মওদুদীর
ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব - ২)
মূল পোস্টের
আগে কিছু কথা,
=> কিছু মানুষ বলছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ আমাকে কে কি
লিখেছে বা ভুল করেছে এটা জিজ্ঞাস করবেন না, যারা অন্যদের
ভুল ধরে তারা ফেতনাবাজ!
আমাদের জবাবঃ
আমরা শিরক অথবা বেদাতের বিরুদ্ধে বলার কারণে ফেতনাবাজ নই, বরং আপনি অল্প বিদ্যা নিয়ে শিরক বেদাতের বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করাকে ‘ফেতনা’ আখ্যায়িত করে #দাওয়াতের বিরোধীতা করছেন।
মাওলানা মওদুদী
ও সাইয়েদ কুতুবের বইগুলো বা সূফীবাদীর শিরকি-বেদাতী বইগুলো তাদের অন্ধভক্তরা ইসলাম
মনে করে অনুবাদ করে মানুষের মাঝে প্রচার করে তাদেরকে বিভ্রান্ত করছে। এইগুলোর
বিরুদ্ধে লেখালিখি না করলে সরলমনা মুসলমানেরা ‘ইলমের’ অভাবে এই সমস্ত
ভ্রান্ত মতবাদের গর্তে পড়বে। এইজন্য, শিরক ও বেদাতের
বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া কারো নফল নামায রোযা থেকে উত্তম। দয়া করে যদি না
জানেন,
জানার চেষ্টা করুন। আর কিছু না পারেন, অজ্ঞতাবশত আন্দাজে কথা বলে হক্কের বিরোধীতা করবেন না। বিস্তারিত দেখুন এই
পোস্টে –
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/925619510804130/?type=1&relevant_count=1
=> আরো কিছু মানুষ বলছে, আমিতো মাওলানা মওদুদীর তাফসীরে কোন
ভুল পাইনি!
আমাদের জবাবঃ
১ম কথা,
মাওলানা মওদুদীর তাফসীর পড়ার জন্য আপনাকে কে বলেছে? কোন আলেম কি আপনাকে এই বই পড়তে উপদেশ দিয়েছেন? মার্কেটে বই পাওয়া যায় আর কোন অন্ধভক্ত ইসলামী বই বলে আপনাকে চাপিয়ে দিলো, আর আপনি চোখ বন্ধ করে সেই বই কিনে পড়া শুরু করলেন? রাস্তায় ফুটপারে কোন কবিরাজ যদি হার্টের চিকিৎসা করে, আপনি কি যাবেন সেখানে আপনার বাবার চিকিৎসা করাতে? যদি না যান, তাহলে যাচাই-বাছাই ছাড়াই আপনি অতিরিক্ত
আত্মবিশ্বাস নিয়ে সব বই পড়তে যাচ্ছেন?
ভালো করে
লক্ষ্য করুন, এক বালতি দুধে সামান্য একটু পেশাব পড়লে
পুরো বালতির দুধই নষ্ট হয়ে যাবে। মানুষের আকীদার বিষয়টা এমন, ১০০০-২০০০ পাতা সঠিক কথা বললো, আর ২-৪টা পাতায়
শিরকি-কুফুরী কিংবা ভ্রান্ত মতবাদ ঢুকানো থাকলো, একজনের আকীদা নষ্ট করার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ঠ।
বিগত শতাব্দীর
২ জন বড় আলেম শায়খ আল-আলবানী ও শায়খ উসায়মিন উভয়েই সাধারণ মানুষকে ‘তাফসীর ইবনে কাসীর’ পড়তে উপদেশ
দিয়েছেন। আর আমিতো ভুল পাইনি বা রাস্তা-ঘাটে যে কেউ কোন বইকে ভালো বললেই সেটা পড়া
শুরু করবেন না। কারণ প্রথম কথা হচ্ছে, আপনি কি সঠিক
আর বাতিল বুঝতে সক্ষম? আপনার কি সেই যোগ্যতা আছে ভালো ও
মন্দ পার্থক্য করার মতো?
গতকালকে আমি
স্ক্রিনশটসহ দিয়েছি, মওদুদী সুরা হিজরের আয়াতের তাফসীরে
শিরকি আকীদা ‘ওহদাতুল ওজুদ’ এর বয়ান করেছেন। আপনি কি জানেন ‘ওহদাতুল ওজুদ’ আকীদা কি? এটা কত জঘন্য আকীদা? বিগত ১৪০০ বছরের ইতিহাসে কারা এই
আকীদা প্রচার করেছে, এবং মুসলমান শাসকেরা তাদের কয়জনকে
হত্যা করেছে?
এইগুলো যদি না
জানেন আর না জেনে সেই তাফসীর পড়তে থাকেন, তাহলে আপনি ঐ
আকীদা না জেনেই সঠিক মনে করবেন এবং এইরকম শিরকি চিন্তা-ভাবনা অন্তরে রাখবেন কিন্তু
আপনি কোনদিন টেরও পাবেন না। আর এটাইতো হয়েছে, আপনি জানেন না
এই ভ্রান্ত আকীদা, কিন্তু এটা তাফহীমে আছে, আর তারপরেও আপনি বলেছেন, আমিতো তাফহীমে কোণ ভুল
পাইনি। ভাই/বোন, আল্লাহর ওয়াস্তে বিষয়টা নিজেই বিচার
করুন।
=> অনেকে বলছেন তিনি দেওবন্দী আলেমদের কাছ থেকে আলেম হয়েছেন!
আমাদের জবাবঃ
তাই নাকি?
দেওবন্দীরাই তার সবচাইতে বড় সমালোচনাকারী। আর দেওবন্দীদের
ভ্রান্ত আকীদা তার মাঝেও ছিলো। যেমন দেওবন্দীরা-বেরেলুবীরা আঃকীদার দিক থেকে
আশারি-মাতুরিদী, মাওলানা মওদুদী সেই আকীদার অনুসারী।
নিচে স্ক্রিনশটসহ তার প্রমান দেখুন।
_______________________________
মাওলানা মওদুদী
তার অপ-তাফসীরের কিতাব ‘তাফহীমুল কুরান” এর সুরা ফাজর এর ২২ নম্বর আয়াত,
وَجَاءَ
رَبُّكَ وَالْمَلَكُ
صَفًّا صَفًّا
এর অর্থ করেছেন, “এবং তোমার রব এমন অবস্থায় দেখা দেবেন।”
১ম কথা - তিনি
আয়াতের অর্থ করেছেন ভুল। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, ‘আল্লাহ আসবেন’, কিন্তু অর্থ
করেছেন দেখা দেবেন! সূক্ষ্মভাবে অর্থের বিকৃতি করা হয়েছে এবং পরে তার ব্যখ্যাও
করেছেন অপব্যখ্যা। মওদুদীর ভ্রান্ত ব্যখ্যাঃ
“মূলে বলা হয়েছে ( جَاءَرَبُّكَ ) এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে, “তোমার রব আসবেন”, তবে আল্লাহর
জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই একে রূপক অর্থেই
গ্রহণ করতে হবে। এর উদ্দেশ্য এমনি ধরনের একটি ধারণা দেয়া যে, সে সময় আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব, শাসন ও
প্রতাপের নিদর্শনসমূহ পূর্ণরূপে প্রকাশিত হবে। দুনিয়ায় কোন বাদশাহর সমগ্র সেনাদল
এবং তার মন্ত্রীপরিষদ ও সভাসদদের আগমনে ঠিক ততটা প্রভাব ও প্রতাপ সৃষ্টি হয় না
যতটা বাদশাহর নিজের দরবারে আগমনে সৃষ্টি হয়। এই বিষয়টিই এখানে বুঝানো হয়েছে”
কোথায় ভুল?
মওদুদীর এই কথা
ঠিক আছে,
“মূলে বলা হয়েছে ( جَاءَرَبُّكَ ) এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে, “তোমার রব আসবেন”
এটা সঠিক কথা
লিখে পরে তিনি বলছেন, “তবে আল্লাহর
জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই একে রূপক অর্থেই
গ্রহণ করতে হবে”।
- এটা হচ্ছে
আশারি-মাতুরিদিদের ভ্রান্ত আকীদা, যা তারা ক্বুরানের
আয়াতের অর্থের অপব্যখ্যা করে থাকে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা হচ্ছে, কেয়ামতের দিনে “আল্লাহ আসবেন” এবং মীযান স্থাপন করে মানুষের হিসাব নিবেন। কিন্তু ‘আল্লাহ কিভাবে আসবেন’ এটা আমরা
জানিনা,
আমাদেরকে জানানো হয় নাই। আমাদেরকে জানানো হয়েছে আল্লাহ
আসবেন ব্যস, আমরা এর প্রতি ঈমান আনি। কিন্তু এই
কথাটাকে আমরা জাহমিয়াদের মতো অস্বীকার করিনা, কিংবা
আশারি-মাতুরিদিদের মতো ভ্রান্ত অপব্যখ্যাও করিনা, যেইভাবে আছে ঠিক সেইভাবেই বিশ্বাস করি। এটাই সমস্ত সাহাবী, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল সহ সমস্ত
তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীদের আকীদাহ। কিন্তু তাদের যুগের অনেক পরে আশারি-মাতুরিদী
মতবাদে বিশ্বাসী লোকেরা ক্বুরানের আয়াতের ভুল ব্যখ্যা করে তার অর্থ পরিবর্তন করে, একে আশারি-মাতুরিদী আকীদা বলা হয়।
আর
আশারি-মাতুরিদী ভ্রান্ত মতবাদের লোকদের ক্বুরানের আয়াতের এইরকম অপব্যখ্যার একটা
অপবখ্যা হচ্ছে – ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ আসবেন’ ক্বুরানের আয়াতের অপব্যখ্যা করেছে – ‘আল্লাহর জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই একে
রূপক অর্থেই গ্রহণ করতে হবে। এর উদ্দেশ্য এমনি ধরনের একটি ধারণা দেয়া যে, সে সময় আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব, শাসন ও
প্রতাপের নিদর্শনসমূহ পূর্ণরূপে প্রকাশিত হবে’।
আল্লাহ
আমাদেরকে ভ্রান্ত আকীদা ও আমল থেকে বেঁচে থাকার তোওফিক দান করুন, আমিন।