মুসলমানদের
মাঝে বহুল প্রচলিত দুইটি ভ্রান্ত বিশ্বাসঃ
১.
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান।
২.
আল্লাহ নিরাকার।
________________________
হিন্দুরা
বিশ্বাস করে তাদের সৃষ্টিকর্তা বা ভগবান ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান। অর্থাৎ তাদের আক্বীদাহ
হচ্ছে তাদের সৃষ্টিকর্তা ডানে-বামে, আকাশে-বাতাসে, এই পৃথিবীর ভেতরে ও বাইরে, গাছ,
পাথর, মানুষ, সবকিছুর মাঝেই অবস্থান করছেন। এ কারণে তারা প্রায় সবকিছুর পূজা করে থাকে,
কারণ তাদের বিশ্বাস হচ্ছে যা কিছুকেই পূজা করা হোক না কেনো, তাতে আসলে ভগবান ঈশ্বরেরই
উপাসনা করা করা হয়। কারণ, ঈশ্বর যে সবকিছুর মাঝেই বিরাজমান। এই সৃষ্টিজগত হচ্ছে আল্লাহর
‘অস্তিত্ব’ বা ছায়া। এই আকিদাহ বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে ইংরেজীতে
‘pantheism’ আর বাংলায় ‘সর্বেশ্বরবাদ’ বলা হয়। এটা ‘শিরকে আকবার’ বা সবচাইতে বড় শিরক। এমনকি এটা ফিরাউনের শিরকের
চাইতে জঘন্য, যেই ফিরাউন নিজেকে আল্লাহ দাবী করেছিলো (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)।
দুঃখজনক
হচ্ছে ইসলামী আক্বীদাহ-বিশ্বাস সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে বর্তমানে কোটি কোটি
মুসলমান আছে যারা হিন্দুদের মতোই ‘আল্লাহ
সর্বত্র বিরাজমান’,
এই জঘন্য বিশ্বাসের উপরেই মৃত্যুবরণ করছে, আল্লাহু মুস্তাআ’ন!
আচ্ছা
আপনারাই বলুন, আল্লাহ যদি সত্যিই সর্বত্র বিরাজমান হতেন, তাহলে ‘মিরাজের রাত্রিতে’ আল্লাহ তাআ’লা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে সাত আসমানের উর্ধে ডেকে
নিয়ে গেলেন কেনো? এই একটা মাত্র বিষয় যদি আপনারা একবার ভেবে দেখেন, কোন বিবেকমান মানুষ
কোনদিন এই কথা বলবেনা যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। বরং, এই ঘটনা থেকে দিনের আলোর মতোই
পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আল্লাহ তাআ’লা
তাঁর আরশে আজিমের উর্ধে বিরাজমান।
মুসলমানদের
মাঝে আরেকটা ভ্রান্ত বিশ্বাস হচ্ছেঃ
“আল্লাহ
নিরাকার।”
আচ্ছা
মুসলমানদেরকে এই কথা কে শিক্ষা দিয়েছে যে, আল্লাহ নিরাকার? ক্বুরানুল কারীমের কোন সুরার
কত নাম্বার আয়াতে আছে এই কথা? কোন হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ নিরাকার?
আল্লাহ
যদি নিরাকারই হবেন, তাহলে কেয়ামতের দিন যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে, তারা কিসের দিকে তাকিয়ে
থাকবে, যা ক্বুরানুল কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে?
আ’উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।
২২.
সেদিন (কেয়ামতের দিন) অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে।
২৩.
তারা তাদের পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
সুরা
আল-ক্বিয়ামাহঃ ২২-২৩
আল্লাহ
যদি নিরাকারই হবেন, তাহলে জান্নাতীরা কিসের দিকে তাকিয়ে থাকবে, যা সহীহ হাদীসে উল্লেখ
করা হয়েছে?
জারীর
ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্নিমার রাতের চাঁদের
দিকে তাকিয়ে বললেন, “শোন!
নিশ্চয় তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ঠিক সেইভাবে স্পষ্ট দেখতে পারবে, যেমন স্পষ্ট তোমরা
পূর্ণিমান এই চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভীড়ের কষ্টের সম্মুখহীন হবে
না।”
সহীহ
বুখারীঃ ৫৫৪, সহিহ মুসলিমঃ ৬৩৩
সর্বশেষঃ
ক্বুরানুল কারীমের সাতটি আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা উল্লেখ করেছেন, তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন।
আমি আয়াত নাম্বারগুলো উল্লেখ করছি, যাতে করে আল্লাহ সম্পর্ক শয়তান আপনাদেরকে গোমরাহ
করতে না পারে।
১.
আল-আ’রাফঃ ৫৪, ২. ইউনুসঃ ৩, ৩. আর-রা’দঃ ২, ৪. ত্বোয়া-হাঃ ৫, ৫. আল-ফুরকানঃ ৫৯, ৬.
আস-সাজদাহঃ ৪ ৭. আল-হাদীদঃ ৪।
আর
আল্লাহ তাআ’লার আকার আছে, কিন্তু আমরা জানিনা তা কেমন। আল্লাহ
সম্পর্কে কল্পনা করা বা তাঁর সাথে কোন কিছুর উপমা দেওয়া শিরক, একমাত্র জান্নাতে গেলেই
দেখা সম্ভব হবে আল্লাহ তাআ’লাকে
দেখা। আল্লাহ তাঁর অসীম রহমতকে উসীলা করে আমাদের, আমাদের পরিবারের সবাইকে জান্নাতে
তাঁর দীদার দিয়ে ধন্য করুন, আমিন।
________________________
*আপনার
বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাওহীদের এই বাণী তাদের কাছে পৌঁছে দিন। আপনার দ্বারা একজন
মানুষও যদি শিরকি আক্বীদাহ থেকে তোওবাহ করে ফিরে আসে, কেয়ামতের দিন সেটা আপনার নাজাতের
জন্যে ওসীলাহ হবে ইন শা আল্লাহ।