সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

কথিত শবে বরাত নিয়ে দুইটি ভুল ধারণা দূর হওয়া দরকারঃ

(১) শুধুমাত্র শাবানের ১৫ তারিখ রাতে নয়, আল্লাহ তাআলা সারা বছর ধরে সপ্তাহের প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারে বান্দার গুনাহ মাফ করেনঃ
আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। একদিন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখেন কেনো? তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা সোমবার ও বৃহস্পতিবার এ দুইদিন প্রত্যেক মুসলমানের গুনাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী সম্পর্কে (আল্লাহ বলেন): এদেরকে ছেড়ে দাও, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে।
সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১৭৪০, শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ হাদীসটি সহীহ। সহীহ আত-তারগীবঃ ১০২৮।
(২) শুধুমাত্র শাবানের ১৫ তারিখ রাতে নয়, আল্লাহ তাআলা সারা বছর ধরে প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করে বান্দাদেরকে আহবান করেনঃ
আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহামহিম আল্লাহ তালা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরন করে ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন, যে আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন, যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব
সহীহ বুখারী ১১৪৫, সহীহ মুসলিম৭৫৮, আহমাদ৭৫৯৫ আবু দাউদ ১৩১৫, তিরমিযি ৪৪৬, মুওয়াত্তা মালিক ৩০, মিশকাত ১২২৩। 

মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০১৬

পীর নামক ‪তাগুত

#তাগুত
তাগুত অর্থ হচ্ছে সীমা লংঘনকারী, তাগুত বলতে আসলে আল্লাহদ্রোহী বোঝায়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুর ইবাদত বা পূজা করতে আদেশ করে, অথবা যাকে পূজা করা হয় এবং লোকেরা তার ইবাদত করে এতে সে রাজী-খুশি থাকে, তাহলে ঐ ব্যক্তিকে তাগুত বলা হয়।
বাংলাদেশে এমন অনেক তাগুত রয়েছে, যারা গায়রুল্লাহর উপাসনার দিকে মানুষকে আহবান করে। তাদের মাঝে সবচাইতে বড় তাগুতের মধ্যে রয়েছে ভন্ড পীর ও মুরশিদ, যারা ইসলাম বিরোধী, ঈমান বিরোধী শিক্ষা দিয়ে তাদের মুরীদের ঈমান নষ্ট করে। আর বিনিময়ে মূর্খ মুরীদের টাকা অন্যায়ভাবে ভোগ করে। এমন সুস্পষ্ট কাফির ও মুশরেক পীরদের মাঝে সবচাইতে বেশি ধ্বংসাত্মক কয়েকটি পীরের নামঃ
(১) দেওয়ানবাগী - এই দেওয়ানবাগী নিজেকে আল্লাহ দাবী করেছে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে এমন কটুক্তি করেছে, যা নাস্তিকদেরকেও ছাড়িয়ে গেছে।
(২) মাইজভান্ডারী - এরা গান-বাজনা করে, ওরশ নামক মদ-গাজার আসর করে।
(৩) চন্দ্রপুরী - এই ব্যক্তি দাড়ি রাখেনা, নাচ, গান-বাজনা সব কিছুই তার দরবারে চলে। এই ব্যক্তিকে তার মুরীদেরা হিন্দুদের মতোই একেবারে হাত পা ছড়িয়ে মাটিতে শুয়ে সিজদাহ করে।
(৪) আটরশি বা জাকের পার্টি - এই পীর সাহেবেরও দাড়ি নেই। আটরশি পীরকে তার মুরীদেরা আল্লাহর মতো সমান মনে করে।
(৫) তোফাজ্জল হোসাইন ভৈরবী - এ কোন পীর না, কিন্তু সে ডাইরেক্ট কবর পূজারী। এবং তার ওয়াজ নামক চিল্লাফাল্লা ও বাকোয়াজ দিয়ে দিনরাত মানুষকে পীর পূজা, মাযার পূজার দিকে দাওয়াত দেয়।
(৬) কোয়ান্টামের গুরুজী বা মহাজাতক - এ হচ্ছে ডিজিটাল পীর, যে হিন্দু, বৌদ্ধ ও সূফীদের, বিভিন্ন ধর্ম মিলিয়ে কোয়ান্টাম নামক নতুন একটা ধর্ম চালু করেছে। কিন্তু উপরে উপরে কিছু ইসলামের কথা বলে সে মুসলমানদেরকে ধোকা দিচ্ছে।
যাই হোক এমন আরো অনেক আলেম নামক জালেম রয়েছে, যারা কোটি কোটি মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করছে। এই সমস্ত পীর-পুরোহিতের যারা মুরীদ হয়, তাদের আকিদাহ বা বিশ্বাস কেমন হয় একটু শুনুনঃ
(১) নামায সব সময় পড়তে হয় না। মাঝে মাঝে নামায পড়লেই হয় বা, পড়ার মতো নামায জীবনে একবার পড়লেই হয়।
(২) পীরকে এবং পীরের মাযারকে সেজদাহ না করলে বেয়াদবী হয়।
(৩) পীরের মাযার জিয়ারত না করলে জীবনে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
(৪) নামায-রোযা করে জান্নাতে যাওয়া যায়না, জান্নাতে যেতে হলে পীরের মুরিদ হতে হবে।
(৫) পীর জান্নাতে নিয়ে যাবে।
(৬) পীর কবরে সওয়াল জওয়াব দিয়ে দিবে।
(৭) আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যে গান-বাজনা করতে হয়। এজন্যে এরা ওরশ নামক শিরকের মেলায় ৫০ হাজার, ৭০ হাজার টাকা দিয়ে মহিলা কন্ঠশিল্পী ভাড়া করে আনে। এমন বেপর্দা, ভন্ড মহিলা শিল্পীদের একজন হচ্ছে কন্ঠশিল্পী মমতাজ, যেকিনা গণতন্ত্রবাদীদের সংসদ সদস্য হয়েছিলো।
(৮) পীর ও তার মুরিদেরা যখন আল্লাহক পেয়ে যায়, তখন নাচানাচি করে। আপনারা ইউটিউবে সার্চ করলে এমন পীর ও তাদের মুরীদের অনেক নাচানাচির ভিডিও দেখতে পারবেন।
(৯) পীরের জন্যে অনেক মহিলা স্বামীকে অমান্য করে, তালাক দেয়, পরিবার ফেলে বৈরাগী হয়ে পীর পূজাতে লেগে যায়। অনেকে ছেলে-মেয়ে মা-বাবার কথা শুনেনা, মা বাবার উপর অত্যাচার করে।
(১০) পীরের দরবার চালানোর জন্যে পীরকে হাদিয়া(!) দিতে হয়। মুরিদের এই হাদিয়া হচ্ছে পীরদের এক নাম্বার ইনকামের সোর্স। অশিক্ষিত, দরিদ্র, সরলমনা, নির্বোধ নারী-পুরুষেরা সারা মাস কঠোর পরিশ্রম করে টাকা-পয়সা জমায় আর ছেলে-মেয়েদেরকে কোন টাকা-পয়সা না দিয়ে বা, নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে বেশিরভাগ টাকাই পীরের হাতে তুলে দেয়। আর পীর দরিদ্র মুরীদের দেওয়া টাকা দিয়ে রাজার হালে বিলাস বহুল জীবন যাপন করে।
(১১) পীরেরা চালাকি করে, ভয় দেখিয়ে বা কৌশলে মুরিদের সম্পত্তি লিখে নেয়, আত্মসাৎ বা দখল করে নেয়।
(১২) গর্দভ শ্রেণীর কিছু পুরুষ মুরীদ থাকে, যারা তদবীর, ঝাড়ফুক, তাবীজ, রোগের চিকিৎসা বা বিভিন্ন উসীলায় পীর নামক চলমান শয়তানদের কাছে তাদের স্ত্রী কন্যাদেরকে তুলে দেয়। অনেক পীর কৌশলে তার ভক্ত নারীদেরকে অন্যায়ভাবে ভোগ করে। এমন অনেক সত্যিকারের উদাহরণ রয়েছে।
(১৩) বিপদে পড়লে পীর বিপদ থেকে উদ্ধার করে। একারণে মুরীদেরা বিপদে পড়ে আল্লাহকে ডাকেনা, তাদের পীর বাবাকে ডাকে।
(১৪) আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন, সুতরাং পীর সাহেব দাড়ি না রাখলে, সিগারেট বা মদ-গাঁজা খেলে, মেয়ে নিয়ে আনন্দ ফূর্তি করলে তেমন কোন সমস্যা নাই।
(১৫) যাদের ছেলে মেয়ে হয়না তাদেরকে মাযারে শোয়ার মৃত পীর অথবা জিন্দা পীর সন্তান দিতে পারে। একারণে আমাদের দেশের হাজার হাজার নামধারী মুসলমানেরা আজমীর শরীফ নামক নাকাপ, শিরকিস্থানে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
(১৬) মিলাদ পড়লে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কবর ছেড়ে স্বয়ং নিজে মিলাদ মাহফিলে চলে আসেন।
(১৭) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ই হচ্ছেন আল্লাহ, মিরাজের রাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এক হয়ে গেছেন।
নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক...
আমি উপরে যেইগুলো লিখেছি তার কোনটাই বানিয়ে বানিয়ে লিখিনি, বরং এই সবগুলো বাংলাদেশের পীর নামক ধর্ম ব্যবসায়ী ও তাদের মুরীদের মাঝে খুব বেশি প্রচলিত। আপনারা এদের ব্যপারে একটু খোঁজ খবর নিলে পীর-মুরিদের মাঝে এমন হাজারো শিরকি ও কুফুরী কাজ দেখেতে পারবেন। পীর নামক তাগুতেরা এভাবেই সরলমনা, অশিক্ষিত মুসলমান নারী ও পুরুষদের ঈমান নষ্ট করছে। আপনারা এদের ব্যপারে সচেতন হন, ইতিমধ্যেই এরা অনেককে গোমরাহ বানিয়ে জাহান্নামের রাস্তায় নিয়ে গেছে।
এমন পথভ্রষ্ট, ভন্ড আলেম ও পীরদের ফেতনা সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে অনেক আগেই সতর্ক করে করছেনঃ
(১) একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি আমার উম্মাতের জন্য একটি বিষয়কে দাজ্জাল এর থেকেও বেশী ভয় করি। (একজন সাহাবী বললেন), আমি ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, সেটি কি? নবীজি বললেন, বিপথগামী এবং পথভ্রষ্ট আলেম।
মুসনাদে ইমাম আহমাদঃ ২১৬২১, তাবরানীঃ ৭৬৫৩, হাদীসটি সহীহ।
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ
(ফিতনার যুগে) কিছু লোক এমন হবে, যারা জাহান্নামের দরজার দিকে মানুষকে দাওয়াত দিবে (অর্থাৎ তাদের দাওয়াত এমন ভ্রষ্টতাপূর্ণ হবে, যা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে); যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে

সহীহ বুখারীঃ হাদীস নং-৩৩৩৬, ৬৬৭৯।

বুধবার, ১১ মে, ২০১৬

আপনার দ্বীন সম্পর্কে জানুন পর্ব -৮

(১) যেকোন সালাতের প্রথম রাকাতে দ্বিতীয় রাকাতের চাইতে বড় সুরা পড়তে হয়। যেমন প্রথম রাকাতে সুরা সুরা ফীল পড়লে দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস, সুরা আসর অথবা সুরা কাউসার, এমন ছোট সুরা পড়বেন। আর যদি কোন বড় সুরা সম্পূর্ণ না পড়ে তার কয়েকটা আয়াত তেলাওয়াত করেন, তাহলে প্রথম রাকাতে দ্বিতীয় রাকাতের চাইতে বেশি আয়াত পড়বেন। তবে ভুলে কখনো প্রথম রাকাতের চাইতে দ্বিতীয় রাকাতে বড় সুরা পড়ে ফেললে সালাত শুদ্ধ হবে। এতে শুধুমাত্র একটা মুস্তাহাব বা উত্তম আমল ছুটে গেলো, কিন্তু এর জন্যে কোন সাহু সাজদাহ দিতে হবেনা।
(২) সালাতের প্রথম রাকাতে ক্বুরানুল কারীমের আগের সুরা ও পরের রাকাতে পরের পড়তে হয় - এমন কোন নিয়ম নেই। যারা এমন নিয়মের কথা বলেন, এরপক্ষে কোন দলিল নেই। যেমন সুরা ফীল হচ্ছে ১০৫ নাম্বার সুরা, আর সুরা আসর হচ্ছে ১০৩ নাম্বার সুরা। আপনি সালাতে এই দুইটি সুরা পড়তে চাইলে প্রথম রাকাতে সুরা ফীল আর পরের রাকাতে সুরা আসর পড়বেন, কারণ সুরা ফীল সুরা আসরের চাইতে বড়।
(৩) যেকোন সালাতের যেকোন রাকাতেই সুরা বাক্বারাহর শেষ দুই আয়াত, আয়াতুল কুরসী, সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত - এইগুলো দিয়ে সালাত পড়া যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রথম রাকাতে দ্বিতীয় রাকাতের চাইতে বেশি ক্বিরাত পড়া হয়।
(৪) সুরা মুলক যদি কারো মুখস্থ থাকে তাহলে তিনি দিনে রাতে যেকোন সময়ের যেকোন সালাতের ২ রাকাত, ৪ রাকাত বা ৬ রাকাতে ভাগ করে সম্পূর্ণ সুরা তেলাওয়াত করতে পারেন। আর এর দ্বারা সুরা মুলক প্রতিদিন পড়ার যেই ফযীলত পাওয়া যাবে। বরং কারো মুখস্থ থাকলে এইভাবে প্রতিদিন পড়া উত্তম আমল হবে।
(৫) সালাতে সুরা ফাতিহা শুদ্ধভাবে না পড়লে বা ভুল পড়লে, বা একেবারেই না পড়লে সালাত হবেনা। সেইজন্যে আর যাই হোক সালাত কবুল হওয়ার জন্যে ক্বুরানের অন্তৎ সুরা ফাতিহা শুদ্ধ উচ্চারণে তেলাওয়াত করা শিক্ষা করা ফরয। অন্যে সুরা মিলানোর সময় ভুল করলে সে সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে, কিন্তু সালাত কবুল হবে।
(৬) সুরা ওয়াকিয়া পড়লে রিযিক বৃদ্ধি পায় - এই হাদীস সহীহ নয়।
(৭) সুরা ইয়াসীন পড়লে ১০বার ক্বুরান খতমের সওয়াব পাওয়া যায় বা সুরা ইয়াসীনের ফযীলত নিয়ে যতগুলো হাদিস রয়েছে, তার কোনটাই সহীহ নয়।
(৮) দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় করে নেবেন, যেমন ফযর, যোহর বা মাগরিবের পড়ে আপনি প্রতিদিন ক্বুরান তেলাওয়াত করবেন। ব্যস্ততা, অলসতা যাই থাকুক, খুব বেশি ইমার্জেন্সি নাহলে সেই সময়ের ক্বুরান তেলাওয়াত কোনমতেই যেন ছুটে না যায়। বেশী না পারলে অন্তত ৫টা-১০টা বা আরো বেশি আয়াত আপনি করবেনই...এমন যত্ন নিয়ে এই আমল করবেন ইন শা আল্লাহ। ক্বুরানের সাথে আপনার সম্পর্ক যত বেশী হবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ততবেশী সুন্দর হবে।
(৯) ফেইসবুকে একজন ইসলামী লেখকের এক লক্ষ ফলোয়ার বা ইউটিউবে একজন বক্তার হাজার হাজার ভক্ত-শ্রোতা থাকতে পারে, কিন্তু তার মানে এই না যে তারা কোন আলেম। একজন বক্তা বা লিখকের যোগ্যতা একরকম, আরেকজন সত্যিকারের আলেমের যোগ্যতা অন্যরকম, যদিও তিনি মানুষের মাঝে অপরিচিত। ইন্টারনেট, মিডিয়াতে অধিকাংশ ইসলাম প্রচারকারী আপনাকে ক্বুরান ও হাদীস শিখানোর নাম করে পথভ্রষ্টতা, মূর্খতা ও প্রবৃত্তির অনুসরণের দিকে দাওয়াত দিবে, যা আপনি টেরও পাবেন না। আমি একটা সময়োপযোগী উদাহরণ দিচ্ছি। আজ সকালে ড. আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন, আর অনেকেই তাঁর মৃতদেহের ছবি প্রচার করছে। এটা তারা তাঁকে ভালোবেসেই করছে, কিন্তু এই কাজটা অনুচিত। প্রথম কথা হচ্ছেঃ অত্যাবশ্যকীয় কারণ ছাড়া প্রাণীর ছবি তোলা ঠিক নয়। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছেঃ একজন মানুষ মৃত্যুর পরে তাঁর এমন ছবি হয়তো প্রচার করা হচ্ছে যা তাঁর প্রাইভেসীকে নষ্ট করছে, বেঁচে থাকলে তিনি হয়তো সেই ছবি প্রচারের অনুমোদন দিতেন না, বা তার পরিবারের লোকদেরকে কষ্ট দিবে। তৃতীয়তঃ অনেক সময় কিছু বোকা ইসলাম প্রচারকারী মৃত ব্যক্তির ছবি জীবিত অবস্থার হারাম ছবি প্রচার করে। যেমন তনু হত্যার পরে আজ পর্যন্ত তনু হত্যার বিচার চাই নামে কিছু মানুষ মেয়েটির বেপর্দা ছবি প্রচার করছে, যা হারাম ও ঘৃণিত কাজ। অথচ তাঁদের অনেকেই দ্বীন প্রচারক! চতুর্থতঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দুর্ঘটনায় নিহত, কাফেরদের আক্রমনে বা খুনের নির্মম ও হৃদয় বিদারক দৃশ্য প্রচার করা একটা সামাজিক অপরাধ, যা অনেক আবেগী মুসলমানেরা দ্বীন প্রচারের নামে করে থাকে। এইভাবে আসলে মুসলমানদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়, এবং এধরণের ছবিগুলো কোমন মনে নারী ও শিশু এবং সংবেদশীল মনের অনেককেই পেরেশানির মাঝে ফেলে। এইভাবে একশ্রেনীর অল্প-শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত দ্বাইয়ী দ্বীন প্রচারের নামে মানুষকে কষ্ট দেয়, মানুষের মাঝে হতাশা ও দুঃখ প্রচার করে, তাদের টার্গেট হচ্ছে লাইক, শেয়ার বাড়ানো, শ্রোতাদের আকর্ষণ করা, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা নয়। সেইজন্যে আমি দ্বীনি ভাই ও বোনদেরকে উপদেশ দিবো, ফেইসবুক ইন্টারনেটের চাইতে আপনারা সরাসরি সত্যিকারের আলেমদের অডিও/ভিডিওতে কথা শুনে, অথবা তাঁদের বই পড়ে দ্বীন শিখবেন, দ্বীনের কথা শুনবেন। আর অপরিচিত, জাহিল, সেলেব্রিটি ও বক্তাদের, যাদেরকে মানুষ আলেম মনে করে, কিন্তু মূলত তারা জাহিল, এদের কথা শুনবেন না, তাদের কথার দিকে মনোযোগ দেবেন না।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথের উপরেই রাখুন, আমিন।


শুক্রবার, ৬ মে, ২০১৬

ফেতনার সময় দুই প্রকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়

ফেতনার সময় দুই প্রকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ঃ
১. যিনি নিজেকে পণ্ডিত ভাবেন ও ফিতনার ব্যপারে উঁকি দেন ও সে ব্যপারে বিভিন্ন মন্তব্য করেন।
২. সাধারণ মানুষ, যারা জানেনা, যাদেরকে শিকার করেন এক শ্রেণীর জানা মানুষেরা।
- শায়খ সাইফুদ্দিন বেলাল এর ওয়াল থেকে সংগৃহীত।
_________________________
আজকে আমি প্রথম শ্রেণীর মানুষের দুইটি সত্যিকারের উদাহরণ বলবো।
(১) আইসিসের ফেতনাহ যখন প্রথম প্রকাশ পায়, তখন আইসিস ও তাদের খলিফাহর ব্যপারে আমাদের দেশের একেক জন একেক রকম মতামত পেশ করা শুরু করলো।
(ক) আল কায়েদাহর ভক্ত যারা ভেতরের কাহিনী তখনো জানতে পারেনি, আইসিসকে আল-কায়েদাহর অংশ মনে করে কোমর বেঁধে আবু বকর আল-বাগদাদীর খিলাফতের পক্ষে ব্যপক প্রচারণা শুরু করলো। অনেকে অনলাইনে আবু বকর খারেজীকে ভার্চুয়াল বাইয়াত দেওয়া ফরজ এবং তার পক্ষে আমাদের সবার প্রোপিক কালো পতাকা দেওয়া উচিৎ বলে ফতোয়া দিলো। অথচ দুদিন পর তারা জানতে পারলো, আইসিস আল-কায়েদাহকে #মুর্তাদ ফতোয়া দিয়ে পাখির মতো জবাই করছে। অবশ্য এরপরে তাদের কেউ কেউ পুনরায় আল-কায়েদাহর দিকে ফিরে আসলো, আবার তাদের অনেকে আজ পর্যন্ত আইসিসকে আল-কায়দাহর অংশ মনে করে সেটাকেই আঁকড়ে ধরে আছে।
(খ) আইসিস শিয়াদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে, আইসিস কবর মাযার ভাংছে...এমন প্রচারণার জের ধরে কিছু আহলে হাদীস ভাইয়েরা অজ্ঞতা ও আবেগের বশে আইসিসকে সহীহ আকিদাহর অনুসারী বলে মনে করা শুরু করলো এবং, তারা কিছুটা প্রভাব বিস্তার করার কারণে তাদের ব্যপারে বিভ্রান্ত হলো, তাদের খিলাফতের ব্যপারে আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখা শুরু করলো। একজন শায়খতো আজ পর্যন্ত তাদেরকে ইমাম মাহদীর সৈনিক বলে ভুল করছেন। আরেকজন আহলে হাদীস শায়খের ছেলে আইসিসের সমালোচনা করা ঠিক নয় এবং তাদের ব্যপারে আমাদের চুপ করে থাকা উচিৎ বলে মতামত পেশ করলো। আইসিসের ব্যপারে আমাদের আলেমদের বক্তব্য যখন তাকে দেওয়া হলো, সেগুলোকে সে অস্বীকার করলো এবং বর্তমান যুগের জীবিত আলেমরা অতটা নির্ভরযোগ্য নন, তারা হয়তোবা টিভি দেখে ফতোয়া দেন...এমন সংশয় প্রকাশ করলো। আরেকজন সহীহ আকিদাহর প্রচারকারী শায়খ দাবী করলেন, আইসিসের পক্ষে বিপক্ষে সবাই যে যাই বলছে, সবই নাকি অনুমান নির্ভর। তাদের ব্যপারে আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।
(২) সৌদি আরব ইয়েমেনে জিহাদ শুরু করার পর থেকে হঠাৎ Salauddin Ayube নামক একজন মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক(!) এর আবির্ভাব হলো। সৌদি বাদশাহ এবং বিশেষ করে তাঁর ছেলের কিছুর ছবি ও অতিভক্তি প্রচার করে আহলে হাদীস ভাইদের মনোযোগ কেড়ে নিলো। অনেকে যাচাই বাছাই না করেই এমন বহু বক্তার লেখা লাইক ও শেয়ার করেন, আস্তে আস্তে যখন তারা খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসে তখন তাদের আসল চেহারা প্রকাশিত হয়। Salauddin Ayube নামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই ব্যক্তি দাবী করেছে, তার গবেষণা(!) অনুযায়ী ৯/১১ এর কথা নাকি ক্বুরানে আছে, নাউযুবিল্লািহি মিন যালিক। বর্তমানের সিরিয়ার যুদ্ধই হচ্ছে হাদীসে বর্ণিত বড় যুদ্ধ, আগামী কয়েক বছরের মাঝেই ঈসা আলাইহিস সালাম নেমে আসবেন...এছাড়া সে আরো অনেক ব্যপারেই বাড়াবাড়ী ও মনগড়া কথাবার্তা বলে। এবং তার ভুল ধরিয়ে দিলে কমেন্ট মুছে গেলে।
_________________________
যাই হোক, যখন ফিতনাহ প্রকাশ পাবে, সাধারণ মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব হচ্ছে, সে ব্যপারে নিজের অল্প বুদ্ধির উপরে নির্ভর করে কোন ফতওয়া বা মতামত দেবে না। অথবা অল্প ইলম সম্পন্ন বক্তা ও লিখকদের কথার দিকে লক্ষ্য করবেনা। বরং, জীবিত বড় আলেমদের কাছ থেকে সে ব্যপারে জ্ঞান অর্জন করবে এবং সে অনুয়ায়ী কথা বলবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, পথভ্রষ্ট, মনপূজারী, জাহিল বক্তা ও লেখকদের পাশাপাশি একশ্রেণীর অল্প বয়ষ্ক আহলে হাদীস, সালাফী, সহীহ আকিদাহর প্রচারকারীর সংখ্যা বর্তমানে বেড়ে গেছে, যারা আলেমদের কাছে থেকে উপকৃত হতে চায়না, অথবা আলেমদের কথাকে কাটছাঁট করে গ্রহণ করে। এমন ইসলাম প্রচারকারী ফেইসবুক ইন্টারনেটে খুব বেশী হওয়া এবং আলেমদের সাথে যোগাযোগ কম থাকার কারণে অনেক সৎ ও নিষ্ঠাবান ভাইয়েরাও তাদের দ্বারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
_________________________

১ এর খ-এ সহীহ আকিদাহর প্রচারকারী ব্যক্তিদের প্রসংগ একারণে উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ আইসিস ধ্বংসযজ্ঞ চালানো, মিথ্যা খিলাফতের দাবী করা - এসবই হয়েছে ইরাক ও সিরিয়াতে, আমাদের দেশে নয়। সুতরাং আমাদের দেশের যেই সমস্ত দ্বাইয়ীদের আরব দেশের খবর পাওয়ার নির্ভরযোগ্য কোন উৎস নেই, এটা খুব স্বাভাবিক। তাই তাদের কাছ থেকে এটা আশা করা বাঞ্চনীয় যে, তারা সেই ব্যপারে চুপ থাকবেন। অনুমান নির্ভর কোন কথা না বলা, অথবা আমার কাছে জ্ঞান নেই, কিন্তু যে ব্যপারে অন্যের জ্ঞান আছে, বিশেষ করে আলেমদের কথাকে অস্বীকার না করা। যারাই এর বিপরীত করেছেন, তারাই ভুল করেছেন। এব্যপারে আমাদের দেশীয় বক্তা ও আলেম সমাজের আরো সতর্ক হওয়া উচিৎ, কারণ তাদের ভুল কথার দ্বারা যে শুধুমাত্র তারাই ভুল করলেন তা না। বরং তাদের ভুলের দ্বারা অনেকেই ভুল তথ্যের শিকার হন। 

বুধবার, ৪ মে, ২০১৬

শায়খ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাস হা’ফিজাহুল্লাহ-এর জীবনী


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল-উলামা ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া অর্থাৎ, আলেমরা হচ্ছে নবী-রাসুলদের ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী। এজন্য যুগে যুগে শয়তানের একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে উলামায়ে রাব্বানীদের থেকে সাধারণ মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, বিভিন্নভাবে তাদেরকে যাতে মানুষ না চিনে, তাদের কাছ থেকে উপকৃত হতে না পারে, সেই চেষ্টা করা। এতে করে তারা প্রকৃত ইসলাের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে এবং সহজেই ভন্ড আলেমদের খপ্পড়ে, অথবা শিরক-বেদাত, হারাম ও পাপাচারের গর্তে গিয়ে পড়বে।
কেয়ামতের লক্ষণ হচ্ছে আলেমদের সংখ্যা কম হবে আর তোতা পাখির মতো মুখস্থ বিদ্যার অধিকারী কিন্তু প্রজ্ঞার অভাব, এমন বক্তা ও ক্বারীদের সংখ্যা বেশি হবে। তাদের ইলম কম হবে, কিন্তু মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শী হবে, যা বলবে নিজেরা না বুঝে ভুল ব্যখ্যা করবে। আর বর্তমানে এমনটাই দেখা যাচ্ছে, সরলমনা মুসলমানেরা ইলমের অভাবে এইরকম হাফেজে দলীলদেরকেই আল্লামাহ, মুফতি বলে মনে করছে! কেয়ামতের পূর্বে মানুষ অজ্ঞ লোকদেরকে আলেম মনে করে তাদের কাছে ফতোয়া চাইবে। ঐ মূর্খরা তখন নিজের মনগড়া ফতোয়া দিয়ে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, সাথে সাথে তাদের যারা অনুসরণ করবে তাদেরকেও জাহান্নামী বানাবে (নাউযুবিল্লাহ)।
যাই হোক, চলুন আজকে আমরা মসজিদুল হারাম বা কাবার সম্মানিত মুদাররিস (শিক্ষক) ও ডেপুটি মুফতি, শায়খ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাস হা'ফিজাহুল্লাহ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী জেনে নেই।
___________________________
আল্লামাহ শায়খ ডা. ওয়াসী উল্লাহ আব্বাস (হাফিজাহুল্লাহ), তিনি মূলত আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু অল্প বয়স থেকেই দীর্ঘদিন ধরে তিনি সৌদি আরবে বসবাস কর আসছেন। সেখানেই তিনি পড়াশোনা করেন এবং বর্তমানে মসজিদুল হারাম থেকে দ্বীন প্রচার করে যাচ্ছেন। ১৯৬৮ সালে তিনি "মদীনা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়" থেকে তাঁর ব্যাচেলার ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি মক্কার "উম্মুল কুররাহ বিশ্ববিদ্যালয়" থেকে এম.এ. ও পরে হাদীসের উপর পি.এইচ.ডি. ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। ১৯৭৯ সাল থেকে তিনি উম্মুল কুররাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ. ও পি.এইচ.ডি. ছাত্রদেরকে তাফসীর, হাদীস, হাদীসের উসুল শিক্ষা দিয়ে আসছেন। এছাড়া মসজিদুল হারামে তিনি বিগত ১৬ বছর ধরে নিয়মিত আরবী ও উর্দু ভাষাতে দারস দিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক সেই জায়গা থেকে যেখান থেকে দারস দিয়েছেন রইসুল মুফাসসির, বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), বিশিষ্ট তাবেয়ী আতা ইবনে আবি রাবাহ (রহঃ) তাঁদের ছাত্রদেরকে দারস দিতেন। এটা একজন আলেমের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার বিষয়, আল্লাহ তাঁকে কবুল করে নিন, আমিন। তিনি হারামে সহীহ বুখারী ও সুনানে আবু দাউদ, হাদীসের উসুলের উপর কিতাব সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বই থেকে দারস দিয়ে থাকেন।
শায়খের একটা আমলঃ শায়খ বলেন, আমি এমন কোনো নামায নেই যেই নামাযের সিজদাতে রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া... এবং রাব্বির হাম হুমা..., এই দুইটা দুয়া করিনা। মা শা আল্লাহ! খুব সুন্দর একটা আমল, আমরাও চেষ্টা করবো সিজদাতে গুরুত্বপূর্ণ এই দুইটা দুয়াগু বেশি করে পড়ার জন্য।
একটা লক্ষ্যণীয় বিষয়ঃ শায়খ তার লেকচারে প্রায়ই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম বললে পেয়ারা নবী (প্রিয় নবী) বলে সম্বোধন করে থাকেন। শায়খের অনেক লেকচার আরবী ও উর্দুতে পাওয়া যায়, আপনারা YouTube এ Shaykh Wasi Ullah Abbas লিখে সার্চ দিয়ে তার লেকচার শুনতে পারবেন। শায়খ উয়াসী উল্লাহ আব্বাস এর ইলম অর্জন করা মহান যাত্রা ও সংক্ষিপ্ত জীবনী শায়খের কাছ থেকেই শুনুন এই লিংকে -
https://www.youtube.com/watch?v=bNIuZddOp2Q

মঙ্গলবার, ৩ মে, ২০১৬

আপনার দ্বীন সম্পর্কে জানুন

আলহামদুলিল্লাহ।
(১) ওযুর পানি পবিত্র, কারো নিজের না অন্য কারো ওযুর পানি গায়ে বা কাপড়ে লাগলে কোন সমস্যা নেই।
(২) কারো স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে সে তার মৃতদেহ দেখতে পারবে, গোসলও করাতে পারবে, এতে কোন সমস্যা বা বাধা নেই। অনেকে মনে করে মৃত্যুর সাথে সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়, সুতরাং তাদের একজন আরেকজনকে দেখা হারাম। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
(৩) সিনেমা নাটকে অনেক নামধারী মুসলমান অভিনেতা অভিনেত্রী সামান্য কয়টা টাকার জন্যে যিনা-ব্যভিচারের অভিনয় করে, এমনকি এদেরকে টাকা দিলে মূর্তিপূজাও করে। অনেক গায়ক গায়িকা টাকার জন্যে অশ্লীল ও হারাম গান গাইছে, শিরকী কথা প্রচার করছে। মানব জাতির মাঝে এমন নারী পুরুষেরা নিকৃষ্ট এবং শয়তানের সৈনিক। এদের জন্যে কেয়ামতের দিন কঠোর শাস্তি রয়েছে। আফসোসের বিষয় হচ্ছে অনেক মুসলমান নারী পুরুষ এদেরকে ঘৃণা করেনা, বরং এদের হারাম কাজের দ্বারা আনন্দ উপভোগ করে, তাদেরকে মোহব্বত করে। এভাবেই এই সমস্ত মানুষেরা মানবরূপী শয়তানদের দ্বারা পথভ্রষ্ট হয়।
(৪) সকালের দিকে আল্লাহর অধিক বরকত রয়েছে, সুতরাং যেকোন ভালো কাজ সকাল সকাল করার চেষ্টা করবেন। যদিও আল্লাহর রহমত দিন রাত ২৪ ঘন্টাই উন্মুক্ত ও প্রশস্ত।
(৫) আসরের পরে ঘুমালে ক্ষতি হয় এটা ভিত্তিহীন, জাল কথা। এসময় ক্বুরান পড়া, জিকির করা, পড়াশোনা করা নিষিদ্ধ মনে করা একটা কুসংস্কার ও বাজে কথা।
(৬) মাগরিবের সালাতের পরে ঘুমানো এবং ইশা সালাতের পরে অনর্থক গল্প বা আড্ডা দেওয়া মাকরুহ। তবে ইশার পরে দ্বীন শিক্ষার জন্যে রাত্রি জাগরণ করা হাদীস দ্বারা প্রমানিত।
(৭) আল্লাহকে মুশরিকদের দেবতাদের নামে যেমন ব্রম্মা বিষ্ণু নামে ডাকা জায়েজ নয়। আল্লাহকে ডাকতে হয় ক্বুরান ও হাদীস দ্বারা প্রমানিত আসমাউল হুসনা সমূহ দ্বারা।
(৮) মানুষের কাছে বেশি চাইলে রাগ করে, কিন্তু আল্লাহর কাছে তার কোন বান্দা না চাইলে আল্লাহ রাগ করেন। আর আল্লাহ কাউকে কিছু দিলে তার কমে যাবেনা। সেইজন্যে আপনি যখন কোন কিছু চাইবেন, সবচাইতে বড়টাই চাইবেন, ছোটটা নয়। যেমন যখন জান্নাত চাইবেন একেবারে এক নাম্বার জান্নাত, জান্নাতুল ফেরদাউসই চাইবেন। কখনো মনটাকে ছোট করবেন না, আল্লাহর কাছে যত বেশি চাইবেন, আল্লাহ তত বেশি খুশি হন এবং বেহিসাবে দান করেন, হয় এই দুনিয়াতেই নয়তো আখেরাতে।
(৯) ব্যস্ততা ও ব্যক্তিগত কিছু কারণে অনেকের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। সেজন্যে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। কারো ইমার্জেন্সি কোন প্রশ্ন হলে ইনবক্সে পাঠাবেন। আর উত্তর দেওয়া হোক না না হোক, আমাদের পোস্টে ফলোয়ারদের কেউ কোন উত্তর দেওয়া, অপ্রাসংগিক কোন মন্তব্য না নিজস্ব মতামত দেওয়া, লিংক বা আইডি শেয়ার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পেইজটাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে এ ব্যপারে আমাদের পেইজের নিয়ম অনুসরণ করার জন্যে আমি সকলের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি। আর পাঠকদেরকে আমি বলছি, ফেইসবুকে ইন্টারনেটে কিছু লেখা বা উত্তর পেলেই সেটাকে ইসলামিক বলে মনে করবেন না। বরং তার উতস কি যাচাই করার চেষ্টা করুন।
(১০) সমস্ত শক্তির উতস হচ্ছে সূর্য, এটা বিজ্ঞানী নামধারী কিছু ভ্রান্ত লোকের ধারণা। সমস্ত শক্তির উতস হচ্ছেন এক আল্লাহ তায়া'লা।

(১১) আল্লাহ আমাদের ও আপনাদেরকে সফলতা দান করুন। আল্লাহ তার নবী, নবীর স্ত্রী, বংশধরদের প্রতি শান্তি ও বরকত নাযিল করুন। আমিন।

সোমবার, ২ মে, ২০১৬

সেই ফেতনাহ যা কেয়ামতের পূর্বে প্রকাশ পাবে এবং মুসলমানদের মাঝে সর্বত্র বিস্তার লাভ করবে

হাদীসে বর্ণিত কি সেই ফিতনাহ, যা কেয়ামতের পূর্বে প্রকাশ পাবে এবং মুসলমানদের মাঝে সর্বত্র বিস্তার লাভ করবে?
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (কেয়ামতের পূর্বে) তোমাদের মাঝে এমন একটা ফিতনাহ সৃষ্টি হবে, যা থেকে কোন মুসলমানের ঘরই রেহাই পাবে না।
সহীহ বুখারীঃ ৩১৭৬, আবু দাউদঃ ৫০০০, আহমাদঃ ২৩৪৫১।
আল্লামাহ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ উপরোক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় বলেন,
হাদীসে বর্ণিত এই ফিতনাহ এমন একটা ফিতনাহ, যেটা থেকে কোন মুসলমানের বাড়ি বেঁচে থাকতে পারবেনা। এটা একটা মারাত্মক সমস্যা, যা বর্তমানে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবং খুব বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন, আমার (শায়খ ফাউজন-এর) মতে, বর্তমান যুগের বিভিন্ন মিডিয়া এবং ইন্টারনেট হচ্ছে হাদীসে বর্ণিত সেই ফিতনাহ। কে জানে, এই মিডিয়ার থেকে সৃষ্ট ক্ষতি কত দূর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে! এই (মিডিয়া, ইন্টারনেট) নিজে থেকে মানুষের বাড়িতে প্রবেশ করছে। তোমার তাদের কাছে যাচ্ছ বিষয়টা এমন নয়, বরং তারা নিজেরাই তোমাদের কাছে চলে আসছে। তুমি তোমার বিছানায় শুয়ে আছে, আর এই অলস জিনিসটা তোমার পাশে আছে। তোমাদের কোন চেষ্টা পরিশ্রম ছাড়াই এইগুলো তোমার জন্যে অনেক বড় ক্ষতি ও ধংস নিয়ে আসছে। আর এটাই হচ্ছে ফিতনাহ (বিপর্যয়, কঠিন পরীক্ষা)। নাআম।
*এখানে মিডিয়া দ্বারা রেডিও, টেলিভিশন, ইউটিউব, ফেইসবুক, টুইটার ইত্যাদি যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে বোঝানো হয়েছে।