শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৬

জনপ্রিয় বক্তা ও লিখকদের ব্যপারে কিছু কথা

আজ (২৩শে এপ্রিল) Dr. Bilal Philips এর পেইজ থেকে #HalalHumor ক্যাপশান দিয়ে একটা পোস্ট করা হয়েছে, যেখানে ইসমাঈল মেঙ্ক এবং ড. বিলাল ফিলিপস-এর কিছু কাল্পনিক কথোপকথ ছবির সাহায্যে দেখানো হয়েছে। সম্পর্কে কিছু কথা উল্লেখ করছি।
(১) ফানি শায়খ
বর্তমানে অনেক বক্তা এবং দ্বাইয়ী দ্বীন প্রচারের নামে ফানি শায়খ এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তাদের মাঝে অনেকের মান এতোটাই নীচে নেমে গেছে যে, তাদের ভূমিকা এখন আর দ্বাইয়ীর পর্যায়ে বলা যায় না, বরং তারা যেন একজন জোকার, যাদের কাজ হচ্ছে ভক্ত শ্রোতাদেরকে বিনোদন দেওয়া। এদের স্পর্ধা এতোটাই বেশি যে, এরা দ্বীন শেখানোর নামে তাদের বক্তব্য ও কথার মাঝে হালাল হারামের মতো বিষয়াবলী, রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নাহ, সাহাবীদেরকে নিয়ে, পরহেজগার আলেম ওলামা ও তাদের ফতোয়া নিয়ে, আহলে সুন্নাহর অনুসারী লোকদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা ও কটাক্ষ করতে দ্বিধা বোধ করেনা। আমি এখানে যে বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা উল্লেখ করেছি, এমনই কিছু ঘটনার উদাহরণ দিচ্ছি। আল-মাগরিব ইনস্টিটিউট এর প্রতিষ্ঠতা মুহাম্মাদ আল-শরীফ, যে কিনা বিবাহ করাকে একপ্রকার জুলুম বলে কটাক্ষ করেছে। নোমান আলী খান, যে কিনা সাহাবীদের সম্পর্কে মিথ্যা কাহিনী বলে তাদের মানহানি করছে, এমনকি একজন সাহবীকে pokieman বলে কটাক্ষ করেছে। এছাড়া আরেকজন অভিনব বক্তা কামাল আল-মাক্কী তার দাওয়াতী কাজকে ফলপ্রসূ করার জন্যে যাদু(!) বিদ্যাকে বেছে নিয়েছেন। এমনকি তিনি তার এই ভ্রান্ত কাজকে ডিফেন্ড করার জন্যে হাতের কারসাজির চাইতে জঘন্য বিষয়, লেভেটেশান (শূণ্যে উড়ে দেখানোর) মতো কুফুরী কাজ করে দেখিয়েছেন।
এমন দ্বাইয়ী এবং বক্তা, যারা হাসি-ঠাট্টাকে দাওয়াতের মাধ্যম বানিয়েছে, তাদের জন্যে শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহর দুইটি বক্তব্য পেশ করছিঃ
শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ বলেন,
বর্তমান যুগে অন্য অনেক ফেতনার সাথে এই উম্মত সবচাইতে বড় যে ফেতনার সম্মুখীন সেটা হচ্ছে, এমন অনেক দ্বাইয়ী আছে যারা ইলম ছাড়াই অজ্ঞতাবশত মানুষকে গোমরাহী ও বাতিলের দিকে দিকে দাওয়াত দিচ্ছে।
শায়খ ফাউজান আরো বলেছেন, Dawah is not by way of jokes, clowning and humor. Dawah is by the Book and the Sunnah and preaching, it is not by humor or making the people laugh or things like this. This is not from kindness. Perhaps someone will say this is from kindness. Kindness is not joking that leads to comedy. - Shaykh Saalih Al Fawzaan
(২) মানুষকে হাসানোর জন্যে দাওয়াতী কাজের মাঝে মিথ্যা বলা
দাওয়াতী কাজের মাঝে মানুষকে হাসানোর জন্যে অনেক বক্তা মিথ্যা ঘটনা রচনা করে অথবা, সত্যিকারের চরিত্রের সাথে সম্পর্কিত করে কাল্পনিক কথোপকথন বা কার্টুন অংকন করে, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। আজ ইসমাঈল মেঙ্ক এবং ড. বিলাল ফিলিপস এর মাঝে কথোপকথনের যেই ছবিটা প্রচার করা হয়েছে, এই কনভার্সেশানটা আসলে তাদের দুইজনের মাঝে কখনোই সংঘটিত হয়নি। বরং Dr. Bilal Philips এর পেইজের একজন নাম না জানা এডমিন নিজের মস্তিষ্ক প্রসূত চিন্তা থেকে এই বানোয়াট কনভার্সেশানটা রচনা করেছে। যদিও সে দাবী করেছেন, এই বানোয়াট কনভার্সেশান প্রচার করার জন্যে বক্তাদের অনুমতি নিয়েছে, কিন্তু মূলত কথাগুলো বানোয়াট, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে হাসানো। আর এমন কাজের কি ফজীলত(!) আশা করি প্রিয়নবী (সাঃ) এই একটিমাত্র হাদীস থেকেই স্পষ্টঃ যে ব্যক্তি মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে, তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস! সুনানে তিরমিযী ৪/৫৫৭; সুনানে আবু দা৪/২৯৭
(৩) ছবি তোলার বিষয়টিকে পানি পানের মতোই জায়েজ ও হালকা বানিয়ে নেওয়া
বর্তমান যুগে মারাত্মক একটা ফিতনাহ হচ্ছে ছবি এবং সেলফি, যা থেকে আমাদের বেঁচে থাকা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আধুনিক যুগের প্রায় সমস্ত আলেমরাই বিনা প্রয়োজনে ছবি তোলাকে হারাম বলে বিশ্বাস করেন। এমন কিছু আলেমের নামঃ শায়খ বিন বাজ, শায়খ আলবানী, আব্দুল্লাহ ইবনে ক্বাউদ, আব্দুল্লাহ ইবনে গুদায়্যান, আব্দুল রাজ্জাক্ব আফিফী, আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি রহম করুন এবং জীবিতদের মাঝে রয়েছেন শায়খ আব্দুল আজিজ আহলে শায়খ, শায়খ ফাউজান, শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ, শায়খ রাবী আল-মাদখালী, শায়খ সালেহ আস-শুহাইমি, এমন আরো অসংখ্য আলেমগণ। অনেকে ফতোয়া আরকানুল ইসলাম এর একটি ফতোয়া থেকে মনে করেনঃ শায়খ ইবনে উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ ছবি তোলাকে জায়েজ বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন। অথচ সেই ফতোয়াতে শায়খ যা বলেছিলেন, তারপরেও স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছিলেন, স্মৃতি সংরক্ষণের জন্যে ছবি তোলা জায়েজ নয়। যাই হোক, পরবর্তীতে শায়খ ইবনে উসায়মিন তাঁর নিজস্ব ইজতেহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করে শায়খ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহর ইজতেহাদের দিকে ফিরে আসেন। শায়খের নিজের মুখ থেকেই শুনুন
https://www.youtube.com/watch?v=y1efgfq4FE0&app=desktop

অথচ এই সমস্ত প্রকৃত মুজতাহিদ, আলেমদের ফতোয়াকে পাশ কাটিয়ে অনেক বক্তা ও আলেম নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাই মানুষের মাঝে বেশি প্রচার করছেন এবং নিজেরাও ব্যপকভাবে ছবি তোলার সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। উদাহরণ স্বরূপ, ড. জাকির নায়েক স্বয়ং নিজের ছবিকে এতো বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে থাকেন যে, বর্তমানে তাঁর ভক্তরা ড. জাকির নায়েক এর ছবি বা সেলফি ছাড়া ক্বুরানের একটা আয়াতও প্রচার করতে পারছেন না। প্রতিদিন সকাল বিকাল ড. জাকির নায়েক এর একটা ছবি পোস্ট না করে মনে হয় মানুষের ঈমান ধরে রাখা যাচ্ছেনা। কিছুদিন পূর্বে জনপ্রিয় লেখক আইজ আল ক্বারনী ফিলিপাইনে যখন গুলিবিদ্ধ হন, তার ঠিক পূর্বেই একজন ফিলিপিনি যুবক অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে তাঁর সাথে সেলফি তোলার জন্যে ছুটে যায়। আইজ আল ক্বারনী সেই ছেলেকে উপদেশ না দিয়ে বরং একজন সেলেব্রিটির মতোই হাসিমুখে তার সাথে সেলফি তুলেন। অথচ আমেরিকান সাইকিয়াটিক এসোসিয়েশন এর মতে সেলফি বা নিজের ছবি নিজে তুলে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে মানুষের মাঝে প্রচার করা একটা মানসিক ভারসাম্যহীন বিষয়...এমনইভাবে অনেক বক্তা এবং লিখক ছবি তোলা এবং কার্টুন অংকনের বিষয়টিকে অত্যন্ত হালকাভাবে নিচ্ছেন, এবং এর দ্বারা তাদের ভক্ত শ্রোতাদেরকেও সেইদিকে উৎসাহিত করছেন।