‘উহুদ’ এমন একটি পাহাড় যেই পাহাড়কে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ভালোবাসতেন, যেই পাহাড়ও প্রিয়
নবীকে ভালোবাসতো। নবীজি একবার উহুদ পাহাড়ের উপরে উঠেন, তাঁর সাথে ছিলেন আবু বকর, উমার
এবং উসমান রাদিয়াল্লাহু তাআ’লা
আজমাঈ’ন। এসময় পাহাড়টি কেঁপে উঠে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদ পাহাড়কে উদ্দেশ্য করে
বলেন, “হে উহুদ পাহাড় তুমি থামো। তোমরা উপরে রয়েছে আল্লাহর
রাসুল, একজন সিদ্দিক এবং দুইজন শহীদ।”
আবু
বকর রাদিয়াল্লাহু তাআ’লা
আনহুর উপাধি ছিলো সিদ্দিক, সুতরাং এই হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন উমার
এবং উসমান রাদিয়াল্লাহু তাআ’লা
আনহুমা ‘শহীদ’ হিসেবে মৃত্যুবরণ করবেন।
নবী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর পূর্বে উসমান রাদিয়াল্লাহু
তাআ’লা আনহুকে ওয়াসীত করে বলেছিলেন, “লোকেরা তোমরা বর্ম (যুদ্ধে আক্রমন থেকে বাঁচার
জন্যে পরা হয় এমন লোহার পোশাক) খুলে ফেলার চেষ্টা করবে। সাবধান উসমান সেটা তুমি কিছুতেই
খুলবেনা।”
এটা
শুনে উসমান রাদিয়াল্লাহু তাআ’লা
আনহু খুব পেরেশান হয়ে নবীজীর ঘর থেকে বের হয়ে যান, কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই কথার
বিশেষ একটা উদ্দেশ্য রয়েছে।
উসমান
রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন খলিফা, তখন মুনাফেকরা তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে
কিছু লোকদেরকে তাঁর বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলে। এমন কিছু পথভ্রষ্ট লোক একত্রিত হয়ে শেষে
মদীনায় আসে এবং উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খিলাফত ছেড়ে দিতে দাবী জানায়। তাদের এই দাবী
ছিলো মূলত ইসলাম এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটা অংশ, যা মেনে নিলে মুসলমানদের রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়বে। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন প্রিয় নবীর ওয়াসীতের কথা বুঝতে
পারলেন, তিনি তাঁকে এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতা ছাড়তে নিষেধ করেছিলেন। সুতরাং, তিনি বিদ্রোহীদের
হুমকি সত্ত্বেও খিলাফত ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন। বিদ্রোহীরা উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর
বাড়ি অবরোধ করে রাখে, তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে কয়েক সপ্তাহ ধরে পানি ও খাবার থেক বঞ্চিত
রাখে। এসময় যেই সাহাবীরা মদীনায় ছিলেন তারা অসহায় অবস্থায় কিছু করতে পারছিলেন না, কারণ
বিদ্রোহী দলটি ছিলো খুব শক্তিশালী। যাইহোক, শেষমেষ বিদ্রোহীদের মাঝে কয়েকজন উসমান রাদিয়াল্লাহু
আনহুর বাড়ির দেয়াল টপকে ঘরে ঢুকে পড়ে। এসময় উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্বুরান তেলাওয়াত
করছিলেন। বিদ্রোহীরা তাঁকে ক্বুরান তেলাওয়াত করা অবস্থাতেই ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে। ছুড়ির
আঘাতে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর রক্ত ক্বুরানের উপরে গিয়ে পড়ে এবং তিনি মৃত্যুর কোলে
ঢলে পড়েন।
উসমান
রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হয়ে নিহত হওয়ার পূর্বে সর্বশেষ যেই আয়াতটি তেলাওয়াত করছিলেন
সেটা হচ্ছেঃ
“সুতরাং
এখন তাদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহই যথেষ্ট। আর তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।” [সুরা আল-বাক্বারাহঃ ১৩৭]