বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬

দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ

দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ
বর্তমানে টেলিভিশন, ইউটিউব, ফেইসবুক কিংবা ইন্টারেন্টে এমন অনেক জনপ্রিয় বক্তা বা লিখক আছে, যাদেরকে মানুষ বড় আলেম বা দ্বাইয়ী মনে করে, কিন্তু তারা সালফে সালেহীন (সাহাবীদের) আক্বীদাহ (ধর্মীয় বিশ্বাস) ও মানহাজে (কর্ম পদ্ধিত বা চলার নীতিতে) বিশ্বাসী নয়। কিন্তু তারা সেটা প্রকাশ করেনা বা তাদের আক্বিদাহ কি, তা কখনো স্পষ্ট করে বলেনা। অনেক সময় তারা মনভোলানো যুক্তি ও কথার দ্বারা আহলে সুন্নাহর বিরোধীতা করে এবং কৌশলে তার ভক্ত-শ্রোতাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। এমন ব্যক্তি যারা মূলত বিদআতের অনুসারী, কিন্তু মানুষের কাছে নিজেদের বিদআতকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে, তাদের চেনার সহজ উপায় হচ্ছেঃ সে কার সাথে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রাখে, সে কোন ব্যক্তিদের সাথে উঠা-বসা করে, কার প্রশংসা করে, সেইদিকে লক্ষ্য করা। কারণ, একজন মানুষ সাধারণত তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়ে থাকে।
(১) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একজন মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়ে থাকে। সুতরাং সে যেনো লক্ষ্য রাখে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে। তিরমিজিঃ ২৩৭৮, হাদীসটি হাসান সহীহ, শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ।
(২) এজন্যেই ইমাম আল-আউযায়ী (মৃত্যু-১৫৮ হিজরী) রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের কাছে তার বিদআতকে লুকিয়ে রাখে, সে কখনো আমাদের কাছে তার সংগীদেরকে লুকিয়ে রাখতে পারবেনা। আল-ইবানাহঃ ২/৪৭৬।
অনেকে ইসলামী বক্তা ও লেখক প্রকাশ্য বিদআতি ব্যক্তি বা দলগুলোকে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে সমর্থন করার চেষ্টা করে। এমন ব্যক্তিদের ব্যপারেও আমাদের আলেমরা সতর্ক করেছেন।
(৩) ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি বিদআতিদের প্রতি সু-ধারনা রাখে এবং এই দাবি করে যে, তাদের অবস্থা অজ্ঞাত, তাহলে তাকে তাদের (বিদআতিদের) অবস্থা সম্বন্ধে অবহিত করতে হবে। সুতরাং, সে যদি বিদাতীদের ব্যপারে বিরোধী মনোভাবাপন্ন না হয়, এবং তাদের প্রতি প্রতিবাদমূলক মনোভাব প্রকাশ না করে, তাহলে তাকেও বিদআতিদেরই মতাবলম্বী ও দলভুক্ত বলে জানতে হবে। মাজমুয়া ফাতাওয়াঃ ২/১৩৩। 
(৪) শায়খ সালিহ আল-লুহাইধান হাফিজাহুল্লাহ কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো,
প্রশ্নকর্তাঃ এক ব্যক্তি আহলে সুন্নাহ এবং আহলে বিদআহ সবার সাথেই বসে এবং বলে, এখন উম্মতের মাঝে অনেক বিভক্তি হয়েছে, তাই আমি সবার সাথেই বসি। এমন দ্বাইয়ীদের ব্যপারে কি বলা হবে?
উত্তরে শায়খ বলেনঃ সে একজন বিদআতি। উম্মতের ঐক্যের স্বার্থে হক্ক (আহলে সুন্নাহ) ও বাতিল (আহলে বিদআহ, যেমন শীয়া, সূফী, খারেজী ইত্যাদি দলের মাঝে) কোন পার্থক্য না করা, এটা একটি বিদআত। আমরা তার হেদায়েতের জন্য দুয়া করি।
বিঃদ্রঃ আমার এই লেখায় নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা দলের নাম উল্লেখ করা হলোনা। কারণ, তা অনেক সময় মানুষের জন্যে ফিতনাহ হয়ে দাঁড়ায়। কোন ব্যক্তি বা দলের প্রতি আবেগ বা ভালোবাসার কারণে অনেকে লেখার মূল উদ্দেশ্য নিয়ে ভুল বুঝেন। আমাদের উদ্দেশ্য মানুষের মাঝে ইলম তুলে ধরা, গ্রহণ করা বা না করা সেটা সবার নিজ নিজ ব্যক্তিগত ব্যপার।
(৫) সর্বশেষ, প্রখ্যাত তাবেয়ী বিদ্বান, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রহিমাহুল্লাহ এর মূল্যবান একটা উপদেশ দিয়ে এখানেই শেষ করছি। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই এই ইলম , এটাই হচ্ছে তোমার দ্বীন। সুতরাং, তোমরা কার নিকট থেকে ইলম অর্জন করছো, তার সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিও। সহীহ মুসলিম, মুকাদ্দিমা।