বুধবার, ১১ মে, ২০১৬

আপনার দ্বীন সম্পর্কে জানুন পর্ব -৮

(১) যেকোন সালাতের প্রথম রাকাতে দ্বিতীয় রাকাতের চাইতে বড় সুরা পড়তে হয়। যেমন প্রথম রাকাতে সুরা সুরা ফীল পড়লে দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস, সুরা আসর অথবা সুরা কাউসার, এমন ছোট সুরা পড়বেন। আর যদি কোন বড় সুরা সম্পূর্ণ না পড়ে তার কয়েকটা আয়াত তেলাওয়াত করেন, তাহলে প্রথম রাকাতে দ্বিতীয় রাকাতের চাইতে বেশি আয়াত পড়বেন। তবে ভুলে কখনো প্রথম রাকাতের চাইতে দ্বিতীয় রাকাতে বড় সুরা পড়ে ফেললে সালাত শুদ্ধ হবে। এতে শুধুমাত্র একটা মুস্তাহাব বা উত্তম আমল ছুটে গেলো, কিন্তু এর জন্যে কোন সাহু সাজদাহ দিতে হবেনা।
(২) সালাতের প্রথম রাকাতে ক্বুরানুল কারীমের আগের সুরা ও পরের রাকাতে পরের পড়তে হয় - এমন কোন নিয়ম নেই। যারা এমন নিয়মের কথা বলেন, এরপক্ষে কোন দলিল নেই। যেমন সুরা ফীল হচ্ছে ১০৫ নাম্বার সুরা, আর সুরা আসর হচ্ছে ১০৩ নাম্বার সুরা। আপনি সালাতে এই দুইটি সুরা পড়তে চাইলে প্রথম রাকাতে সুরা ফীল আর পরের রাকাতে সুরা আসর পড়বেন, কারণ সুরা ফীল সুরা আসরের চাইতে বড়।
(৩) যেকোন সালাতের যেকোন রাকাতেই সুরা বাক্বারাহর শেষ দুই আয়াত, আয়াতুল কুরসী, সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত - এইগুলো দিয়ে সালাত পড়া যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রথম রাকাতে দ্বিতীয় রাকাতের চাইতে বেশি ক্বিরাত পড়া হয়।
(৪) সুরা মুলক যদি কারো মুখস্থ থাকে তাহলে তিনি দিনে রাতে যেকোন সময়ের যেকোন সালাতের ২ রাকাত, ৪ রাকাত বা ৬ রাকাতে ভাগ করে সম্পূর্ণ সুরা তেলাওয়াত করতে পারেন। আর এর দ্বারা সুরা মুলক প্রতিদিন পড়ার যেই ফযীলত পাওয়া যাবে। বরং কারো মুখস্থ থাকলে এইভাবে প্রতিদিন পড়া উত্তম আমল হবে।
(৫) সালাতে সুরা ফাতিহা শুদ্ধভাবে না পড়লে বা ভুল পড়লে, বা একেবারেই না পড়লে সালাত হবেনা। সেইজন্যে আর যাই হোক সালাত কবুল হওয়ার জন্যে ক্বুরানের অন্তৎ সুরা ফাতিহা শুদ্ধ উচ্চারণে তেলাওয়াত করা শিক্ষা করা ফরয। অন্যে সুরা মিলানোর সময় ভুল করলে সে সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে, কিন্তু সালাত কবুল হবে।
(৬) সুরা ওয়াকিয়া পড়লে রিযিক বৃদ্ধি পায় - এই হাদীস সহীহ নয়।
(৭) সুরা ইয়াসীন পড়লে ১০বার ক্বুরান খতমের সওয়াব পাওয়া যায় বা সুরা ইয়াসীনের ফযীলত নিয়ে যতগুলো হাদিস রয়েছে, তার কোনটাই সহীহ নয়।
(৮) দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় করে নেবেন, যেমন ফযর, যোহর বা মাগরিবের পড়ে আপনি প্রতিদিন ক্বুরান তেলাওয়াত করবেন। ব্যস্ততা, অলসতা যাই থাকুক, খুব বেশি ইমার্জেন্সি নাহলে সেই সময়ের ক্বুরান তেলাওয়াত কোনমতেই যেন ছুটে না যায়। বেশী না পারলে অন্তত ৫টা-১০টা বা আরো বেশি আয়াত আপনি করবেনই...এমন যত্ন নিয়ে এই আমল করবেন ইন শা আল্লাহ। ক্বুরানের সাথে আপনার সম্পর্ক যত বেশী হবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ততবেশী সুন্দর হবে।
(৯) ফেইসবুকে একজন ইসলামী লেখকের এক লক্ষ ফলোয়ার বা ইউটিউবে একজন বক্তার হাজার হাজার ভক্ত-শ্রোতা থাকতে পারে, কিন্তু তার মানে এই না যে তারা কোন আলেম। একজন বক্তা বা লিখকের যোগ্যতা একরকম, আরেকজন সত্যিকারের আলেমের যোগ্যতা অন্যরকম, যদিও তিনি মানুষের মাঝে অপরিচিত। ইন্টারনেট, মিডিয়াতে অধিকাংশ ইসলাম প্রচারকারী আপনাকে ক্বুরান ও হাদীস শিখানোর নাম করে পথভ্রষ্টতা, মূর্খতা ও প্রবৃত্তির অনুসরণের দিকে দাওয়াত দিবে, যা আপনি টেরও পাবেন না। আমি একটা সময়োপযোগী উদাহরণ দিচ্ছি। আজ সকালে ড. আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন, আর অনেকেই তাঁর মৃতদেহের ছবি প্রচার করছে। এটা তারা তাঁকে ভালোবেসেই করছে, কিন্তু এই কাজটা অনুচিত। প্রথম কথা হচ্ছেঃ অত্যাবশ্যকীয় কারণ ছাড়া প্রাণীর ছবি তোলা ঠিক নয়। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছেঃ একজন মানুষ মৃত্যুর পরে তাঁর এমন ছবি হয়তো প্রচার করা হচ্ছে যা তাঁর প্রাইভেসীকে নষ্ট করছে, বেঁচে থাকলে তিনি হয়তো সেই ছবি প্রচারের অনুমোদন দিতেন না, বা তার পরিবারের লোকদেরকে কষ্ট দিবে। তৃতীয়তঃ অনেক সময় কিছু বোকা ইসলাম প্রচারকারী মৃত ব্যক্তির ছবি জীবিত অবস্থার হারাম ছবি প্রচার করে। যেমন তনু হত্যার পরে আজ পর্যন্ত তনু হত্যার বিচার চাই নামে কিছু মানুষ মেয়েটির বেপর্দা ছবি প্রচার করছে, যা হারাম ও ঘৃণিত কাজ। অথচ তাঁদের অনেকেই দ্বীন প্রচারক! চতুর্থতঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দুর্ঘটনায় নিহত, কাফেরদের আক্রমনে বা খুনের নির্মম ও হৃদয় বিদারক দৃশ্য প্রচার করা একটা সামাজিক অপরাধ, যা অনেক আবেগী মুসলমানেরা দ্বীন প্রচারের নামে করে থাকে। এইভাবে আসলে মুসলমানদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়, এবং এধরণের ছবিগুলো কোমন মনে নারী ও শিশু এবং সংবেদশীল মনের অনেককেই পেরেশানির মাঝে ফেলে। এইভাবে একশ্রেনীর অল্প-শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত দ্বাইয়ী দ্বীন প্রচারের নামে মানুষকে কষ্ট দেয়, মানুষের মাঝে হতাশা ও দুঃখ প্রচার করে, তাদের টার্গেট হচ্ছে লাইক, শেয়ার বাড়ানো, শ্রোতাদের আকর্ষণ করা, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা নয়। সেইজন্যে আমি দ্বীনি ভাই ও বোনদেরকে উপদেশ দিবো, ফেইসবুক ইন্টারনেটের চাইতে আপনারা সরাসরি সত্যিকারের আলেমদের অডিও/ভিডিওতে কথা শুনে, অথবা তাঁদের বই পড়ে দ্বীন শিখবেন, দ্বীনের কথা শুনবেন। আর অপরিচিত, জাহিল, সেলেব্রিটি ও বক্তাদের, যাদেরকে মানুষ আলেম মনে করে, কিন্তু মূলত তারা জাহিল, এদের কথা শুনবেন না, তাদের কথার দিকে মনোযোগ দেবেন না।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথের উপরেই রাখুন, আমিন।