"শাইখ আলবানীর রাহ. সাথে যাদের বাহাস হয় তারা এবং বর্তমানে যারা জিহাদের
দাওয়াহ করে এরা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঐ সময় আরবে কিছু তাকফিরী গ্রুপ ছিল, যারা কথায় কথায় তাকফির করত যেমন শাকরী মুস্তফার দল। বস্তুত শাইখ আলবানীর ঐ
আলোচনার কথাগুলো ভিন্ন স্থানে প্রয়োগ করে প্রমাণ করতে চেষ্টা করে এরাও ওদের মত।
হাস্যকর কথা! এই অজ্ঞরা এটাও জানে না যে বর্তমানে যারা জিহাদের ঝান্ডা তুলেছেন
তাদের সাথে ওদের কত দূরত্ব। শাইখুল মুজাহিদীন আব্দুল্লাহ আযযাম রাহ. যাকে শাইখ
উসামার উস্তাদ বলা হয়, তিনি তো শাইখ আলবানীর বন্ধু ছিলেন,
জর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাথে দর্স দিয়েছেন, কই শাইখ আলবানী তো উনার বিরুদ্ধে কিছু বলেন নি কখনও। বরং শাইখ বিন বায
জীবিত থাকাবস্থায় শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের কিতাবাদী সৌদি তে নিষিদ্ধ হয় নি,
হয়েছিল শাইখ বিন বাযের মৃত্যুর পর। শাইখ হামুদ বিন আল উক্বলা রাহঃ
কে চেনেন? উনাকে উসতাযুল আসাতিযা বলা হয়। শাইখ মুহাম্মাদ বিন
স্বালিহ আল ফাওজান আল ফাওজানের উস্তাদ তিনি। উনি তো মোল্লা ওমারকে বাইয়াত
দিয়েছিলেন চিঠি পাঠিয়ে। "আদ-দুরার আস-সানিয়া" এই কিতাবের নাম শুনেছেন??
ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব (রাহঃ) ও তাঁর বংশ ধরদের ফতোয়া
সংকলন। এটা একটা masterpiece. অথচ এদেশের কথিত সালাফীরা এই
কিতাবের ৫ পৃষ্ঠাও অনুবাদ করে না, কারণ ঠিক শুরুতেই আক্বীদার
আলোচনায় তাওহীদে হাকিমিয়া নিয়ে কথা আছে। শাইখ নাসির বিন হামাদ আল ফাহাদ(আল্লাহ
তাঁর মুক্তি ত্বারান্বিত করুন) তিনি ইমাম সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরী'আহ অনুষদের ডিন ছিলেন। হাদিসের ৯ কিতাবের সনদ সহ হাফিয। হক্ব বলায় উনি আজ
কারাগারে। উনাকে নিশ্চয়ই এমনি এমনি ডিন বানানো হয় নি। বাকীদের কথা বাদ দেন শাইখ
মুহাইসিন তো হারাম শরীফের খতিব ছিলেন এই কয়েক বছর আগেও। উনাকে কেন গ্রেফতার করা হয়?
এরা যা করে তা হলো অপপ্রচার। আপনি ডা গালিব সাহেবদের ফতোয়া পড়েন,
দেখবেন তারা বলেছেন ফিদায়ি হামলা আত্নহত্যা তাই না জায়িজ। অথচ শাইখ
আলবানী ও বিন বাযের স্পষ্ট ফতোয়া হল এটা জায়েজ এই বিষয়ে উভয় শাইখের টেপ আছে"।
এই কমেন্টের পুরোটাই ভুল তথ্য দিয়ে পূর্ণ। সম্ভবত কোন জিহাদী বক্তা বা লেখক
আপনার এবং আপনার মতো বহু তরুণ বয়সী ছেলেদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে বিভ্রান্ত
করেছে।
“বর্তমানে যারা জিহাদের দাওয়াহ করে
এরা সম্পূর্ণ ভিন্ন...”
এই কথা আপনাকে কে বললো? যেই সমস্ত তাকফিরিদের
সাথে শায়খ আলবানীর বিরোধ সবচেয়ে বেশী ছিলো তাদের মধ্যে রয়েছে সফর আল-হাওয়ালি,
সালমান আল-আওদাহ, মুহাম্মদ আল-সুরুর, যারা কোন এক সময় নিজেদেরকে
সালাফী(!) বলে দাবী করতো। এমনকি এরা এতো চরমপন্থা অবলম্বন করে যে, শায়খ আলবানীকে তারা #মুর্জিয়া বলে ঘোষণা করেছিলো। বর্তমান যুগের তাকফিরিরা
যেমন সমকালীন আলেমদেরকে মুর্জিয়া বলছে, এরা আসলে তাদের
পূর্ববর্তী তাকফিরি আলেমদের কাছ থেকে শুধু কপি করছে। বর্তমান যুগের চরমপন্থী
তাকফিরীদের ব্যপারে শায়খ আলবানীর বক্তব্য ছিলো –
“এরা কিছু ব্যপার ছাড়া অন্য
ব্যপারগুলোতে খারেজীদের মতোই।”
https://www.youtube.com/watch?v=On1T7P3AB_s
“আব্দুল্লাহ আযযাম রাহ. যাকে শাইখ
উসামার উস্তাদ বলা হয়, তিনি তো শাইখ আলবানীর
বন্ধু ছিলেন...”
এটা ভুল ও বাজে কথা। আব্দুল্লাহ আযযম শায়খ আলবানীর বন্ধু ছিলোনা, ছাত্র ছিলো।
তবে কেমন ছাত্র ছিলো?
এই আব্দুল্লাহ আযযম এবং তার দল ইখোয়ানুল মুসলিমিন(!) শায়খ আলবানীকে মিথ্যা
অপবাদ দিয়ে তাকে ব্যান(!) করে তাকে বয়কট করে এবং তার বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক(!) করা
শুরু করে। আব্দুল্লাহ আযযম কোন যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই ব্যপারে ইখোয়ানুল মুসলিমিনের #তাকলিদ
করে। আশা করি এতেই স্পষ্ট, শায়খ আলবানীর ছাত্র থাকলেও তার ধরণ কেমন ছিলো। পুরো
ঘটনা শায়খ নিজেই বর্ণনা করেছেন –
https://www.youtube.com/watch?v=6LYAdAmUqlA
আব্দুল্লাহ আযযম ছিলেন একজন ইখোয়ানি, যিনি ইখোয়ানি মানহাজের উপরেই ছিলেন। আর
ইখোয়ানি এবং তাদের মানহাজের সাথে শায়খ আলবানীর সম্পর্ক সেইরকমই ছিলো যা বর্তমানে
শায়খ রাবীর সাথে জিহাদীদের।
“মোল্লা ওমারকে বাইয়াত দিয়েছিলেন
চিঠি পাঠিয়ে...”
খিলাফত আর বায়াততো এখন হাতের মোয়া হয়ে গেছে, যে যেইদিকে পারছে খিলাফত ঘোষনা করছে
আর পতঙ্গের পালের মতো আকলহীন কিছু মানুষ সেইদিকেই ঝাপিয়ে পড়ছে। সর্বশেষ আফ্রিকাতেও
একটা খিলাফত ঘোষণা করেছে। জানিনা, মক্কা-মদীনা থেকে কয়জন আলেম(!) সেই খলিফার কাছে
বায়াত দিয়েছে? মোল্লা ওমর আফগানিস্থানের আমির হিসেবে সেখানকার মানুষের বায়াত নিতে
পারেন। কিন্তু মুসলিম আমির ও ওলামাদের শুরা ছাড়াই নিজে নিজেকে আমীর ঘোষণা করে সারা
দুনিয়ার মুসলমানদের বায়াত দাবী করা, চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছুইনা। আর এইরকম
স্বঘোষিত মিথ্যা খিলাফতের কাছে যারা বায়াত দেয়, আমরা আল্লামাহ আব্দুল্লাহ মুহসিনের
মতোই আমরা বলবো, “তারা শয়তানের কাছে বায়াত করেছে।”
“তিনি ইমাম সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরী'আহ অনুষদের ডিন ছিলেন। হাদিসের ৯ কিতাবের সনদ সহ হাফিয...”
এইগুলো আবেগের বশবর্তীহ হয়ে হাস্যকর যুক্তি...জুহাইমান আল-খাওয়ারিজের সাথে
মদীনাহ ইউনির এমন ছাত্র ছিলো যাদের ৬টা হাদীস গ্রন্থ মুখস্থ ছিলো। আর পজিশান বা
ডিগ্রী কারো ইলমের গ্যারান্টি নয়, একথা বহু ওলামাই বারবার করে উল্লেখ করেছেন। বরং
সে কার কাছে পড়াশোনা করেছে, সে কোন মানহাজ অনুসরণ করে, তার ব্যপারে অন্য আলেমদের
কি বক্তব্য – এই বিষয়গুলো যাচাই না করেই সাধারণ মানুষের কাউকে আলেম মনে করা বর্তমান যুগের
বড় একটা ফেতনা।
তাওহীদে হাকিমিয়া নিয়ে কথা আছে...
তাওহীদে হাকিমিয়া নিয়ে কথা থাকবেনা কেনো? যেকোন আকীদার বইয়ে তাওহীদে হাকিমিয়ার
কনসেপ্ট অবশ্যই থাকবে। তবে ওলামারা একে ৪র্থ ভাগে ভাগ করার বিরোধীতা করেছেন এবং
মূলত একে ৪র্থ ভাগে ভাগ করার দাবী তুলেছিলো কিছু তাকফিরী মনোভাবের লোকেরা। আর এটা
চরমপন্থী খারেজীদের একটা লক্ষণ, এক কথায় বলতে গেলে, খারেজীরা ‘ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ’ বলেই আলী রাঃ কে হত্যা করেছিলো।
তারা হাকিমিয়াহ নিয়ে চরমপন্থী ধ্যান-ধারণা পোষণ করেই খারেজী হয়েছিলো।
“শাইখ মুহাইসিন তো হারাম শরীফের খতিব
ছিলেন এই কয়েক বছর আগেও...”
শাইখ মুহাইসিন তো অনেক ইয়াং, তাকফিরী মনোভাবের কারণ সালমান আল-আওদাহকে গ্রেফতার
ব্যন ও গ্রেফতার করার জন্য সুপারিশ করছিলেন স্বয়ং ইমাম ইবনে বাজ রহঃ!
সুতরাং, সেই আওদাহর পথ ধরে যারাই এইরকম তাকফিরী মনোভাব পোষণ করে মানুষকে
বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে, আমিরদের উচিত সেই ব্যপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। এতোই
যদি শায়খ বিন বাজের নাম মুখে নেন, তাহলে খোঁজ নিয়ে দেখুন, আওদাহর জেলে যাওয়া এবং
পরবর্তীতে ঘটনাগুলো নিয়ে শায়খ ইবনে বাজ রহঃ এর ভূমিকা কি ছিলো। উল্লেখ্য, এই
সালমান আল-আওদাহ ই হচ্ছেন, আল-কায়েদার মুফতি ও ইমাম(!), আনোয়ার আল-আওলাকির আদর্শ
আলেম, যার সাথে অল্প সময় দেখা করেই আওলাকি নিজেকে ধন্য মনে করতেন। অবশ্য, আওলাকির
চরমপন্থার কারণে আওদাহ ই তাকে তোওবা করতে আহবান জানান।
সর্বশেষ, বর্তমানে কিছু আহলুল হাওয়ার বক্তা/লেখক বিভিন্ন কৌশলে দেখানোর চেষ্টা
করে, বিগত সালাফী ওলামাদের সাথে বর্তমানে জীবিতি সালাফি ওলামাদের অনেক পার্থক্য,
জীবিতরা পূর্ববর্তী সালাফি আলেমদের মানাহজ থেকে সরে গিয়ে দরবারী দালাল হয়ে গেছে!?
তাদের জন্য উপহার হিসেবে নিচের এই ৩টা ঘটনার বয়ান করা হলো – আশা করি এরা উলামাদের সংস্পর্শে
ফিরে আসবে, নয়তো শায়খ বিন বাজ শায়খ ইবনে উসায়মিনকে ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় করে
মানুষের সাথে প্রতারণার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকবেন।
১. উসামা বিন লাদেন যখন বিদ্রোহ করে সোউদি
আরবে ফেতনা সৃষ্টি করলো তখন শায়খ বিন বাজ রহঃ এর ফতোয়া –
শায়খ ইবনে বাজ এর ফতোয়াঃ
https://www.youtube.com/watch?v=_laLwEEHsDg
শায়খ ইবনে বাজ এর ফতোয়া অন্য ওলামায়ে কিবাররা গ্রহণ করেন তার স্বাক্ষীঃ
https://www.youtube.com/watch?v=1-a65Og2uow
আর সর্বশেষ, জীবিত ও মৃত সালাফি ওলামায়ে কিবারদের ফতোয়া সবগুলো একসাথেঃ
https://www.youtube.com/watch?v=mImIQ05gJoA
২. রিয়াদে যখন আত্মঘাতী বোম্বিং করলো কিছু
মুজাহিদ(!) তখন শায়খ ইবনে বাজ ও শায়খ ইবনে উসায়মিন রহঃ – এই ২ জনেই তাদেরকে কতল করা উচিত
বলে ফতোয়া দেন। পরবর্তীতে আলেমদের ফতোয়ার ভিত্তিতেই তাদেরকে হত্যা করা হয়। কিছু অল্প
বয়ষ্ক ছেলে-পুলো মনে করে, আমেরিকার সাথে জিহাদ করা না করা নিয়ে কি-বোর্ড
মুজাহিদিনদের সাথে ওলামাদের মূল দ্বন্দ্ব। অথচ তার অনেক আগেই কি-বোর্ড মুজাহিদদের
ইমামদেরকে যখন সালাফী ওলামারা ‘খারেজীদের রাস্তা’ বলে ফতোয়া দেন – তখন থেকেই ওলামাদের সাথে কি-বোর্ড মুজাহিদিনদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।
৩. “ফিদায়ি হামলা আত্নহত্যা তাই না
জায়িজ...”
তথাকথিত ফিদায়ী হামলা (সাধারণ যাত্রীবাহী বিমান হাইজ্যাক করে হামলা করা বা
হত্যা করার হুমকি দেওয়া, ৯/১১, বাংলাদেশে জেএম বি) এইগুলো হারাম ফতোয়া শুধু
আব্দুল্লাহ গালিব দেন নি, দিয়েছেন ইবনে বাজ, ইবনে উসায়মিন, ইবনে জিব্রীন। আর
রিয়াদে যেটা করেছিলো, সেটার বিরুদ্ধে যেই সমস্ত ওলামায়ে কিবার ফতোয়া দিয়েছিলেন – তাদের নাম লিখলে পাতা শেষ হয়ে
যাবে।
বর্তমানে কিছু তরুণ শ্রেণীর মানুষ আলেমদেরকে ত্যাগ করে অল্পবয়সী চরমপন্থী
বক্তদেরকে তাদের রাহবার বা পথপ্রদর্শক হিসেবে বেছে নিয়েছে। ইলমের অভাবে এই
ছেলেগুলো হাওয়া বা প্রবৃত্তির অনুসারী বক্তাদের মন ভোলানো ওয়াজ/লেকচার শুনে তাদেরক
ইমাম,
মুফতি, মুজাহিদ মনে করছে। যাই
হোক, যুগে যুগে কালে কালে নির্ভরযোগ্য আলেমদের সংস্পর্শ ত্যাগ করে যারা ইসলামের
ঝাণ্ডাকে উড্ডিন করতে চেয়েছে, তাদের নিজেদেরই পতন
হয়েছে। যেমন হয়েছিল আলী (রাঃ) এর বিরোধীতাকারী খারেজীদের। ঐ খারেজীরা কিন্তু কোন
কুফরী আকীদা পোষণ করত না, শিরক করত না, এমনকি তারা কোন খারাপ চরিত্রের অধিকারীও ছিল না। কিন্তু তারা ইসলাম বুঝতে
বাড়াবাড়ির আশ্রয় নিয়েছিল। নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা অনুযায়ী চলতে চেয়েছি। তাই তারা
নিক্ষিপ্ত হয়েছে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে।
[Collected & Edited from Shaykh
Abdullah Al Kafi]