মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০১৫

২৭শে রমযানের রাত্রি এবং লায়লাতুল ক্বদর

২৭শে রমযানের রাত্রি এবং লায়লাতুল ক্বদর
- আনসারুস সুন্নাহ
_____________________________
বিসমিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআদ। হিজরী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজকে সন্ধ্যার পর থেকে ২৭শে রমযান শুরু হলো। আজকে রমযান মাসের শেষ দশদিনের পাঁচটি বেজোড় রাত্রের একটি। সুতরাং আজকে বরকতপূর্ণ ও শান্তির লায়লাতুল ক্বদর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কিছু সহীহ হাদীস, কিছু সাহাবা একরাম এবং একদল ওলামাদের মতে ২৭শে রমযানের রাত্রিতেই হচ্ছে লায়লাতুল ক্বদর।
_____________________________
হাদীসের ভাষ্যঃ
উম্মুল মুমিনিন আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা শেষ দশকে লায়লাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করো। তোমাদের মাঝে কেউ যদি দুর্বল বা অপারগ হয়ে পড়ে তাহলে সে যেন শেষের সাত রাতে অলসতা না করে।
সহীহ মুসলিমঃ ১১৬৫, ইবনে খুজাইমাঃ ২১৮৩।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, কয়েকজন সাহাবী রমযানের শেষ সাত রাত্রিতে স্বপ্ন মারফত লায়লাতুল ক্বদর হতে দেখেছেন। সাহাবীদের এ স্বপ্নের কথা জানতে পেরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আমি দেখছি তোমাদের স্বপ্নগুলো মিলে যাচ্ছে শেষ সাত রাত্রিতে। অতঃএব কেউ চাইলে শেষ সাত রাত্রিতে লায়লাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করতে পারে।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
_____________________________
সাহাবীদের মতামতঃ
কোন কোন সালাফে-সালেহীন সাতাইশে রাত লায়লাতুল ক্বদর হওয়ার অধিক সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেছেন। সাহাবীগণের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুআবিয়া (রাঃ), উবাই ইবনে কাব (রাঃ) এর মতামত থেকে এটাই বুঝা যায়।
_____________________________
লাইলাতুল ক্বদরের রাতটি চেনার কিছু আলামত সহিহ হাদিসে পাওয়া যায়।
১. রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।
২. নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না।
৩. মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।
৪. সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।
৫. কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন।
৬. ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
৭. সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত।
[সহীহ ইবনু খুযাইমাহঃ ২১৯০, সহীহ বুখারীঃ ২০২১, সহীহ মুসলিমঃ ৭৬২]
_____________________________
লায়লাতুল ক্বদরের বিশেষ দুয়াঃ
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লায়লাতুল ক্বদর তাহলে তখন কোন দুয়া পড়বো? তিনি তখনব বললেন, তুমি বলঃ

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন তুহিব্বুল্-আফওয়া ফাফু আন্নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মহানুভব ও অত্যন্ত ক্ষমাশীল। আর আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।
সুনানে তিরমিযী, অনুচ্ছেদঃ কোন দুয়াটি শ্রেষ্ঠ। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসটি হাসান, সহীহ।
_____________________________
লায়লাতুল ক্বদর উপলক্ষ্যে যেই ইবাদতগুলো করা যায়ঃ
১. নামায ২ রাকাত ২ রাকাত করে নফল নামায পড়বেন, যতটুকু সম্ভব। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ক্বদর বা সুরা ইখলাস এতো এতোবার করে পড়তে হবে এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। অন্য যেকোনো নফল নামাযের মতোই ২ রাকাত+২ রাকাত করে নফল নামায পড়বেন। যার যত রাকাত ভালো লাগে এবং যার যতটুকু সাধ্যে কুলায়।

নিচের আমলগুলো ঋতুবতী নারীসহ সকলেই করতে পারবেনঃ
২. কুরআন তেলাওয়াত। স্পর্শ না করে ঋতুবতী নারীরাও কুরআন পড়তে পড়তে পারবে, আলেমদের এই মতটাই সঠিক। ইন শা আল্লাহ এটা নিয়ে পরে পোস্ট দেওয়া হবে। তবে সন্দেহের কারণে কেউ ক্বুরান তেলাওয়াত করতে না করতে চাইলে যেই সমস্ত আলেম হারাম মনে করেন সেটার সাথে একমত হলে, এডমিনের সাথে ঝগড়া করার কিছু নেই। কারণ এই বিষয় নিয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত আছে।

৩. তোওবা ও ইস্তেগফার করা সারা জীবনের সমস্ত গুনাহর জন্য কান্নাকাটি করে তোওবা করা ও মাফ চাওয়া। বাংলা বা আরবী যেকোনো ভাষায়, অতীতের ভুলের জন্য লজ্জিত হয়ে আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে সেই পাপের পুনরাবৃত্তি আর না করার জন্য দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। আরবীতে করতে চাইলে - আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি, এতোটুকু পড়ে বা ক্বুরান হাদীসে বর্ণিতে অন্য দুয়া দিয়ে তোওবা করা যাবে।

৪. দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত কল্যানের জন্য দুয়া করা। নিজের জন্য, মাতা পিতা বা ভাই বোন, অন্য যেকোন জীবিত ও মৃত মুসলমানদের জন্য দুয়া করতে হবে।

৫. জান্নাতুল ফিরদাউস পাওয়ার জন্য দুয়া করতে হবে।

৬. যিকির আযকার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ১০০বার, ৩৩ বার সুবাহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহাদাহু লা শারীকালাহু...... ১০ বার ১০০ বার করে সহ, লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। আরো দুয়া পড়ার জন্য হিসনুল মুসলিম দেখুন। মুখস্থ না পারলে পছন্দের দুয়াগুলো বই খুলে দেখে দেখেও পড়তে পারবেন। আরবীতে দুয়াগুলো না পারলে বাংলাতেই পড়ুন।

৭. দুরুদ পড়া দুরুদের ইব্রাহীম বা নামাযে যে দুরুদ পড়া হয় সেটা পড়াই সবচাইতে বেশি সওয়াব। আর দুরুদের হাজারী, লাখী, জামিল, মাহী, দুরুদে আকবর এইরকম যত্তগুলো দুরুদ দেওয়া আছে ওযীফার বেদাতী কিতাবে এইসবগুলো দুরুদ হচ্ছে বানোয়াট বেদাতী দুরুর, এর ফযীলত যা দেওয়া আছে সমস্তটাই হচ্ছে ধোঁকা। এইগুলো পড়া বেদাত ও হারাম।
_____________________________