প্রসংগঃ
“মুনাজারা” বা বিতর্ক সভা।
_____________________________
আজকাল
‘আহলে হাদীস’ এবং ‘হানাফী’ সম্প্রদায়ের তরুণ ভাইদের মাঝে ‘মুনাজারা’ বা বিতর্ক সভার দিকে ঝোঁক লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আহলে হাদীস সম্প্রদায় কর্তৃক সমালোচিত হয়ে হানাফীরা মুনাজারার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে।
আহলে হাদীস দ্বাইয়ীরা বিতর্ক এড়ানোর কৌশল অবলম্বন করায় হানাফীরা তাদেরকে এনিয়ে নানারকম
কটুক্তি এবং বাজে মন্তব্য করছে। এরই রেশ ধরে আহলে হাদীসদের তরুণ ভাইয়েরা অপমানিত বোধ
করে তাদের দ্বাইয়ীদেরকে দোষারোপ করা শুরু করেছে, কেনো তারা হানাফীদের সাথে (মুনাজারাতে)
বসেন না? অথচ এটা সালফে সালেহীনদের ‘মানহাজ’ বা কর্মপদ্ধতির সম্পূর্ণ বিপরীত। এধরণের ‘বিতর্ক সভায়’ কোন ফায়দা নেই, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, কলহ
এবং কোন এক দলের হক্ক্ব থকে দূরত্ব বৃদ্ধি ছাড়া। এইভাবে মুসলমানেরা প্রতিটি বিষয়ে ক্বুরান,
সুন্নাহ, ও সালাফদের মানহাজ অনুসন্ধান না করে ছোটখাট বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত
হচ্ছে এবং নিজেদের মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে সর্বশক্তি নিয়োগ করে ‘দাওয়াতের’ জন্য ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসছে।
_____________________________
দাওয়াতী
কাজে মুখ খুললেই বিরোধীতাকারীদের ‘চ্যালেঞ্জ
ছুঁড়ে দেওয়া’ অথবা ‘আমার শায়খের সাথে বসে মুনাজারা (ডিবেট) করেন’, এই আহবান জানানো ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই না।
আমাদের দ্বীন ‘বাইয়্যিনাহ’ বা সুস্পষ্ট দলিলের উপর প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং
দ্বীন হচ্ছে নসীহাহ (উপদেশ, অন্যের কল্যান কামনা করা), মানুষকে খারাপ জিনিস থেকে সতর্ক
করা, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের নাম। মুসলমানরা নিজেদের মাঝে আপোষে ঝগড়া-বিবাদ
করে ফাসাদ সৃষ্টি করবে, এই সুযোগ এখানে রাখা হয়নি। মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
“তোমরা
নিজেদের মাঝে ঝগড়া ও মতবিরোধ করোনা, তাহলে তোমাদের শক্তি চলে যাবে এবং তোমরা দুর্বল
হয়ে যাবে।” [আনফালঃ ৪৬]
_____________________________
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আমি
সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি ঘরের জন্য জিম্মাদার, যে ব্যক্তি বিতর্ক পরিহার করেছে,
যদিও সে হক্ব পথেই ছিলো।”
[আবু দাউদঃ ৫/১৫০, সহীহ আল-জামিঃ ১৪৬৪]
_____________________________
আমাদের
সালফে সালেহীনরা ‘আহলে
সুন্নাহর মানহাজ’ হিসেবে
বিতর্ক পরিহার করার বিষয়টি তাদের আকিদাহর কিতাবগুলোতে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন।
ইমাম
আবু জাফর আত-তাহাবী (রহঃ) বলেন,
“আমরা
আল্লাহর সত্ত্বা (জাত) সম্পর্কে অন্যায় গবেষণায় প্রবৃত্ত হই না এবং তাঁর দ্বীন সম্পর্কে
বিতর্কে লিপ্ত হই না।”
[আক্বীদাহ আত-তাহাভীয়া]
_____________________________
আমরা
মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিবো, ওয়াজ-নসীহাত করবো, সৎকাজের আদেশ অথবা অসৎ কাজের
নিষেধ করবো, কোন ব্যক্তি, দল বা সম্প্রদায়ের সমালোচনা বা তাদের ব্যপারে মানুষকে সতর্ক
করবো সুস্পষ্ট দলিল প্রমান এবং ইনসাফের ভিত্তিতে। এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে হেদায়েত করবেন,
যাকে ইচ্ছা গোমরাহী এবং প্রবৃত্তির অনুসরণের মাঝেই ছেড়ে দিবেন। কিন্তু সুস্পষ্ট প্রমান
আসার পরেও যারা বাতিলকেই আঁকড়ে ধরে থাকবেন, তাদেরকে জোর করে হেদায়েত করার জন্যে আমরা
তাদের সাথে মুনাজারা বা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হবোনা।
যেমনটা
আল্লাহ তাআ’লা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে আদেশ করেছেন, “(হে নবী!) আপনি বলুন, এটাই আমার পথ। আমি এবং
যারা আমার অনুসরণ করে আমরা মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত(*) দেই পূর্ণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার
সাথে।” [সুরা ইউসুফঃ ১০৮]
(*)
আল্লাহ দাওয়াত দিতে বলেছেন, মুনাজারা করতে বলেন নি।
_____________________________
সর্বশেষ,
বাংলা ভাষাভাষী অনেক আহলে হাদীস ওলামাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমিও কিছুদিন পূর্বে লুতফুর
ফারাজী নামক একজন গালিবাজ ও বোকা দেওবন্দীর সাথে শায়খ আকরামুজ্জান বিন আব্দুস সালাম
এবং মুরাদ বিন আমজাদের মুনাজারাতে লিপ্ত হওয়ার বিরোধী।
প্রথম
কথা হচ্ছেঃ এ ধরণের মুনাজারা সালফে সালেহীনদের মানহাজের বিপরীত। ইমাম মালেক রহঃ বলেছেন,
“(যেই আকীদাহ এবং মানহাজ) এই উম্মতের প্রথম দিকের
লোকদের ইসলাহ বা সংশোধন করেছে, তা এই উম্মতের পরবর্তী লোকদের ইসলাহর জন্যেও যথেষ্ঠ
হবে।”
সুতরাং
আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করি,
i. ক্বুরান,
ii. সুন্নাহ এবং
iii. সালফে সালেহীনদের আকিদাহ এবং মানহাজ
আঁকড়ে
ধরার জন্য।
দ্বিতীয়তঃ
এ ধরণের মুখের ব্যলান্স ছড়া নিচু লোকদের সাথে তর্কে লিপ্ত হওয়া আর নিজের সম্মান খোয়ানো
একই কথা। এরা মূর্খতাসুলভ অমার্জিত ও নোংরা ভাষা ব্যবহার করে বিতর্ককে খারাপ দিকে নিয়ে
যাবে।
তৃতীয়তঃ
তর্কসভায় হার-জিত নির্ভর করে বাকপটুতা এবং উপস্থিত চতুরতার উপরে। সেইজন্যে অনেক সময়
দলিল প্রমান সহকারে বক্তব্য উপস্থাপনে দক্ষতা না থাকলে হক্ক্ব জিনিসও শ্রোতাদের কাছে
মিথ্যা বা দুর্বল মনে হতে পারে।
চতুর্থতঃ
এর মাধ্যমে মনপূজারী লোকদের শুবুহাত (বা ডাউটগুলো) মানুষের মাঝে উন্মুক্তভাবে প্রচার
করার জন্য একটা প্লাটফর্ম পায়, যার দ্বারা হক্ক অনুসন্ধানকারী অনেক নিষ্ঠাবান শ্রোতারাও
ফেতনার শিকার হতে পারেন। আর এরজন্যে মুনাজারাতে লিপ্ত ব্যক্তিরাই দায়ী থাকবেন।
সেইজন্য
আমাদের সালফে সালেহীনরা কখনো মনপূজারী, বিদআ’তীদের সাথে মুনাজারাতে লিপ্ত হতেন না। বরং তাদের
শুবুহাতগুলোকে দলিল সহকারে খন্ডন করতেন এবং সেই ব্যপারে মানুষদেরকে সতর্ক করতেন। আমরা
যারা ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ এর অনুসরণ করার চেষ্টা করি তারা আল্লাহর দয়ায়
এই মানহাজের উপরেই চলার চেষ্টা করি, যদিওবা এই ব্যপারে লোকেরা আমাদের বিরোধীতা করে
বা এনিয়ে কটু মন্তব্য করুক, আমরা আল্লাহর জন্যে তা হাসিমুখে সহ্য করি।