“বর্তমান
যুগে কেনো সর্বপ্রথম সঠিক #আক্বীদার দিকে দাওয়াত দিতে হবে?”
- শায়খ আব্দুর রাক্বীব মাদানী।
দ্বাইয়ী, খাফজী
দাওয়াহ সেন্টার, সউদী আরব।
____________________________
১. কারণ ইসলাম ঈমান (আক্বীদা) ও আমলের নাম। ইসলামের পন্ডিতগণ আক্বীদাকে বলেন
উসূল (মূল) আর আমলকে (ফিকহকে) বলেন ফুরূ (গৌণ)। তাই মূল বিষয়ের দাওয়াত ছেড়ে গৌণ
বিষয়ের দিকে দাওয়াত দেওয়া অজ্ঞতা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাওয়াতের বিপরীত।
২. কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম এর যুগে মক্কার মুশরিকরা আল্লাহকে বিশ্বাসী করতো, কিন্তু তা সত্ত্বেও নবী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম তাদেরকে মুসলিম বলে স্বীকার করেন নি। কিন্তু আজ বিশ্বের বহু লোক এই
কারণে নিজেকে মুসলিম দাবী করছে বা লোকেরা তাকে মুসলিম ভাবছে, কারণ তারা আল্লাহকে বিশ্বাস
করে বলে দাবী করে।
৩. কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম এর যুগে যখন কুরআন অবতীর্ণ হচ্ছিল এবং তাতে যখন আল্লাহর বিভিন্ন
গুণাবলী উল্লেখ করা হচ্ছিল (যেমনঃ ‘আল্লাহ
আরশে সমুন্নত’,
‘আল্লাহ দুই হাতে আদম আঃ কে সৃষ্টি করেছে’) তখন তাঁর সমুন্নত হওয়া ও তাঁর দুই হাত
থাকা এই ভাবে অন্যান্য গুণাবলী তারা অস্বীকার করতেন না, আর না অপব্যাখ্যা দিতেন।
কিন্তু আজকের সমাজের অনেক মুসলিমরা আল্লাহর আসমা ও সিফাতকে (নাম এবং গুণাবলীকে)
অস্বীকার করে আর অনেকে সেইগুলোর অপব্যাখ্যা দেয়।
৪. কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম এর যুগের লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে একজন মানুষ মনে করতেন
ও আল্লাহর বান্দা মনে করতেন। কিন্তু বর্তমান যুগের নামধারী মুসলিমরা নবী ও আল্লাহর
মধ্যে পার্থক্য করতে চায় না। আর অনেকে বলেঃ তিনি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নূরের তৈরি
(নাযুবিল্লাহি মিন যালিক)।
৫. কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ মনে করতেন নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মারা গেছেন কিন্তু বর্তমান
নামধারী অনেক মুসলিমরা বলেঃ তিনি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কবরে দুনিয়ার মতই জীবিত, তাকে মরা বলা হারাম এবং
বেয়াদবী!
৬. কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ নবীজীর মৃত্যুর পর তাঁর কবরের কাছে এসে কেউ তাঁর কাছে
সাহায্য চাইতেন না, আর না নযরানা দিয়ে তার কাছে কিছু চাইতেন। কারণ তারা মনে করতেন
মৃত্যুর পর তিনি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম কিছু দিতে পারেন না। কিন্তু আজকাল অনেক মুসলিম মৃত নবীর কাছেও চায়,
এমনকি বর্তমান যুগের অলী নামক মৃতদের কাছেও তারা সাহায্য চায়, দুয়া প্রার্থনা করে।
৭. কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর পর তাঁর চার খলীফা সহ তার পরের যুগেও মানুষেরা নবী-রাসূল
বা ওলি-আওলিয়াদের কবরের উপর ‘মাযার’ নির্মাণ করে তা থেকে বরকত, কল্যাণ ও নাজাত পাওয়ার ‘অসীলা’ মনে করতেন না। কিন্তু এখন পৃথিবীর বহু
মুসলিমরা ‘ইসলাম’ নাম দিয়ে এমন মারাত্মক শিরক ও বিদাতে লিপ্ত।
৮. কারণ সেই যুগের মুসলিমরা একমাত্র মহান আল্লাহকেই পৃথিবীর পরিচালক, নিয়ন্ত্রক, ব্যবস্থাপক এবং এর সার্বভৌম রাজত্বের মালিক মনে করতেন। কিন্তু বর্তমান
যুগের অনেকে নামধারী মুসলমানেরা (সূফী, শিয়া এবং অন্যান্য পথভ্রষ্ট দলের লোকেরা)
গাউস, কুতুব, আবদাল ও আখিয়ার নামক
মানুষকদেরও উপরোক্ত ক্ষমতার মালিক মনে করে।
৯. কারণ সেই যুগের মানুষেরা হাদীস অস্বীকার করে এই মত পোষণ করতোন না যে, আমাদেরকে শুধুমাত্র ক্বুরআন
মানতে হবে, হাদীস নয়। কিন্তু বর্তমান যুগে এমন অনেক হচ্ছে, বিভ্রান্ত বক্তারা
হাদীস বা সুন্নাহকে কে মানতে অস্বীকার করছে, কেউ সরাসরি আবার কেউবা একটু ঘুরিয়ে।
১০. কারণ সেই যুগে বিদআ’তী
দলের আবির্ভাব ঘটেনি,
যারা দ্বীনের নামে পরিপূর্ণ ইসলামে কিছু সংযোজন করেছিল। কিন্তু বরররতমানে
যুগে সুন্নাহর অনুসারী মুসলমানদের চাইতে বিদআ’তির সংখ্যাই যেন বেশী।
১১. কারণ সেই যুগের মুসলিমরা ইসলাম মানে ইসলামের বিধান মেনে চলতে হবে
বুঝেছিল। কিন্তু বর্তমানে যুগে মুসলিম মানে আমল বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মুখে ঈমানের
দাবী করা –
এটাই যেন বুঝেছে। সাহাবারা ঈমান মানে মুখে তা বলা অন্তরে, তা স্বীকার করা ও কাজে
তা বাস্তবায়ন করা বুঝেছিল। কিন্তু আজকের যুগের বেশিরভাগ মানুষ অন্তরে আল্লাহকে
বিশ্বাস করাই ঈমান মনে করে;
অথচ নাস্তিক ছাড়া বিশ্বের সকলেই আল্লাহকে বিশ্বাস করে।
১২. কারণ সেই যুগের মুসলিমরা জানতো, আমরা কি কারণে সৃষ্টি হয়েছি এবং নবী ও রাসূলগণ
পৃথিবীতে কেন এসেছিলেন।
>>> মানুষ একমাত্র
আল্লাহর ইবাদত করার জন্যে সৃষ্ট হয়েছে, এবং সমস্ত নবী ও রাসূলগণ এসেছিলেন মূলতঃ এই
আহব্বান করার উদ্দেশ্যে যে,
“হে মানুষেরা! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত
কর, কারণ তিনি
ছাড়া সত্য আর কোনো মাবূদ বা উপাস্য নাই।” [সুরা আল-আ’রাফঃ ৫৯]
কিন্তু আজ ইসলামের অনেক বড় বড় দ্বাইয়ী প্রকাশ পেয়েছে, ইসলামের নামে অনেক বড় বড়
সংগঠন তৈরি হয়েছে, কিন্তু তারা নবী ও রাসূলগণের সেই দাওয়াতী মিশনকে বেমালুম ভুলে
গেছে। তাদের অনেকের দাওয়াতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এইভাবে নিরূপণ করেছেঃ
ক. জাল-জয়ীফ
হাদীস দিয়ে শুধু ফযীলতের দাওয়াত।
খ. দলীয়
নেতাদের নবআবিষ্কৃত মতবাদ দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের দাওয়াত।
গ. সূফীবাদীদের
পীর-মুরিদীর দাওয়াত।
ঘ. কোন একটা মাযহাবকে
অন্ধ অনুসরণ করার দাওয়াত।
ঙ. ‘আমি ছাড়া সমস্ত মুসলমানরাই কাফের’ এই ফতোয়া দিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে জিহাদের(!)
জন্যে দাওয়াত।
চ. সারা
দুনিয়াতে একই সাথে ঈদ করার দাওয়াত...ইত্যাদি।
=> যেই দ্বাইয়ীর দাওয়াতের মূলে আক্বীদাহ ও তাওহীদ নেই, যেই সংগঠনের মূল দাওয়াতে তাওহীদ
ও সঠিক আক্বীদার দাওয়াত নেই, তা
- নববী দাওয়াতী নীতি বহির্ভুত,
- মেরূদন্ডহীন পঙ্গু দাওয়াত,
- তা বৃক্ষের শিকড়ে পানি না দিয়ে লাতা-পাতায় পানি ঢালার মত দাওয়াত,
- তা পচা ঘা অপারেশন না করে তার উপরে প্রলেপ লাগিয়ে চকচক করার দাওয়াত।
(সমাপ্ত)
____________________________
আল-ইমাম,
আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“আক্বিদাহ
যদি সঠিক না হয়, তাহলে সমস্ত কথা ও কাজ বাতিল।”
ফতোয়া
ইবনে বাজঃ ১/১৩, আল-ইফতা।
____________________________
ফযীলাতুশ-শায়খ
সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ
বলেন,
“কোন
ব্যক্তি যদি বলে আমাদের জন্য ঈমানই যথেষ্ঠ, আক্বিদাহর উপর জোর দেওয়ার প্রয়োজন নেই,
এটা পরস্পর বিরোধী একটা কথা। কোন ব্যক্তির ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত
না তার আক্বিদাহ সঠিক হচ্ছে। যার আক্বিদাহ সঠিক নয় তার ঈমান নেই এবং তার দ্বীনও সঠিক
নয়।”
শায়খ
আরো বলেছেনঃ “ইসলামী দাওয়াত ও তাবলীগে তাওহীদ একটা স্থায়ী
বিষয়। একমাত্র মুনাফেক ও কাফেররাই তাওহীদের দাওয়াতকে অপ্রয়োজনীয় বা বোঝার মতো মনে করে,
আল্লাহু মুস্তাআন।”
সালাফী
মানহাজের উপর অত্যাবশ্যকীয় প্রশ্ন এবং উত্তরঃ ৩৪-৩৫ পৃষ্ঠা।
____________________________