বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬

বিদায় হজ্জের ভাষণ

বিদায় হজ্জের ভাষণ
নবম হিজরীতে হজ্জ ফরয হয়। আর তাবুকের যুদ্ধ সংঘটিত হয় দশম হিজরীতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জ আদায় করলেন একলক্ষ চৌচল্লিশ হাজার মুসলমান তাঁর সঙ্গে হজ্জ আদায় করেন। এটিই ছিল হাজ্জাতুল ওয়াদা বা বিদায় হজ্জ ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ সংকলিত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রিয় সাথী, হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক সেই ভাষণের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হল
শুক্রবার, ৯-ই জিলহজ, দশম হিজরী সনে আরাফার দিন দুপুরের পর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক লক্ষের অধিক সাহাবীর সমাবেশে হজের সময় এই বিখ্যাত ভাষণ দেন হামদ ও সানা (আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগানের) পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ভাষণে ইরশাদ করেনঃ
আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন আর তিনি একাই বাতিল শক্তিগুলোকে পরাজিত করেছেন
হে আল্লাহর বান্দারা! আমি তোমাদের আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর বন্দেগীর জন্যে ওয়াসিয়ত করছি (উপদেশ দিচ্ছি) এবং এর নির্দেশ দিচ্ছি। হে লোক সকল! তোমরা আমার কথা শোন এরপর এই স্থানে তোমাদের সাথে আর একত্রিত হতে পারব কি না জানি নাহে লোক সকল! আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, হে মানবজাতি! তোমাদের আমি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি, যাতে করে তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পারো তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিকতর সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী, যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অবলম্বন করে) (অর্থাৎ, সব বিষয়ে আল্লাহর কথা অধিক খেয়াল রাখে)
ইসলামে জাতি, শ্রেণীভেদ ও বর্ণবৈষম্য নেই আরবের ওপর কোনো আজম (অনারবে), বা কোন আজমের ওপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই তেমনি সাদার ওপর কালোর বা, কালোর ওপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই মর্যাদার ভিত্তি হলো কেবলমাত্র তাকওয়া 
আল্লাহর ঘরের হিফাযত, সংরক্ষণ ও হাজীদের পানি পান করানোর ব্যবস্থা আগের মতো এখনো বহাল থাকবে হে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকরা! তোমরা দুনিয়ার বোঝা নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে যেন আল্লাহর সামনে হাযির না হও আমি আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমাদের কোনোই উপকার করতে পারব না
যে ব্যক্তি নিজের পিতার স্থলে অপরকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, নিজের মাওলা বা অভিভাবককে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে মাওলা বা অভিভাবক বলে পরিচয় দেয় তার ওপর আল্লাহর লানত 
ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে প্রত্যেক আমানত তার হকদারের কাছে অবশ্যই আদায় করে দিতে হবে কারো সম্পত্তি সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয়, তবে তা অপর কারো জন্য হালাল নয় সুতরাং তোমরা একজন অপরজনের ওপর জুলুম করবে না এমনিভাবে কোনো স্ত্রীর জন্য তার স্বামী সম্পত্তির কোনো কিছু তার সম্মতি ব্যক্তিরেকে কাউকে দেয়া হালাল নয়
যদি কোনো নাক-কান কাটা হাবশি দাসকেও তোমাদের আমীর (নেতা) বানিয়ে দেয়া হয়, তবে সে যতদিন আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবে, ততদিন অবশ্যই তার কথা মানবে, তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবে
শোনো, তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথারীতি আদায় করবে, রমজানের রোজা পালন করবে, স্বেচ্ছায় ও খুশি মনে তোমাদের সম্পদের জাকাত দেবে, তোমাদের রবের ঘর বায়তুল্লাহর হজ্জ করবে আর আমির বা আনুগত্য করবে, তা হলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে
হে লোক সকল! আমার পর আর কোনো নবী নেই, আর তোমাদের পর কোনো উম্মতও নেই আমি তোমাদের কাছে দুইটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যতদিন তোমরা এ দুটোকে আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। সে দুটো হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুলের সুন্নাত
তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকবে। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা দ্বীনের ব্যাপারে এই বাড়াবাড়ির কারণে ধ্বংস হয়েছিলা এই (আরব) ভূমিতে আবার শয়তানের পূজা করা হবে, এ বিষয়ে শয়তান হতাশ হয়ে গেছে কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমরা শয়তানে অনুসরণ করা শুরু করবে, আর এতেই সে সন্তুষ্ট হবে সুতরাং, তোমাদের দ্বীনের বিষয়ে তোমরা শয়তান থেকে সাবধান থেকো
শোনো, আজকে তোমরা যারা উপস্থিত আছো, যারা উপস্থিত নেই তাদের কাছে আমার এই বাণী পৌঁছে দিয়ো অনেক সময় দেখা যায়, যার কাছ পৌঁছানো হয়, সে পৌঁছানেওয়ালা ব্যক্তির তুলনায় অধিক সংরক্ষণকারী হয়
যখন আমার ব্যপারে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তখন তোমরা কী বলবে? সমবেত সবাই একই সাথে উত্তর দিলেনঃ আমরা সাক্ষ্য দিব যে, নিশ্চয়ই আপনি আপনার ওপর অর্পিত আমানত আদায় করেছেন, রিসালতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন এবং সবাইকে নসিহত করেছেন
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আকাশের দিকে তাঁর পবিত্র শাহাদাত আংগুল তুলে আবার নিচে মানুষের দিকে নামালেন আর বললেন, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো। হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো

আল্লাহুম্মা সোয়াল্লি ওয়া সাল্লিম আলা নাবিয়্যিমা মুহাম্মদ।