“উলামায়ে সু বা
পথভ্রষ্ট আলেমদের ফেতনা”
- আনসারুস সুন্নাহ
___________________________________
ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“আহলুল বিদআ’হ
(বেদাতীরা) হচ্ছে ‘স্করপিয়ন’ বা
কাঁকড়াবিছার মতো। তারা তাদের মাথা বালুর নিচে লুকিয়ে রাখে আর তাদের লেজকে উপরে
তুলে রাখে। যখন তারা শক্তি ও সুযোগ পায় তখন সেই লেজ দিয়ে শিকারের গায়ে হুল ফুটায়।”
‘আহলুল বিদআহ’ (বিদআ’তী) ও ‘আহলুল
হাওয়া’ (মনপূজারী)
লোকদের কমন একটা স্ট্র্যাটেজি হচ্ছেঃ শুরুতে তাদের “আকীদাহ” লুকিয়ে
রাখা। প্রথমেই মানুষের কাছে নিজের ‘আকীদাহও মানহাজ’ প্রকাশ
না করে কিছুদিন মনগলানো ওয়াজ-নসিহত করা। এইভাবে মিষ্টি মিষ্টি ওয়াজ করে যখন
শ্রোতাদের (আসলে অন্ধভক্তদের) মন জয় করে সংখ্যা বাড়তে থাকে, তখন
নিজেদের ‘দ্বোলালাহ’ (ভ্রষ্টতা)
ও ‘শুবুহাত’ (বিভ্রান্তি/doubt)
মানুষের মাঝে প্রচার করা শুরু করে। আর এভাবেই তারা তাদের
অন্ধভক্তদের ব্রেইন ওয়াশ করে থাকে।
___________________________________
সেই পথ ধরে আনোয়ার আল-আউলাকি, ইয়াসির
ক্বাদির মতো এমেরিকান বক্তাদের পর এবার নোমান আলী-খান আস্তে আস্তে তার খোলস ছেড়ে
বেড়িয়ে আসছে। তার একটা কথিত “তাফসীর” এর
টেপে সে দাবী করেছে, “ক্বুরানে আক্বীদাহ
শব্দটি কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। আকীদাহ নিয়ে ক্বুরানে একটা আয়াতও নেই।”
উল্লেখ্য, হামযা ইউসুফ নামক আরেকজন
সূফী বক্তা অনেকদিন পূর্বে বলেছিলো, “আকিদাহ খুব সাধারণ
একটা জিনিস যা সামান্য কয়দিনেই শেখা যায়। আকিদাহ শিক্ষা করার উপর জোর দেওয়া একটা
ব্যাধি।”
___________________________________
শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ
বলেন,
“কোন
ব্যক্তি যদি বলে আমাদের জন্য ঈমানই যথেষ্ঠ, আকিদাহর উপর জোর দেওয়ার প্রয়োজন নেই,
এটা পরস্পর বিরোধী একটা কথা। কোন ব্যক্তির ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান হবেনা যতক্ষণ
পর্যন্ত না তার আক্বিদাহ সঠিক হচ্ছে। যার আক্বিদাহ সঠিক নয় তার ঈমান নেই এবং তার দ্বীনও
সঠিক নয়।”
“সুরা ইখলাস” হচ্ছে ক্বুরানের
এক তৃতীয়াংশে সমান। এই সুরার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুরাটির বিষয়বস্তু
হচ্ছে আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক আক্বিদাহ নিয়ে। এমন ক্বুরানের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ বা
তার চাইতেও বেশি আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ মানুষকে সঠিক আক্বিদাহ শিক্ষা দেওয়া।
ঈমানের একেকটি অংশ বা component গুলোকেই বলা হচ্ছে আকিদাহ। সমস্যা
হচ্ছে আধুনিক যুগের কথিত মুফাসসি সাহেবরা এটা জানেনা, আর
তারাই একথা বলছে যে, ক্বুরানে আক্বিদাহর উপরে কোন আয়াত নেই! এমন অজ্ঞতাপূর্ণ কথার
দ্বারা তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের কাছে “সঠিক
আক্বিদা শিক্ষার দিকে দাওয়াত দেওয়ার মানহাজকে”
আন্ডারমাইন বা খাটো করা। আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন যে, আকিদাহ
শিক্ষাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবহেলা করে ভ্রান্ত আকিদাহর লোকদের সাথে এক হয়ে তাদের
জনপ্রিয়তা ও ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা/প্রভাব অর্জন করা ইখোয়ানিদের অনেক পুরোনো একটা
স্ট্র্যাটেজি।
___________________________________
এমন বক্তাদের ফেতনা সম্পর্কে রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস এবং আমাদের সালফে সালেহীনদের কিছু
অমূল্য বাণী নিচে উল্লেখ করা হলো।
___________________________________
একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, “আমি আমার উম্মাতের জন্য একটি বিষয়কে দাজ্জাল
এর থেকেও বেশী ভয় করি।”
(একজন সাহাবী বললেন), আমি
ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “হে আল্লাহর রাসুল, সেটি
কি?”
তিনি বললেন, “বিপথগামী
এবং পথভ্রষ্ট আলেম।”
মুসনাদে ইমাম আহমাদঃ ২১৬২১, তাবরানীঃ
৭৬৫৩, হাদীসটি সহীহ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ
“(ফিতনার
যুগে) কিছু লোক এমন হবে, যারা জাহান্নামের দরজার দিকে
মানুষকে দাওয়াত দিবে (অর্থাৎ তাদের দাওয়াত এমন ভ্রষ্টতাপূর্ণ হবে, যা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে); যারা তাদের ডাকে
সাড়া দিবে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে”।
সহীহ বুখারীঃ হাদীস নং-৩৩৩৬, ৬৬৭৯।
___________________________________
ইসলামী ইতিহাসে অবিস্বরণীয় আলেম, শায়খুল
ইসলাম, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“দুনিয়াকে সবচেয়ে
বেশি ধ্বংস করেছে আধা বক্তা, আধা ফকীহ, আধা
ডাক্তার এবং আধা ভাষাবিদ। এদের একজন (আধা বক্তা) দ্বীনকে ধ্বংস করে, অপরজন (আধা ফকীহ) দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে। আধা ডাক্তার মানুষের শরীরকে
নিঃশেষ করে। আর আধা ভাষাবিদ ভাষাকে বিনষ্ট করে।”
[মাজমাউল ফাতাওয়াঃ খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-১১৮]
___________________________________
শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ
বলেন,
“বর্তমান যুগে অন্য
অনেক ফেতনার সাথে এই উম্মত সবচাইতে বড় যে ফেতনার সম্মুখীন সেটা হচ্ছে, এমন
অনেক দ্বাইয়ী আছে যারা ইলম ছাড়াই অজ্ঞতাবশত মানুষকে গোমরাহী ও বাতিলের দিকে দিকে
দাওয়াত দিচ্ছে।”
___________________________________
বিগত শতাব্দীর একজন প্রকৃত ফকীহ ও
আলেমে দ্বীন, যাকে “যুগের ইমাম শাফেয়ী” মনে
করা হয়, শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহর
একটি কথা গভীর ভাবে চিন্তা করার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ করছি।
“অনেক মানুষকে জ্ঞান
দেয়া হয়েছে, কিন্তু অর্জিত সেই জ্ঞান অনুধাবন করার মতো ক্ষমতা তাদেরকে
দেওয়া হয়নি। না বুঝে শুধু ক্বুরআন মাজীদ ও হাদীস মুখস্থ করাই যথেষ্ট নয়। বরং
অবশ্য-ই আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসের
মর্মার্থ আপনাকে বুঝতে হবে। ঐ লোকদের দ্বারা কতইনা ত্রুটি-বিচ্যুতি সংঘটিত হয়েছে,
যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
হাদীসের বাণীর মর্ম না বুঝেই দলীল পেশ করছে, যার ফলে তাদের
অনুসারীদের মাঝে অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়েছে।”
শায়খ মুহা’ম্মাদ বিন
সালিহ আল-উসাইমীন রহিমাহুল্লাহ্।
___________________________________