কাজ করে দেখিয়েছেন।
এমন দ্বাইয়ী এবং বক্তা, যারা হাসি-ঠাট্টাকে দাওয়াতের মাধ্যম বানিয়েছে, তাদের জন্যে শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহর দুইটি বক্তব্য পেশ করছিঃ
শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ বলেন,
বর্তমান যুগে অন্য অনেক ফেতনার সাথে এই উম্মত সবচাইতে বড় যে ফেতনার সম্মুখীন সেটা হচ্ছে, এমন অনেক দ্বাইয়ী আছে যারা ইলম ছাড়াই অজ্ঞতাবশত মানুষকে গোমরাহী ও বাতিলের দিকে দিকে দাওয়াত দিচ্ছে।
শায়খ ফাউজান আরো বলেছেন, Dawah is not by way of jokes, clowning and humor. Dawah is by the Book and the Sunnah and preaching, it is not by humor or making the people laugh or things like this. This is not from kindness. Perhaps someone will say this is from kindness. Kindness is not joking that leads to comedy. - Shaykh Saalih Al Fawzaan
(২) মানুষকে হাসানোর জন্যে দাওয়াতী কাজের মাঝে মিথ্যা বলা
দাওয়াতী কাজের মাঝে মানুষকে হাসানোর জন্যে অনেক বক্তা মিথ্যা ঘটনা রচনা করে অথবা, সত্যিকারের চরিত্রের সাথে সম্পর্কিত করে কাল্পনিক কথোপকথন বা কার্টুন অংকন করে, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। আজ ইসমাঈল মেঙ্ক এবং ড. বিলাল ফিলিপস এর মাঝে কথোপকথনের যেই ছবিটা প্রচার করা হয়েছে, এই কনভার্সেশানটা আসলে তাদের দুইজনের মাঝে কখনোই সংঘটিত হয়নি। বরং Dr. Bilal Philips এর পেইজের একজন নাম না জানা এডমিন নিজের মস্তিষ্ক প্রসূত চিন্তা থেকে এই বানোয়াট কনভার্সেশানটা রচনা করেছে। যদিও সে দাবী করেছেন, এই বানোয়াট কনভার্সেশান প্রচার করার জন্যে বক্তাদের অনুমতি নিয়েছে, কিন্তু মূলত কথাগুলো বানোয়াট, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে হাসানো। আর এমন কাজের কি ফজীলত(!) আশা করি প্রিয়নবী (সাঃ) এই একটিমাত্র হাদীস থেকেই স্পষ্টঃ যে ব্যক্তি মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে, তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস! সুনানে তিরমিযী ৪/৫৫৭; সুনানে আবু দা৪/২৯৭
(৩) ছবি তোলার বিষয়টিকে পানি পানের মতোই জায়েজ ও হালকা বানিয়ে নেওয়া
বর্তমান যুগে মারাত্মক একটা ফিতনাহ হচ্ছে ছবি এবং সেলফি, যা থেকে আমাদের বেঁচে থাকা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আধুনিক যুগের প্রায় সমস্ত আলেমরাই বিনা প্রয়োজনে ছবি তোলাকে হারাম বলে বিশ্বাস করেন। এমন কিছু আলেমের নামঃ শায়খ বিন বাজ, শায়খ আলবানী, আব্দুল্লাহ ইবনে ক্বাউদ, আব্দুল্লাহ ইবনে গুদায়্যান, আব্দুল রাজ্জাক্ব আফিফী, আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি রহম করুন এবং জীবিতদের মাঝে রয়েছেন শায়খ আব্দুল আজিজ আহলে শায়খ, শায়খ ফাউজান, শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ, শায়খ রাবী আল-মাদখালী, শায়খ সালেহ আস-শুহাইমি, এমন আরো অসংখ্য আলেমগণ। অনেকে ফতোয়া আরকানুল ইসলাম এর একটি ফতোয়া থেকে মনে করেনঃ শায়খ ইবনে উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ ছবি তোলাকে জায়েজ বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন। অথচ সেই ফতোয়াতে শায়খ যা বলেছিলেন, তারপরেও স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছিলেন, স্মৃতি সংরক্ষণের জন্যে ছবি তোলা জায়েজ নয়। যাই হোক, পরবর্তীতে শায়খ ইবনে উসায়মিন তাঁর নিজস্ব ইজতেহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করে শায়খ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহর ইজতেহাদের দিকে ফিরে আসেন। শায়খের নিজের মুখ থেকেই শুনুন
https://www.youtube.com/watch?v=y1efgfq4FE0&app=desktop

অথচ এই সমস্ত প্রকৃত মুজতাহিদ, আলেমদের ফতোয়াকে পাশ কাটিয়ে অনেক বক্তা ও আলেম নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাই মানুষের মাঝে বেশি প্রচার করছেন এবং নিজেরাও ব্যপকভাবে ছবি তোলার সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। উদাহরণ স্বরূপ, ড. জাকির নায়েক স্বয়ং নিজের ছবিকে এতো বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে থাকেন যে, বর্তমানে তাঁর ভক্তরা ড. জাকির নায়েক এর ছবি বা সেলফি ছাড়া ক্বুরানের একটা আয়াতও প্রচার করতে পারছেন না। প্রতিদিন সকাল বিকাল ড. জাকির নায়েক এর একটা ছবি পোস্ট না করে মনে হয় মানুষের ঈমান ধরে রাখা যাচ্ছেনা। কিছুদিন পূর্বে জনপ্রিয় লেখক আইজ আল ক্বারনী ফিলিপাইনে যখন গুলিবিদ্ধ হন, তার ঠিক পূর্বেই একজন ফিলিপিনি যুবক অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে তাঁর সাথে সেলফি তোলার জন্যে ছুটে যায়। আইজ আল ক্বারনী সেই ছেলেকে উপদেশ না দিয়ে বরং একজন সেলেব্রিটির মতোই হাসিমুখে তার সাথে সেলফি তুলেন। অথচ আমেরিকান সাইকিয়াটিক এসোসিয়েশন এর মতে সেলফি বা নিজের ছবি নিজে তুলে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে মানুষের মাঝে প্রচার করা একটা মানসিক ভারসাম্যহীন বিষয়...এমনইভাবে অনেক বক্তা এবং লিখক ছবি তোলা এবং কার্টুন অংকনের বিষয়টিকে অত্যন্ত হালকাভাবে নিচ্ছেন, এবং এর দ্বারা তাদের ভক্ত শ্রোতাদেরকেও সেইদিকে উৎসাহিত করছেন। 

কেয়ামতের ছয়টি আলামত ও শায়খ ফাউজানের ব্যখ্যা


কেয়ামতের ছয়টি আলামত ও শায়খ ফাউজানের ব্যখ্যাঃ
আওফ ইবনে মালেক আল-আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাবুক যুদ্ধের সময় আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি একটি চামড়ার তাঁবুর ভেতরে ছিলেন। আমি তাঁবুর আঙ্গিনায় বসে পড়লাম। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হে আওফ! ভেতরে এসো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি সম্পূর্ণ প্রবেশ করবো? তিনি বলেনঃ হাঁ, সম্পূর্ণভাবে এসো। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আওফ! কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি আলামত স্মরণ রাখবে।
(১) সেগুলো একটি হচ্ছে আমার মৃত্যু।  আওফ (রাঃ) বলেন, আমি একথায় অত্যন্ত মর্মাহত হলাম। তিনি বলেনঃ তুমি বলো, প্রথমটি।
(২) অতঃপর বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়।
(৩) অতঃপর তোমাদের মধ্যে এক মহামারী রোগ ছড়িয়ে পড়বে, যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের বংশধরকে ও তোমাদেরকে শাহাদত নসীব করবেন এবং তোমাদের আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করবেন।
(৪) এরপর তোমাদের সম্পদের প্রাচুর্য হবে, এমনকি মাথাপিছু একশত দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) পেয়েও মানুষ সন্তুষ্ট হবে না।
(৫) তোমাদের মধ্যে এমন একটা ফিতনাহ সৃষ্টি হবে, যা থেকে কোন মুসলমানের ঘরই রেহাই পাবে না।
(৬) এরপর বনু আসফার (রোমক খৃস্টান)-এর সাথে তোমাদের সন্ধি হবে। কিন্তু তারা তোমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা তলে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। প্রতিটি পতাকার অধীনে থাকবে বারো হাজার সৈন্য।
সহী বুখারী ৩১৭৬, বু দাউদ ৫০০০, আহমাদ ২৩৪৫১
আল্লামাহ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ উপরোক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় বলেনঃ কেয়ামতের পূর্বে ছয়টি ঘটনা ঘটবে।
(১) প্রথমটা হচ্ছে আল্লাহর রাসুল সাঃ এর মৃত্যু।
(২) এরপর হচ্ছে (মুসলমানেরা জেরুজালেমের) বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করবে। আর এটা হযরত উমার (রাঃ) এর খিলাফতের সময় হয়েছিলো।
(৩) এরপর হচ্ছে মারাত্মক একটা মহামারী রোগ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে, যার কারণে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। আমরা আল্লাহর কাছে এটা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
(৪) এরপর হচ্ছে মানুষের মাঝে সম্পদ বেড়ে যাওয়া। সম্পদ বেড়ে যাওয়া একটা ফিতনাহ, এবং এটা কেয়ামতের একটা লক্ষণ। কেয়ামতের পূর্বে মানুষের হাতে সম্পদ বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ অল্প সম্পদে সন্তুষ্ট হবেনা। এমনকি কোন ব্যক্তিকে একশত স্বর্ণমুদ্রা (অনেক সম্পদ) দিলেও সে সন্তুষ্ট হবেনা।
(৫) এরপর হচ্ছে, এমন একটা ফিতনাহ, যেটা থেকে কোন মুসলমানের বাড়ি বেঁচে থাকতে পারবেনা।  এটা একটা মারাত্মক সমস্যা, যা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবং যা বর্তমানে খুব বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন, আমার (শায়খ ফাউজন-এর) মতে, বর্তমান যুগের বিভিন্ন মিডিয়া এবং ইন্টারনেট হচ্ছে হাদীসে বর্ণিত সেই ফিতনাহ। কে জানে, এই মিডিয়ার থেকে সৃষ্ট ক্ষতি কত দূর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এই (মিডিয়া, ইন্টারনেট) নিজে থেকে মানুষের বাড়িতে প্রবেশ করছে। তোমার তাদের কাছে যাচ্ছ বিষয়টা এমন নয়, বরং তারা নিজেরাই তোমাদের কাছে চলে আসছে। তুমি তোমার বিছানায় শুয়ে আছে, আর এই অলস জিনিসটা তোমার পাশে আছে। তোমার খুব বেশি চেষ্টা ছাড়াই এইগুলো তোমার জন্যে অনেক বড় ক্ষতি ও ধংস নিয়ে আসছে। এর এটাই হচ্ছে ফিতনাহ (বিপর্যয়, কঠিন পরীক্ষা)।
(৬) সর্বশেষ, তোমাদের ও বনু আসফার লোকদের মাঝে একটা সন্ধি চুক্তি। বনু আসফার হচ্ছে রোমান খ্রীস্টানরা। মুসলমান ও রোমান খ্রীস্টানদের মাঝে একটা সন্ধি চুক্তি হবে এবং তাদের মধ্যে যুদ্ধের মাধ্যমে এই চুক্তি শেষ হবে। রোমানরা তোমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। রোমানরা মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে কারণ, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা হচ্ছে কাফেরদের একটা চরিত্র। আর আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করা হচ্ছে মুসলমানদের চরিত্র।

নাআম।

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৬

Fatwa on FB, Twitter


(1) The Fitnah that will enter every Muslim home - Shaykh Saalih Al-Fawzaan
https://www.youtube.com/watch?v=9P1R7RiGAtA
___________________________
(2) Shaykh al-Fawzân about Facebook, Twitter and WhatsApp
https://www.youtube.com/watch?v=c1UZVibGGyg
___________________________
(3) Fiqh of Social Media : Shaykh Sulayman ar-Ruhayli
https://www.youtube.com/watch?v=Q29VVQViTOU
___________________________
(4) Advice to the Sisters who use Social Media - Shaikh Salih Al Fawzan
https://www.youtube.com/watch?v=4UgrwgcWN7A


___________________________

বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৬

সিজারিয়ান ডেলিভারী নাকি নরমাল ডেলিভারী?

(১) আমাদের দেশের অধিকাংশ মহিলারা জব অথবা বিজনেস করে না।
(২) তাদের অধিকাংশের স্বামীই মারাত্মক রকমের এমন বড়লোক না যে শখ(!) করে অথবা স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার কারণে নিজে থেকে সিজারিয়ান ডেলিভারি করানোর জন্যে বায়না ধরবে। বরং, সিজারিয়ান ডেলিভারির জন্য যে খরচ, সেই ভয়েই অনেক বাবা ভয়ের মাঝে থাকেন
(৩) অন্যদিকে লন্ডন, এমেরিকার মহিলাদের বেশিরভাগ স্বাবলম্বী, তাদের হেলথ ইন্সুরেন্স থাকে, তাদের স্বামীরা আমদের দেশের স্বামীদের চাইতে বড়লোক, তাদের মহিলারা বাঙ্গালী মহিলাদের চাইতে শরীরের ব্যপারে অধিক সচেতন।
(৪) তারপরেও কেনো বাংলাদেশী কোন গর্ভবতী মহিলাকে সন্তান প্রসবের জন্যে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সিজারিয়ান ডেলিভারী করানো বর্তমানে বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে? অন্যদিকে লন্ডন এমেরিকাতে কোন মহিলা নিজে থেকে চেয়ে, অনুরোধ করেও সিজারিয়ান ডেলিভারী করার জন্যে ডাক্তারকে রাজী করাতে পারে না?
(৫) হঠাত করে বাংলাদেশী সমস্ত মহিলাদের শরীরে কি এমন পরিবর্তন হয়ে গেছে যে, মাত্র ২০-৩০ বছর আগেও যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নরমা ডেলিভারীতে সন্তান প্রসব সম্ভব হতো, এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছেনা?
(৬) সত্যি কথা বলতে, বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে নরমান ডেলিভারীতে সন্তান প্রসবের পরিবর্তে সিজারিয়ান ডেলিভারীর সংখ্যা অনেকগুণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণের মাঝে প্রধান দুটি কারণ হচ্ছেঃ
(ক) হাসপাতাল এবং ডাক্তারের আর্থিক সুবিধার প্রতি লোভ এবং
(খ) একশ্রেণীর লোকদের অজ্ঞতা বা ফ্যাশান হিসেবে বিনা কারণে স্বেচ্ছায় সিজারিয়ান ডেলিভারীকে বেছে নেওয়া।
(৭) যেখানে নরমাল ডেলিভারীতেই সন্তান প্রসব সম্ভব, সেখানে শুধুমাত্র ডাক্তার বা হাসপাতালের টাকা উপার্জনের লোভে সিজারিয়ান ডেলিভারী সাজেস্ট করা নাজায়েজ, হারাম, এইভাবে তাদের উপার্জনের টাকা অবৈধ।
(৮) আমি মুসলিম ডাক্তার ভাই ও বোনদেরকে অনুরোধ করবো, আপনারা আপনাদের পেশার সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উপরে শরিয়তের কি বক্তব্য তা জানার চেষ্টা করুন, হালাল হারাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন। ডাক্তারী পেশার সাথে জড়িত অনেকেই বিভিন্নভাবে হারাম অর্থ উপার্জন ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকেন। না জানার কারণে হয়তোবা আপনিও সেই হারামের পাল্লায় পড়বেন।
(৯) আর সাধারণ মানুষের কাছে আমি আহবান জানাবো, সন্তান জন্ম দেওয়ার যেই ব্যবস্থা আল্লাহ দিয়েছেন সেটাই উত্তম। এর দ্বারা যে কি উপকার রয়েছে সে সম্পর্কে ইমাম মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
স্বাভাবিক কষ্টকর সন্তন প্রসবের দ্বারা
(i) মায়ের অনেক গুনাহ মাফ হয়।
(ii) আল্লাহর কাছে সওয়াব পাওয়ার নিয়তে ধৈর্য ধারণ করলে, আল্লাহর কাছে সেই মায়ের মর্যাদা অনেক বৃদ্ধি পায়।
(iii) সেই মা সুস্থ থাকার মর্যাদা বুঝতে পারে এবং এটা তার উপরে আল্লাহর নিয়ামতগুলো চিনতে সাহায্য করে।
(iv) সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা অনেক বেশি হবে।
(v) মা ও সন্তানের দুইজনের জন্যে এটাই উত্তম।
(vi) নরমাল সন্তান হলে সেই মায়ের ভবিষ্যতে অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
(vii) সিজারিয়ানে অনেক সময় সন্তান ও মায়ের ক্ষতি হয়, যেকারণে সন্তানের অংগ হানি এবং ভবিষয়্যতে মায়ের সন্তান জন্ম দেওয়া কঠিন হয়।

(viii) হাসপাতালে ডাক্তারদের অধিকহারে সিজারিয়ান ডেলিভারী সাজেস্ট করা মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র হতে পারে। কারণ মায়ের পেটে ছুড়ি ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে সেই মায়ের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাবে, তার সন্তান কম হবে। এইভাবে মুসলমানদের জনসংখ্যা কম হওয়ার দ্বারা আস্তে আস্তে তাদেরকে দুর্বল করা হবে। 

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৬

রজব মাস: এ সব বিদয়াত দূর হওয়া আবশ্যক

রজব মাস: এ সব বিদয়াত দূর হওয়া আবশ্যক
অনুবাদ ও গ্রন্থনা: আব্দুল্লাহিল হাদী
আলোচ্য সূচী:
১) ভূমিকা
২) রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন ইবাদত করার কথা কি হাদীসে বর্ণিত হয়েছ?
৩) রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি দুর্বল হাদীস।
৪) রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি জাল হাদীস।
৫) রজব মাসকে কেন্দ্র করে নামায, রোযা, ইতিকাফ ইত্যাদি ইবাদত করা।
৬) সালাতুর রাগায়েব এর বিদআত।
৭) শবে মেরাজ পালন করার বিদআত।
তাহলে আসুন, আমরা ধারাবাহিকভাবে উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনায় প্রবৃত্ত হই।
——————————————————————-
১) ভূমিকা
সম্মানিত পাঠক, আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য দিয়েছেন মহা গ্রন্থ আল কুরআনুল কারীম এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ। তাই বিদাআতীর বিদআত অনুসরণ করার প্রতি আমরা মুখাপেক্ষী নই। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ

“তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না। (সূরা আরাফ: ৩)
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনের যাবতীয় বিধানকে দিবালোকের মত সুস্পষ্টভাবে আমাদের জন্য বর্ণনা করে দিয়েছন। তিনি মুসলিম উম্মাহর নিকট আল্লাহর সত্য বাণীকে পৌঁছে দিতে সামান্যতম কার্পণ্য করেন নি। সাহাবীগণ ও সত্যকে মনে-প্রাণে ও বাস্তব জীবনে এ সত্যের সাক্ষ্য দিয়ে চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করেছেন। এই পথ থেকে শুধু হতভাগ্যরাই বিচ্যুত হয়। তাই আমাদের কর্তব্য কুরআন-সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা এবং সকল ধরণের বিদআত থেকে দূরে থাকা।

সম্মানিত পাঠক, আমরা দেখি রজব মাসকে কেন্দ্র করে অনেক মুসলমান এমন অনেক কার্যক্রমে লিপ্ত হয় যার ব্যাপারে কুরআন-সু্‌ন্নাহর বিশুদ্ধ কোন প্রমাণ নেই। যেমন, রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে কিছু রোযা রাখা, ইবাদত-বন্দেগী করা, রজবী উমরা পালন করা, মেরাজ দিবস কিংবা শবে মেরাজ পালন করা ইত্যাদি। তাছাড়া রজব মাসের ফযিলতে এমন অনেক হাদীস পেশ করা হয় যেগুলো হাদীস বিশারদগণের দৃষ্টিতে হয় দুর্বল না হয় বানোয়াট।

২) রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন ইবাদত করার কথা কি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে?
ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন:
“রজব মাসের মর্যাদার ব্যাপারে অথবা রজব মাসে বিশেষভাবে কোন ধরণের নফল নামায-রোযা কিংবা এর কোন নির্দিষ্ট রাতে ইবাদত-বন্দেগী করার ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য কোন হাদীস বর্ণিত হয় নি। আমার আগে এ কথাটি ইমাম হাফেয আবু ইসমাইল আল হারাবী দৃঢ়তা সহকারে বলেছেন। আমি এ কথা তার নিকট থেকে এবং আরও অন্যান্য মনিষীদের নিকট থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছি।” (তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফাযলি রাজাব)

এর পর তিনি এ প্রসঙ্গে বর্ণিত বেশ কিছু যঈফ ও জাল হাদীস উল্লেখ করেছেন। নিন্মে অতি সংক্ষেপে সেগুলো থেকে কয়েকটি হাদীস পেশ করব ইনশাআল্লাহ।

৩) রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি দুর্বল হাদীস:

১) “জান্নাতে একটি নহর আছে যাকে বলা হয় রজব। যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোযা রাখবে তাকে সেই নহরের পানি পান করতে দেয়া হবে।”

ইবনে হাজার রহ. বলেন: হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, আবুল কাসেম আত তাইমী তার আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে, হাফেয আসপাহানী ফাযলুস সিয়াম কিতাবে, বাইহাকী, ফাযায়েলুল আওকাত কিতাবে, ইবনু শাহীন আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে।

এ হাদীসটি দুর্বল। ইবনুল জাওযী ইলালুল মুতানাহিয়া গ্রন্থে বলেন: এ হাদীসের বর্ণনা সূত্রে একাধিক অজ্ঞাত রাবী রয়েছে। তাই এ হাদীসের সনদ দুর্বল। তবে বানোয়াট বলার মত পরিস্থিতি নেই। এর আরও কয়েকটি সূত্র রয়েছে কিন্তু সেগুলোতেও একাধিক অজ্ঞাত বর্ণনাকারী রয়েছে। [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব (পৃষ্ঠা নং ৯, ১০ ও ১১), আল ইলালুল মুতানাহিয়া, (২য় খণ্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)।]

২) “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবানা ও বাল্লিগনা রামাযান।”

“হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রামাযান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।” (মুসনাদ আহমাদ ১/২৫৯)

হাদীসটি দুর্বল।

এ হাদীসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. বলেন: মুনকারুল হাদীস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন: চিনি না এই ব্যক্তি কে? আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন: মুনকারুল হাদীস। কুনা গ্রন্থে বলেন: “তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন: তার বর্ণিত কোন হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)

৩) “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানের পরে রজব ও শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে রোযা রাখেন নি।” (বাইহাকী)

হাফেয ইবনে হাজার বলেন: উক্ত হাদীসটি মুনকার। কারণে, এর সনদের ইউসুফ বিন আতিয়া নামক একজন রাবী রয়েছে। সে খুব দূর্বল। (তাবয়ীনুল আজাব ১২ পৃষ্ঠা)

৪) রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি জাল হাদীস:

১) রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রামাযান আমার উম্মতের মাস।”

এটি জাল হাদীস।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, উক্ত হাদীসটি বর্ণনাকারীদের মধ্যে আবু বকর আন নাক্কাশ নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। সে কুরআনের মুফাসসির। কিন্তু লোকটি জাল হাদীস রচনাকারী এবং চরম মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। ইবনে দেহিয়া বলেন: এই হাদীসটি জাল। (তাবয়ীনুল আজব, ১৩-১৫ পৃষ্ঠা) এছাড়াও উক্ত হাদীসকে জাল বলে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী তার আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৫-২০৬) এবং ইমাম সানয়ানী মাওযূআত কিতাবে (৬১ পৃষ্ঠা) এবং সূয়ূতী তার আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৪)।

২) কুরআনের মর্যাদা সকল যিকির-আযকারের উপর যেমন রজব মাসের মর্যাদা অন্যান্য মাসের উপর তেমন।”

হাদীসটি বানোয়াট।

ইবনে হাজার আসকালানী উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন, এই হাদীসটি সনদের রাবীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য একজন ছাড়া। তার নাম হল, সিকতী। আর এ লোকটিই হল বিপদ। কেননা, সে একজন বিখ্যাত জাল হাদীস রচনাকারী। (তাবয়ীনুল আজাব: ১৭ পৃষ্ঠা)

৪) রজব মাসে যে ব্যক্তি তিনটি রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার আমলনামায় একমাস রোযা রাখার সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন, আর যে ব্যক্তি সাতটি রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দিবেন।”
হাদীসটি জাল।

এটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৬), সূয়ূতী আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৫), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (১০০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২২৮) এবং তাবয়ীনুল আজাব কিতাবে (১৮ পৃষ্ঠা)।

৫) “যে ব্যক্তি রজবের প্রথম তারিখে মাগরিব নামায আদায় করত: বিশ রাকায়াত নামায পড়বে, প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতিহা এবং সূরা ইখলাস একবার করে পড়বে এবং প্রতি দু রাকায়াত পরপর সালাম ফিরিয়ে মোট দশ সালামে বিশ রাকায়াত পূর্ণ করবে তোমরা কি জানেন তার সওয়াব কি?…তিনি বলেন: আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাজত করবেন এবং তার পরিবার, সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততীকে হেফাজত করবেন, কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন এবং বিনা হিসেব ও বিনা শাস্তিতে বিদ্যুৎ গতিতে পুলসিরাত পার করাবেন।”
এটি একটি বানোয়াট হাদীস।

(দ্রষ্টব্য: ইবনুল জাউযী তার মাওযূয়াত (২/১২৩), তাবয়ীনুল আজাব (২০ পৃষ্ঠা), আল ফাওয়াইদুল মাজমূয়াহ (৪৭পৃষ্ঠা, জাল হাদীস নং ১৪৪)।)

৫) “যে ব্যক্তি রজব মাসে রোযা রাখবে এবং চার রাকায়াত নামায পড়বে সে জান্নাতে তার নির্ধারিত আসন না দেখে মৃত্যু বরণ করবে না।”
হাদীসটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/১২৪), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (৪৭ পৃষ্ঠা) এবং তাবয়ীনুল আজাব, (২১ পৃষ্ঠা)।

৬) সালাতুর রাগায়েব নামায সম্পর্কিত হাদীস। হাদীসটি হল:
”রজবের প্রথম শুক্রবার রাতটি ব্যাপারে তোমরা গাফলতি কর না। কারণ, ফেরেশতাগণ এ রাতটিকে রাগায়েব বলে আবিহিত করেন। এ রাতে শেষভাগে আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত এমন কোন ফেরেশতা বাকি থাকে না যারা কাবা শরীফ এবং তার চারপাশে এসে একত্রিত না হয়। তারপর আল্লাহ তায়ালা তাকিয়ে দেখে ফেরেশতাদেরকে বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ, তোমরা যা খুশি আমার নিকট চাও। তারা বলেন: হে আল্লাহ তোমার নিকট দরখাস্ত পেশ করছি যে, যে সকল লোক রজব মাসে রোযা রাখে তাদেরকে ক্ষমা করে দাও। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ঠিক আছে, তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। অত:পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি রজব মাসের প্রথম বৃহ:পতিবার দিনে রোযা রাখবে এবং শুক্রবার রাতে মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে বার রাকায়াত নামায পড়বে…।”
এ হাদীসটি জাল।

দেখুন: ইবনুল জাওযী রচিত আল মাওযূয়াত ২/১২৪-১২৬, তাবয়ীনুল আজাব (২২-২৪পৃষ্ঠা), আল ফাওয়ায়েদুল মাজমূয়া, (৪৭-৫০ পৃষ্ঠা, জাল হাদীস নং ১৪৬)

৭) নিশ্চয় রজব একটি মহান মাস। যে ব্যক্তি এ মাসের কোন একদিন রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তার আমল নামায় এক হাজার বছরের সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন।”
হাদীসটি জাল।

এ হাদীসটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৬-২০৭), সূয়ূতী আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৫), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (১০১ পৃষ্ঠা, জাল হাদীস নং ১৪৫) এবং তাবয়ীনুল আজাব, (২৬ পৃষ্ঠা)।

রজব মাস সম্পর্কে এখানে মাত্র কয়েকটি প্রচলিত জাল হাদীস উপস্থাপন করা হল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমন আরও বহু জাল হাদীস বিভিন্ন কিতাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। উদ্দেশ্য এটা দেখানো যে, রজব মাসে বিশেষ নামায, রোযা ও ইবাদত-বন্দেগী নাই। বরং এ প্রসঙ্গে অনেক বানোয়াট ফযীলতের কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক পথে সন্ধান দান করুন। আমীন।

৫) রজব মাসকে কেন্দ্র করে নামায, রোযা, ইতিকাফ, ইত্যাদি ইবাদত করা।
রজব মাসে বিশেষভাবে নফল রোযা রাখা, নফল নামায পড়া অথবা ইতিকাফ করা দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। যারা এ সব করে তারা এমন কিছু হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করে যেগুলো দুর্বল অথবা বানোয়াট।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: রজব ও শাবানকে মিলিয়ে একসাথে পুরো দুমাস বিশেষভাবে রোযা রাখা অথবা ইতিকাফ করার সমর্থনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবীগণ, কিংবা মুসলমানের ইমামগণের পক্ষ থেকে কোন প্রমাণ নেই। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে রোযা রাখতেন। তিনি রামাযান মাসের আগমনের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোযা রাখতেন রামাযান ছাড়া বছরের অন্য কোন মাসে এত রোযা রাখতেন না। (বুখারী, কিতাবুস সাওম, মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম)

রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোযা রাখার ব্যাপারে কিছু হাদীস দুর্বল আর অধিকাংশই বানোয়াট। আহলে ইলমগণ এগুলোর প্রতি নির্ভর করেন না। এগুলো সে সকল দুর্বল হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নয় যেগুলো ফযীলতের ক্ষেত্রে বর্ণনা করা হয়। বরং অধিকাংশই মিথ্যা ও বানোয়াট। রজব মাসের ফযিলতে সব চেয়ে বেশী যে হাদীসটি বর্ণনা করা হয় সেটা হল এই দুয়াটি:

(( اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان))

“হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে রজব ও শাবানে বরকত দাও এবং রামাযান পর্যন্ত পৌঁছাও।” [মুসনাদ আহমদ, (১/২৫৯)।]
এ হাদীসটি দুর্বল।

এ হাদীসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. বলেন মুনকারুল হাদীস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন: “চিনি না এই ব্যক্তি কে?” আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে তার সম্পর্কে বলেন: মুনকারুল হাদীস। কুনা গ্রন্থে বলেন: তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন: তার বর্ণিত কোন হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)

ইবনে তাইমিয়া রহ. আরও বলেন: “রজব মাসকে বিশেষ সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত যা বর্জন করা উচিৎ। রজব মাসকে বিশেষভাবে রোযার মওসুম হিসেবে গ্রহণ করাকে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল সহ অন্যান্য ইমামদের নিকটে অপছন্দনীয়।” (ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম, ২য় খণ্ড, ৬২৪ ও ৬২৫ পৃষ্ঠা)

ইবনে রজব বলেন: রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোযা রাখার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কিংবা সাহাবীদের থেকে কোন কিছুই সহীহ ভাবে প্রমাণিত হয় নি। কিন’ আবু কিলাবা থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে, “যারা রজবে বেশী বেশী রোযা রাখবে তাদের জন্য জান্নাতে প্রাসাদ রয়েছে।” এই কথাটির ব্যাপারে ইমাম বায়হাকী বলেন: আবু কিলাবা একজন বড় মাপের তাবেঈ। তার মত ব্যক্তি হাদীসের তথ্য না পেলে এমন কথা বলতে পারেন না।

কিন্তু এ কথার প্রতি উত্তরে বলা যায় যে, ইসমাইল আল হারাবী, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনে হাজার আসকালানী প্রমুখ আলেমগণ এ মর্মে একমত যে, রজব মাসকে কেন্দ্র করে রোযা রাখার ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন সহীহ হাদীস প্রমাণিত হয় নি। এ মর্মে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু হল যঈফ আর অধিকাংশই বানোয়াট।

আবু শামা বলেন: কোন ইবাদতকে এমন কোন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে দেয়া উচিৎ নয় শরীয়ত যেটা নির্দিষ্ট করে নি। বরং ইসলামী শরীয়ত যে সময় যে ইবাদত নির্ধারণ করেছে সেটা ছাড়া যে কোন ইবাদত যে কোন সময় করা যাবে। এক সময়কে অন্য সময়ের উপর প্রাধান্য দেয়া যাবে না।

ইসলামী শরীয়তে বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশেষ কিছু’ ইবাদতের জন্য। ঐ সময়গুলোতে ঐ ইবাদতগুলোই ফযীলত পূর্ণ; অন্য কোন ইবাদত নয়। যেমন, আরাফাহর দিনে রোযা রাখা, আশুরার দিনে রোযা রাখা, গভীর রাতে নফল নামায পড়া, রামাযান মাসে উমরা আদায় করা।

অনুরূপভাবে এমন বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে যেগুলোতে ‘যে কোন ধরণের’ নেকীর কাজ করার ফযীলত রয়েছে। যেমন, জিল হজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন, লাইলাতুল কদর যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এই রাতে যে কোন ইবাদতই করা হোক তা অন্য হাজার মাসের চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ।

মোটকথা, বিশেষ কোন সময়কে বিশেষ কোন ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করার অধিকার কেবল ইসলামী শরীয়তই সংরক্ষণ করে; অন্য কোন ব্যক্তি নয়। আল্লাহ সব চেয়ে ভাল জানেন। (আল বায়িস, পৃষ্ঠা নং ৪৮)

৬) সালাতুর রাগায়েব এর বিদআত
রজব মাসের অন্যতম বিদআত হল: সালাতুর রাগায়েব। এ নামাযটি পড়া হয় রজব মাসের প্রথম শুক্রবার মাগরিব ও ইশার মাঝে। আর তার আগের দিন অর্থাৎ বৃহ:বার দিনে রোযা রাখা হয়।

এ নামাযটির ভিত্তি হল একটি বানোয়াট হাদীস। সেই হাদীসে তার ফযীলত ও পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। দেখুন সেই হাদীসটি:

ক) সালাতুর রাগায়েব আদায়ের বানোয়াট পদ্ধতি:
আনাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: রজব হল আল্লাহর মাস। শাবান আমার মাস আর রামাযান আমার উম্মতের মাস…। কোন ব্যক্তি যদি রজবের প্রথম বৃহ:বার রোযা থাকে এবং শুক্রবার মাগরিব ও ইশার মাঝে বার রাকায়াত নামায পড়ে, প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতিহা পড়বে একবার, সূরা কদর তিন বার, কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ বার বার।

প্রতি দু রাকায়াত পর সালাম ফিরাবে, তারপর আমার উপর সত্তর বার দরূদ পড়বে এভাবে: আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিনি নাবিয়্যি ওয়া আ’লা আলিহ অত:পর একটা সাজদাহ দিবে। তাতে পড়বে সুব্বূহুন কুদ্দূসুন, রাব্বুল মালাইকিতি ওয়ার রূহ সত্তর বার। তারপর সাজদাহ থেকে মাথা উঠিয়ে বলবে: রাব্বিগফির লী, ওয়ারহাম, ওয়া তাজাওয়ায আম্মা তা’লাম, ইন্নাকা আনতাল আযীযুল আযীম” সত্তুর বার। অত:পর ২য় সাজদাহ দিবে এবং প্রথম সজদায় যা যা পড়েছে সেগুলো পড়বে। অত:পর আল্লাহর নিকট তার প্রয়োজন তুলে ধরে দুয়া করলে আল্লাহ তা পূরণ করবেন।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সেই স্বত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ কোন বান্দা অথবা বান্দী যদি এই নামায পড়ে তবে তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে যদিও তা সাগরের ফেনা এবং বৃক্ষরাজির পাতা সমপরিমাণ হয় এবং তার পরিবার পরিজনের মধ্য থেকে সত্তুর জনের জন্য তার শাফায়াত কবুল করা হবে।

আর কবরের প্রথম রজনীতে এই নামাযের সওয়াব তার সামনে এসে হাজির হবে উজ্জ্বল চেহারা আর মিষ্টভাষী হয়ে আর বলবে, হে আমার বন্ধু, আমি তোমার সেই নামাযের সওয়াব যা তুমি উমুক মাসের উমুক রাতে পড়েছিলে। আজ রাতে তোমার নিকট এসেছি যেন তোমার প্রয়োজন পূরণ করি, তোমার নি:সঙ্গতা ও ভয়-ভীতি দূর করি। যে দিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে সে দিন কিয়ামতের মাঠে তোমার মাথার উপর ছায়া দিব। সুসংবাদ নাও, তোমার প্রভু থেকে কখনোই কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে না।“
– উক্ত হাদীসটি ইবনুল জাওযী তার মওযূয়াত কিতাবে (২/১২৪-১২৬) উল্লেখ করার পর বলেন: এটি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর মিথ্যা রোপ ছাড়া কিছু নয়। এ হাদীসটির রচনাকারী হিসেবে যে ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয় সে হল ইবনু জুহাইম। মুহাদ্দিসগণ এ মিথ্যা রোপকে তার দিকেই সম্বোধন করেছেন।
– তিনি বলেন: আমাদের শাইখ আব্দুল ওয়াহাব বলেন: “এ হাদীসটির সনদের বর্ণনাকারীগণ অজ্ঞাত। এদের পরিচয় জানার জন্য ইলমুর রিজালের কিতাবাদী তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও তাদের সম্পর্কে তথ্য পাই নি।”
– শাওকানী তার ফাওয়ায়েদুল মাজমূয়াহ কিতাবে (৪৭-৪৮পৃষ্ঠা) বলেন: এ হাদীসটি বানোয়াট এবং এর বর্ণনাকারীগণ অজ্ঞাত। আর এটাই সালাতুর রাগায়েব নামে পরিচিত। হাফেযুল হাদীসগণ একমত যে, এটি জাল হাদীস।
– ফিরোযাবাদী আল মুখতাসার কিতাবে বলেন: সর্বসম্মতি ক্রমে এটি জাল। অনুরূপ কথা বলেন ইমাম মাকদেসী। এ হাদীসটি রাযীন ইবনে মুয়াবিয়া আল আব্দারীর কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন’ এ ব্যাপারে কথা হল, তিনি তার কিতাবে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করতে গিয়ে অনেক বানোয়াট ও অদ্ভুত কথা-বার্তা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কোথা থেকে এ সব এনেছেন তা জানা যায় না। এটা মুসলমানদের প্রতি তার বিশ্বাস ঘাতকতা। (দেখুন: আবু শামাহ রচিত আল বায়িস, পৃষ্ঠা নং ৪০)
– ইবনুল জাওযী (রহ.) বলেন: এ হাদীসটি বানানোর মাধ্যমে বাড়াবাড়ি রকমের বিদআত চালু করা হয়েছে। কারণ, যে ব্যক্তি এই নামায পড়তে পড়তে চায় তাকে দিনে রোযা রাখতে হবে। দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম থাকলেও হয়ত সে রোযা রাখল। কিন’ ইফতার করার সময় ভাল করে খাওয়া দাওয়া সম্ভব হল না। তারপরও মাগরিব নামায আদায় করার পর লম্বা তাসবীহ আর দীর্ঘ সাজদাহ দিয়ে এই নামায পড়ার কথা বলা হয়েছে। ফলত: সেই ব্যক্তির কষ্ট চরম পর্যায়ে পৌঁছবে।
রামাযান মাস আর রমাযানের তারাবীহের নামাযের ব্যাপারে আমার মনে কষ্ট লাগছে! কিভাবে তথাকথিত এই নামাযকে রামাযান ও তারাবীহের সাথে টক্কর লাগানো হয়েছে!! সাধারণ লোকজনের নিকট তো এটাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ হবে। যে ব্যক্তি ফরয নামাযের জামায়াতে শরীক হত না সেও এই নামাযে হাজির হবে।” (মওযূয়াতু ইবনিল জাওযী: ২য় খণ্ড, ১২৫ ও ১২৬ পৃষ্ঠা)

খ) সর্ব প্রথম কোথায় এবং কখন চালু হল এই নামায?
এই নামায সর্ব প্রথম চালু হয় বাইতুল মাকদিসে। সেটা ছিল ৪৮০ হিজরীর পরে। এর আগে কখনো কেউ এ নামায পড়ে নি।

গাযালী উপরোক্ত আনাস রা. এর নামে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করার পর এটির নাম দেন: রজবের নামায। আর বলেন: এটা পড়া মুস্তাহাব!! আরও বলেন: এটি ঐ সকল নিয়মিত নামাযের অর্ন্তভুক্ত যেগুলো প্রতি বছর একবার করে আসে। যেমন, শাবানের শবে বরাতের নামায, রজবের নামায ইত্যাদি। এর মর্যাদা যদিও তারাবীহ এবং ঈদের নামাযের পর্যায়ের নয় তথাপি যেহেতু একাধিক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন আর বাইতুল মাকদিসের লোকজনও সর্ব সম্মত ভাবে নিয়মিতভাবে আদায় করে আসছে এমন কি তারা কাউকে এই নামায ছাড়ার অনুমতি দেয় না তাই এটার উল্লেখ করা ভাল মনে করলাম!!! (এহইয়া উলূমুদ্দীন প্রথম খণ্ড, ২০২ ও ২০৩)

অথচ মোটেও কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তার কোন সাহাবী কখনো তা পড়েছেন বা পড়তে বলেছেন অথবা কোন সালফে সালেহীন থেকে কোন বর্ণনা পাওয়া যায়। (দেখুন: ইমাম ত্বরতুশীর লেখা আল হাওয়াদিস ওয়াল বিদা ১২২ পৃষ্ঠা)

আর এই এহইয়া উলূমুদ্দীন বইটি হল আমাদের সমাজে এই বিদয়াত এবং এ জাতীয় আরও বিদয়াত বিদআতী কার্যক্রম উৎপত্তির অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দ্বীনকে হেফাজত করুন। আমীন।

গ) সালাতুর রাগায়েবের ব্যাপারে ওলামাগণের মন্তব্য:
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: সালাতুর রাগয়েবের কোন ভিত্তি নাই বরং এটি একটি বিদআত। সুতরাং একাকী কিংবা জামাতের সাথে পড়াকে মুস্তাহাব বলা যাবে না। বরং সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষভাবে শুধু জুমার রাতে নফল নামায পড়তে আর দিনের বেলা রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। সালাতুর রাগায়েবের ব্যাপারে যে হাদীসটি উল্লেখ করা হয় তা আলেমগণের সর্ব সম্মত মতানুসারে বানোয়াট। কোন সালাফে সালেহীন অথবা ইমাম আদৌ এটি উল্লেখ করেন নি। (মাজমূ ফতোয়া ২৩ খণ্ড ১৩২ পৃষ্ঠা)

ইমাম নওবী রহ.কে জিজ্ঞেস করা হয়, সালাতুর রাগায়েব ও শাবান মাসের পনের তারিখের দিবাগত রাতের নামাযের কোন ভিত্তি আছে?
তিনি বলেন: এই দুটি নামায নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা তার কোন সাহাবী, অথবা কোন ইমাম পড়েন নি এবং কেউ এদিকে ইঙ্গিতও করেন নি। অনুসরণ যোগ্য কেউই এমনটি করেন নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা অনুকরণীয় কোন ব্যক্তি থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে এ ব্যাপারে কোন কিছুই পাওয়া যায় না। বরং তা পরবর্তী যুগে আবিষ্কার করা হয়েছে। সুতরাং এ নামাযগুলো নিকৃষ্ট বিদআত ও প্রত্যাখ্যান যোগ্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সহীহ সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন:
“তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কৃত বিষয় সমূহ থেকে দূরে থাক। কারণ, প্রতিটি নতুন আবিষ্কৃত বিষয় গোমরাহী। (সুনান ইবনে মাজাহ) সহীহ বুখারী ও মুসলিম আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি দ্বীনের অর্ন্তভুক্ত নয় এমন নতুন জিনিষ চালু করল তা পরিত্যাজ্য। (বুখারী, অধ্যায়: সন্ধি-চুক্তি।)

আর সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে:
“যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার ব্যাপারে আমার নির্দেশ নাই তা প্রত্যাখ্যাত। (মুসলিম, অধ্যায়: বিচার-ফয়সালা(

প্রত্যেকের উচিৎ এই নামায থেকে দূরে থাকা এবং এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া। সেই সাথে এটাকে ঘৃণা যোগ্য ও নিকৃষ্ট মনে করে কঠিন ভাবে মানুষকে এ থেকে নিষেধ করা। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ দেখে যেন হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়, যদি তা না পারে তবে মুখের কথা দ্বারা পরিবর্তন কর আর তাও না পারলে তার প্রতি অন্তরে ঘৃণা পোষণ করে। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান)

আলেমগণের কর্তব্য হল, এ বিদআত থেকে মানুষকে সাবধান করা এবং অন্যদের থেকে বেশী দূরত্ব বজায় রাখা কারণ তাদেরকে মানুষ অনুসরণ করে থাকে। সাধারণ মানুষের নিকট এটার প্রচার-প্রচারণা এবং তাদের সংশয়গুলো দেখে কেউ যেন ধোকায় না পড়ে যায়। বরং আমারদের তো অনুসরণ করতে হবে কেবল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার নির্দেশকে। যে ব্যাপারে তিনি নিষেধ বা সতর্ক করেছেন সেটা তে লিপ্ত হওয়া যাবে না।…আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে বিদয়াত ও ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ সব চেয়ে ভাল জানেন। (ইমাম ইবনে আব্দুল ইয এবং ইবনুস সালাহ এর মাঝে সংঘটিত বিতর্ক, পৃষ্ঠা ৪৫-৪৭)

– ইবনুল কাইয়েম আল জাওযিয়া বলেন: অনুরূপভাবে রজব মাসের প্রথম শুক্রবারে সালাতুর রাগায়েব পড়ার ব্যাপারে হাদীসগুলো সব বানোয়াট ও আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর মিথ্যা রোপ। (আল মানারুল মুনীফ: ৯০ পৃষ্ঠা)

সম্মানিত পাঠকের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, রজব মাসে প্রথম শুক্রবারে সালাতুর রাগায়েব নামে যে নামায পড়া তা নিকৃষ্ট বিদআত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা খোলাফায়ে রাশেদীন থেকে এটা চালু হয় নি। সাহবা, তাবেঈন এবং প্রসিদ্ধ কোন ইমাম এটাকে মুস্তাহাব বলেন নি। অথচ তারা ছিলেন কল্যাণকর ও ফযীলতপূর্ণ কাজে সব চেয়ে বেশী আগ্রহী। অনুরূপভাবে আমরা আরও দেখলাম, সমস- হাদীসের ইমামগণের মতৈক্য অনুসারে এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসটি বানোয়া ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর মিথ্যা রোপ। সুতরাং যারা এ নামাযের ফযীলত বয়ান করে তাদের কোন যুক্তি বা দলীলই অবশিষ্ট থাকল না। আল্লাহই সব চেয়ে বেশী ভাল জানেন।

৭) শবে মেরাজ পালন করার বিদআত
মেরাজ দিবস কিংবা শবে মেরাজ উদযাপন করা রজব মাসের অন্যতম বিদআত। জাহেলরা এই বিদআতকে ইসলামের উপর চাপিয়ে দিয়ে প্রতি বছর তা পালন করে যাচ্ছে। এরা রজব মাসের সাতাইশ তারিখকে শবে মেরাজ পালনের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে। এ উপলক্ষে এরা একটি নয় একাধিক বিদআত তৈরি করেছে। যেমন, শবে মেরাজ উপলক্ষে মসজিদ মসজিদে একত্রিত হওয়া, মসজিদে কিংবা মসজিদের মিনারে মিনারে মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালানো, এ উপলক্ষে অর্থ অপচয় করা, কুরআন তিলাওয়াত বা জিকিরের জন্য একত্রিত হওয়া, মেরাজ দিবস উপলক্ষে মসজিদে বা বাইরে সভা-সেমিনার আয়োজন করে তাতে মিরাজের ঘটনা বয়ান করা ইত্যাদি। এগুলো সবই গোমরাহী এবং বাতিল কর্ম কাণ্ড। এ প্রসঙ্গে কুরআন-সুন্নাহতে নূন্যতম কিছু বর্ণিত হয় নি। তবে এ এভাবে দিবস পালন না করে যে কোন সময় মিরাজের ঘটনা বা শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করা দোষণীয় নয়।

ক) কোন রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসরা ও মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল?
যে রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসরা ও মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল সেটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পূর্ব যুগ থেকেই ওলামাগণের মাঝে মত পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন হাদীস না থাকায় আলেমগণ বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন।
ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: মিরাজের সময় নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

কেউ বলেছেন, নবুওয়তের আগে। কিন্তু এটা একটি অপ্রচলিত মত। তবে যদি উদ্দেশ্য হয়, যে সেটা স্বপ্ন মারফত হয়েছিল সেটা ভিন্ন কথা।
অধিকাংশ আলেমগণের মত হল, তা হয়েছিল নবুওয়তের পরে। তবে নবুওয়তের পরে কখন সেটা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
কেউ বলেছেন: হিজরতের এক বছর আগে। ইবনে সা’দ প্রমুখ এ মতের পক্ষে। ইমাম নওবী রহ. এই মতটির পক্ষে জোর দিয়ে বলেছেন। তবে ইবনে হাজাম এর পক্ষে আরও শক্ত অবস্থান নিয়ে বলেন: এটাই সর্ব সম্মত মত। এই মতের আলোকে বলতে হয় মেরাজ হয়েছিল রবিউল আওয়াল মাসে।
কিন্তু তার কথা অগ্রহণ যোগ্য। কারণ, এটা সর্ব সম্মত মত নয়। বরং এক্ষেত্রে প্রচুর মতবিরোধ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশটির অধিক মত পাওয়া যায়।
– ইবনুল জাওযী বলেন, হিজরতের আট মাস আগে মেরাজ হয়েছিল। এ মতানুসারে সেটা ছিল রজব মাসে।
– কেউ বলেন: হিজরতের ছয় মাস আগে। এ মত অনুযায়ী সেটা ছিল রামাযানে। এ পক্ষে মত দেন আবুর রাবী বিন সালেম।

– আরেকটি মত হল, হিজরতের এগার মাস আগে। এ পক্ষে দৃঢ়তার সাথে মত ব্যক্ত করেন, ইবরাহীম আল হারবী। তিনি বলেন: হিজরতের এক বছর আগে রবিউস সানীতে মিরাজ সংঘটিত হয়।
– কারো মতে, হিজরতের এক বছর তিন মাস আগে। ইবনে ফারিস এ মত পোষণ করেন।
এভাবে আরও অনেক মতামত পাওয়া যায়। কোন কোন মতে রবিউল আওয়াল মাসে, কোন মতে শাওয়াল মাসে, কোন মতে রামাযান মাসে, কোন মতে রজব মাসে।

আর তাই শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন:
– ইবনে রজব বলেন: রজব মাসে বড় বড় ঘটনা ঘটেছে মর্মে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায় কিন্তু কোনটির পক্ষেই সহীহ দলীল নাই। বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজবের প্রথম রাতে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন, সাতাইশ বা পঁচিশ তারিখে নবুওয়ত প্রাপ্ত হয়েছেন অথচ এ সব ব্যাপারে কোন সহীহ দলীল পাওয়া যায় না। (লাতাইফুল মায়ারেফ, ১৬৮ পৃষ্ঠা(
– আবু শামাহ বলেন: গল্পকারেরা বলে থাকে যে, ইসরা ও মিরাজের ঘটনা ঘটেছিল রজব মাসে। কিন্তু ইলমে জারহ ওয়াত তাদীল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ আলেমগণের মতে এটা ডাহা মিথ্যা। (আল বায়িস: ১৭১)

খ) শবে মিরাজ পালন করার বিধান:
সালফে সালেহীনগণ এ মর্মে একমত যে, ইসলামী শরীয়তে অনুমোদিত দিন ছাড়া অন্য কোন দিবস উদযাপন করা বা আনন্দ-উৎসব পালন করা বিদআত। কারণ, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি দ্বীনের অর্ন্তভুক্ত নয় এমন নতুন জিনিষ চালু করল তা পরিত্যাজ্য। (বুখারী, অধ্যায়: সন্ধি-চুক্তি।)
আর সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে:
“যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার ব্যাপারে আমার নির্দেশ নাই তা প্রত্যাখ্যাত। (মুসলিম, অধ্যায়: বিচার-ফয়সালা)

সুতরাং মিরাজ দিবস অথবা শবে মেরাজ পালন করা দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট বিদআতের অর্ন্তভূক্ত সাহাবীগণ, তাবেঈনগণ বা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণকারী সালফে সালেহীনগণ তা পালন করেন নি। অথচ সকল ভাল কাজে তারা ছিলেন আমাদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী।

ইবনুল কাইয়েম জাওযিয়া রহ. বলেন:
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: পূর্ববর্তী যুগে এমন কোন মুসলমান পাওয়া যাবে না যে শবে মেরাজকে অন্য কোন রাতের উপর মর্যাদা দিয়েছে। বিশেষ করে শবে কদরের চেয়ে উত্তম মনে করেছে এমন কেউ ছিল না। সাহাবায়ে কেরাম এবং তাদের একনিষ্ঠ অনুগামী তাবেঈনগণ এ রাতকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন কিছু করতেন না এমনকি তা আলাদাভাবে স্মরণও করতেন না। যার কারণে জানাও যায় না যে, সে রাতটি কোনটি।
নি:সন্দেহে ইসরা ও মিরাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার প্রমাণ বহন করে। কিন্তু এজন্য এর মিরাজের স্থান-কালকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন ইবাদত করার বৈধ নয়। এমনকি যে হেরা পর্বতে ওহী নাযিলের সূচনা হয়েছিল এবং নবুওয়তের আগে সেখানে তিনি নিয়মিত যেতেন নবুওয়ত লাভের পর মক্কায় অবস্থান কালে তিনি কিংবা তাঁর কোন সাহাবী সেখানে কোন দিন যান নি। তারা ওহী নাজিলের দিনকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন ইবাদত-বন্দেগী করেন নি বা সেই স্থান বা দিন উপলক্ষে বিশেষ কিছুই করেন নি।

যারা এ জাতীয় দিন বা সময়ে বিশেষ কিছু এবাদত করতে চায় তারা ঐ আহলে কিতাবদের মত যারা ঈসা আলাইহিস সালাম এর জন্ম দিবস (Chisthomas) বা তাদের দীক্ষাদান অনুষ্ঠান (Baptism) পালন ইত্যাদি পালন করে।
উমর ইবনুল খাত্তাব দেখলেন কিছু লোক একটা জায়গায় নামায পড়ার জন্য হুড়াহুড়ি করছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী? তারা বলল, এখানে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়েছিলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি তোমাদের নবীদের স্মৃতি স্থলগুলোকে সাজদার স্থান বানাতে চাও? তোমাদের পূর্ববর্তী জমানার লোকেরা এ সব করতে গিয়েই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে এসে যদি তোমাদের কারো নামাযের সময় হয় তবে সে যেন নামায পড়ে অন্যথায় সামনে অগ্রসর হয়। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, ২য় খণ্ড, ৩৭৬, ৩৭৭)

– ইবনুল হাজ্জ বলেন:
“রজব মাসে যে সকল বিদআত আবিষ্কৃত হয়েছে সগুলোর মধ্যে সাতাইশ তারিখের লাইলাতুল মিরাজের রাত অন্যতম।”(আল মাদখাল, ১ম খণ্ড, ২৯৪পৃষ্ঠা)

পরিশেষে বলব, যেহেতু রজব মাসে নফল নামায, রোযা করা, মসজিদ, ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট দোকান-পাট ইত্যাদি সাজানো, সেগুলোকে আলোক সজ্জা করা কিংবা ছাব্বিশ তারিখের দিবাগত রাত তথা সাতাইশে রজবকে শবে মিরাজ নির্ধারণ করে তাতে রাত জেগে ইবাদত করার ব্যাপারে কোন গ্রহনযোগ্য প্রমাণ নাই। তাই আমাদের কর্তব্য হবে সেগুলো থেকে দূরে থাকা। অন্যথায় আমরা বিদয়াত করার অপরাধে আল্লাহ তায়ালার দরবারে গুনাহগার হিসেবে বিবেচিত হব। অবশ্য কোন ব্যক্তি যদি প্রতি মাসে কিছু নফল রোযা রাখে সে এমাসেও সেই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী এ মাসে রোযা রাখতে পারে, শেষ রাতে উঠে যদি নফল নামাযের অভ্যাস থাকে তবে তবে এ মাসের রাতগুলিতেও নামায পড়তে পারে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল অবস্থায় তাওহীদ ও সুন্নাহর উপর আমল করার তাওফীক দান করুন এবং শিরক ও বিদয়াত থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

উৎস: এ প্রবন্ধটির অধিকাংশ তথ্য অনুবাদ করা হয়েছে البدع الحولية কিতাব থেকে।