মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৬

সুরা মুযযাম্মিলের তেলাওয়াত ও তার সরল ভাবানুবাদ।

ক্বুরানুল কারীমের ২৯-তম পারার একটা সুরা হচ্ছে সুরা মুযযাম্মিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওতী জীবনের একবারে শুরুর দিকে নাযিল হওয়া এই সুরাটি যখন অবতীর্ণ হয়েছিলো, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটা চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে ছিলেন। আল্লাহ তাঁর এই অবস্থার চিত্র তুলে ধরে তাকে ইয়া আইয়্যুহাল মুযযাম্মিল অর্থাৎ, হে বস্ত্রাবৃত! বলে সম্বোধন করেছিলেন। অর্থাৎ, এখন চাদর ছেড়ে দাও এবং রাতে সামান্য কিয়াম কর (তাহাজ্জুদ নামাযের জন্যে জাগরণ কর)। বলা হয় যে, এই নির্দেশের ভিত্তিতেই তাহাজ্জুদের নামায পড়া নবীর জন্য ফরয ছিল। [উৎসঃ তাফসীর ইবনে কাসীর]
মসজিদুল হারামের ইমাম আব্দুল্লাহ আওয়াদ আল-জুহাইনির কন্ঠে বার বার শুনতে ইচ্ছা করে সুরা মুযযাম্মিলের এমন একটি তেলাওয়াত ও তার সরল ভাবানুবাদ।
____________________
উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম। বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহীম।
(১) হে বস্ত্রাবৃত!
(২) আপনি রাত্রিতে দন্ডায়মান হন আর কিছু অংশ বাদ দিয়ে;
(৩) অর্ধরাত্রি (তাহাজ্জুদ নামায পড়ুন) অথবা তার চাইতে কিছু কম।
(৪) অথবা তার চাইতে বেশি, আর আপনি এই কুরআন তেলাওয়াত করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে।
(৫) নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি ভারী (গুরুত্বপূর্ণ) বাণী।
(৬) নিশ্চয় ইবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রনে সহায়ক এবং ক্বুরান স্পষ্ট উচ্চারণের জন্যে অনুকূল।
(৭) নিশ্চয় দিনের সময় আপনার দীর্ঘ কর্ম ব্যস্ততা রয়েছে।
(৮) সুতরাং, আপনি আপনার পালনকর্তার নাম স্মরণ করুন, এবং একাগ্রচিত্তে আল্লাহর যিকিরে মগ্ন হোন।
(৯) তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের প্রভু। তিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। অতএব, আপনি তাঁকেই ওয়াকিল (কর্ম বিধায়ক) হিসেবে গ্রহণ করুন।
(১০) আর কাফেররা যা বলে, তাঁর জন্যে আপনি সবর করুন এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে পরিহার করে চলুন।
(১১)  ধন-সম্পদের মালিক, মিথ্যা আরোপকারীদেরকে আপনি আমার হাতে ছেড়ে দিন, এবং তাদেরকে কিছুটা সময় ছাড় দিন।
(১২) নিশ্চয় আমার কাছে আছে শিকল ও অগ্নিকুন্ড।
(১৩) গলায় কাঁটার মতো আটকে যায় এমন খাদ্য এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(১৪) যেদিন এই পৃথিবী পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ হয়ে যাবে চলমান বালুকার স্তুপের মতো।
(১৬) (হে মানুষেরা!) আমি তোমাদের কাছে একজন রাসুলকে তোমাদের জন্যে সাক্ষী হিসেবে প্রেরণ করেছি, যেমন রাসুল পাঠিয়েছিলাম ফেরাউনের কাছে।
(১৬) অতঃপর ফেরাউন সেই রাসুল, (মুসাকে) অমান্য করল, ফলে আমি তাকে কঠিন শাস্তি দিয়েছিলাম।
(১৭) সুতরাং, (হে মানুষেরা!) তোমরা যদি সেই দিনকে অস্বীকার কর, তাহলে কিভাবে সেইদিন নিজেদেরকে আত্মরক্ষা করবে, যেই দিনের (ভয়াবহতা) ছোট্ট বালকদেরকে বৃদ্ধ বানিয়ে দেবে?
(১৮) সেইদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে। তার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।
(১৯) এটা হচ্ছে উপদেশ। অতএব, যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার পথ অবলম্বন করুক।

(২০)  আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি ইবাদতের জন্যে দন্ডায়মান হন, রাত্রির প্রায় দুতৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দন্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিবা ও রাত্রি পরিমাপ করেন। তিনি জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব, তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরায়ন হয়েছেন। কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ হয়, ততটুকু তেলাওয়াত কর। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ ততটুকু তেলাওয়াত কর। তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে করজে হাসানাহ (উত্তম ঋণ) দাও। তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।