মাযহাব মানা যাবে? কিছু মিথ্যাচারের জবাব...
“মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত।” সুরা মুরসালাতঃ ১৫।
কিছু মানুষ জেনেই হোক, না জেনেই হোক আমাদের নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন।
নিচে তার জবাব দেওয়া হলো।
১. আমরা নাকি #বুখারী ও #মুসলিম ছাড়া অন্য কোন হাদীসের কিতাব থেকে
হাদীস মানিনা?
>>> এটা একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা ও জঘন্য অপবাদ। কোন হাদীস
যদি সহীহ বলে প্রমানিত হয় তাহলে সেটা যেই হাদীস গ্রন্থেই থাকুক না কেনো - আবু দাউদ,
তিরমিযি, নাসায়ী...সমস্ত মুসলিম সেই হাদীস মেনে নিতে বাধ্য। হাদীস শাস্ত্রের মাঝে সহীহ
বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মর্যাদা অনেক বেশি, তার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, তবে তার মানে
এইনা যে, এইগুলোর বাইরে আর কোন ‘সহীহ’ হাদীস নেই! বরং, বুখারী ও মুসলিমের বাইরে অন্যান্য হাদীসের কিতাবে
আরো অনেক হাদীস রয়েছে যেইগুলোর মাঝে অনেক ‘সহীহ’ এবং ‘হাসান সহীহ’ হাদীস রয়েছে এবং সেই সমস্ত হাদীসের উপরেও আমল করতে হবে, কারণ সেইগুলোও
নবী সাঃ এর কথা। এছাড়া আপনি আমাদের যেকোন পোস্ট বা লেখা বই দেখুন, সেখানে বুখারী ও
মুসলিম ছাড়া অন্যান্য অনেক হাদীস গ্রন্থ থেকে হাদীস নাম্বারসহ সহীহ না জয়ীফ উল্লেখ
করে দেওয়া আছে। হাদীসের ব্যপারে আমাদের নীতি সেটাই যা ইমাম আবু হানীফা রহঃ সহ সমস্ত
ইমামগণেরাই বলেছিলেন,
“ইযা সাহ্হাল হাদীস, ফাহুয়া মাযহাবী” অর্থাৎ হাদীস সহীহ হলে সেটিই আমার মাযহাব।
অতএব, সেই সমস্ত ভাই যারা বলে আমরা বুখারী ও মুসলিম ছাড়া অন্য কোন
গ্রন্থের হাদীস মানিনা, তাদেরকে বলবো - আল্লাহকে ভয় করুন ও মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকুন।
.
২. আমরা নাকি ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) কে গালি দেই??
>>> নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক, আমাদের ইমাম ও আলেমরা হচ্ছেন
উম্মতের মাথার মুকুটের মতো সম্মানিত ব্যক্তি। ইমাম আবু হানীফা রহঃ অত্যন্ত ধার্মিক,
দানশীল ও ফিকহের ব্যপারে পারদর্শী ছিলেন।
শায়খ মুহাম্মদ বিন যামিল জাইনু রহঃ তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, “ফিকহের ব্যপারে সবাই ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কাছে ঋনী।”
আহলে সুন্নাহর এমন একজন সম্মানিত ইমামকে গালি দেওয়াতো দূরের কথা,
তাকে অসম্মান করাই আমরা পাপ বলে মনে করি। রাসুল সাঃ বলেছেন “আলেমরা হচ্ছেন নবী-রাসূলদের উত্তরাধিকারী।” [তিরমিযি, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, হাদীসটী সহীহ]
সুতরাং, আলেমদেরকে গালি দেওয়া মানে ইসলামের উপর আক্রমন করা। তবে
হ্যা, যে যত বড়ই আলেম হোক না কেনো, নবী সাঃ ছাড়া কোন মানুষউই ভুল-ত্রুটির উর্ধে নন।
তাদের কারো কোন ফতোয়া ভুল হলে আমরা সেটা গ্রহণ করিনা, সেক্ষেত্রে ক্বুরান ও সহীহ হাদীস
অনুযায়ী সঠিক ফতোয়া নেই। কোন একজন আলেমের অমুক ফতোয়াটা ভুল – এটা বলাতে তাকে অপমান করা হয়না, বরং ইমাম আবু হানীফা রহঃ স্বয়ং
বলে গেছেন, “তোমরা আমার অন্ধ অনুকরণ
করবেনা, আমার কোন কথা ভুল হলে দেওয়ালের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।”
,
৩. আমরা নাকি মাযহাব মানা শিরক এবং মাযহাবের অনুসরণকারীদেরকে মুশরিক
বলেছি???
>>> নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ
সরল বিশ্বাস নিয়ে মাযহাব অনুসরণ করে যাচ্ছেন, তাহলে তারা সবাই শিরক করছেন নাকি? ঢালাউভাবে
মাযহাব মানাকে যিনি শিরক বলেন, সে আসলে মাযহাব কি সেটাই জানে কিনা সন্দেহ! আর মাযহাবিদেরকে
যে মুশরিক বলে এটা খারেজীদের একটা লক্ষণ, যারা ইচ্ছেমতো মানুষকে কাফের ফতোয়া দিতো।
.
<<<মাযহাব মানা কখনও ফরয, কখনো জায়েজ, কখনো সেটা হারাম
এমনকি কখনো সেটা শিরকও হতে পারে>>>
.
একতরফাভাবে মাযহাব মানা ফরয কিংবা মাযহাব মানা হারাম/শিরক বলা এই
দুইটিই হচ্ছে চরম্পন্থা। উদাহরণঃ-
১. চার মাযহাব (হানাফী, মালেকি, শাফেয়ী, হাম্বালি) মতে ওযু ছাড়া
ক্বুরান স্পর্শ করা যাবেনা। মাযহাবের এই ফতোয়াটা সঠিক কারণ রাসুল সাঃ বলেছেন, “পবিত্রতা ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবেনা।”
সুনানে দারেমীঃ ২১৬৬, শায়খ বিন বাজ, শায়খ উসাইমিনের মতে হাদীসটির
সনদ জাইয়্যিদ (অর্থাৎ, সহীহ)।
সুতরাং, মাযহাবের এই ফতোয়াটা মানা আমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব।
২. মালেকি মাযহাব মতে ফরয নামাযে বুক হাত বাঁধা যাবেনা, অথচ সমস্ত
হাদিসে কিতাবে এসেছে নামাযে হাত বেঁধে সুন্নত, রাসুল সাঃ জীবনে কোনদিন হাত ছেড়ে দিয়ে
নামায পড়েন নি। সেই হিসেবে বাকি ৩ মাযহাব মতেই নামাযে হাত বাঁধা সুন্নত, তবে কেউ যদি
হাত না বাঁধে তবুও তাঁর নামায হবে। এক্ষেত্রে মালেকী মাযহাবের এই ফতোয়াটা মানা হারাম।
৩. মাযহাব মানা কখন #শিরক হবে?
কেউ যদি নিশ্চিত জানেন তার মাযহাবের অমুক মাসায়ালাটা আসলে ভুল, এবং
তার কাছে প্রমান আছে যে সেটা ক্বুরান ও সুন্নাহর বিপরীত ফয়সালা। এইরকম জেনে শুনে কেউ
যদি মনে করে যে, আমার ইমাম/পীর যাই বলে সেটাই সঠিক, এমনকি ক্বুরান হাদিসে বিপরীত ফতোয়া
দিলেও সেটাই মানতে হবে, সেটা ঠিক – তাহল সে ব্যক্তি আনুগত্যের ক্ষেত্রে শিরক করলো। কারণ চূড়ান্ত আনুগত্য
করতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাঃ কে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিপরীতে অন্য কারো আনুত্য
করা হারাম ও কুফর। কারণ সে আদেশ দানের ব্যপারে কোন আলেম বা পীর-বুজুর্গকে আল্লাহর সাথে
সমান শরীক বানিয়ে ফেললো। এমন লোকদের ব্যপারে আল্লাহ ক্বুরানে এই আয়াত নাযিল করেছেন,
“তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে
তাদের আলেম ও দরবেশদেরকে রব্ব হিসেবে গ্রহন করেছে।” সুরা তওবাহঃ ৩১।
উদাহরণ, আমাদের দেশের কথিত হাক্কানি পীর চরমোনাই পীর সাহেব তার লেখা
একটি বইয়ে লিখেছেন, “কামেল পীরের আদেশ পাইলে নাপাক শারাব (মদ) দ্বারাও জায়নামাজ রঙ্গিন
করিয়া তাহাতে নামাজ পড়। অর্থাৎ শরীয়তের কামেল পীর সাহেব যদি এমন কোন হুকুম দেন,
যাহা প্রকাশ্যে শরীয়তের খেলাফ হয়, তবুও তুমি তাহা বিনা আঃপত্তিতে সেটা আদায় করবে।”
মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ ইছহাক, চরমোনাই পীর সাহেব বরিশাল কর্তৃক
রচিত ‘আশেক মাশুক’ এর ৩৫ নং পৃষ্ঠা।
এইরকম কেউ যদি (ইচ্ছাকৃত কিংবা ভুলে) ক্বুরান হাদিসের বিপরীত কোন
ফতোয়া বা আদেশ দেয় আর তাঁর অনুসারী ভুল জেনেও সেটাকে মানা জায়েজ বা হালাল মনে করে,
তাহলে হারামকে হালাল মনে করার কারণে সে কুফুরী বা শিরক করল।
এছাড়া ক্বুরান ও সুন্নাহর আলোকে মাযহাব অনুসরণ করা সম্পর্কে এই লেখাটি
পড়ুন –
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/1156612527704826:0