বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৬

বিতির নামাযের পরে দুই রাকাত নফল নামাযের বিবরণ

বিতির নামাযের পরে দুই রাকাত নফল নামাযের বিবরণ
রাতে ঘুমানোর পূর্বে কেউ যদি বিতির নামায পড়ে নেয়, আর তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্যে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠতে পারবে কিনা ,এনিয়ে নিশ্চিত না থাকেনতাহলে বিতির নামায পড়ার পরে তাহাজ্জুদের নিয়তে দুই রাকাত নফল নামায পড়ে নিতে পারে। এর ফলে, সে যদি তাহাজ্জুদ পড়ার জন্যে ঘুম থেকে উঠতে না পারেন, তাহলে এই দুই রাকাত তার জন্যে যথেষ্ঠ হবে।
আল্লামাহ মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল দ্বারা প্রমানিত হওয়ার কারণে বিতিরের পরে দুই রাকাত নফল নামায পড়া যায়। (এ ব্যপারে শুধুমাত্র তাঁর আমলই নয়) বরং, উক্ত দুই রাকাত নামায আদায় করার জন্যে তিনি তাঁর উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন একবার সফরে থাকাকালীন অবস্থায় ইশার নামাযের পরে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, নিশ্চয়ই এই (সফরে) রাত্রি জাগরণ ভারী ও কষ্টসাধ্য। সুতরাং, তোমাদের কেউ যখন বিতির নামায পড়বে, তখন সে যেন দুই রাকাত নফল নামায পড়ে নেয়। অতঃপর, সে যদি রাতে জাগতে পারে (তাহলেতো ভালো), আর নয়তো (তাহাজ্জুদ হিসেবে) এই দুই রাকাত তার জন্যে যথেষ্ঠ হবে।  
[সহীহ ইবনে খুজাইমাঃ ১১০৬; দারেমীঃ ১৫৫৫; হাদীসটি সহীহ; সিলসিলাহ সহীহাহঃ ১৯৯৩। এছাড়াও এনিয়ে আরো দলিল রয়েছেঃ সহীহ মুসলিমঃ ৭৩৮; আবু দাউদঃ ১৩৪০; নাসাঈঃ ১৭১৮; ইবনে মাজাহঃ ১১৯১; হাদীসের সনদ সহীহ]
একটি প্রশ্নের উত্তরঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা বিতিরকে তোমাদের রাতের শেষ নামায হিসেবে নির্ধারণ করো। [সহীহ বুখারীঃ ৯৯৮; সহীহ মুসলিমঃ ৭৫১]
এখানে যেই আদেশ দেওয়া হয়েছে সেটা ঐচ্ছিক বা মুস্তাহাব হিসেবে, আবশ্যিক হিসেবে নয়। সুতরাং, কেউ যদি বিতিরকে রাতের শেষ নাময বানায় এবং এর পরে কোন ধরণের নফল নাময না পড়ে, এটা উত্তম। কিন্তু কেউ যদি চায় বিতিরের পরে অন্য নফল নামায পড়তে, এটা জায়েজ আছে। হারাম (নিষিদ্ধ) বা মাকরুহ (অপছন্দনীয়) হবেনা। এই ফতোয়া দিয়েছেনঃ
(১) ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ, দেখুন তাঁর ফতোয়ার গ্রন্থ মাজমুঃ ৩/৫১২।
() আল্লামাহ মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ, তাঁর তারাবীহ ও ইতিক্বাফ গ্রন্থের বিতির পরবর্তী দুই রাকাআত সালাত এর হাশিয়া।
নিয়তঃ বিতিরের পরে দুই রাকাত নফল নামাযের জন্যে আলাদা কোন নিয়ত বা দুয়া নেই। আমি ক্বিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ এর দুই রাকাত নফল নামায পড়ছি, মনে মনে এতটুকু নিয়ত বা চিন্তা করে নিলেই হয়ে যায়। এরপর অন্য নফল নামাযের মতো স্বাভাবিক নিয়মে দুই রাকাত নফল নামায পড়তে হবে
নামাযের ক্বিরাতঃ এই দুই রাকাতের প্রথম রাকাতে সুরা যিলযাল এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কাফিরুন পড়া মুস্তাহাব[সহীহ ইবনে খুজাইমাঃ ১১০৪, মুসনাদে আহমাদঃ ২২৩০০, সিফাতু সালাতিন নাবীঃ পৃষ্ঠা ১২৪]
অনেকে মনে করেন এই দুই রাকাত নামায বসে বসে পড়তে হয়, এটা ভুল ধারণা। বরং, অন্য যেকোন নামাযের মতোই এই দুই রাকাত দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। তবে কেউ অসুস্থ বা দুর্বল হলে ভিন্ন কথা। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ বিনা কারণে নফল নামায কেউ ইচ্ছা করলে বসে পড়তে পারেন, কিন্তু এতে তার নামাযের সওয়াব অর্ধেক পাবেন।

আল্লাহ আমাদের সকলকে এই আমল করার তোওফিক দান করুন, আমিন।