কিতাবুত তাওহীদ
- শায়খুল ইসলাম, ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহহাব (রহঃ)
___________________________________
৫৯তম অধ্যায়ঃ
আল্লাহ সম্পর্কে অন্তরে খারাপ ধারণা
রাখার মুনাফেকী থেকে সতর্ক থাকুন।
___________________________________
১. আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,
يَظُنُّونَ بِاللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ ظَنَّ الْجَاهِلِيَّةِ يَقُولُونَ
هَلْ لَنَا مِنَ الْأَمْرِ مِنْ شَيْءٍ قُلْ إِنَّ الْأَمْرَ كُلَّهُ لِلَّهِ (آل
عمران:
১৫৪)
“তারা জাহেলী যুগের
ধারণার মত আল্লাহ সম্পর্কে অবাস্তব ধারণা পোষণ করে। তারা বলে, ‘আমাদের
জন্য কি কিছু করণীয় আছে? [হে রাসূল ] আপনি বলে দিন, ‘সব বিষয়ই
আল্লাহর ইখতিয়ারভূক্ত।” [আল-ইমরান . ১৫৪]
২. আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন,
الظَّانِّينَ بِاللَّهِ ظَنَّ السَّوْءِ عَلَيْهِمْ دَائِرَةُ السَّوْءِ
(الفتح:
৬)
“তারা [মুনাফিকরা]
আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে, তারা নিজেরাই খারাপ ও দোষের
আবর্তে নিপতিত।” (আল-ফাতাহ . ৬]
___________________________________
প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনুল
কাইয়্যিম বলেছেন, ظن
এর ব্যাখ্যা এটাই করা হয়েছে যে, মুনাফিকদের ধারণা হচ্ছে আল্লাহ তাআলা
তাঁর রাসূলকে সাহায্য করেন না। তাঁর বিষয়টি অচিরেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। ব্যাখ্যায় আরো
বলা হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল¬াম এর উপর
যে সব বিপদাপদ এসেছে তা আদৌ আল্লাহর ফয়সালা, তাকদীর এবং হিকমত মোতাবেক
হয়নি।
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আরও বলা
হয়েছে যে,
মানুফিকরা আল্লাহর হিকমত, তাকদীর, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণাঙ্গ রিসালত এবং সকল দ্বীনের
উপর আল্লাহর দীন তথা ইসলামের বিজয়কে অস্বীকার করেছে। আর এটাই হচ্ছে সেই খারাপ
ধারণা যা সূরা ‘ফাতহে’ উলে¬খিত
মুনাফিক ও মুশরিকরা পোষণ করতো। এ ধারণা খারাপ হওয়ার কারণ এটাই যে, আল্লাহ
তাআলার সুমহান মর্যাদার জন্য ইহা শোভনীয় ছিল না। তাঁর হিকমত প্রশংসা এবং সত্য
ওয়াদার জন্যও উক্ত ধারণা ছিল বেমানান, অসৌজন্যমুলক।
যে ব্যক্তি মনে করে যে, আল্লাহ
তাআলা বাতিলকে হকের উপর এতটুকু বিজয় দান করেন, যাতে হক
অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে, অথবা যে ব্যক্তি আল্লাহর ফয়সালা,
তাকদীরের নিয়মকে অস্বীকার করে, অথবা তাকদীর যে
আল্লাহর হক মহা কৌশল এবং প্রশংসার দাবীদার এ কথা অস্বীকার করে, সাথে সাথে এ দাবীও করে যে, এসব আল্লাহ তাআলার নিছক
অর্থহীন ইচ্ছামাত্র; তার এ ধারণা কাফেরদের ধারণা বৈ কিছু নয়।
তাই জাহান্নামের কঠিন শাস্তি এ সব কাফেরদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।
অধিকাংশ লোকই নিজেদের [সাথে সংশিষ্ট]
বিষয়ে এবং অন্যান্য লোকদের বেলায় আল্লাহ তাআলার ফয়সালার ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ
করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা তাঁর আসমা ও সিফাত [নাম ও গুণাবলী] এবং তাঁর হিকমত ও
প্রশংসা সম্পর্কে অবগত রয়েছে, কেবলমাত্র সেই আল্লাহর প্রতি এ খারাপ
ধারণা থেকে মুক্ত থাকতে পারে।
যে ব্যক্তি প্রজ্ঞা সম্পন্ন, বুদ্ধিমান
এবং নিজের জন্য কল্যাণকামী, তার উচিৎ এ আলোচনা দ্বারা
বিষয়টির অপরিসীম গুরুত্ব অনুধাবন করা। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি স্বীয় রব সম্পর্কে
খারাপ ধারণা করে, তার উচিৎ নিজ বদ-ধারণার জন্য আল্লাহর নিকট
তওবা করা।
আল্লাহর প্রতি খারাপ ধারণা পোষণকারী
কোন ব্যক্তিকে যদি তুমি পরীক্ষা করো, তাহলে দেখতে পাবে তার মধ্যে
রয়েছে তাকদীরের প্রতি হিংসাত্মক বিরোধীতা এবং দোষারোপ করার মানসিকতা। তারা বলে,
বিষয়টি এমন হওয়া উচিৎ ছিলো। এ ব্যাপারে কেউ বেশী, কেউ কম বলে থাকে তুমি তোমার নিজেকে পরীক্ষা করে দেখো, তুমি কি এ খারাপ ধারণা থেকে মুক্ত?
_________________________________
কবির ভাষায়...
মুক্ত যদি থাকো তুমি এ খারাবী থেকে,
বেঁচে গেলে তুমি এক মহা বিপদ থেকে।
আর যদি নাহি পারো ত্যাগিতে এ রীতি,
বাঁচার তরে তোমার লাগি নাইকো কোন
গতি।
_________________________________
এধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা
যায় .
১. সূরা আল- ইমরানের ১৫৪ নং আয়াতের
তাফসীর।
২. সূরা “ফাতাহ” এর
৬ নং আয়াতের তাফসীর।
৩. আলোচিত বিষয়ের প্রকার সীমাবদ্ধ
নয়।
৪. যে ব্যক্তি আল্লাহর আসমা ও সিফাত, [নাম
ও গুণাবলী] এবং নিজের জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত রয়েছে, কেবলমাত্র
সেই আল্লাহর প্রতি কু-ধারণা পোষণ করা থেকে বাঁচতে পারে।