রবিবার, ৬ মার্চ, ২০১৬

সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিনের ফযীলতঃ

সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিনের ফযীলতঃ
আল্লাহর তাআলার অনেক বড় রহমত যে আজ (৬ই মার্চ, ২০১৬) আরেকটি সোমবার পর্যন্ত (ইং শাআল্লাহ) ঈমানদার, মুসলিম হিসেবে তিনি আমাদের আয়ুকে বৃদ্ধি করেছেন। অথচ, গত এক সপ্তাহে আমাদের চাইতে কত কম বয়সে, কত সুস্থ সুন্দর মানুষ এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। সেইজন্যে আসুন আমরা সকলেই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আমাদের সৃষ্টিকর্তা, আমাদের প্রাণের মালিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বলিঃ  আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসীরান ত্বাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহ!
যদিও আজকে ফযীলতপূর্ণ একটি দিন শুরু হলো, কিন্তু অনেক মুসলমান এই দিনটির শুরুতেই পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করছে। আমরা আল্লাহর কাছে তাঁর আজাব ও গজব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। বিশেষ করে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ যারা নিজেদেকে মুসলমান বলে মনে করে বা দাবী করা, T-20 বিশ্বকাপ ক্রিকেট নামক আধুনিক জুয়ার আসর দেখে বা শুনে তারা নানারকম উশৃংখলা, অবাধ্যতা ও পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে। এই খেলাগুলো দেখা, এদের উপর সন্তুষ্ট থাকা, এদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা, খেলায় কে কত রান করলো; সেটা নিয়ে গল্প করা বা তা শোনা, বাংলাদেশের পাপী এবং জাহেল খেলায়াড়দেরকে ভালোবেসে বিসিবির লোগো দেওয়া, প্রোপিক চেঞ্জ করা - এইসবগুলো কাজ আল্লাহ ঘৃণা করেন। কারণ এর দ্বারা পাপ কাজ ও পাপী লোকদের প্রতি সমর্থন ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়। সুতরাং, পরকালকে ভালোবাসেন, আল্লাহর সাক্ষাতের আশা রাখেন এমন সৎ মুসলমানদের জন্যে এটা ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) যে, তারা এই ধরণের হারাম কথা ও কাজ সম্পূর্ণভাবে বর্জন করবেন।
আরেকটা কথা বলি, আমি ফেইসবুকে এক লোককে চিনি, যে নিজের মূর্খতা ও হিংসাবশত ভারতীয় উপমহাদেশে আহলুস সুন্নাহর অনুসারী, আহলুল হাদীস জামআতের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে একটা বই লিখে মানুষের মাঝে প্রচার তাদেরকে বিভ্রান্তি করছে। অথচ গত কয়েকদিন ধরে দেখলাম, সেই লোক খেলা দেখার পক্ষে লিখালিখি করছে, এনিয়ে আলেমদের বিরুদ্ধে কথা বলছে। হক্ক কথা হচ্ছে এমন আহাম্মক লোকেরা, যাদের না আছে বিদ্যা না আছে বুদ্ধি, এরাই শিরকী ও বিদাতী দল বা মতবাদের অনুসরণ করে আর সুন্নীদেরকে গালিগালাজ করে, তাদের সাথে শত্রুতা রাখে। আর মানুষের মাঝে যারা নিয়তের দিক থেকে অসৎ, আমলের দিক থেকে পাপী, তারাই এমন নামধারী আলেমদেরকে অনুসরণ করে গোমরাহ হয়। একথার প্রমান হচ্ছে যে, সেই বাজে লেখকের খেলা দেখার পক্ষে লেখাতে দেখলাম তার শত শয় ভক্ত লাইক কমেন্ট করে তার কথার প্রতি সমর্থন করছে। যেমন বক্তা, তেমনি হচ্ছে তার শ্রোতারা! সুতরাং, আলেমের পোশাক পড়া এমন জাহিল ও নির্লজ্জ লোক, যারা মানুষকে সরল পথ থেকে বিচ্যুত করে, আপনারা এমন লোকদের কথা শুনবেন না, এদের দিকে মনোযোগ দেবেন না। এদের মতো নিন্মমানের লোকদেরকে খেলা-ধূলা বা অন্য যেকোন হারাম ও বিদাতের পক্ষে কথা বলতে দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। যাই হোক চলুন আমরা সোমবার ও বৃহস্পতিবারের ফযীলত নিয়ে সহীহ হাদীস পড়ি।
সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিনের ফযীলতঃ
(১) প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার দিন নফল রোযা রাখা সুন্নত ও মুস্তাহাব কারণ, তা ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল আর এই দুই দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট বান্দার আমল পেশ করা হয় মা আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিন রোযা রাখাকে প্রাধান্য দিতেন তিরমিযী, সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ তারগীবঃ ১০২৭
সুতরাং, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে মাসের যে কোন সোমবার অথবা বৃহস্পতিবারে ১টা, ২টা, ৩টা. . .এইভাবে একজন ব্যক্তির ইচ্ছা, সামর্থ্য ও সুযোগ অনুযায়ী যার যতগুলো ভালো লাগে, ততগুলো রোযা রাখা যাবে ব্যপারে নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই, যত বেশি রোযা রাখা যায়, বান্দার জন্য তত উত্তম 
নিয়তঃ রাতের বেলা কিংবা সাহরী খাওয়ার পর আজ আমি সোমবার কিংবা বৃহস্পতিবার দিনের নফল রোযা রাখবো মনে মনে এতোটুকু চিন্তা বা সিদ্ধান্ত থাকলেই নিয়ত করা হয়ে যাবে এজন্য বিশেষ কোন আরবী দুয়া পড়তে হবে না উল্লেখ্য, সাহরী খাওয়া সুন্নত, সাহররী খাওয়ার মাঝে অনেক বরকত রয়েছে তবে সাহরী খাওয়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি ঘুম থেকে উঠে খেতে না পারে, তাহলে কারো যদি সামর্থ্যে কুলায়, তাহলে নফল-সুন্নত রোযা সাহরী না খেয়েও, ভোরবেলা উঠে নিয়ত করে রাখা যায় সহীহ মুসলিমঃ ১১৫৪ 
(২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার দিন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, সোমবারেই তাঁকে নবুওয়ত দেওয়া হয় এবং সোমবার দিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন আবু কাতাদা আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবার দিন রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তিনি বলেন, এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং এই দিনেই আমাকে নবুওয়াত প্রদান করা হয়েছিলো অথবা, এই দিনে আমার উপর (ক্বুরআন) নাযিল করা হয়েছে সহীহ মুসলিমঃ ১১৬২ 
(৩) সোমবার ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমতের উসীলায় মুসলমানদের গুনাহ মাফ করেন তবে এমন দুইজন মুসলমান, যারা পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এই গুনাহ থেকে তোওবা করে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করবে, তারা এই ফযীলত থেকে বঞ্চিত থাকবে আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিন রোযা রাখতেন একদিন তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিন রোযা রাখেন কেনো? তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা সোমবার ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিন প্রত্যেক মুসলমানের গুনাহ ক্ষমা করেন কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী সম্পর্কে (আল্লাহ বলেন), তাদেরকে ছেড়ে দাও, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে ইবনে মাজাহঃ ১৭৪০ হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ আত-তারগীবঃ ১০২৮
(৪) সোমবার ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন কেরামান কাতেবীন অর্থাৎ, সম্মানিত আমল লেখক ফেরেশতারা আল্লাহর নিকট বান্দার আমল পেশ করে থাকেন এই হাদীসটিও আবু হুরারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর নিকট বান্দার আমল পেশ করা হয় তাই আমি পছন্দ করি যে, রোযা থাকা অবস্থায় যেন আমার আমলনামা (আল্লাহর) কাছে পেশ করা হয়। তিরমিযীঃ ৭৪৭ হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ আত-তারগীবঃ ১০২৭

(৫) সর্বশেষ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুবরণ করেছিলেন সোমবারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবারে মৃত্যুবরণ করার কারণে সোমবার ফযীলতপূর্ণ হয় নি বরং, সোমবারের বিশেষ মর্যাদা হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এই দিন তাঁকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছিলো বা কুরআন নাযিল করা হয়েছিলো, এইদিনে বান্দার আমলনামা আল্লাহ তাআলার কাছে পেশ করা হয়, আল্লাহ তালা নিজ রহমতে সোমবার দিন মুসলিম বান্দাকে ক্ষমা করেন, এই কারণে তবে মুসলিম বান্দা হিসেবে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত হিসেবে আমাদের জানা থাকা উচিত যে, অধিকাংশ আলেমদের নিকট প্রসিদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এগারো (১১) হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারি, রোজ সোমবার মৃত্যুবরণ করেছিলেন সুহাইলী প্রণীত আর-রওদুল উনফ (৪/৪৩৯-৪৪০), ইমাম ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহর আস-সিরাহ আন-নববীয়্যাহ (৪/৫০৯), ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহর ফাতহুল বারী (৮/১৩০)
হিজরী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজ ১৪৩৭ হিজরীর জামাদিউল আওয়াল মাসের ২৬ তারিখ। যাদের মাসের তিনটা রোযা এখনো বাকী, ইন শাআল্লাহ আগামীকাল রোযা রাখার জন্যে খুব ফযিলতপূর্ণ একটা দিন। আগামীকাল যারা রোযা রাখবেন, ঢাকা জেলায় সাহরীর শেষ সময় ৫:০১ মিনিট, আর আগামীকাল ইফতারি শুরু ৬:০৪ মিনিট।