মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬

প্রিয়নবী মুহা’ম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কুরআনুল কারীমের কয়েকটি আয়াতের তর্জমা

প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কুরআনুল কারীমের কয়েকটি আয়াতের তর্জমাঃ
বিসমিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ।
ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ।
আম্মা বাআদ।
(১) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর একজন সত্য নবী বা প্রেরিত দূত, এই স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (মুহাম্মদ আল্লাহর রসুল)। সুরা আল-ফাতহঃ ২৯।
(২) অতীতের নবী-রসুলরা প্রেরিত ছিলেন নির্দিষ্ট একটি জাতির জন্যে বা নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত। পরবর্তী নবী আসলে পূর্বের নবীদের নবুওত রহিত হয়ে যেত। কিন্তু আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আগমনের সময় থেকে কেয়ামত পর্যন্ত এই দুনিয়াতে আগমনকারী সমস্ত মানুষ ও জিনের জন্যে প্রেরিত হয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (হে নবী!) আপনি বলুন, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য সেই আল্লাহর (পক্ষ থেকে প্রেরিত) রসুল; যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। সুরা আল-আরাফঃ ১৫৮।
(৩) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটা মুজিজাহ হচ্ছে তিনি ছিলেন উম্মি নবী অর্থাৎ, এমন নবী যিনি কোন কিতাব (বই) পড়তে বা লিখতে জানতেন না। আর এই উম্মি নবীর প্রতিই সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব কুরআনুল কারীম নাযিল করা হয়েছে, এমন কিতাব যার ছোট একটা সুরার মত করে সুরা সমস্ত মানুষ ও জিন মিলেও নকল করতে পারবেনা।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসুল, নিরক্ষর নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর; যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে বিশ্বাস করে, এবং তোমরা তাঁর (নবীর) অনুসরণ কর, যাতে করে তোমরা সুপথ পাও। সুরা আল-আরাফঃ ১৫৮।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ (হে নবী) আপনি তো জানতেন না কিতাব কি জিনিস, আর ঈমান কি! সুরা আশ-শূরাঃ ৫২।
(৪) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী, তাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নয়, বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং সর্বশেষ নবী। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ। সুরা আল-আহজাবঃ ৪০।
(৫) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আল্লাহ তাআলা মানুষের উপরে সাক্ষী হিসেবে প্রেরণ করেছেন, কেয়ামতের দিন কে ঈমানদার, আর কে কাফের, তিনি এই সাক্ষী দেবেন। তিনি মানব জাতিকে নেক আমলের পুরস্কার হিসেবে জান্নাতে সুখ-শান্তির জীবনের সুসংবাদ দান করেছেন এবং খারাপ কাজের প্রতিদান হিসেবে জাহান্নামের কঠিন আযাবের সতর্কবাণী শুনিয়েছেন। আর আল্লাহ তাআলা তাঁকে সিরাজাম মুনীরা উপাধি দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে নবী! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি (মানব জাতির উপরে) সাক্ষী হিসেবে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে। এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী, এবং সিরাজাম মুনীরা (উজ্জ্বল প্রদীপরূপে)। সুরা আল-আহজাবঃ ৪৫-৪৬।
(৬) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাহমাতুল্লিল আলামীন বা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষ, জিন ও যা কিছু রয়েছে, সবার জন্যে বিশেষ রহমত স্বরূপ।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি তো আপনাকে রাহমাতুল্লিল আলামীন (বিশ্বজগতের জন্যে রহমত) হিসেবে প্রেরণ করেছি। সুরা আল-আম্বিয়াঃ ১০৭।
(৭) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সর্বোত্তম চরিত্রের সার্টিফিকেট দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আর নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী। সুরা আল-ক্বলমঃ ৪।
(৮) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শকে আমাদের জন্য একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের ব্যপারে আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহর রসুলের (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। সুরা আল-আহজাবঃ ২১।
(৯) যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ মান্য করলো, সে যেনো আল্লাহকেই মান্য করলো। আর যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবাধ্যতা করলো, সে যেনো আল্লাহর অবাধ্যতা করলো।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যে ব্যক্তি রসুলের আনুগত্য করল, সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করল। সুরা আন-নিসাঃ ৮০।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ পক্ষান্তরে যে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অবাধ্য হবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে, তিনি তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে চিরকাল থাকবে, আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি। সুরা আন-নিসাঃ ১৪।
(১০) আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা পাওয়ার মাধ্যম হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ বা তাঁর জীবন আদর্শের অনুসরণ করা।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (হে নবী!) আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসো, তাহলে আমার (অর্থাৎ নবীর) অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেবেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সুরা আলে-ইমরানঃ ৩১।
(১১) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ বা তাঁর আদেশ-নিষেধ সমূহ মান্য করার উপর জোর দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আর রসুল তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর। এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা থেকে তোমরা বিরত থাক। সুরা আল-হাশরঃ ৭।
(১২) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন তাঁর উম্মতের প্রতি অত্যন্ত স্নেহপরায়ন ও দয়ালু।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ নিশ্চয়ই তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন এমন একজন রসুল, যার কাছে তোমাদের দুঃখ-কষ্ট খুব কষ্টদায়ক মনে হয়, যিনি তোমাদের অত্যন্ত হিতাকাঙ্ক্ষী, যিনি ঈমানদারদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, করুণা পরায়ণ। সুরা আত-তাওবাহঃ ১২৮।
(১৩) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং আল্লাহ তাআলার সবচাইতে সম্মানিত বান্দা। কিন্তু তিনি কোন ফেরেশতা, নূর বা নুরুল্ললাহ (আল্লাহর নূর) নন।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (হে নবী!) আপনি বলুন, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ। সুরা আল-কাহফঃ ১১০।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ (হে নবী! আপনি বলুন) আমি এমন কথা বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা। সুরা আল-আনআমঃ ৬।
(১৪) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়েব বা অদৃশ্যের খবর জানতেন না। একারণে তিনি আল্লাহ তাআলার সাহায্য বা ওয়াহী ব্যতিরেকে নিজে নিজের ভালো বা মন্দ করতে সক্ষম ছিলেন না। আর আল্লাহ তাআলার খাজানা বা ধন-ভান্ডারের উপরেও তাঁর কোন কর্তৃত্ব ছিলোনা।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (হে নবী!) আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন-ভান্ডারের চাবি রয়েছে। আর আমি গায়েব জানি না। সুরা আল-আনআমঃ ৬।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ (হে নবী!) আপনি ঘোষণা করে দিন যে, একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ, লাভ-লোকসান, কল্যাণ-অকল্যাণ ইত্যাদি বিষয়ে আমার কোনই ক্ষমতা নেই। আর আমি যদি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে অনেক কল্যাণ লাভ করতে পারতাম, আর কোন প্রকার অকল্যাণ আমাকে স্পর্শ করতে পারত না। সুরা আল-আরাফঃ ১৮৮।
(১৫) আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হওয়া সত্ত্বেও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতেন না যে, কেয়ামত কবে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (হে নবী) লোকেরা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, সেটা কখন সংঘটিত হবে? এ ব্যাপারে আপনার কি বলার আছে? কেয়ামত (কবে হবে তার) চূড়ান্ত জ্ঞান তো আছে শুধুমাত্র আপনার প্রতিপালকের নিকটেই আছে। সুরা আন-নাযিয়াতঃ ৪২-৪৪।
(১৬) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব ছিলো লোকদেরকে উপদেশ দেওয়া, তাদেরকে সতর্ক-সাবধান করা। বল প্রয়োগ করে, ভয় দেখিয়ে, জোর-জবস্তি করে লোকদেরকে হেদায়েত করতেই হবে, এমন দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়নি।  
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (হে নবী!) আপনি তাদেরকে উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা মাত্রআপনি তাদের উপর জিম্মাদার (বা কর্তৃত্বশীল শাসক) নন সুরা আল-গাশিয়াহঃ ২১-২২।  
(১৭) অতীতে অনেক নবী ও রসুল আগমন করেছেন, তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব সফলভাবে পালনের পরে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলার বিধান অনুযায়ী তাঁর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও একদিন মৃত্যুবরণ করবেন, এটাই ছিলো স্বাভাবিক বিষয়।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (হে নবী) আপনিও মৃত্যু বরণ করবেন আর তারাও মৃত্যু বরণ করবে। সুরা আয-যুমারঃ ৩০।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ মুহাম্মাদ তিনিতো আল্লাহর রসুল ছাড়া আর কিছু নন, তার পূর্বে অনেক রসুল মৃত্যু বরণ করেছেন। এখন তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তাহলে তোমরা কি তোমাদের পূর্ব অবস্থায় (কুফুরীতে) ফিরে যাবে? প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে, সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। আল্লাহ অচিরেই যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে প্রতিদান দিবেন। সুরা আলে ইমরানঃ ১৪৪।
(১৮) আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও নবীর প্রতি রহমতের জন্যে দুয়া করেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেও তাঁর নবীর প্রতি রহমতের জন্যে দুয়া করতে (অর্থাৎ দুরুদ পড়ার জন্যে) আদেশ করে বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ নবীর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করেন। সুতরাং, হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত (দুরুদ) পেশ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। সুরা আহযাবঃ ৫৬।
আসুন আমরা সকলেই পড়িঃ

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া-লা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া-লা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া-লা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারা-কতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া-লা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ